কৃত্রিমভাবে নয়, প্রকৃতিগতভাবেই হবে চিকন চাল

কৃত্রিমভাবে নয়, এবার প্রাকৃতিকভাবেই হবে চিকন চাল। এই ধান চাষ করা যাবে আমন বোরো দুই মৌসুমেই। আবার অন্য ধানের চেয়ে এর ফলনও ভালো। এমনই একটি চিকন চালের ধান উদ্ভাবন করেছেন রাজশাহীর স্বশিক্ষিত কৃষিবিজ্ঞানী নূর মোহাম্মদ। তার উদ্ভাবন করা এই জাতের নাম দিয়েছেন ‘নূর ধান’। নূরের দাবি, এটিই এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে চিকন চালের ধান।

উদ্ভাবক নূর জানান, বর্তমান বাজারে এখন চিকন চাল বলতে পাওয়া যায় চিনিগুঁড়া, দাদখানী, রাঁধুনিপাগল, কালোজিরা, বাঁশফুল ও কাটারি ভোগ। তবে এসবের চেয়েও উদ্ভাবিত আমার এই চাল চিকন। এ চালের ভাত খেতেও মজা। নূর মোহাম্মদ গত ছয় বছরের নিরলস চেষ্টায় এ জাত উদ্ভাবন করেছেন। আমন মৌসুমে তার উদ্ভাবিত এই ধানের গড় ফলন হবে বিঘাপ্রতি প্রায় ১৭ মণ। আর বোরো মৌসুমে বিঘাপ্রতি ফলন হবে প্রায় ২১ মণ।

কৃষক নূর মোহাম্মদের শিক্ষা জীবন দশম শ্রেণী পর্যন্ত। তার বয়স এখন ৫০ বছর। বাড়ি রাজশাহীর তানোর পৌরসভার গোল্লাপাড়া মহল্লায়। বরেন্দ্রের পোড়ামাটিতে কীভাবে কম পানিতে ধান উৎপাদন করা যায় সে বিষয়ে প্রায় ৩০ বছর ধরে গবেষণা করছেন তিনি। নিজের বাড়ির মাটির ঘরে রীতিমতো গড়ে তুলেছেন গবেষণাগার। সেখানে সংরক্ষিত আছে বহু জাতের ধানের বীজ। উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য এক জাতের ধানের জিনের সঙ্গে আরেক জাতের সংমিশ্রণ করে তিনি উদ্ভাবন করছেন নতুন নতুন জাত। ইতোমধ্যে তিনি দুই শতাধিক ধানের কৌলিক সারি উদ্ভাবন করেছেন। একেকটি জাত উদ্ভাবন করতে সময় লাগে ১২ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত।

নূর মোহাম্মদ এবার আমন মৌসুমে কয়েকটি জাতের ধানের জিনের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে উদ্ভাবন করেছেন ‘নূর ধান’। গোল্লাপাড়ায় নিজের গবেষণা মাঠেই আবাদ করেছিলেন এ ধান। সম্প্রতি জমির ধানও কেটেছেন। ধান কাটার সময় উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম, সহকারী পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আনারুল ইসলাম, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ডিএফএম ইমদাদুল ইসলাম এবং স্থানীয় কৃষকেরা উপস্থিত ছিলেন। মাড়াই ও ঝাড়ার পর শুকনো ধানের বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছে সাড়ে ১৭ মণ।

ধানটির উদ্ভোবক নূর মোহাম্মদ গতকাল বিকেলে এ প্রতিবেদককে বলেন, ধানটি চিনিগুঁড়ার মতোই চিকন, তবে চিনিগুঁড়ার চেয়ে লম্বা। দেশের ঐতিহ্যবাহী দাদখানি, রাঁধুনিপাগল, কালজিরা, বাঁশফুল, কাটারি ভোগের চেয়ে এ ধানের চাল অনেক চিকন। আমন ও বোরো-দুই মৌসুমেই ধানটি চাষ করা যাবে। তবে ফলন বেশি হবে বোরো মৌসুমে।

