৩শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এসএম গ্রুপ

বিনিয়োগ করার তিন মাসেই (১০০ দিন) দিগুণ হবে টাকা। কোন বিনিয়োগকারী যদি নতুন কাউকে বিনিয়োগ করাতে পারেন এর বিপরীতে মিলবে লভ্যাংশ বা কমিশন। এমন লোভনীয় অফার দিয়ে ৩০০ জনের কাছে আইডি বিক্রির মাধ্যমে ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এসএম গ্রুপ নামে একটি ভুঁইফোঁড় মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) প্রতিষ্ঠানটির সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান সোহেলকে গ্রেপ্তার করা হলেও অন্যরা পালিয়ে গেছেন।

সিআইডির ঢাকা মেট্রোর প্রধান অতি. ডিআইজি ইমাম হোসেন জানান, এসএম গ্রুপ নামে একটি মাল্টিলেভেল কোম্পানি করে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র প্রতারণা করছে বলে অভিযোগ আসে সিআইডির কাছে। প্রতারিত হওয়া বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত শুরু করে সিআইডির ঢাকা মেট্রো উত্তরের টিম। পুলিশ সুপার খালিদুল হক হাওলাদার তদন্তের সমন্বয়কারী হিসেবে ছিলেন। টিমের এএসপি জাঙ্গাঙ্গিরের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়েছে এসএম গ্রুপের মার্কেটিং ডিরেক্টর মো. সাইদুর রহমান সোহেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির এমডিসহ আরও কয়েকজন পালিয়ে গেছে। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

পুলিশ সুপার খালেদুল হক হাওলাদার জানিয়েছেন, এ ঘটনায় ভাটারা থানায় গত শনিবার একটি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার সোহেলকে দুই দিনের রিমান্ড হেফাজতে পেয়েছে সিআইডি। অন্য আসামিদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এখানে ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন এমন গ্রাহকও পাওয়া গেছে। ৫০ জনের মতো ভুক্তভোগী সিআইডির কার্যালয়ে এসেছে। টাকা চাওয়ায় অনেক গ্রাহককে নির্যাতন করা হয়েছে এমন ভুক্তভোগীও পাওয়া গেছে। তিনি জানান, গ্রাহকদের গাড়িতে নিয়ে তারা টাকা নিত। অফিসে নিত না। দামি গাড়িতেই তাদের অফিসিয়াল কাজ করত। চক্রটি দুর্ধর্ষ প্রতারক। এদের নির্ধারিত কোন অফিস ছিল না। কোন গ্রাহক টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে তাকে মারধরসহ ভয়ভীতিও দেখানো হতো।

সিআইডি জানয়েছে, প্রাথমিক তদন্ত করে জানা যায়, বৈধ কোন কাগজপত্র ছাড়াই এসএম গ্রুপ নামে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং সিস্টেমে (এমএলএম) চাল, ডাল তেল অনলাইনে পেতে আইডি খোলার অফার দেয়া হয়। এসব পণ্য কেনার জন্য বিনিয়োগ হিসেবে এক হাজার টাকায় আইডি খুললে ওই আইডির বিপরীতে যে টাকা বিনিয়েগ করা হবে তিন মাসে তার দিগুণ টাকা লাভ করা যাবে বলে প্রচারণা চালানো হয়। বিভিন্ন ব্যক্তিদের মাধ্যমে প্রথমে টার্গেট ব্যক্তিদের এখানে বিনিয়োগ করানো হয়। বলা হয় চাল ডাল তেলসহ বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয়ের জন্য আইডি খোলার পর প্রথমে সেগুলো নিয়মিত সরবরাহ করতে। এরপর তাদের বলা হতো, পুরাতন সদস্যরা কেউ যদি নতুন বিনিয়োগকারী তৈরি করতে পারে তার বিপরীতে নতুন বিনিয়োগকারীরা যে টাকা বিনিয়োগ করবে বা আইডি খুলবে এ জন্য নির্ধারিত লভ্যাংশ মিলবে। পুরাতন বিনিয়োগকারীদের এভাবে লোভ দেখিয়ে তাদের মাধ্যমে নতুন বিনিয়োগকারী এনে কোম্পানিতে যুক্ত করা হতো।

তদন্তে বেরিয়ে আসে, আইডির বিপরীতে পয়েন্ট বা অর্থ যুক্ত হলেও সেটাকা দেয়া হতো না। বিভিন্ন সমস্যা বা সরাকারি বিভিন্ন নিয়মের কথা বলে টাকা পরে দেয়া হবে বলে জানানো হতো। এভাবে তারা ৩০০ আইডি বিক্রি করে মার্কেট থেকে ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কোন কোন গ্রাহক একাধিক আইডিও খুলেছে। আইডি খোলার পর প্রথমে কিছু টাকা পেলেও পরে আর টাকা পায়নি।

