জমির উর্বর মাটি ভাটায় ফসল উৎপাদন হুমকিতে

নওগাঁর বদলগাছীতে আইন অমান্য করে প্রকাশ্য দু-তিন ফসলি জমির মাটি কাটছে মাটি ব্যবসায়ী ও বালু মহালের ইজারদাররা। মাটি ব্যবসায়ী ও বালু মহাল ইজারদাররা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই কাটছে মাটি। বেপরোয়া মাটি ব্যবসায়ীরা মানছেন না কোন সরকারি বিধি নিষেধ।

প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একাধিক খননযন্ত্র (এক্সেভেটর) বা ভেকু মেশিন দিয়ে শত শত বিঘা ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে জমির উর্বরাতা শক্তি নষ্ট হচ্ছে। একই সঙ্গে উর্বরতা হারিয়ে অনাবাদি হয়ে পড়ছে আবাদি জমিগুলো। কমতে শুরু করেছে ফসলের উৎপাদনও।

পার্শ্ববর্তী ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, ইটভাটার মালিক ও কতিপয় মাটি ব্যবসায়ী কৃষকদের প্রলোভন দেখিয়ে দেদারছে খননযন্ত্র দিয়ে এসব ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে। ফলে উজাড় হচ্ছে আবাদি জমি। আর ইটভাটাগুলোতে গড়ে উঠছে মাটির পাহাড়। একাধিক ব্যক্তি স্থানীয় প্রশাসনকে অভিযোগ দিলেও স্থানীয় প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী জানান, মাটি কাটার মেশিন (ভেকু) মেশিন দিয়ে জমিতে গভীর করে মাটি কাটা হচ্ছে। মাটির উপরিভাগের ১০-১৫ ইঞ্চির মধ্যে জমির উর্বরাতা শক্তি থাকে। তাই এসব মাটি খুঁড়ে বিক্রি করার ফলে তা পুরনো আদলে ফিরে আসতে ১০-১৫ বছর সময় লাগে যাই। আর বারবার তা খোঁড়া হলে এসব জমিতে ফসল উৎপাদন স্থায়ীভাবে একেবারে অক্ষম হয়ে পড়তে পারে।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন মাঠের ফসলি জমির মাটি কেটে অবৈধভাবে নির্মিত ইটভাটায় বিক্রি জমে উঠেছে। বিলাসবাড়ী ইউনিয়নের বারোফলা গ্রামের নিচু মাঠে রাস্তার ধারে ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছে ওই গ্রামের দু’জন ব্যক্তি। এসকেভেটর মেশিন (ভেকু) দিয়ে গভীর গর্ত করে মাটি কর্তন করায় পার্শ্ববর্তী জমি হুমকির মুখে পড়েছে। পাশের জমির আইল পর্যন্ত কেটে ফেলে তারা। তারা এমনভাবে মাটি কাটছে যাতে করে পাশের জমি মাটি কাটার জন্য ছেড়ে দিতে বাধ্য হন জমির মালিক।

মাটি ব্যবসায়ী দুলু সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, জমির মালিক মাটি দিচ্ছে আপনাদের সমস্যা কোথায়। আপনারা যা পারেন করেন আমারা উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে জমির মাটি কাটছি। কে ম্যানেজ করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন বালু মহল ইজারাদার শহিদুল। কারণ প্রশাসনকে সেই ম্যানেজ করে। এজন্য শহিদুল প্রতি গাড়ি প্রতি ৫০ টাকা করে নেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে বিলাসবাড়ী ভূমি অফিসে যোগাযোগ করলে উপ-সহ-ভূমি কর্মকর্তা কিছু পরেই ঘটনাস্থলে আসেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের মূখে সাথে সাথে কাজ বন্ধ করে দেন। এবং পরেরদিন থেকে সেখানে আবারও কাজ শুরু করেন।

বিভিন্ন এলাকার স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাঠ থেকে আমন ধান ওঠার পরপরই ফসলি জমির মাটি বিক্রি শুরু হয়। উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার মধ্যে বদলগাছী নতুন ব্রিজের পাশে, আধাইপুর জগন্নাথপুর, বিলাসবাড়ির বারোফলা, আধাইপুর, রসুলপুর, বৈকণ্ঠপুর, মিঠাপুর, জগতনগর, কোলা বনগ্রাম,পাহাড়পুর, গোবরচাপাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠে প্রায় অর্ধশতাধিক ভেকু মেশিন দিয়ে দু-তিন ফসলি জমির মাটি প্রায় ৪-৫ ফিট গভীর করে কেটে শত শত ট্রাক্টরে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায়।

অবৈধভাবে মাটি কাটা নিয়ে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে জানানোর পরও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তারা। অন্যদিকে মাটি কাটতে বাধা দিতে গেলে উল্টো ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন হুমকি-ধমকিও দিয়ে আসছে।

