নতুন বছরে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন ফুল চাষিরা

করোনা পরিস্থিতিতে গত দুই বছরে বড় সংকটে পড়েছিল ফুল চাষিরা। এর মধ্যে অনেকে অন্য পেশায় চলে গেছেন। কেউ কেউ ফুল চাষের জমি কমিয়ে দিয়েছেন। যারা ৫ একর জমিতে চাষ করতেন তারা এখন ২ একর জমি চাষ করছেন। তবে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় এবং টিকা কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ায় আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীরা। নতুন বছরে নতুন প্রত্যাশা নিয়ে এগোচ্ছেন তারা।

বছর জুড়ে নানা আয়োজনে ফুলের চাহিদা থাকে। তবে শীতের এই সময়কে কেন্দ্র করে সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন ফুল ব্যবসায়ীরা। অনান্য সময়ে জুড়ে যে ব্যবসা হয় তার দিগুণ ব্যবসা হয় বছরের এই সময়ে। ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় পার করে বছরের এই সময়ে। ঝড়-বৃষ্টি, করোনা পরিস্থিতি সব কিছুর শেষে নতুন করে নতুন উদ্যোমে ফুলের ব্যবসা জমানোর চেষ্টা করছে ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুল রহিম সংবাদকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতে আমাদের যে লস হয়েছিল এ বছর আমরা আশাবাদী যে এবার ভালো ব্যবসা করতে পারব। এখন পর্যন্ত আমরা ভালো ব্যবসা করছি। গত ১৬ ডিসেম্বরে শুধু যশোর থেকে আমরা কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেছি। সামনে যে প্রোগ্রামগুলো আসছে যেমন পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস, আর্ন্তজাতিক মার্তৃভাষা ও শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, পহেলা বৈশাখ তাতে আমরা আরো ভালো ব্যবসা করতে পারব। আগের অবস্থায় আমরা ফিরে যেতে পারিনি তবে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত ২০১৮-২০১৯ সালে আমরা দেড় হাজার কোটি টাকার বাজার দাঁড় করিয়েছিলাম। তবে দুই বছর করোনা না থাকলে হয়ত কার্যকর হত। কিন্তু বাজার থমকে গেছে। এখন এ পরিস্থিতিতে আমরা ওভারওল মনে করছি যে সামনে প্রোগ্রামগুলো হলে দেশ স্বাভাবিক থাকলে আমরা একটা ভালো অবস্থানে যেতে পারব। সারা বছরের তুলনায় ডিসেম্বর থেকে মার্চে আমাদের ফুলের ব্যবসা ভালো হয়।’

জানা যায়, এ বছর সারাদেশে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ করা হয়েছে। যশোরে ১৫শ’ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ করছে। আর শুধুমাত্র যশোরে ২০ হাজার কৃষক জমিতে ফুলের চাষ করছেন। তারা ১১ ধরনের ফুলের চাষ করেন। গাঁদা, গোলাপ, রজনীগন্ধা, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকা, জিপসি, রডস্টিক এসব ফুলের চাষ হয়।

অনেকে বলছেন, করোনার মধ্যে ফুল চাষিরা ফুল চাষ বাদ দিয়ে অন্য পেশায় চলে গেছে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি জানান, এটা ভুল একটা তথ্য। কোন চাষি ফুলের চাষ ছেড়ে দেননি। তারা ফুল চাষের পাশাপাশি অন্য ফসল চাষ করছেন।

গতকাল শাহবাগের ফুল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হয়। ৩৭ বছর ধরে ফুলের ব্যবসা করা পাইকারি ফুল ব্যবসায়ী জুয়েল হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘গত ২ বছরের তুলনায় এবার ব্যবসা ভালো হচ্ছে। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো থাকলে ব্যবসাও ভালো হয়। আর খারাপ থাকলে ব্যবসাও খারাপ হয়। তখন তারা বাড়তি টাকা খরচ করে ফুল কিনতে চান না।’

ফুলের দাম বর্তমানে কেমন চলছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ফুলের দাম আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এক সময় ১শ’ দেশি গোলাপের দাম ছিল দুইশ’ থেকে তিনশ’ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৫শ’ থেকে ১৬শ’ টাকায়।

ফুলের দামের বিষয়ে আরেকজন ফুল ব্যবসায়ী শাহাদাৎ আলি সংবাদকে বলেন, ‘বর্তমানে ফুলের দাম বেশি। পাইকারি রেটেই বেশি দামে ফুল কিনতে হচ্ছে। তাই আমরা খুচরা বাজারেও বেশি দামে বিক্রি করছি। আগে একটা দেশি গোলাপ দুই থেকে তিন টাকায় কিনতাম। এখন সেটির দাম অনেকগুণ বেড়ে ১৫ থেকে ২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আমরা সেটিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা লাভ করে ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করছি।’