সিআইডি জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি অভিযান চালিয়ে সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং ম্যানেজার মো. সাইদুর রহমান সোহেলকে আটক করা হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর সোহরাব হোসেন শুভ চৌধুরী, মার্কেটিং এবং একাউন্টস কর্মকর্তা নাজমুন্নাহার, আইটি ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ ইমন নামে পাঁচজন অভিযানের সময় পালিয়ে যায়। সিআইডি অফিসে তল্লাশি চালিয়ে একটি এলিয়ন প্রাইভেট কার, রেজিস্টার খাতা, চাকরি প্রত্যাশীদের বায়োডাটা, লোহার রড, হাতুরি, সিল, ডিলার নিয়োগের চুক্তিপত্র, মোবাইলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করেছে।

সিআইডি জানিয়েছে, সংঘবদ্ধ চক্রটি একটি প্রতারক চক্র। কোম্পানিতে ডিলার নিয়োগ, অনলাইনে আইডি খোলা, কোম্পানির শেয়ার বিক্রি এবং চাকরি দেয়ার নামেও বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন এ চক্রের ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হয়েছে। চক্রটি কখনও এক জায়গায় অফিস রাখত না। একেক সময় একেক জায়গায় অফিস নিয়ে প্রতারণা করত। বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা নিত।

চক্রটি দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৩০ লাখ আইডি বিক্রি করেছে যার বিনিময়ে ৩০০ কোটি টাকা ইতোমধ্যে হাতিয়ে নেয়ার তথ্য মিলেছে। কোম্পানির শেয়ার বিক্রি, ডিলার নিয়োগসহ বিভিন্ন প্রতারণার মাধ্যমে কি পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। যারা পালিয়ে গেছে তাদের ধরতে পারলে অর্থের পরিমাণ জানা যাবে। এ চক্রের মূল হোতাকে গ্রেপ্তার করতে পারলে তাদের প্রতারণার ফাঁদে কত লোক ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাও বেরিয়ে আসবে।

সোমবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২২ , ১৯ পৌষ ১৪২৮ ২৯ জমাদিউল আউয়াল

বিনিয়োগ দ্বিগুণ হওয়ার লোভ দেখিয়ে

৩শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এসএম গ্রুপ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বিনিয়োগ করার তিন মাসেই (১০০ দিন) দিগুণ হবে টাকা। কোন বিনিয়োগকারী যদি নতুন কাউকে বিনিয়োগ করাতে পারেন এর বিপরীতে মিলবে লভ্যাংশ বা কমিশন। এমন লোভনীয় অফার দিয়ে ৩০০ জনের কাছে আইডি বিক্রির মাধ্যমে ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এসএম গ্রুপ নামে একটি ভুঁইফোঁড় মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) প্রতিষ্ঠানটির সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান সোহেলকে গ্রেপ্তার করা হলেও অন্যরা পালিয়ে গেছেন।

সিআইডির ঢাকা মেট্রোর প্রধান অতি. ডিআইজি ইমাম হোসেন জানান, এসএম গ্রুপ নামে একটি মাল্টিলেভেল কোম্পানি করে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র প্রতারণা করছে বলে অভিযোগ আসে সিআইডির কাছে। প্রতারিত হওয়া বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত শুরু করে সিআইডির ঢাকা মেট্রো উত্তরের টিম। পুলিশ সুপার খালিদুল হক হাওলাদার তদন্তের সমন্বয়কারী হিসেবে ছিলেন। টিমের এএসপি জাঙ্গাঙ্গিরের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়েছে এসএম গ্রুপের মার্কেটিং ডিরেক্টর মো. সাইদুর রহমান সোহেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির এমডিসহ আরও কয়েকজন পালিয়ে গেছে। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

পুলিশ সুপার খালেদুল হক হাওলাদার জানিয়েছেন, এ ঘটনায় ভাটারা থানায় গত শনিবার একটি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার সোহেলকে দুই দিনের রিমান্ড হেফাজতে পেয়েছে সিআইডি। অন্য আসামিদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এখানে ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন এমন গ্রাহকও পাওয়া গেছে। ৫০ জনের মতো ভুক্তভোগী সিআইডির কার্যালয়ে এসেছে। টাকা চাওয়ায় অনেক গ্রাহককে নির্যাতন করা হয়েছে এমন ভুক্তভোগীও পাওয়া গেছে। তিনি জানান, গ্রাহকদের গাড়িতে নিয়ে তারা টাকা নিত। অফিসে নিত না। দামি গাড়িতেই তাদের অফিসিয়াল কাজ করত। চক্রটি দুর্ধর্ষ প্রতারক। এদের নির্ধারিত কোন অফিস ছিল না। কোন গ্রাহক টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে তাকে মারধরসহ ভয়ভীতিও দেখানো হতো।

