ওমিক্রন ঠেকাতে ইউরোপজুড়ে কঠোর বিধিনিষেধ

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো ইউরোপ। বারবার ভাঙছে দৈনিক সংক্রমণের পূর্বের রেকর্ড। নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করছে সেখানকার দেশগুলো। করোনা মোকাবিলায় ফ্রান্স সামাজিক মেলামেশার ক্ষেত্রে নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।

নতুন বিধিনিষেধের আওতায় লোকসমাগম হয় এমন স্থানে বিশেষ করে থিয়েটার, বার, স্টেডিয়াম ও গণপরিবহনে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভ্যাক্সিন সার্টিফিকেট অথবা হেলথ পাস লাগবে। যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সেরে উঠেছে, তাদের হেলথ পাস দেয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন এই নিয়ম জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে চালু করা সম্ভব হবে। ফ্রান্স টোয়েন্টিফোরের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

আগে দেশটিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে করোনা নেগেটিভ সনদ দিয়ে লোকসমাগমে যাওয়া যেত। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এ নিয়ম বাতিল করা হয়েছে। দেশটিতে গতকাল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৬ হাজার।

ফ্রান্সের পাশাপাশি পুরো ইউরোপে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ায় জার্মানিও নতুন করে করোনা বিধিনিষেধ জারি করেছে। বড়দিনের পর সামাজিক অনুষ্ঠান উদযাপনেও সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে দেশটি।

দেশটিতে যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে ১০ জনের বেশি মানুষ জড়ো হতে পারবে না। ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হবে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে। পর্তুগাল নতুন বছরের ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশটির সব নাইট ক্লাব ও বার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সুইডেনে ক্যাফে ও বারে লোকসমাগম কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পেশাজীবীদের বাসায় থেকে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পক্ষ থেকে ওমিক্রন ইস্যুতে ইউরোপের হাসপাতালগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে।

কিছুদিন আগেও করোনার ওমিক্রন ধরনটি ইউরোপে বিদ্যুতের বেগে ছড়াচ্ছে বলে দাবি করেছিলেন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী জঁ কাস্তেক্স। নতুন বছরের শুরুতেই এই ধরন ফ্রান্সেও তা-ব চালানোর আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন। ওমিক্রন ঠেকাতে যুক্তরাজ্য থেকে প্রবেশে কড়াকড়িও আরোপ করেছিলেন তিনি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। দেশটি এখন করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে লড়াই করছে।

দিল্লিতে করোনা বেড়েছে

৫০ শতাংশ, স্কুল-জিম বন্ধ

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এক লাফে ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এই সংখ্যা গত বছরের মে মাসের পরে সর্বোচ্চ। একুশের শেষে এসে আবার করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ছয়টি নতুন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ রেকর্ড হয়েছে পুনেতে। মুম্বাই ও পুনেতে সর্বাধিক সংখ্যক কোভিড সংক্রমণ দেখা গেছে এবারও। শেষপর্যন্ত তা রাজ্যের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানান উপ-মুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার।

শুধু মুম্বাইয়ে ৫ হাজার ৬৩১ জন নতুন আক্রান্ত হয়েছেন। তা প্রায় গতদিনের তুলনায় ২ হাজার বেশি। শহরের মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৭ লাখ ৮৫ হাজার ১১০ হন। মুম্বাইয়ে ডিসেম্বরে ২২ হাজার ২২৯ হন শনাক্ত করা হয়েছিলেন, আর নভেম্বরে ৬ হাজার ৯৭১ জন। অর্থাৎ নভেম্বরের থেকে ডিসেম্বরে সংক্রমণ তিনগুণ বেশি।

এদিকে ভারতের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল ২২ হাজার ৭৭৫ জন শনাক্ত ও ৪০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। দিল্লিতে করোনা সংক্রমণের হার গত মে মাসের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এদিন সংক্রমণের হার ছিল সর্বোচ্চ ৩.৬৪ শতাংশ। করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭১৬ জন। নববর্ষের প্রাক্কালে এক হাজার ৭৯৬ জন আক্রান্ত হন। ১.৭৩ শতাংশ ছিল সংক্রমণের হার। বৃহস্পতিবার ২.৪৪ শতাংশ ছিল সংক্রমণের হার। ওইদিন এক হাজার ৩১৩ জনের সংক্রমণ রেকর্ড করা হয়েছিল।

দিল্লিতে গত কয়েক দিনের ব্যবধানে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা স্পাইক রেকর্ড করা হচ্ছে শহরে করোনার নতুন ওমিক্রন রূপ হানা দেয়ার পর। শহরে করোনায় ২৫ হাজার ১০৮ জন মারা গেছেন। অথচ বিগত তিনদিন অর্থাৎ বুধ, মঙ্গল ও সোমবার সংক্রমণ ছিল যথাক্রমে ৯২৩, ৪৯৬ ও ৩৩১।

করোনা সংক্রমণের এই বাড়বাড়ন্তে ‘হলুদ সতর্কতা’ জারি করা হয়েছে। দিল্লিতে ইতোমধ্যেই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

স্কুল, জিম বন্ধ করে দিয়েছে দিল্লি সরকার। অফিসে ৫০ শতাংশ হাজিরার বার্তা দিয়েছেন। দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন শনিবার বলেছেন, জাতীয় রাজধানীতে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা দরকার।

সোমবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২২ , ১৯ পৌষ ১৪২৮ ২৯ জমাদিউল আউয়াল

