দেশে বাড়ছে সংক্রমণ, এক সপ্তাহে বেড়েছে ৬০ শতাংশ

গুচ্ছভিত্তিক সংক্রমণ হচ্ছে, পর্যায়ক্রমে গণসংক্রমণে রূপ নিতে পারে : জনস্বাস্থ্যবিদদের আশঙ্কা

দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণ হার এবং শনাক্তের সংখ্যা-এই দুই সূচকই বাড়তির দিকে। গেল এক সপ্তাহে দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে ৬০ শতাংশ। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে কোভিড রোগীর সংখ্যার পাশাপাশি পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হারও বেড়েছে। শনাক্তের হার প্রায় তিন শতাংশ।

সামাজিক মেলামেশা এবং ওমিক্রণের প্রভাবেই সংক্রমণ বাড়ছে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, এখন গুচ্ছভিত্তিক সংক্রমণ হচ্ছে; পর্যায়ক্রমে এটি গণসংক্রমণে রূপ নিতে পারে। দেশে ওমিক্রনের সংক্রমণ কতটুকু বিস্তার ঘটিয়েছে তা সে সর্ম্পকে ‘জিনোম সিকোয়েন্সিং’য়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এক সপ্তাহে ৬০ শতাংশ

সংক্রমণ বৃদ্ধি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে দেশে দুই হাজার ৯২৪ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে; যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশি।

দেশে করোনা সংক্রমণের হার গত ২০ ডিসেম্বর থেকে বাড়তে শুরু করে জানিয়ে তিনি বলেন, ২৭ ডিসেম্বর থেকে সংক্রমণ দুই শতাংশ পার হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে এ হার দুইয়ের নিচে বা কখনো একের নিচেও নেমেছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বেশ কিছুদিন স্থিতিশীল থাকার পর করোনা সংক্রমণ এখন ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। গত এক মাসের মধ্যে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংক্রমণের মাত্রা ছিল দুই শতাংশের নিচে; অনেকক্ষেত্রে এক শতাংশের কাছাকাছিও ছিল।

গত ২৬ ডিসেম্বর শনাক্তের হার ছিল দুই শতাংশের নিচে জানিয়ে ডা. রোবেদ আমিন বলেন, তারপর থেকে এখন পর্যন্ত তা দুইয়ের নিচে আর নামেনি। গত ৩১ ডিসেম্বর শনাক্তের হার চলে আসে দুই দশমিক ৭৪ শতাংশে। বলা যায়, বেশ কিছুদিন করোনা সংক্রমণ স্থিতিশীল থেকে তা আবার বাড়ছে। নভেম্বরে শনাক্ত হওয়া করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ছয় হাজার ৭৪৫ জন। ডিসেম্বরে তা ৯ হাজার ২৫৫ জনে বেড়েছে। এক সপ্তাহে দেশে এক লাখ ৩০ হাজার ৭৪৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয় জানিয়ে অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।

ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে করোনা শনাক্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। গত এক সপ্তাহে করোনায় ২০ জন মারা গেছেন, যা আগের সপ্তাহে ১২ জন ছিল। দেশে করোনায় যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে পঞ্চাশোর্ধ্বদের সংখ্যা অনেক বেশি। তবে ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে মৃত্যুর হার ১১ শতাংশ বলে জানান ডা. রোবেদ।

ওমিক্রনে ভীষণভাবে আক্রান্তের সংখ্যা কম

করোনার ওমিক্রন ধরন সংক্রান্ত সাম্প্রতিক কিছু গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন ডা. রোবেদ আমিন। তিনি বলেন, অমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ভীষণভাবে আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার সংখ্যা কম। তবে এ নিয়ে আত্মতুষ্টির কোন সুযোগ নেই। সবার জন্য মাস্ক পরিধান করার কোন বিকল্প নেই। নিজের সুরক্ষার জন্য শুধু নয়, অন্যের জন্যও এটি জরুরি।

গত ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। তবে এর তিন দিন আগে বতসোয়ানায় এটি ধরা পড়ে। বাংলাদেশে গত ১১ ডিসেম্বর দু’জনের দেহে করোনার ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ ওমিক্রন শনাক্তের কথা জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ। দেশে এ পর্যন্ত সাতজনের দেহে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।