করোনা সংকটের সময়ের চেয়ে ফুলের দাম বেচাকেনা বেড়েছে জানিয়ে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘করোনার সময়ের চেয়ে বেচাকেনা বেড়েছে। তবে এখনও আগের স্বাভাবিক সময়ের মতো হয়নি। আর দাম একটু বেশি তাই ক্রেতারা কম ফুল কিনছে।’

তবে দেশে ফুলের ব্যবহার বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগে ফুলের ব্যবসা রাজধানী কেন্দ্রীক ছিল। তবে বর্তমানে সারাদেশে ফুলের ব্যবহার বাড়ছে। এখন বেশিরভাগ ফুল ঢাকার বাইরে চলে যাওয়ায় ঢাকায় ফুলের দাম বেশি।’

শাহবাগের ফুল ব্যবসায়ী রুবেল আহমেদ বলেন, ‘ব্যবসা ভালোই চলছে। সরবরাহ বেশি চাহিদাও বেশি। এখন একটা চাইনিজ গোলাপ ৮৫ টাকায় কিনে ১৫০ টাকায় বিক্রি করি। ব্ল্যাক রোজ এক পিস ১৫০০ টাকা। ২ বছর দোকান করতে পারিনি এখন আগের ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা করছি। তবে অনেক কষ্ট হচ্ছে।

ফুল ব্যবসায়ীরা জানান, চাইনিজ গোলাপ প্রতি পিস ৪৫ টাকায় কিনে ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি করে। দেশি গোলাপের প্রতি পিস ১৫ টাকায় কিনে বিক্রি ২০-২৫ টাকায়। জারবেরা ২০ টাকায় কেনা বিক্রি ২৫ টাকা। গ্লাডিওলাস ১৮-২০ টাকা কেনা পড়ে বিক্রি হয় ৩০-৫০ টাকায়। রজনীগন্ধা ২০-২৫ টাকা।

সোমবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২২ , ১৯ পৌষ ১৪২৮ ২৯ জমাদিউল আউয়াল

নতুন বছরে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন ফুল চাষিরা

মাধবী কুজুর

image

করোনা পরিস্থিতিতে গত দুই বছরে বড় সংকটে পড়েছিল ফুল চাষিরা। এর মধ্যে অনেকে অন্য পেশায় চলে গেছেন। কেউ কেউ ফুল চাষের জমি কমিয়ে দিয়েছেন। যারা ৫ একর জমিতে চাষ করতেন তারা এখন ২ একর জমি চাষ করছেন। তবে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় এবং টিকা কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ায় আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীরা। নতুন বছরে নতুন প্রত্যাশা নিয়ে এগোচ্ছেন তারা।

বছর জুড়ে নানা আয়োজনে ফুলের চাহিদা থাকে। তবে শীতের এই সময়কে কেন্দ্র করে সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন ফুল ব্যবসায়ীরা। অনান্য সময়ে জুড়ে যে ব্যবসা হয় তার দিগুণ ব্যবসা হয় বছরের এই সময়ে। ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় পার করে বছরের এই সময়ে। ঝড়-বৃষ্টি, করোনা পরিস্থিতি সব কিছুর শেষে নতুন করে নতুন উদ্যোমে ফুলের ব্যবসা জমানোর চেষ্টা করছে ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুল রহিম সংবাদকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতে আমাদের যে লস হয়েছিল এ বছর আমরা আশাবাদী যে এবার ভালো ব্যবসা করতে পারব। এখন পর্যন্ত আমরা ভালো ব্যবসা করছি। গত ১৬ ডিসেম্বরে শুধু যশোর থেকে আমরা কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেছি। সামনে যে প্রোগ্রামগুলো আসছে যেমন পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস, আর্ন্তজাতিক মার্তৃভাষা ও শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, পহেলা বৈশাখ তাতে আমরা আরো ভালো ব্যবসা করতে পারব। আগের অবস্থায় আমরা ফিরে যেতে পারিনি তবে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত ২০১৮-২০১৯ সালে আমরা দেড় হাজার কোটি টাকার বাজার দাঁড় করিয়েছিলাম। তবে দুই বছর করোনা না থাকলে হয়ত কার্যকর হত। কিন্তু বাজার থমকে গেছে। এখন এ পরিস্থিতিতে আমরা ওভারওল মনে করছি যে সামনে প্রোগ্রামগুলো হলে দেশ স্বাভাবিক থাকলে আমরা একটা ভালো অবস্থানে যেতে পারব। সারা বছরের তুলনায় ডিসেম্বর থেকে মার্চে আমাদের ফুলের ব্যবসা ভালো হয়।’

