শিক্ষক সংকটে ব্যাহত পাঠদান

১০১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬০ শিক্ষকের পদ শূন্য

দেশের দক্ষিণ উপকূলের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক স্বল্পতা দীর্ঘদিনের। বছরের পর বছর সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদগুলো পূরণ হচ্ছে না। যার ফলে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তেমনি বাড়তি চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নিয়মিত শ্রেণি শিক্ষকরা। শিক্ষক সঙ্কটে থাকা বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরাও এ নিয়ে বিরক্ত। বারবার উপজেলা শিক্ষা অফিসে ধরণা দিলেও এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। তাই ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরা।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, কলাপাড়া উপজেলায় ১৭৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২৯৯৫২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ১০১টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬০ জন সহকারী শিক্ষক ও ১ জন প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় ওই সব প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক শৃঙ্খলাও ভেঙ্গে পড়েছে। শিক্ষক স্বল্পতায় মানসম্মত ফলাফলের দিক দিয়েও পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই অভিভাবকদের।

অভিভাবকদের মধ্যে অনেকেই বলেন, শিক্ষক স্বল্পতার কারণে নিয়মিত পাঠদান না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের এমন ফলাফল। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে আগামী দিনে উপজেলায় ভালো ফলাফল আসবে না। ওই বিদ্যালয়গুলোতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ও পাঠদান কার্যক্রম। শিক্ষক সঙ্কটে পড়ে চরম ভোগান্তিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিনের পাঠদান কার্যক্রম চলছে কোন রকম জোড়াতালি দিয়ে। উপজেলায় কিছু মহিলা শিক্ষক মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় ও বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে প্রশিক্ষণে থাকায় চলমান সঙ্কট আরও প্রকট হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মেধা, মনন ও প্রতিভা বিকাশের উপযুক্ত স্থান হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্তু প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের শিক্ষক স্বল্পতায় হোঁচট খেতে হচ্ছে।

শিক্ষক স্বল্পতায় থাকা বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নিজেদের ইচ্ছে মতো ক্লাস নিয়ে থাকেন। কোন কোন বিদ্যালয়ে অফিসের কাজের পাশাপাশি এক শিক্ষককে দুটি ক্লাসে ও পাঠদান কার্যক্রম চালাতে হয়। তাই শিক্ষকরা একদিকে অতিরিক্ত কাজ আর পাঠদান কার্যক্রমে ক্লান্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে এক বা দুটি বিষয় সারা দিন পড়া নিয়ে শিক্ষার্থীরাও বিরক্ত হচ্ছে। আর এ কারণেই অনেক বিদ্যালয় খুদে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় যেতে আগ্রহ হারাচ্ছে। ওইসব বিদ্যালয় সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল ও আশানুরূপ হচ্ছে না। যেসব বিদ্যালয়ের ফলাফল ভালো হয় তারাও আশানুরূপ ফলাফল অর্জন করতে না পারায় হতাশায় বাড়ছে।

অভিভাবকরা তাদের মতামত ব্যক্ত করে জানান, শিক্ষক স্বল্পতার এমন বেহাল দশার কারণে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অভিভাবকেরা। দ্রুত এ অবস্থার উওোরন না হলে শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। কিছু কিছু শিক্ষক বদলি নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। ২১টি প্রধান শিক্ষক পদ নিয়ে মামলা চলমান রয়েছে।

অনন্তপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মো. শহিদুল আলম বলেন, আমার বিদ্যালয় শিক্ষকের ৭টি পদের ২টি পদ শূন্য। ৫ জন মধ্যে একজন আছেন পিটিআইতে। আমার বিদ্যালয় ২৫০ জন ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাশ করা ৪ জন শিক্ষকের পক্ষে মোটেই সম্ভব নয়। জরুরি ভিত্তিতে শূন্য পদগুলো শিক্ষক দেয়ার জন্য জোর দাবি জানিয়ে আসছি।

এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল বাশার বলেন, শিক্ষক সঙ্কটের বিষয়টি অবগত আছি। উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সহকারী শিক্ষক নেই সেগুলোতে শীঘ্রই শূন্য পদে শিক্ষক দেয়া হবে। সামনে নিয়োগ পরীক্ষা শেষ হলে আমরা একশত ভাগ সহকারী শিক্ষক পাবো। আর প্রধান শিক্ষক নিয়ে যে মামলা চলমান। তারা সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক দাবি করছে। আদালতের নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদ মর্যাদা দেয়া যাবে না।

image

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) : বিদ্যালয়ের সুন্দর ভবন ও মনোরম পরিবেশ থাকলে শিক্ষক সংকটে খুঁড়িয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম -সংবাদ

আরও খবর
রংপুরে ব্রয়লার-সোনালী মুরগির দাম ঊর্ধ্বমুখী
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২২ মাদকসেবী আটক
মা-মেয়ের গলাকাটা মরদেহ

সোমবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২২ , ১৯ পৌষ ১৪২৮ ২৯ জমাদিউল আউয়াল

শিক্ষক সংকটে ব্যাহত পাঠদান

১০১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬০ শিক্ষকের পদ শূন্য

কাজী সাঈদ, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)

image

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) : বিদ্যালয়ের সুন্দর ভবন ও মনোরম পরিবেশ থাকলে শিক্ষক সংকটে খুঁড়িয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম -সংবাদ

দেশের দক্ষিণ উপকূলের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক স্বল্পতা দীর্ঘদিনের। বছরের পর বছর সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদগুলো পূরণ হচ্ছে না। যার ফলে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তেমনি বাড়তি চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নিয়মিত শ্রেণি শিক্ষকরা। শিক্ষক সঙ্কটে থাকা বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরাও এ নিয়ে বিরক্ত। বারবার উপজেলা শিক্ষা অফিসে ধরণা দিলেও এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। তাই ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরা।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, কলাপাড়া উপজেলায় ১৭৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২৯৯৫২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ১০১টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬০ জন সহকারী শিক্ষক ও ১ জন প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় ওই সব প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক শৃঙ্খলাও ভেঙ্গে পড়েছে। শিক্ষক স্বল্পতায় মানসম্মত ফলাফলের দিক দিয়েও পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই অভিভাবকদের।

অভিভাবকদের মধ্যে অনেকেই বলেন, শিক্ষক স্বল্পতার কারণে নিয়মিত পাঠদান না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের এমন ফলাফল। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে আগামী দিনে উপজেলায় ভালো ফলাফল আসবে না। ওই বিদ্যালয়গুলোতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ও পাঠদান কার্যক্রম। শিক্ষক সঙ্কটে পড়ে চরম ভোগান্তিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিনের পাঠদান কার্যক্রম চলছে কোন রকম জোড়াতালি দিয়ে। উপজেলায় কিছু মহিলা শিক্ষক মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় ও বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে প্রশিক্ষণে থাকায় চলমান সঙ্কট আরও প্রকট হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মেধা, মনন ও প্রতিভা বিকাশের উপযুক্ত স্থান হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্তু প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের শিক্ষক স্বল্পতায় হোঁচট খেতে হচ্ছে।

শিক্ষক স্বল্পতায় থাকা বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নিজেদের ইচ্ছে মতো ক্লাস নিয়ে থাকেন। কোন কোন বিদ্যালয়ে অফিসের কাজের পাশাপাশি এক শিক্ষককে দুটি ক্লাসে ও পাঠদান কার্যক্রম চালাতে হয়। তাই শিক্ষকরা একদিকে অতিরিক্ত কাজ আর পাঠদান কার্যক্রমে ক্লান্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে এক বা দুটি বিষয় সারা দিন পড়া নিয়ে শিক্ষার্থীরাও বিরক্ত হচ্ছে। আর এ কারণেই অনেক বিদ্যালয় খুদে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় যেতে আগ্রহ হারাচ্ছে। ওইসব বিদ্যালয় সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল ও আশানুরূপ হচ্ছে না। যেসব বিদ্যালয়ের ফলাফল ভালো হয় তারাও আশানুরূপ ফলাফল অর্জন করতে না পারায় হতাশায় বাড়ছে।

অভিভাবকরা তাদের মতামত ব্যক্ত করে জানান, শিক্ষক স্বল্পতার এমন বেহাল দশার কারণে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অভিভাবকেরা। দ্রুত এ অবস্থার উওোরন না হলে শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। কিছু কিছু শিক্ষক বদলি নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। ২১টি প্রধান শিক্ষক পদ নিয়ে মামলা চলমান রয়েছে।

অনন্তপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মো. শহিদুল আলম বলেন, আমার বিদ্যালয় শিক্ষকের ৭টি পদের ২টি পদ শূন্য। ৫ জন মধ্যে একজন আছেন পিটিআইতে। আমার বিদ্যালয় ২৫০ জন ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাশ করা ৪ জন শিক্ষকের পক্ষে মোটেই সম্ভব নয়। জরুরি ভিত্তিতে শূন্য পদগুলো শিক্ষক দেয়ার জন্য জোর দাবি জানিয়ে আসছি।

এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল বাশার বলেন, শিক্ষক সঙ্কটের বিষয়টি অবগত আছি। উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সহকারী শিক্ষক নেই সেগুলোতে শীঘ্রই শূন্য পদে শিক্ষক দেয়া হবে। সামনে নিয়োগ পরীক্ষা শেষ হলে আমরা একশত ভাগ সহকারী শিক্ষক পাবো। আর প্রধান শিক্ষক নিয়ে যে মামলা চলমান। তারা সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক দাবি করছে। আদালতের নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদ মর্যাদা দেয়া যাবে না।