ওমিক্রন নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে পরিচালক বলেন, ওমিক্রনসহ যত ভ্যারিয়েন্টই আসুক না কেন মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি টিকা নিলে তা থেকে মুক্ত থাকা যাবে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ওমিক্রন বেশি সংক্রামক হলেও মৃত্যুঝুঁকি অপেক্ষাকৃত কম।

ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাবে সারাবিশ্বে কোভিড পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটছে। গত সপ্তাহে একদিনেই বিশে^ রেকর্ড প্রায় ১৯ লাখ মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

অধ্যাপক রোবেদ আমিন জানান, দেশে ‘জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের’ মাধ্যমে ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হচ্ছে। আইইডিসিআরসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ‘জিনোম সিকোয়েন্সিং’ করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘প্রথম কথা হলো-সংক্রমণ মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানোর পরিস্থিতি যদি তৈরি না করি তাহলে এটি ছড়াতো না; আমরা অনেক শিথিল হয়ে গেছি। স্বাস্থ্যবিধি উধাও হয়ে গেছে। তার ওপর ওমিক্রন চলে এসেছে, যেটি খুব দ্রুত ছড়ায়।’

ওমিক্রনের জিনোম সিকোয়েন্সিং ঠিকমত হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হচ্ছে, আরও হওয়া দরকার। এই খাতে আরও বরাদ্দ দরকার। আমাদের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের কারিগরি সক্ষমতা আছে; কিন্তু বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় কম।’

দেশে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে কি-না জানতে চাইলে এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘বাড়া শুরু করেছে মাত্র। এখন ক্লাস্টার বা গুচ্ছভিত্তিক সংক্রমণ হচ্ছে। এর পরবর্তী পর্যায় হলো কমিউনিটি ট্রান্সমিশন অর্থাৎ গণসংক্রমণ। ইউরোপের মতো অনেক লোক সংক্রমিত হবে। হাসপাতালে লোকজন যাবে।’

একদিনে শনাক্ত ৫৫৭ জন কোভিড রোগী

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৫৫৭ জনের দেহে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। একদিনে এর চেয়ে বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হয় গত ১১ অক্টোবর। ওইদিন ৫৯৯ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ।

একদিনে শনাক্ত নতুন রোগীদের নিয়ে মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ৪৬৬ জনে। আর একদিনে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে একজন মারা গেছেন। এ নিয়ে মোট ২৮ হাজার ৭৭ জনের মৃত্যু হলো।

ফের ৩ শতাংশে সংক্রমণ হার

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১৯ হাজার ১৩০টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার দুই দশমিক ৯১ শতাংশ; যা গত ৭ অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ। ওইদিন পরীক্ষা অনুপাতে রোগী শনাক্তের হার ছিল দুই দশমিক ৯৭ শতাংশ।

করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে একদিনে সুস্থ হয়েছেন ২৫৩ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত মোট ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৫৭ জন সুস্থ হয়েছেন।

জুনের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকাদানের চিন্তা

সরকার আগামী জুনের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষকে করোনার টিকাদানের চিন্তা করছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভার্চুয়াল বুলেটিনে গতকাল সংস্থাটির পরিচালক ডা. রোবেদ আমিন এ তথ্য জানিয়ে বলেন, এরই মধ্যে ৬০ শতাংশ মানুষকে প্রথম ডোজের ও ৪০ শতাংশ মানুষকে দ্বিতীয় ডোজের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। বুস্টার ডোজও দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে হেলথ ওয়ার্কার ও ৬০ বছরের অধিক বয়স্কদের বুস্টার ডোজ দেয়া হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে বয়সসীমা কমিয়ে ১৮ বছর করা হবে।

চলতি মাসে চার কোটিরও বেশি মানুষকে টিকা দেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, দুদিন আগেও দুই কোটি ডোজ টিকা পাওয়া গেছে। টিকার কোন সংকট নেই। ৬০ বছরের অধিক বয়সী ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের বুস্টার ডোজ গ্রহণের অনুরোধ জানান অধ্যাপক রোবেদ আমিন।

সোমবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২২ , ১৯ পৌষ ১৪২৮ ২৯ জমাদিউল আউয়াল

দেশে বাড়ছে সংক্রমণ, এক সপ্তাহে বেড়েছে ৬০ শতাংশ

গুচ্ছভিত্তিক সংক্রমণ হচ্ছে, পর্যায়ক্রমে গণসংক্রমণে রূপ নিতে পারে : জনস্বাস্থ্যবিদদের আশঙ্কা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণ হার এবং শনাক্তের সংখ্যা-এই দুই সূচকই বাড়তির দিকে। গেল এক সপ্তাহে দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে ৬০ শতাংশ। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে কোভিড রোগীর সংখ্যার পাশাপাশি পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হারও বেড়েছে। শনাক্তের হার প্রায় তিন শতাংশ।

সামাজিক মেলামেশা এবং ওমিক্রণের প্রভাবেই সংক্রমণ বাড়ছে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, এখন গুচ্ছভিত্তিক সংক্রমণ হচ্ছে; পর্যায়ক্রমে এটি গণসংক্রমণে রূপ নিতে পারে। দেশে ওমিক্রনের সংক্রমণ কতটুকু বিস্তার ঘটিয়েছে তা সে সর্ম্পকে ‘জিনোম সিকোয়েন্সিং’য়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এক সপ্তাহে ৬০ শতাংশ

সংক্রমণ বৃদ্ধি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে দেশে দুই হাজার ৯২৪ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে; যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশি।

দেশে করোনা সংক্রমণের হার গত ২০ ডিসেম্বর থেকে বাড়তে শুরু করে জানিয়ে তিনি বলেন, ২৭ ডিসেম্বর থেকে সংক্রমণ দুই শতাংশ পার হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে এ হার দুইয়ের নিচে বা কখনো একের নিচেও নেমেছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বেশ কিছুদিন স্থিতিশীল থাকার পর করোনা সংক্রমণ এখন ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। গত এক মাসের মধ্যে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংক্রমণের মাত্রা ছিল দুই শতাংশের নিচে; অনেকক্ষেত্রে এক শতাংশের কাছাকাছিও ছিল।

গত ২৬ ডিসেম্বর শনাক্তের হার ছিল দুই শতাংশের নিচে জানিয়ে ডা. রোবেদ আমিন বলেন, তারপর থেকে এখন পর্যন্ত তা দুইয়ের নিচে আর নামেনি। গত ৩১ ডিসেম্বর শনাক্তের হার চলে আসে দুই দশমিক ৭৪ শতাংশে। বলা যায়, বেশ কিছুদিন করোনা সংক্রমণ স্থিতিশীল থেকে তা আবার বাড়ছে। নভেম্বরে শনাক্ত হওয়া করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ছয় হাজার ৭৪৫ জন। ডিসেম্বরে তা ৯ হাজার ২৫৫ জনে বেড়েছে। এক সপ্তাহে দেশে এক লাখ ৩০ হাজার ৭৪৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয় জানিয়ে অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।

ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে করোনা শনাক্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। গত এক সপ্তাহে করোনায় ২০ জন মারা গেছেন, যা আগের সপ্তাহে ১২ জন ছিল। দেশে করোনায় যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে পঞ্চাশোর্ধ্বদের সংখ্যা অনেক বেশি। তবে ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে মৃত্যুর হার ১১ শতাংশ বলে জানান ডা. রোবেদ।

ওমিক্রনে ভীষণভাবে আক্রান্তের সংখ্যা কম

করোনার ওমিক্রন ধরন সংক্রান্ত সাম্প্রতিক কিছু গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন ডা. রোবেদ আমিন। তিনি বলেন, অমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ভীষণভাবে আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার সংখ্যা কম। তবে এ নিয়ে আত্মতুষ্টির কোন সুযোগ নেই। সবার জন্য মাস্ক পরিধান করার কোন বিকল্প নেই। নিজের সুরক্ষার জন্য শুধু নয়, অন্যের জন্যও এটি জরুরি।

গত ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। তবে এর তিন দিন আগে বতসোয়ানায় এটি ধরা পড়ে। বাংলাদেশে গত ১১ ডিসেম্বর দু’জনের দেহে করোনার ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ ওমিক্রন শনাক্তের কথা জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ। দেশে এ পর্যন্ত সাতজনের দেহে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।

