নিজেকে নতুন করে চেনালেন জয়

বাংলাদেশ টেস্ট দলের হয়ে প্রথম সফরে তরুণ ব্যাটার মাহমুদুল হাসান জয় নাম লেখালেন রেকর্ডের পাতায়।

১৬৫ বলে ফিফটি। দিন শেষে ২১১ বলে অপরাজিত ৭০। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের দ্বিতীয় দিনটায় নিজেকে যেন নতুন করে চেনালেন জয়। এই প্রথম বাংলাদেশের কোন ওপেনার নিউজিল্যান্ডে খেলতে পারল দেড়শর বেশি বল।

এই তথ্য আর সংখ্যাগুলিতে ফুটে উঠছে ধৈর্য। যেভাবে সংখ্যাগুলির জন্ম, তাতে মিশে আছে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ও হাল না ছাড়া মানসিকতা। ধৈর্য আর প্রতিজ্ঞার মিশেলে ধ্রুপদি টেস্ট ব্যাটিংয়ের প্রতিচ্ছিবি যেন। মাহমুদুলকে ওপেনার বানানো ছিল বড় একটা চমক। তিনি আরও বেশি চমকে দিলেন ব্যাটিং দিয়ে।

গত নভেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের আগে বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক জানান, মাহমুদুলকে ওপেনার হিসেবে দেখছে দল। দেশের ক্রিকেটে তখন প্রশ্ন আর বিস্ময়ের ঝড়। ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে ম্যাচে ওপেন করে সাফল্য তার আছে বটে। তবে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই তিনি তিন-চারে ব্যাট করেন মূলত। যুব টেস্টে খেলেছেন ওই পজিশনগুলোতেই, সেখানে সেঞ্চুরিও আছে চারে নেমে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একবারই ওপেন করার অভিজ্ঞতা তার ছিল আগে।

এমন একজনকে ওপেনার বানানো যেমন আলোচনার খোরাক হওয়ার মতো, তেমনি তা ফুটিয়ে তোলে দেশের পাইপলাইনের দীনতাও। বিকল্প উপযুক্ত ওপেনার না পেয়ে তরুণ প্রতিভাবান একজনের ব্যাটিং পজিশন নিয়ে এরকম ঝুঁকিপূর্ণ টানাটানি!

তবে পজিশন যেটাই হোক, তার জন্য এটি বড় সুযোগ। তিনি এমনভাবে সুযোগটা নিলেন, নিজেকেই চেনালেন নতুন করে।

অভিষেকটা তার ভুলে যাওয়ার মতোই ছিল। গত মাসে শেরেবাংলায় পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ফেরেন শূন্য রানে, পরের ইনিংসে ৬।

নিউজিল্যান্ডে চ্যালেঞ্জটা আরও কঠিন। বিশ্বের বড় বড় ব্যাটসম্যানরাও ওখানকার কন্ডিশনে মানিয়ে নিতে হিমশিম খান। বাংলাদেশের আছে সেখানে অনেক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। কন্ডিশনকে কাজে লাগানোর মতো দুর্দান্ত পেস আক্রমণ কিউইদের। ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, নিল ওয়াগনার ও কাইল জেমিসনকে নিয়ে গড়া পেস আক্রমণ দলকে এনে দিয়েছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি। বিরুদ্ধ এই পারিপার্শ্বিকতার মধ্যেও মাহমুদুল মেলে ধরলেন নিজেকে।

বে ওভালের উইকেট অবশ্য এবার ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভালো। টেস্টের আগে একমাত্র প্রস্ততি ম্যাচে ফিফটি করে কিছুটা আত্মবিশ্বাসও সঙ্গী হওয়ার কথা মাহমুদুলের। চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞতায় তিনি উইকেট আঁকড়ে রাখলেন দুই সেশনের বেশি।

ইনিংসটি নিখুঁত ছিল না অবশ্যই। বরং নাভার্স মুহূর্ত এসেছে অনেক। অস্বস্তিও ফুটে উঠেছে বেশ কবার। নিউজিল্যান্ড রিভিউ নিলে তিনি আউট হতে পারতেন ২০ রানেই। এছাড়া তার টেকনিক ও স্কিলের কিছু ঘাটতিও প্রকাশ্য হয়েছে। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ডিফেন্স করেছেন বারবার, যেগুলো ছেড়ে দেয়া যায় অনায়াসেই। সেই চেষ্টায় বিপদেও প্রায় পড়ে যাচ্ছিলেন কয়েক দফায়। শাফল করে মিডল স্টাম্প থেকে ফ্লিক করার প্রবণতাও দেখা গেছে বারবার, ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ যা।