সিআইডি জানয়েছে, প্রাথমিক তদন্ত করে জানা যায়, বৈধ কোন কাগজপত্র ছাড়াই এসএম গ্রুপ নামে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং সিস্টেমে (এমএলএম) চাল, ডাল তেল অনলাইনে পেতে আইডি খোলার অফার দেয়া হয়। এসব পণ্য কেনার জন্য বিনিয়োগ হিসেবে এক হাজার টাকায় আইডি খুললে ওই আইডির বিপরীতে যে টাকা বিনিয়েগ করা হবে তিন মাসে তার দিগুণ টাকা লাভ করা যাবে বলে প্রচারণা চালানো হয়। বিভিন্ন ব্যক্তিদের মাধ্যমে প্রথমে টার্গেট ব্যক্তিদের এখানে বিনিয়োগ করানো হয়। বলা হয় চাল ডাল তেলসহ বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয়ের জন্য আইডি খোলার পর প্রথমে সেগুলো নিয়মিত সরবরাহ করতে। এরপর তাদের বলা হতো, পুরাতন সদস্যরা কেউ যদি নতুন বিনিয়োগকারী তৈরি করতে পারে তার বিপরীতে নতুন বিনিয়োগকারীরা যে টাকা বিনিয়োগ করবে বা আইডি খুলবে এ জন্য নির্ধারিত লভ্যাংশ মিলবে। পুরাতন বিনিয়োগকারীদের এভাবে লোভ দেখিয়ে তাদের মাধ্যমে নতুন বিনিয়োগকারী এনে কোম্পানিতে যুক্ত করা হতো।

তদন্তে বেরিয়ে আসে, আইডির বিপরীতে পয়েন্ট বা অর্থ যুক্ত হলেও সেটাকা দেয়া হতো না। বিভিন্ন সমস্যা বা সরাকারি বিভিন্ন নিয়মের কথা বলে টাকা পরে দেয়া হবে বলে জানানো হতো। এভাবে তারা ৩০০ আইডি বিক্রি করে মার্কেট থেকে ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কোন কোন গ্রাহক একাধিক আইডিও খুলেছে। আইডি খোলার পর প্রথমে কিছু টাকা পেলেও পরে আর টাকা পায়নি।

সিআইডি জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি অভিযান চালিয়ে সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং ম্যানেজার মো. সাইদুর রহমান সোহেলকে আটক করা হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর সোহরাব হোসেন শুভ চৌধুরী, মার্কেটিং এবং একাউন্টস কর্মকর্তা নাজমুন্নাহার, আইটি ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ ইমন নামে পাঁচজন অভিযানের সময় পালিয়ে যায়। সিআইডি অফিসে তল্লাশি চালিয়ে একটি এলিয়ন প্রাইভেট কার, রেজিস্টার খাতা, চাকরি প্রত্যাশীদের বায়োডাটা, লোহার রড, হাতুরি, সিল, ডিলার নিয়োগের চুক্তিপত্র, মোবাইলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করেছে।

সিআইডি জানিয়েছে, সংঘবদ্ধ চক্রটি একটি প্রতারক চক্র। কোম্পানিতে ডিলার নিয়োগ, অনলাইনে আইডি খোলা, কোম্পানির শেয়ার বিক্রি এবং চাকরি দেয়ার নামেও বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন এ চক্রের ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হয়েছে। চক্রটি কখনও এক জায়গায় অফিস রাখত না। একেক সময় একেক জায়গায় অফিস নিয়ে প্রতারণা করত। বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা নিত।

চক্রটি দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৩০ লাখ আইডি বিক্রি করেছে যার বিনিময়ে ৩০০ কোটি টাকা ইতোমধ্যে হাতিয়ে নেয়ার তথ্য মিলেছে। কোম্পানির শেয়ার বিক্রি, ডিলার নিয়োগসহ বিভিন্ন প্রতারণার মাধ্যমে কি পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। যারা পালিয়ে গেছে তাদের ধরতে পারলে অর্থের পরিমাণ জানা যাবে। এ চক্রের মূল হোতাকে গ্রেপ্তার করতে পারলে তাদের প্রতারণার ফাঁদে কত লোক ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাও বেরিয়ে আসবে।