ওমিক্রন নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে পরিচালক বলেন, ওমিক্রনসহ যত ভ্যারিয়েন্টই আসুক না কেন মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি টিকা নিলে তা থেকে মুক্ত থাকা যাবে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ওমিক্রন বেশি সংক্রামক হলেও মৃত্যুঝুঁকি অপেক্ষাকৃত কম।

ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাবে সারাবিশ্বে কোভিড পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটছে। গত সপ্তাহে একদিনেই বিশে^ রেকর্ড প্রায় ১৯ লাখ মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

অধ্যাপক রোবেদ আমিন জানান, দেশে ‘জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের’ মাধ্যমে ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হচ্ছে। আইইডিসিআরসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ‘জিনোম সিকোয়েন্সিং’ করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘প্রথম কথা হলো-সংক্রমণ মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানোর পরিস্থিতি যদি তৈরি না করি তাহলে এটি ছড়াতো না; আমরা অনেক শিথিল হয়ে গেছি। স্বাস্থ্যবিধি উধাও হয়ে গেছে। তার ওপর ওমিক্রন চলে এসেছে, যেটি খুব দ্রুত ছড়ায়।’

ওমিক্রনের জিনোম সিকোয়েন্সিং ঠিকমত হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হচ্ছে, আরও হওয়া দরকার। এই খাতে আরও বরাদ্দ দরকার। আমাদের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের কারিগরি সক্ষমতা আছে; কিন্তু বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় কম।’

দেশে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে কি-না জানতে চাইলে এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘বাড়া শুরু করেছে মাত্র। এখন ক্লাস্টার বা গুচ্ছভিত্তিক সংক্রমণ হচ্ছে। এর পরবর্তী পর্যায় হলো কমিউনিটি ট্রান্সমিশন অর্থাৎ গণসংক্রমণ। ইউরোপের মতো অনেক লোক সংক্রমিত হবে। হাসপাতালে লোকজন যাবে।’

একদিনে শনাক্ত ৫৫৭ জন কোভিড রোগী

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৫৫৭ জনের দেহে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। একদিনে এর চেয়ে বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হয় গত ১১ অক্টোবর। ওইদিন ৫৯৯ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ।

একদিনে শনাক্ত নতুন রোগীদের নিয়ে মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ৪৬৬ জনে। আর একদিনে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে একজন মারা গেছেন। এ নিয়ে মোট ২৮ হাজার ৭৭ জনের মৃত্যু হলো।

ফের ৩ শতাংশে সংক্রমণ হার

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১৯ হাজার ১৩০টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার দুই দশমিক ৯১ শতাংশ; যা গত ৭ অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ। ওইদিন পরীক্ষা অনুপাতে রোগী শনাক্তের হার ছিল দুই দশমিক ৯৭ শতাংশ।

করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে একদিনে সুস্থ হয়েছেন ২৫৩ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত মোট ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৫৭ জন সুস্থ হয়েছেন।

জুনের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকাদানের চিন্তা

সরকার আগামী জুনের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষকে করোনার টিকাদানের চিন্তা করছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভার্চুয়াল বুলেটিনে গতকাল সংস্থাটির পরিচালক ডা. রোবেদ আমিন এ তথ্য জানিয়ে বলেন, এরই মধ্যে ৬০ শতাংশ মানুষকে প্রথম ডোজের ও ৪০ শতাংশ মানুষকে দ্বিতীয় ডোজের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। বুস্টার ডোজও দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে হেলথ ওয়ার্কার ও ৬০ বছরের অধিক বয়স্কদের বুস্টার ডোজ দেয়া হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে বয়সসীমা কমিয়ে ১৮ বছর করা হবে।

চলতি মাসে চার কোটিরও বেশি মানুষকে টিকা দেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, দুদিন আগেও দুই কোটি ডোজ টিকা পাওয়া গেছে। টিকার কোন সংকট নেই। ৬০ বছরের অধিক বয়সী ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের বুস্টার ডোজ গ্রহণের অনুরোধ জানান অধ্যাপক রোবেদ আমিন।