তবে দিনটি ছিল তার। লড়াই চালিয়ে দিনটি নিজের করে নেয়ার কৃতিত্বও তার। মাত্র ৬টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচের অভিজ্ঞতায় টেস্ট খেলতে নামা ২১ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং দুর্বলতা কিছু থাকাই স্বাভাবিক। সেসব নিয়ে কাজ করার সময়ও আছে সামনে। কিন্তু ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টেই যে টেম্পারমেন্ট, যে মানসিকতার ছাপ তিনি রেখেছেন, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতিচ্ছবি সেখানেই।

মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে রোববার দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান জানান, এই জুটির শুরুর তাদের ভাবনার কথা।

“(মাহমুদুল) জয় আর সাদমান শুরুতে খুব ভালো একটা জুটি গড়েছে। যে কারণে, ব্যাটিংয়ে যাওয়ার পর আমার জন্য সুবিধা হয়েছে।”

“আমার আর জয়ের যে পরিকল্পনা ছিল, আমরা লম্বা চিন্তা করিনি, একটা-একটা বল চিন্তা করেছি। আমাদের পুরো দিন খেলতে হবে বা আমাদের এত রান করতে হবে, এমন কোন পরিকল্পনা ছিল না। আমাদের পরিকল্পনাই ছিল কীভাবে একটা বল, একটা ওভার, একটা ঘণ্টা পার করব। যেরকম বল দেখব, তেমনই খেলব, কোনরকম জোড়াজুড়ি করে কিছু করতে যাব না।”

উদ্বোধনী জুটিতে ১০৯ বলে ৪৩ রান তোলেন মাহমুদুল ও সাদমান। দ্বিতীয় উইকেটে মাহমুদুল ও শান্তর প্রথম পঞ্চাশ আসে ১৪৪ বলে, পরের পঞ্চাশ একটু দ্রুত ৮২ বলে। ওয়্যাগনারের বলে শান্ত গালিতে ধরা পড়লে ভাঙে ২৩৯ বল স্থায়ী ১০৪ রানের জুটি।

১০৯ বলে ৬৪ রান করা শান্তর উপলব্ধি তিনি শেষ পর্যন্ত থেকে গেলে আরও ভালো জায়গায় থাকত বাংলাদেশ।

“জয় খুব ভালো ব্যাটিং করেছে। তবে আমি যদি শেষ করে আসতে পারতাম তাহলে আমাদের দিনটা আরও ভালো হতে পারত।”

সোমবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২২ , ১৯ পৌষ ১৪২৮ ২৯ জমাদিউল আউয়াল

নিজেকে নতুন করে চেনালেন জয়

সংবাদ স্পোর্টস ডেস্ক

image

হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর ব্যাট তুলে ধরেন জয়

বাংলাদেশ টেস্ট দলের হয়ে প্রথম সফরে তরুণ ব্যাটার মাহমুদুল হাসান জয় নাম লেখালেন রেকর্ডের পাতায়।

১৬৫ বলে ফিফটি। দিন শেষে ২১১ বলে অপরাজিত ৭০। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের দ্বিতীয় দিনটায় নিজেকে যেন নতুন করে চেনালেন জয়। এই প্রথম বাংলাদেশের কোন ওপেনার নিউজিল্যান্ডে খেলতে পারল দেড়শর বেশি বল।

এই তথ্য আর সংখ্যাগুলিতে ফুটে উঠছে ধৈর্য। যেভাবে সংখ্যাগুলির জন্ম, তাতে মিশে আছে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ও হাল না ছাড়া মানসিকতা। ধৈর্য আর প্রতিজ্ঞার মিশেলে ধ্রুপদি টেস্ট ব্যাটিংয়ের প্রতিচ্ছিবি যেন। মাহমুদুলকে ওপেনার বানানো ছিল বড় একটা চমক। তিনি আরও বেশি চমকে দিলেন ব্যাটিং দিয়ে।

গত নভেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের আগে বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক জানান, মাহমুদুলকে ওপেনার হিসেবে দেখছে দল। দেশের ক্রিকেটে তখন প্রশ্ন আর বিস্ময়ের ঝড়। ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে ম্যাচে ওপেন করে সাফল্য তার আছে বটে। তবে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই তিনি তিন-চারে ব্যাট করেন মূলত। যুব টেস্টে খেলেছেন ওই পজিশনগুলোতেই, সেখানে সেঞ্চুরিও আছে চারে নেমে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একবারই ওপেন করার অভিজ্ঞতা তার ছিল আগে।

এমন একজনকে ওপেনার বানানো যেমন আলোচনার খোরাক হওয়ার মতো, তেমনি তা ফুটিয়ে তোলে দেশের পাইপলাইনের দীনতাও। বিকল্প উপযুক্ত ওপেনার না পেয়ে তরুণ প্রতিভাবান একজনের ব্যাটিং পজিশন নিয়ে এরকম ঝুঁকিপূর্ণ টানাটানি!