ওমিক্রন ঠেকাতে ইউরোপজুড়ে কঠোর বিধিনিষেধ

image

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো ইউরোপ। বারবার ভাঙছে দৈনিক সংক্রমণের পূর্বের রেকর্ড। নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করছে সেখানকার দেশগুলো। করোনা মোকাবিলায় ফ্রান্স সামাজিক মেলামেশার ক্ষেত্রে নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।

নতুন বিধিনিষেধের আওতায় লোকসমাগম হয় এমন স্থানে বিশেষ করে থিয়েটার, বার, স্টেডিয়াম ও গণপরিবহনে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভ্যাক্সিন সার্টিফিকেট অথবা হেলথ পাস লাগবে। যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সেরে উঠেছে, তাদের হেলথ পাস দেয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন এই নিয়ম জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে চালু করা সম্ভব হবে। ফ্রান্স টোয়েন্টিফোরের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

আগে দেশটিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে করোনা নেগেটিভ সনদ দিয়ে লোকসমাগমে যাওয়া যেত। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এ নিয়ম বাতিল করা হয়েছে। দেশটিতে গতকাল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৬ হাজার।

ফ্রান্সের পাশাপাশি পুরো ইউরোপে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ায় জার্মানিও নতুন করে করোনা বিধিনিষেধ জারি করেছে। বড়দিনের পর সামাজিক অনুষ্ঠান উদযাপনেও সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে দেশটি।

দেশটিতে যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে ১০ জনের বেশি মানুষ জড়ো হতে পারবে না। ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হবে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে। পর্তুগাল নতুন বছরের ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশটির সব নাইট ক্লাব ও বার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সুইডেনে ক্যাফে ও বারে লোকসমাগম কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পেশাজীবীদের বাসায় থেকে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পক্ষ থেকে ওমিক্রন ইস্যুতে ইউরোপের হাসপাতালগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে।

কিছুদিন আগেও করোনার ওমিক্রন ধরনটি ইউরোপে বিদ্যুতের বেগে ছড়াচ্ছে বলে দাবি করেছিলেন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী জঁ কাস্তেক্স। নতুন বছরের শুরুতেই এই ধরন ফ্রান্সেও তা-ব চালানোর আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন। ওমিক্রন ঠেকাতে যুক্তরাজ্য থেকে প্রবেশে কড়াকড়িও আরোপ করেছিলেন তিনি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। দেশটি এখন করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে লড়াই করছে।

দিল্লিতে করোনা বেড়েছে

৫০ শতাংশ, স্কুল-জিম বন্ধ

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এক লাফে ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এই সংখ্যা গত বছরের মে মাসের পরে সর্বোচ্চ। একুশের শেষে এসে আবার করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ছয়টি নতুন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ রেকর্ড হয়েছে পুনেতে। মুম্বাই ও পুনেতে সর্বাধিক সংখ্যক কোভিড সংক্রমণ দেখা গেছে এবারও। শেষপর্যন্ত তা রাজ্যের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানান উপ-মুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার।

শুধু মুম্বাইয়ে ৫ হাজার ৬৩১ জন নতুন আক্রান্ত হয়েছেন। তা প্রায় গতদিনের তুলনায় ২ হাজার বেশি। শহরের মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৭ লাখ ৮৫ হাজার ১১০ হন। মুম্বাইয়ে ডিসেম্বরে ২২ হাজার ২২৯ হন শনাক্ত করা হয়েছিলেন, আর নভেম্বরে ৬ হাজার ৯৭১ জন। অর্থাৎ নভেম্বরের থেকে ডিসেম্বরে সংক্রমণ তিনগুণ বেশি।

এদিকে ভারতের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল ২২ হাজার ৭৭৫ জন শনাক্ত ও ৪০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। দিল্লিতে করোনা সংক্রমণের হার গত মে মাসের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এদিন সংক্রমণের হার ছিল সর্বোচ্চ ৩.৬৪ শতাংশ। করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭১৬ জন। নববর্ষের প্রাক্কালে এক হাজার ৭৯৬ জন আক্রান্ত হন। ১.৭৩ শতাংশ ছিল সংক্রমণের হার। বৃহস্পতিবার ২.৪৪ শতাংশ ছিল সংক্রমণের হার। ওইদিন এক হাজার ৩১৩ জনের সংক্রমণ রেকর্ড করা হয়েছিল।

দিল্লিতে গত কয়েক দিনের ব্যবধানে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা স্পাইক রেকর্ড করা হচ্ছে শহরে করোনার নতুন ওমিক্রন রূপ হানা দেয়ার পর। শহরে করোনায় ২৫ হাজার ১০৮ জন মারা গেছেন। অথচ বিগত তিনদিন অর্থাৎ বুধ, মঙ্গল ও সোমবার সংক্রমণ ছিল যথাক্রমে ৯২৩, ৪৯৬ ও ৩৩১।

করোনা সংক্রমণের এই বাড়বাড়ন্তে ‘হলুদ সতর্কতা’ জারি করা হয়েছে। দিল্লিতে ইতোমধ্যেই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

স্কুল, জিম বন্ধ করে দিয়েছে দিল্লি সরকার। অফিসে ৫০ শতাংশ হাজিরার বার্তা দিয়েছেন। দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন শনিবার বলেছেন, জাতীয় রাজধানীতে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা দরকার।