সিন্ডিকেট মাটির ব্যবসায়ী চক্রের বেপরোয়া প্রভাবে জমির মালিকরা বাধ্য হয়েই ইটভাটার মালিকদের কাছে মাটি বিক্রি করছেন।

এদিকে মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্রের সদস্য দুলু,শহিদুল,সালাম,জাহিদসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, আবাদি জমির ফসলও দরকার, অন্যদিকে অবকাঠামো উন্নয়নে ইট তৈরিও প্রয়োজন রয়েছে। তবে ইটভাটার মালিকদের কাছে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। আমরা তো জোর করে কাটছি না। তাছাড়া এসব বিষয়ে খবর নিয়ে কোন লাভ নেই ভাই ওপরে ম্যানেজ করেই কাজ করা হচ্ছে। কারণ প্রশাসন তো ম্যানেজ করাই রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী এলাকাবাসী জানান, মাটি বিক্রির সিন্ডিকেট চক্রটি এতই প্রভাবশালী যে তাদের ভয়ে জমির মালিকরা কিছু বলতে সাহস পান না। বাধ্য হয়ে ওই প্রভাবশালীদের কাছে জমির মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হতে হচ্ছে আমাদের।

তবে মাটি কাটা নিয়ে বদলগাছী উপজেলার সদরের একাধিক ব্যক্তি বলেন, ইটভাটায় মাটি সরবরাহের জন্য একশ্রেণির সিন্ডিকেট চক্র গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষকদের মাটি বিক্রি করতে উৎসাহ জোগায়ে স্বল্পমূল্যে উপরিভাগের এসব মাটি কেটে কিনে নিচ্ছে এবং আবাদি জমি এমনভাবে গভীরভাবে খুঁড়ছে যাতে করে ওই জমিতে আর কোনো ফসল উৎপাদন করা সম্ভব না হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলপনা ইয়াসমিন বলেন, যারা বিধি নিষেধ উপেক্ষা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তহসিলদারকে নির্দেশ দিয়েছি।

এলাকার সচেতন মহল বলছেন, এই নির্বাহী অফিসার এখানে যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি। এলাকার মানুষের কোন অভিযোগই দেখেন না তিনি। সেবা গ্রহিতারা তার কাছে কোন বিষয়ে অভিযোগ দিতে গেলে তাদের সঙ্গে করেন খারাপ আচরণ। আর এ কারণে আজ এ অবস্থা।

মঙ্গলবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২২ , ২০ পৌষ ১৪২৮ ৩০ জমাদিউল আউয়াল

জমির উর্বর মাটি ভাটায় ফসল উৎপাদন হুমকিতে

প্রতিনিধি, বদলগাছী (নওগাঁ)

image

বদলগাছী (নওগাঁ) : এভাবেই ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটায় -সংবাদ

নওগাঁর বদলগাছীতে আইন অমান্য করে প্রকাশ্য দু-তিন ফসলি জমির মাটি কাটছে মাটি ব্যবসায়ী ও বালু মহালের ইজারদাররা। মাটি ব্যবসায়ী ও বালু মহাল ইজারদাররা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই কাটছে মাটি। বেপরোয়া মাটি ব্যবসায়ীরা মানছেন না কোন সরকারি বিধি নিষেধ।

প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একাধিক খননযন্ত্র (এক্সেভেটর) বা ভেকু মেশিন দিয়ে শত শত বিঘা ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে জমির উর্বরাতা শক্তি নষ্ট হচ্ছে। একই সঙ্গে উর্বরতা হারিয়ে অনাবাদি হয়ে পড়ছে আবাদি জমিগুলো। কমতে শুরু করেছে ফসলের উৎপাদনও।

পার্শ্ববর্তী ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, ইটভাটার মালিক ও কতিপয় মাটি ব্যবসায়ী কৃষকদের প্রলোভন দেখিয়ে দেদারছে খননযন্ত্র দিয়ে এসব ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে। ফলে উজাড় হচ্ছে আবাদি জমি। আর ইটভাটাগুলোতে গড়ে উঠছে মাটির পাহাড়। একাধিক ব্যক্তি স্থানীয় প্রশাসনকে অভিযোগ দিলেও স্থানীয় প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী জানান, মাটি কাটার মেশিন (ভেকু) মেশিন দিয়ে জমিতে গভীর করে মাটি কাটা হচ্ছে। মাটির উপরিভাগের ১০-১৫ ইঞ্চির মধ্যে জমির উর্বরাতা শক্তি থাকে। তাই এসব মাটি খুঁড়ে বিক্রি করার ফলে তা পুরনো আদলে ফিরে আসতে ১০-১৫ বছর সময় লাগে যাই। আর বারবার তা খোঁড়া হলে এসব জমিতে ফসল উৎপাদন স্থায়ীভাবে একেবারে অক্ষম হয়ে পড়তে পারে।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন মাঠের ফসলি জমির মাটি কেটে অবৈধভাবে নির্মিত ইটভাটায় বিক্রি জমে উঠেছে। বিলাসবাড়ী ইউনিয়নের বারোফলা গ্রামের নিচু মাঠে রাস্তার ধারে ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছে ওই গ্রামের দু’জন ব্যক্তি। এসকেভেটর মেশিন (ভেকু) দিয়ে গভীর গর্ত করে মাটি কর্তন করায় পার্শ্ববর্তী জমি হুমকির মুখে পড়েছে। পাশের জমির আইল পর্যন্ত কেটে ফেলে তারা। তারা এমনভাবে মাটি কাটছে যাতে করে পাশের জমি মাটি কাটার জন্য ছেড়ে দিতে বাধ্য হন জমির মালিক।

