বস্তি সংলগ্ন এলাকার চেয়ে বস্তিতে বসবাস করা মানুষের শরীরে করোনার অ্যান্টিবডির উপস্থিতি বেশি পাওয়া গেছে বলে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছে হেলথ ওয়াচ বাংলাদেশ।
গতকাল প্রকাশিত এক গবেষণা থেকে এ তথ্য জানা যায়।
আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় অ্যাডভোকেসির কাজে সহায়তা করেছে হেলথ ওয়াচ বাংলাদেশ।
২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা এবং চট্টগ্রামের বস্তি ও বস্তিসংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারী মানুষদের মধ্যে এ জরিপ চালানো হয়েছিল। এর মধ্যে ঢাকার চারটি (কড়াইল, মিরপুর, ধলপুর ও এরশাদ নগর) ও চট্টগ্রামের দুটি (শহীদ লেন এবং আকবর শাহ কাটা পাহাড়) বস্তি জরিপের জন্য নির্বাচন করা হয়। একই সময়ে দুই শহরে বস্তি ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় জরিপ চালানো হয়।
গবেষণার ফলাফল
১. সামগ্রিকভাবে বস্তি সংলগ্ন এলাকার (৬২.২%) তুলনায় বস্তিতে বেশি সংখ্যক মানুষের (৭১.০%) শরীরে কোভিড-১৯ এর অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া যায়। আবার চট্টগ্রামের (৫৪.২%) তুলনায় ঢাকার (৭২.৯%) বেশি সংখ্যক মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। ৩. নিম্ন আয়ের মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি বেশি ছিল।
২. জরিপে যারা অংশ নিয়েছেন তাদের ৩৬ শতাংশ মানুষের মধ্যে চলমান অথবা পূর্ববর্তী ৬ মাসের মধ্যে করোনার মতো উপসর্গ ছিল। এদের মধ্যে জ্বর, শুষ্ক কাশি, গলা ব্যথা অথবা একই সঙ্গে করোনার তিনটি উপসর্গই উপস্থিত ছিল। তাদের মধ্যে উপসর্গহীন মানুষের তুলনায় কোভিড-১৯ এর অ্যান্টিবডির উপস্থিতি বেশি ছিল।
৪. শারীরিক গঠনের তুলনায় ওজন বেশি এমন মানুষের শরীরে বেশি অ্যান্টিবডির উপস্থিত ছিল।
৫. যারা নিয়মিত হাত ধুয়ে থাকেন, মুখে কিংবা নাকে হাত দেন না, বিসিজি টিকা নিয়েছেন এবং মধ্যমানের কায়িক পরিশ্রম করেন এমন ব্যক্তিদের সার্স কভ-২-তে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম ছিল।
৬. যারা এর আগে রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস (আরএসভি) অথবা হিউম্যান করোনাভাইরাস (এইচকভ-এইচকেইউ-১) আক্রান্ত হয়েছেন, তারা কোভিড-১৯ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার কম ঝুঁকিতে ছিল। অন্যদিকে যারা ডেঙ্গু অথবা চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন তারা কোভিড-১৯ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার বেশি ঝুঁকিতে ছিল।
৭. যারা করোনায় আক্রান্ত হননি, তাদের তুলনায় যারা এতে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের রক্তে জিংকের মাত্রা যথাযথ পরিমাণে ছিল।
৮. জরিপে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের শরীরে ভিটামিন-ডি’র অভাব উল্লেখযোগ্য হারে লক্ষ্য করা গেছে। তবে ভিটামিন-ডি’র ঘাটতি অ্যান্টিবডির ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলেনি। অর্থাৎ, অ্যান্টিবডি রয়েছে এমন মানুষের শরীরে ভিটামিন ডি বেশি বা কম এমনটা লক্ষ্য করা যায়নি।
সুপারিশমালা :
১. সংক্রমণের মাত্রা বুঝতে অ্যান্টিবডি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
২. মহামারী সংক্রান্ত তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান ঘাটতি কমিয়ে আনতে হবে।
৩. বস্তিবাসী কারও করোনা উপসর্গ দেখা দিল কি-না তা জানার জন্য পদক্ষেপ বাড়াতে হবে।
৪. করোনার উপসর্গ নিয়ে পক্ষপাতমূলক তথ্য সরবাহ বন্ধ করতে হবে।
৫. বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
৬. দেশে গ্রাম ও শহর অঞ্চল লক্ষ্য করে আরও জরিপ, কঠোর নজরদারি চালাতে হবে।
মঙ্গলবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২২ , ২০ পৌষ ১৪২৮ ৩০ জমাদিউল আউয়াল