তবে পজিশন যেটাই হোক, তার জন্য এটি বড় সুযোগ। তিনি এমনভাবে সুযোগটা নিলেন, নিজেকেই চেনালেন নতুন করে।

অভিষেকটা তার ভুলে যাওয়ার মতোই ছিল। গত মাসে শেরেবাংলায় পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ফেরেন শূন্য রানে, পরের ইনিংসে ৬।

নিউজিল্যান্ডে চ্যালেঞ্জটা আরও কঠিন। বিশ্বের বড় বড় ব্যাটসম্যানরাও ওখানকার কন্ডিশনে মানিয়ে নিতে হিমশিম খান। বাংলাদেশের আছে সেখানে অনেক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। কন্ডিশনকে কাজে লাগানোর মতো দুর্দান্ত পেস আক্রমণ কিউইদের। ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, নিল ওয়াগনার ও কাইল জেমিসনকে নিয়ে গড়া পেস আক্রমণ দলকে এনে দিয়েছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি। বিরুদ্ধ এই পারিপার্শ্বিকতার মধ্যেও মাহমুদুল মেলে ধরলেন নিজেকে।

বে ওভালের উইকেট অবশ্য এবার ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভালো। টেস্টের আগে একমাত্র প্রস্ততি ম্যাচে ফিফটি করে কিছুটা আত্মবিশ্বাসও সঙ্গী হওয়ার কথা মাহমুদুলের। চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞতায় তিনি উইকেট আঁকড়ে রাখলেন দুই সেশনের বেশি।

ইনিংসটি নিখুঁত ছিল না অবশ্যই। বরং নাভার্স মুহূর্ত এসেছে অনেক। অস্বস্তিও ফুটে উঠেছে বেশ কবার। নিউজিল্যান্ড রিভিউ নিলে তিনি আউট হতে পারতেন ২০ রানেই। এছাড়া তার টেকনিক ও স্কিলের কিছু ঘাটতিও প্রকাশ্য হয়েছে। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ডিফেন্স করেছেন বারবার, যেগুলো ছেড়ে দেয়া যায় অনায়াসেই। সেই চেষ্টায় বিপদেও প্রায় পড়ে যাচ্ছিলেন কয়েক দফায়। শাফল করে মিডল স্টাম্প থেকে ফ্লিক করার প্রবণতাও দেখা গেছে বারবার, ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ যা।

তবে দিনটি ছিল তার। লড়াই চালিয়ে দিনটি নিজের করে নেয়ার কৃতিত্বও তার। মাত্র ৬টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচের অভিজ্ঞতায় টেস্ট খেলতে নামা ২১ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং দুর্বলতা কিছু থাকাই স্বাভাবিক। সেসব নিয়ে কাজ করার সময়ও আছে সামনে। কিন্তু ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টেই যে টেম্পারমেন্ট, যে মানসিকতার ছাপ তিনি রেখেছেন, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতিচ্ছবি সেখানেই।

মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে রোববার দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান জানান, এই জুটির শুরুর তাদের ভাবনার কথা।

“(মাহমুদুল) জয় আর সাদমান শুরুতে খুব ভালো একটা জুটি গড়েছে। যে কারণে, ব্যাটিংয়ে যাওয়ার পর আমার জন্য সুবিধা হয়েছে।”

“আমার আর জয়ের যে পরিকল্পনা ছিল, আমরা লম্বা চিন্তা করিনি, একটা-একটা বল চিন্তা করেছি। আমাদের পুরো দিন খেলতে হবে বা আমাদের এত রান করতে হবে, এমন কোন পরিকল্পনা ছিল না। আমাদের পরিকল্পনাই ছিল কীভাবে একটা বল, একটা ওভার, একটা ঘণ্টা পার করব। যেরকম বল দেখব, তেমনই খেলব, কোনরকম জোড়াজুড়ি করে কিছু করতে যাব না।”

উদ্বোধনী জুটিতে ১০৯ বলে ৪৩ রান তোলেন মাহমুদুল ও সাদমান। দ্বিতীয় উইকেটে মাহমুদুল ও শান্তর প্রথম পঞ্চাশ আসে ১৪৪ বলে, পরের পঞ্চাশ একটু দ্রুত ৮২ বলে। ওয়্যাগনারের বলে শান্ত গালিতে ধরা পড়লে ভাঙে ২৩৯ বল স্থায়ী ১০৪ রানের জুটি।

১০৯ বলে ৬৪ রান করা শান্তর উপলব্ধি তিনি শেষ পর্যন্ত থেকে গেলে আরও ভালো জায়গায় থাকত বাংলাদেশ।

“জয় খুব ভালো ব্যাটিং করেছে। তবে আমি যদি শেষ করে আসতে পারতাম তাহলে আমাদের দিনটা আরও ভালো হতে পারত।”