করোনায় ‘ঘরে ফেরা’দের জন্য ৫০০ কোটি টাকার তহবিল

করোনা মহামারী ও অন্যান্য কারণে গ্রামে ফিরে যাওয়া জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনে কম সুদে ঋণ দিতে ৫০০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রয়েজনে তহবিলের পরিমান বাড়ানো হবে বলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ তহবিল থেকে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদে ৩ বছর মেয়াদী ঋণ দেওয়া হবে।

গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিমে অংশগ্রহণে আগ্রহী ব্যাংকগুলোকে সার্কুলার জারির পরবর্তী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগের সাথে যোগাযোগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সার্কুলারে বলা হয়, করোনার কারণে শহরকেন্দ্রিক জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মজীবী মানুষ হঠাৎ কর্ম হারিয়ে গ্রামাঞ্চলে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে। এ সকল মানুষের অধিকাংশই এখন গ্রামে অবস্থান করছে এবং মানবেতর জনগোষ্ঠীকে আনা একান্ত প্রয়োজন। অন্যথায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির এক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা মহামারিতে ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে এবং চাকরিচ্যুত হয়ে কমপক্ষে এক কোটি মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনানুষ্ঠানিক খাত। ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ রিকশাচালক শহর ছেড়েছেন। বহু মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। কেউ ব্যবসায় লোকসান দিয়ে মূলধন হারিয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যারা গ্রামে চলে গেছেন, তাদের প্রায় অর্ধেক লোকের শহরে ফেরার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। এই বিশাল জনগোষ্ঠী গ্রামে চলে যাওয়ার কারণে সেখানে শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে গেলেও কর্মসংস্থান বাড়েনি। মজুরি বা আয়ের পরিমাণ কমে গেছে। অন্যদিকে বাজারে পণ্যমূল্যও ঊর্ধ্বমুখী। এর ফলে নতুন দরিদ্র জনগোষ্ঠী সৃষ্টি হচ্ছে।

সার্কুলারে আরো বলা হয়, করোনায় ‘ঘরে ফেরা’ তহবিল থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হবে। জামানতবিহীন ৩ বছর মেয়াদি এ ঋণের গ্রেস সর্বোচ্চ পিরিয়ড হবে ৬ মাস। এ স্কিমের ঋণ কোনভাবেই গ্রহাকের পুরাতন ঋণ সমন্বয়ের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। এ স্কিমের মেয়ার শেষ হবে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর। তবে, গ্রাহক পর্যায় হতে আদায় কার্যক্রম স্কিমের মেয়াদ পরবর্তী সময়েও অব্যাহত থাকবে।

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এ তহবিল থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে আরও সাড়ে ৫ শতাংশসহ সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ আদায় করতে পারবে। এর বাইরে অন্য কোনো সুদ বা চার্জ আরোপ করা যাবে না। কোনো ব্যাংক এ তহবিল ব্যবহারের অনিয়ম করলে তাদেরকে আরও দুই শতাংশ হারে জরিমানা করা হবে।

গ্রাহক পর্যায়ে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ৩ মাসে গ্রেস পিরিয়ডসহ ২ বছর মেয়াদে ঋণ দেওয়া যাবে। এছাড়া ২ লাখ টাকার বেশি থেকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ৬ মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩ বছর মেয়াদে ঋণ দেওয়া যাবে। তবে, ৫ লাখ টাকা ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে বেশকিছু খাত নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এগুলো হলো- স্বল্প পুঁজির স্থানীয় ব্যবসা, পরিবহন খাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি যানবাহন ক্রয়, ক্ষুদ্র প্রকৌশল শিল্প, মৎস চাষ, গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগি পালন, তথ্য প্রযুক্তি সেবা কেন্দ্র ও অন্যান্য সেবা উৎসারী কর্মকা-, বসতঘর নির্মাণ/সংস্কার, সবজি ও ফলের বাগান, কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয় ও ফসল বিপণন।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই উদ্যোগটি একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। তবে, করোনা মহামারীর সময় যখন মানুষ ঘরে ফিরে গিয়েছিল তখন এই উদ্যোগ নিলে প্রান্তিক জনগণ আরো বেশি উপকৃত হতো।

তিনি বলেন, ঋণপ্রাপ্ত যোগ্যদের যাচাই-বাছাইকরণ পক্রিয়াটি কি ভাবে হচ্ছে তা গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে যারা করোনার কারণে একবারে গ্রামে ফিরে গেছে তাদের কিভাবে চিহ্নিত করা হবে তা নির্ধারণ করতে হবে।

রাজনৈতিক বা প্রভাবশালী মাধ্যমে ব্যবহার করে কেউ যেন সুবিধাভোগী না হয়ে যায় সে দিকে নজর দিতে হবে।

মঙ্গলবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২২ , ২০ পৌষ ১৪২৮ ৩০ জমাদিউল আউয়াল