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
বস্তি সংলগ্ন এলাকার চেয়ে বস্তিতে বসবাস করা মানুষের শরীরে করোনার অ্যান্টিবডির উপস্থিতি বেশি পাওয়া গেছে বলে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছে হেলথ ওয়াচ বাংলাদেশ।
গতকাল প্রকাশিত এক গবেষণা থেকে এ তথ্য জানা যায়।
আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় অ্যাডভোকেসির কাজে সহায়তা করেছে হেলথ ওয়াচ বাংলাদেশ।
২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা এবং চট্টগ্রামের বস্তি ও বস্তিসংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারী মানুষদের মধ্যে এ জরিপ চালানো হয়েছিল। এর মধ্যে ঢাকার চারটি (কড়াইল, মিরপুর, ধলপুর ও এরশাদ নগর) ও চট্টগ্রামের দুটি (শহীদ লেন এবং আকবর শাহ কাটা পাহাড়) বস্তি জরিপের জন্য নির্বাচন করা হয়। একই সময়ে দুই শহরে বস্তি ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় জরিপ চালানো হয়।
গবেষণার ফলাফল
১. সামগ্রিকভাবে বস্তি সংলগ্ন এলাকার (৬২.২%) তুলনায় বস্তিতে বেশি সংখ্যক মানুষের (৭১.০%) শরীরে কোভিড-১৯ এর অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া যায়। আবার চট্টগ্রামের (৫৪.২%) তুলনায় ঢাকার (৭২.৯%) বেশি সংখ্যক মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। ৩. নিম্ন আয়ের মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি বেশি ছিল।
২. জরিপে যারা অংশ নিয়েছেন তাদের ৩৬ শতাংশ মানুষের মধ্যে চলমান অথবা পূর্ববর্তী ৬ মাসের মধ্যে করোনার মতো উপসর্গ ছিল। এদের মধ্যে জ্বর, শুষ্ক কাশি, গলা ব্যথা অথবা একই সঙ্গে করোনার তিনটি উপসর্গই উপস্থিত ছিল। তাদের মধ্যে উপসর্গহীন মানুষের তুলনায় কোভিড-১৯ এর অ্যান্টিবডির উপস্থিতি বেশি ছিল।
৪. শারীরিক গঠনের তুলনায় ওজন বেশি এমন মানুষের শরীরে বেশি অ্যান্টিবডির উপস্থিত ছিল।
৫. যারা নিয়মিত হাত ধুয়ে থাকেন, মুখে কিংবা নাকে হাত দেন না, বিসিজি টিকা নিয়েছেন এবং মধ্যমানের কায়িক পরিশ্রম করেন এমন ব্যক্তিদের সার্স কভ-২-তে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম ছিল।
৬. যারা এর আগে রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস (আরএসভি) অথবা হিউম্যান করোনাভাইরাস (এইচকভ-এইচকেইউ-১) আক্রান্ত হয়েছেন, তারা কোভিড-১৯ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার কম ঝুঁকিতে ছিল। অন্যদিকে যারা ডেঙ্গু অথবা চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন তারা কোভিড-১৯ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার বেশি ঝুঁকিতে ছিল।
৭. যারা করোনায় আক্রান্ত হননি, তাদের তুলনায় যারা এতে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের রক্তে জিংকের মাত্রা যথাযথ পরিমাণে ছিল।
৮. জরিপে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের শরীরে ভিটামিন-ডি’র অভাব উল্লেখযোগ্য হারে লক্ষ্য করা গেছে। তবে ভিটামিন-ডি’র ঘাটতি অ্যান্টিবডির ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলেনি। অর্থাৎ, অ্যান্টিবডি রয়েছে এমন মানুষের শরীরে ভিটামিন ডি বেশি বা কম এমনটা লক্ষ্য করা যায়নি।
সুপারিশমালা :
১. সংক্রমণের মাত্রা বুঝতে অ্যান্টিবডি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
২. মহামারী সংক্রান্ত তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান ঘাটতি কমিয়ে আনতে হবে।
৩. বস্তিবাসী কারও করোনা উপসর্গ দেখা দিল কি-না তা জানার জন্য পদক্ষেপ বাড়াতে হবে।
৪. করোনার উপসর্গ নিয়ে পক্ষপাতমূলক তথ্য সরবাহ বন্ধ করতে হবে।
৫. বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
৬. দেশে গ্রাম ও শহর অঞ্চল লক্ষ্য করে আরও জরিপ, কঠোর নজরদারি চালাতে হবে।