জানা যায়, এ বছর সারাদেশে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ করা হয়েছে। যশোরে ১৫শ’ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ করছে। আর শুধুমাত্র যশোরে ২০ হাজার কৃষক জমিতে ফুলের চাষ করছেন। তারা ১১ ধরনের ফুলের চাষ করেন। গাঁদা, গোলাপ, রজনীগন্ধা, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকা, জিপসি, রডস্টিক এসব ফুলের চাষ হয়।

অনেকে বলছেন, করোনার মধ্যে ফুল চাষিরা ফুল চাষ বাদ দিয়ে অন্য পেশায় চলে গেছে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি জানান, এটা ভুল একটা তথ্য। কোন চাষি ফুলের চাষ ছেড়ে দেননি। তারা ফুল চাষের পাশাপাশি অন্য ফসল চাষ করছেন।

গতকাল শাহবাগের ফুল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হয়। ৩৭ বছর ধরে ফুলের ব্যবসা করা পাইকারি ফুল ব্যবসায়ী জুয়েল হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘গত ২ বছরের তুলনায় এবার ব্যবসা ভালো হচ্ছে। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো থাকলে ব্যবসাও ভালো হয়। আর খারাপ থাকলে ব্যবসাও খারাপ হয়। তখন তারা বাড়তি টাকা খরচ করে ফুল কিনতে চান না।’

ফুলের দাম বর্তমানে কেমন চলছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ফুলের দাম আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এক সময় ১শ’ দেশি গোলাপের দাম ছিল দুইশ’ থেকে তিনশ’ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৫শ’ থেকে ১৬শ’ টাকায়।

ফুলের দামের বিষয়ে আরেকজন ফুল ব্যবসায়ী শাহাদাৎ আলি সংবাদকে বলেন, ‘বর্তমানে ফুলের দাম বেশি। পাইকারি রেটেই বেশি দামে ফুল কিনতে হচ্ছে। তাই আমরা খুচরা বাজারেও বেশি দামে বিক্রি করছি। আগে একটা দেশি গোলাপ দুই থেকে তিন টাকায় কিনতাম। এখন সেটির দাম অনেকগুণ বেড়ে ১৫ থেকে ২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আমরা সেটিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা লাভ করে ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করছি।’

করোনা সংকটের সময়ের চেয়ে ফুলের দাম বেচাকেনা বেড়েছে জানিয়ে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘করোনার সময়ের চেয়ে বেচাকেনা বেড়েছে। তবে এখনও আগের স্বাভাবিক সময়ের মতো হয়নি। আর দাম একটু বেশি তাই ক্রেতারা কম ফুল কিনছে।’

তবে দেশে ফুলের ব্যবহার বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগে ফুলের ব্যবসা রাজধানী কেন্দ্রীক ছিল। তবে বর্তমানে সারাদেশে ফুলের ব্যবহার বাড়ছে। এখন বেশিরভাগ ফুল ঢাকার বাইরে চলে যাওয়ায় ঢাকায় ফুলের দাম বেশি।’

শাহবাগের ফুল ব্যবসায়ী রুবেল আহমেদ বলেন, ‘ব্যবসা ভালোই চলছে। সরবরাহ বেশি চাহিদাও বেশি। এখন একটা চাইনিজ গোলাপ ৮৫ টাকায় কিনে ১৫০ টাকায় বিক্রি করি। ব্ল্যাক রোজ এক পিস ১৫০০ টাকা। ২ বছর দোকান করতে পারিনি এখন আগের ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা করছি। তবে অনেক কষ্ট হচ্ছে।

ফুল ব্যবসায়ীরা জানান, চাইনিজ গোলাপ প্রতি পিস ৪৫ টাকায় কিনে ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি করে। দেশি গোলাপের প্রতি পিস ১৫ টাকায় কিনে বিক্রি ২০-২৫ টাকায়। জারবেরা ২০ টাকায় কেনা বিক্রি ২৫ টাকা। গ্লাডিওলাস ১৮-২০ টাকা কেনা পড়ে বিক্রি হয় ৩০-৫০ টাকায়। রজনীগন্ধা ২০-২৫ টাকা।