করোনায় ‘ঘরে ফেরা’দের জন্য ৫০০ কোটি টাকার তহবিল

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

করোনা মহামারী ও অন্যান্য কারণে গ্রামে ফিরে যাওয়া জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনে কম সুদে ঋণ দিতে ৫০০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রয়েজনে তহবিলের পরিমান বাড়ানো হবে বলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ তহবিল থেকে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদে ৩ বছর মেয়াদী ঋণ দেওয়া হবে।

গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিমে অংশগ্রহণে আগ্রহী ব্যাংকগুলোকে সার্কুলার জারির পরবর্তী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগের সাথে যোগাযোগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সার্কুলারে বলা হয়, করোনার কারণে শহরকেন্দ্রিক জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মজীবী মানুষ হঠাৎ কর্ম হারিয়ে গ্রামাঞ্চলে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে। এ সকল মানুষের অধিকাংশই এখন গ্রামে অবস্থান করছে এবং মানবেতর জনগোষ্ঠীকে আনা একান্ত প্রয়োজন। অন্যথায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির এক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা মহামারিতে ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে এবং চাকরিচ্যুত হয়ে কমপক্ষে এক কোটি মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনানুষ্ঠানিক খাত। ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ রিকশাচালক শহর ছেড়েছেন। বহু মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। কেউ ব্যবসায় লোকসান দিয়ে মূলধন হারিয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যারা গ্রামে চলে গেছেন, তাদের প্রায় অর্ধেক লোকের শহরে ফেরার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। এই বিশাল জনগোষ্ঠী গ্রামে চলে যাওয়ার কারণে সেখানে শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে গেলেও কর্মসংস্থান বাড়েনি। মজুরি বা আয়ের পরিমাণ কমে গেছে। অন্যদিকে বাজারে পণ্যমূল্যও ঊর্ধ্বমুখী। এর ফলে নতুন দরিদ্র জনগোষ্ঠী সৃষ্টি হচ্ছে।

সার্কুলারে আরো বলা হয়, করোনায় ‘ঘরে ফেরা’ তহবিল থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হবে। জামানতবিহীন ৩ বছর মেয়াদি এ ঋণের গ্রেস সর্বোচ্চ পিরিয়ড হবে ৬ মাস। এ স্কিমের ঋণ কোনভাবেই গ্রহাকের পুরাতন ঋণ সমন্বয়ের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। এ স্কিমের মেয়ার শেষ হবে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর। তবে, গ্রাহক পর্যায় হতে আদায় কার্যক্রম স্কিমের মেয়াদ পরবর্তী সময়েও অব্যাহত থাকবে।

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এ তহবিল থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে আরও সাড়ে ৫ শতাংশসহ সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ আদায় করতে পারবে। এর বাইরে অন্য কোনো সুদ বা চার্জ আরোপ করা যাবে না। কোনো ব্যাংক এ তহবিল ব্যবহারের অনিয়ম করলে তাদেরকে আরও দুই শতাংশ হারে জরিমানা করা হবে।

গ্রাহক পর্যায়ে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ৩ মাসে গ্রেস পিরিয়ডসহ ২ বছর মেয়াদে ঋণ দেওয়া যাবে। এছাড়া ২ লাখ টাকার বেশি থেকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ৬ মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩ বছর মেয়াদে ঋণ দেওয়া যাবে। তবে, ৫ লাখ টাকা ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে বেশকিছু খাত নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এগুলো হলো- স্বল্প পুঁজির স্থানীয় ব্যবসা, পরিবহন খাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি যানবাহন ক্রয়, ক্ষুদ্র প্রকৌশল শিল্প, মৎস চাষ, গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগি পালন, তথ্য প্রযুক্তি সেবা কেন্দ্র ও অন্যান্য সেবা উৎসারী কর্মকা-, বসতঘর নির্মাণ/সংস্কার, সবজি ও ফলের বাগান, কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয় ও ফসল বিপণন।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই উদ্যোগটি একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। তবে, করোনা মহামারীর সময় যখন মানুষ ঘরে ফিরে গিয়েছিল তখন এই উদ্যোগ নিলে প্রান্তিক জনগণ আরো বেশি উপকৃত হতো।

তিনি বলেন, ঋণপ্রাপ্ত যোগ্যদের যাচাই-বাছাইকরণ পক্রিয়াটি কি ভাবে হচ্ছে তা গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে যারা করোনার কারণে একবারে গ্রামে ফিরে গেছে তাদের কিভাবে চিহ্নিত করা হবে তা নির্ধারণ করতে হবে।

রাজনৈতিক বা প্রভাবশালী মাধ্যমে ব্যবহার করে কেউ যেন সুবিধাভোগী না হয়ে যায় সে দিকে নজর দিতে হবে।