সুগন্ধি না হলেও এ চালের ভাত খেতে ভালো লাগবে। তিনি জানান, দেশের কোন চিকন ধানে বিঘাপ্রতি ১০ থেকে ১২ মণের বেশি ফলন হয় না বললেই চলে। সে তুলনায় আমার উদ্ভাবিত নূর ধানের ফলন অনেক বেশি। যে কারণে দেশের একেবারে কৃষক পর্যায়ে ধানটি ছড়িয়ে দিতে পারলে তারা লাভবান হবেন ইনশাআল্লাহ। তবে বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল ইসলাম বলেন, ‘নূর মোহাম্মদ ধান নিয়ে গবেষণা করেন। এর জন্য ২০০৫ সালেই তিনি রাষ্ট্রপতি কৃষিপদকও পেয়েছেন। তবে এবার তিনি যে চিকন ধানটার কথা বলছেন, সেটা জমিতে শীষ আসার আগে আমি একবার দেখেছিলাম। পরে আর যাওয়া হয়নি। তাই এটার বিষয়ে আমি বিস্তারিত আর জানি না।’

তিনি বলেন, ‘নূর মোহাম্মদ নতুন জাত হিসেবে বলতে পারেন। তবে আমরা যারা চাকরি করি, তারা বলতে পারব না। কারণ, নতুন জাতের স্বীকৃতির জন্য জাতীয় বীজ বোর্ডে আবেদন করতে হয়। যা অনেক প্রক্রিয়ার বিষয়। এরপর এ বিষয়ে যাচাই-বাছাই শেষে তথ্যটি সঠিক হলে তা গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে সরকার জাত হিসেবে ঘোষণা করেন। যে কারণেই হুট করেই আমরা ‘নূর মোহাম্মদ’ ধানটিকে নতুন জাত হিসেবে বলতে পারি না। তবে এই উদ্ভোবনী ধানের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এর পরই তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।

সোমবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২২ , ১৯ পৌষ ১৪২৮ ২৯ জমাদিউল আউয়াল

কৃত্রিমভাবে নয়, প্রকৃতিগতভাবেই হবে চিকন চাল

জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী

image

‘নূর ধান’-এর মাঠে কৃষি বিজ্ঞানী নূর মোহাম্মদসহ স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা -সংবাদ

কৃত্রিমভাবে নয়, এবার প্রাকৃতিকভাবেই হবে চিকন চাল। এই ধান চাষ করা যাবে আমন বোরো দুই মৌসুমেই। আবার অন্য ধানের চেয়ে এর ফলনও ভালো। এমনই একটি চিকন চালের ধান উদ্ভাবন করেছেন রাজশাহীর স্বশিক্ষিত কৃষিবিজ্ঞানী নূর মোহাম্মদ। তার উদ্ভাবন করা এই জাতের নাম দিয়েছেন ‘নূর ধান’। নূরের দাবি, এটিই এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে চিকন চালের ধান।

উদ্ভাবক নূর জানান, বর্তমান বাজারে এখন চিকন চাল বলতে পাওয়া যায় চিনিগুঁড়া, দাদখানী, রাঁধুনিপাগল, কালোজিরা, বাঁশফুল ও কাটারি ভোগ। তবে এসবের চেয়েও উদ্ভাবিত আমার এই চাল চিকন। এ চালের ভাত খেতেও মজা। নূর মোহাম্মদ গত ছয় বছরের নিরলস চেষ্টায় এ জাত উদ্ভাবন করেছেন। আমন মৌসুমে তার উদ্ভাবিত এই ধানের গড় ফলন হবে বিঘাপ্রতি প্রায় ১৭ মণ। আর বোরো মৌসুমে বিঘাপ্রতি ফলন হবে প্রায় ২১ মণ।