মাটি ব্যবসায়ী দুলু সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, জমির মালিক মাটি দিচ্ছে আপনাদের সমস্যা কোথায়। আপনারা যা পারেন করেন আমারা উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে জমির মাটি কাটছি। কে ম্যানেজ করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন বালু মহল ইজারাদার শহিদুল। কারণ প্রশাসনকে সেই ম্যানেজ করে। এজন্য শহিদুল প্রতি গাড়ি প্রতি ৫০ টাকা করে নেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে বিলাসবাড়ী ভূমি অফিসে যোগাযোগ করলে উপ-সহ-ভূমি কর্মকর্তা কিছু পরেই ঘটনাস্থলে আসেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের মূখে সাথে সাথে কাজ বন্ধ করে দেন। এবং পরেরদিন থেকে সেখানে আবারও কাজ শুরু করেন।

বিভিন্ন এলাকার স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাঠ থেকে আমন ধান ওঠার পরপরই ফসলি জমির মাটি বিক্রি শুরু হয়। উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার মধ্যে বদলগাছী নতুন ব্রিজের পাশে, আধাইপুর জগন্নাথপুর, বিলাসবাড়ির বারোফলা, আধাইপুর, রসুলপুর, বৈকণ্ঠপুর, মিঠাপুর, জগতনগর, কোলা বনগ্রাম,পাহাড়পুর, গোবরচাপাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠে প্রায় অর্ধশতাধিক ভেকু মেশিন দিয়ে দু-তিন ফসলি জমির মাটি প্রায় ৪-৫ ফিট গভীর করে কেটে শত শত ট্রাক্টরে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায়।

অবৈধভাবে মাটি কাটা নিয়ে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে জানানোর পরও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তারা। অন্যদিকে মাটি কাটতে বাধা দিতে গেলে উল্টো ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন হুমকি-ধমকিও দিয়ে আসছে।

সিন্ডিকেট মাটির ব্যবসায়ী চক্রের বেপরোয়া প্রভাবে জমির মালিকরা বাধ্য হয়েই ইটভাটার মালিকদের কাছে মাটি বিক্রি করছেন।

এদিকে মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্রের সদস্য দুলু,শহিদুল,সালাম,জাহিদসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, আবাদি জমির ফসলও দরকার, অন্যদিকে অবকাঠামো উন্নয়নে ইট তৈরিও প্রয়োজন রয়েছে। তবে ইটভাটার মালিকদের কাছে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। আমরা তো জোর করে কাটছি না। তাছাড়া এসব বিষয়ে খবর নিয়ে কোন লাভ নেই ভাই ওপরে ম্যানেজ করেই কাজ করা হচ্ছে। কারণ প্রশাসন তো ম্যানেজ করাই রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী এলাকাবাসী জানান, মাটি বিক্রির সিন্ডিকেট চক্রটি এতই প্রভাবশালী যে তাদের ভয়ে জমির মালিকরা কিছু বলতে সাহস পান না। বাধ্য হয়ে ওই প্রভাবশালীদের কাছে জমির মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হতে হচ্ছে আমাদের।

তবে মাটি কাটা নিয়ে বদলগাছী উপজেলার সদরের একাধিক ব্যক্তি বলেন, ইটভাটায় মাটি সরবরাহের জন্য একশ্রেণির সিন্ডিকেট চক্র গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষকদের মাটি বিক্রি করতে উৎসাহ জোগায়ে স্বল্পমূল্যে উপরিভাগের এসব মাটি কেটে কিনে নিচ্ছে এবং আবাদি জমি এমনভাবে গভীরভাবে খুঁড়ছে যাতে করে ওই জমিতে আর কোনো ফসল উৎপাদন করা সম্ভব না হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলপনা ইয়াসমিন বলেন, যারা বিধি নিষেধ উপেক্ষা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তহসিলদারকে নির্দেশ দিয়েছি।

এলাকার সচেতন মহল বলছেন, এই নির্বাহী অফিসার এখানে যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি। এলাকার মানুষের কোন অভিযোগই দেখেন না তিনি। সেবা গ্রহিতারা তার কাছে কোন বিষয়ে অভিযোগ দিতে গেলে তাদের সঙ্গে করেন খারাপ আচরণ। আর এ কারণে আজ এ অবস্থা।