বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাব এবং এর সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার জন্য দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনকে চিঠি পাঠিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
১৫ ডিসেম্বর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর টেলিফোনে কথা হয়। সেই সময় র?্যাব ও সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনা হয়। গতকাল বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন কিছুদিন আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার টেলিফোনে কথা হয়। সেই টেলিফোন আলাপে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন। সেই আলাপের ভিত্তিতে এবং নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে এ কে আবদুল মোমেন একটি চিঠি পাঠান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে। গতকাল সিলেটের এক অনুষ্ঠান শেষে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনকে উদ্ধৃত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, র?্যাব ও কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতারা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তার প্রেক্ষিতে ওই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে ব্লিংকেন তাকে জানিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চিঠিতে তিনি লিখেছেন, বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত কিছু এনজিও তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য আমাদের দেশের সরকার আরও বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে মিথ্যা মনগড়া ও বিকৃততথ্য প্রচার করে। যাতে করে বাংলাদেশের বন্ধু ও আংশীদার বিভ্রান্ত হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা কিন্তু যথেষ্ট ক্রেডিবল অর্গানাইজেশন। এদের কারণে সন্ত্রাস কমেছে, ড্রাগ মোটামুটি আন্ডার কন্ট্রোল, হিউম্যান ট্রাফিকিং, যেগুলো আপনাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) গোল- সুতরাং আমাদের কাছে খুব তাজ্জব, আশ্চর্য মনে হয়েছে।’
র্যাবের ওপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা অপ্রত্যাশিত মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা তাকে বললাম যে, বিভিন্ন প্রকারে আপনাদের সঙ্গে আমাদের ৫০ বছরের উত্তম সম্পর্ক। বিভিন্নভাবে ডায়ালগ-আলোচনার স্কোপ আছে। এমন নিষেধাজ্ঞায় আমাদের দেশের মানুষ সারপ্রাইজড। এটা অনাকাক্সিক্ষত ছিল।
‘সব সময় র্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া মাত্র তার আইনানুগ বিচার করেছেন। এ জন্য কোনভাবেই পুরো সংস্থার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেয়া যেতে পারে না’ বলেও তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেছেন বলে জানান।
ওই নিষেধাজ্ঞাকে ‘দুঃখজনক’ বর্ণনা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিঠিতে বলেছেন, ‘যে অভিযোগটা এসেছে, সেটা আমাদের কাছে মনে হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ আছে। আপনারা বলেছেন, গত ১০ বছরে দেশে ছয়শ’ লোক নিখোঁজ হয়েছে। আপনারা বলছেন, র?্যাব এটা করেছে। আপনার দেশে তো প্রতিবছর লাখ খানেক লোক নিখোঁজ হয়, সেটাকে কেউ গুম বলে না। আমরা এসব কথাই আবার চিঠিতে লিখেছি।’ চিঠিটির কোন উত্তর পাওয়া গেছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ক্রিসমাস ও নতুন বছরের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটি থাকায় এখনও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে পরে চিঠির জবাব পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
গত ১০ ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে র?্যাব ও সংস্থাটির সাবেক-বর্তমান ছয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত ছয় কর্মকর্তা হচ্ছেনÑ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন (র?্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক), বেনজির আহমেদ (সাবেক র?্যাব মহাপরিচালক, জানুয়ারি ২০১৫-এপ্রিল ২০২০), খান মোহাম্মদ আজাদ (বর্তমান অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স), তোফায়েল মুস্তাফা সরওয়ার (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স, জুন ২০১৯-মার্চ ২০২১), মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স, সেপ্টেম্বর ২০১৮-জুন ২০১৯), এবং মোহাম্মদ আনোয়ার লতিফ খান (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স, এপ্রিল-২০১৬-সেপ্টেম্বর ২০১৮)।
এতে বলা হয়, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত থাকার জন্য বেনজির আহমেদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার কথা ঘোষণা করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরÑ যার ফলে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য হবেন।
বাংলাদেশ এই নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে তলব করে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। র?্যাব ও সরকারের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ নাকচ করে দেয়া হয়েছে।
সোমবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২২ , ১৯ পৌষ ১৪২৮ ২৯ জমাদিউল আউয়াল
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাব এবং এর সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার জন্য দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনকে চিঠি পাঠিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
১৫ ডিসেম্বর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর টেলিফোনে কথা হয়। সেই সময় র?্যাব ও সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনা হয়। গতকাল বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন কিছুদিন আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার টেলিফোনে কথা হয়। সেই টেলিফোন আলাপে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন। সেই আলাপের ভিত্তিতে এবং নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে এ কে আবদুল মোমেন একটি চিঠি পাঠান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে। গতকাল সিলেটের এক অনুষ্ঠান শেষে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনকে উদ্ধৃত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, র?্যাব ও কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতারা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তার প্রেক্ষিতে ওই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে ব্লিংকেন তাকে জানিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চিঠিতে তিনি লিখেছেন, বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত কিছু এনজিও তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য আমাদের দেশের সরকার আরও বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে মিথ্যা মনগড়া ও বিকৃততথ্য প্রচার করে। যাতে করে বাংলাদেশের বন্ধু ও আংশীদার বিভ্রান্ত হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা কিন্তু যথেষ্ট ক্রেডিবল অর্গানাইজেশন। এদের কারণে সন্ত্রাস কমেছে, ড্রাগ মোটামুটি আন্ডার কন্ট্রোল, হিউম্যান ট্রাফিকিং, যেগুলো আপনাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) গোল- সুতরাং আমাদের কাছে খুব তাজ্জব, আশ্চর্য মনে হয়েছে।’
র্যাবের ওপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা অপ্রত্যাশিত মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা তাকে বললাম যে, বিভিন্ন প্রকারে আপনাদের সঙ্গে আমাদের ৫০ বছরের উত্তম সম্পর্ক। বিভিন্নভাবে ডায়ালগ-আলোচনার স্কোপ আছে। এমন নিষেধাজ্ঞায় আমাদের দেশের মানুষ সারপ্রাইজড। এটা অনাকাক্সিক্ষত ছিল।
‘সব সময় র্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া মাত্র তার আইনানুগ বিচার করেছেন। এ জন্য কোনভাবেই পুরো সংস্থার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেয়া যেতে পারে না’ বলেও তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেছেন বলে জানান।
ওই নিষেধাজ্ঞাকে ‘দুঃখজনক’ বর্ণনা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিঠিতে বলেছেন, ‘যে অভিযোগটা এসেছে, সেটা আমাদের কাছে মনে হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ আছে। আপনারা বলেছেন, গত ১০ বছরে দেশে ছয়শ’ লোক নিখোঁজ হয়েছে। আপনারা বলছেন, র?্যাব এটা করেছে। আপনার দেশে তো প্রতিবছর লাখ খানেক লোক নিখোঁজ হয়, সেটাকে কেউ গুম বলে না। আমরা এসব কথাই আবার চিঠিতে লিখেছি।’ চিঠিটির কোন উত্তর পাওয়া গেছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ক্রিসমাস ও নতুন বছরের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটি থাকায় এখনও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে পরে চিঠির জবাব পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
গত ১০ ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে র?্যাব ও সংস্থাটির সাবেক-বর্তমান ছয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত ছয় কর্মকর্তা হচ্ছেনÑ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন (র?্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক), বেনজির আহমেদ (সাবেক র?্যাব মহাপরিচালক, জানুয়ারি ২০১৫-এপ্রিল ২০২০), খান মোহাম্মদ আজাদ (বর্তমান অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স), তোফায়েল মুস্তাফা সরওয়ার (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স, জুন ২০১৯-মার্চ ২০২১), মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স, সেপ্টেম্বর ২০১৮-জুন ২০১৯), এবং মোহাম্মদ আনোয়ার লতিফ খান (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স, এপ্রিল-২০১৬-সেপ্টেম্বর ২০১৮)।
এতে বলা হয়, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত থাকার জন্য বেনজির আহমেদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার কথা ঘোষণা করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরÑ যার ফলে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য হবেন।
বাংলাদেশ এই নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে তলব করে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। র?্যাব ও সরকারের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ নাকচ করে দেয়া হয়েছে।