কৃষক নূর মোহাম্মদের শিক্ষা জীবন দশম শ্রেণী পর্যন্ত। তার বয়স এখন ৫০ বছর। বাড়ি রাজশাহীর তানোর পৌরসভার গোল্লাপাড়া মহল্লায়। বরেন্দ্রের পোড়ামাটিতে কীভাবে কম পানিতে ধান উৎপাদন করা যায় সে বিষয়ে প্রায় ৩০ বছর ধরে গবেষণা করছেন তিনি। নিজের বাড়ির মাটির ঘরে রীতিমতো গড়ে তুলেছেন গবেষণাগার। সেখানে সংরক্ষিত আছে বহু জাতের ধানের বীজ। উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য এক জাতের ধানের জিনের সঙ্গে আরেক জাতের সংমিশ্রণ করে তিনি উদ্ভাবন করছেন নতুন নতুন জাত। ইতোমধ্যে তিনি দুই শতাধিক ধানের কৌলিক সারি উদ্ভাবন করেছেন। একেকটি জাত উদ্ভাবন করতে সময় লাগে ১২ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত।

নূর মোহাম্মদ এবার আমন মৌসুমে কয়েকটি জাতের ধানের জিনের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে উদ্ভাবন করেছেন ‘নূর ধান’। গোল্লাপাড়ায় নিজের গবেষণা মাঠেই আবাদ করেছিলেন এ ধান। সম্প্রতি জমির ধানও কেটেছেন। ধান কাটার সময় উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম, সহকারী পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আনারুল ইসলাম, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ডিএফএম ইমদাদুল ইসলাম এবং স্থানীয় কৃষকেরা উপস্থিত ছিলেন। মাড়াই ও ঝাড়ার পর শুকনো ধানের বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছে সাড়ে ১৭ মণ।

ধানটির উদ্ভোবক নূর মোহাম্মদ গতকাল বিকেলে এ প্রতিবেদককে বলেন, ধানটি চিনিগুঁড়ার মতোই চিকন, তবে চিনিগুঁড়ার চেয়ে লম্বা। দেশের ঐতিহ্যবাহী দাদখানি, রাঁধুনিপাগল, কালজিরা, বাঁশফুল, কাটারি ভোগের চেয়ে এ ধানের চাল অনেক চিকন। আমন ও বোরো-দুই মৌসুমেই ধানটি চাষ করা যাবে। তবে ফলন বেশি হবে বোরো মৌসুমে।

সুগন্ধি না হলেও এ চালের ভাত খেতে ভালো লাগবে। তিনি জানান, দেশের কোন চিকন ধানে বিঘাপ্রতি ১০ থেকে ১২ মণের বেশি ফলন হয় না বললেই চলে। সে তুলনায় আমার উদ্ভাবিত নূর ধানের ফলন অনেক বেশি। যে কারণে দেশের একেবারে কৃষক পর্যায়ে ধানটি ছড়িয়ে দিতে পারলে তারা লাভবান হবেন ইনশাআল্লাহ। তবে বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল ইসলাম বলেন, ‘নূর মোহাম্মদ ধান নিয়ে গবেষণা করেন। এর জন্য ২০০৫ সালেই তিনি রাষ্ট্রপতি কৃষিপদকও পেয়েছেন। তবে এবার তিনি যে চিকন ধানটার কথা বলছেন, সেটা জমিতে শীষ আসার আগে আমি একবার দেখেছিলাম। পরে আর যাওয়া হয়নি। তাই এটার বিষয়ে আমি বিস্তারিত আর জানি না।’

তিনি বলেন, ‘নূর মোহাম্মদ নতুন জাত হিসেবে বলতে পারেন। তবে আমরা যারা চাকরি করি, তারা বলতে পারব না। কারণ, নতুন জাতের স্বীকৃতির জন্য জাতীয় বীজ বোর্ডে আবেদন করতে হয়। যা অনেক প্রক্রিয়ার বিষয়। এরপর এ বিষয়ে যাচাই-বাছাই শেষে তথ্যটি সঠিক হলে তা গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে সরকার জাত হিসেবে ঘোষণা করেন। যে কারণেই হুট করেই আমরা ‘নূর মোহাম্মদ’ ধানটিকে নতুন জাত হিসেবে বলতে পারি না। তবে এই উদ্ভোবনী ধানের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এর পরই তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।