পদত্যাগ করলেন সুদানের প্রধানমন্ত্রী

সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বিতর্কিত একটি চুক্তিতে ফের সুদানের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসার মাস না গড়াতেই গণ-আন্দোলনের মধ্যে পদত্যাগ করলেন আবদাল্লা হামদক। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেয়া সামরিক বাহিনীর সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতায় ফেরার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ব্যাপক বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক অচলাবস্থায় গতকাল প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়েন তিনি।

অক্টোবরে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সুদানের শাসন ক্ষমতা কেড়ে নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। তখন হামদককে হাউস অ্যারেস্ট দেখানো হয়। পরে ক্যু-এর নেতৃত্বদানকারী জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি চুক্তির মাধ্যমে ফের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসেন হামদক। তবে সুদানের সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত বেসামরিক সরকারের রাজনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষরের পর হামদককে গত ২১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী পদে পুনর্বহাল করা হয়। রাজধানী খার্তুমে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে স্বাক্ষরিত ১৪ শর্ত বিশিষ্ট রাজনৈতিক চুক্তি অনুযায়ী তাকে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়া হয়। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স। অবশ্য ক্ষমতা ভাগাভাগির ওই চুক্তিকে অবৈধ দাবি করে এর বিরোধিতায় আন্দোলনে নামেন বিক্ষোভকারীরা। সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি নয়, সুদানে সম্পূর্ণরূপে বেসামরিক রাজনৈতিক শাসন ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে আসছিলেন বিক্ষোভকারীরা।

মূলত রাজনৈতিক চুক্তি করে অভ্যুত্থানকারীদের কাছ থেকে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে প্রতিদিনই বিরোধীদের আন্দোলনের মুখে ছিলেন আবদাল্লা হামদক। এ ঘটনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তীব্র সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন তিনি। যদিও সুদানি সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত বেসামরিক সরকারের চুক্তিতে দেশটির বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলও অংশ নিয়েছিল। টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদক বলেছেন, আমি দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিচ্ছি। এখন অন্য কাউকে এই দেশকে সেবা করার সুযোগ দিতে চাই। তিনি আরও বলেন, সুদান বর্তমানে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশকে বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাওয়া ঠেকাতে তিনি চেষ্টা করেছেন। তবে তার চাওয়া মতো সবকিছু হয়নি। উল্লেখ্য, গত ২৫ অক্টোবর অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখলে নেয়ার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদককে আটক করে সুদানের সেনাবাহিনী। সুদানের সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বে এই ক্ষমতা দখলের পর থেকেই দেশটির হাজার হাজার নাগরিক প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভে অংশ নেন।

বিক্ষোভে পিছু হটে আবদাল্লা হামদকের হাতেই প্রধানমন্ত্রিত্ব ফিরিয়ে দেয়ার আগে সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নে সুদানে ৪৭ জন নিহত হন। এছাড়া অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভের সময় সুদানের ১৩ নারী ও মেয়ে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন বলে ডিসেম্বরে এক প্রতিবেদনে জানায় জাতিসংঘ।

এছাড়া গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে আবদাল্লা হামদকের ঘনিষ্ঠ দুটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন, সামরিক বাহিনীর সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি কার্যকর এবং সবার রাজনৈতিক সমর্থন পেলেই শুধু প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকতে চান হামদক।

কারণ রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত এবং হামদককে স্বাধীনভাবে মন্ত্রিসভা গঠনের সুযোগ দিতে ওই চুক্তিতে সামরিক বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু না হওয়ার করণেই হয়তো পদ ছাড়লেন আবদাল্লা হামদক।

সুদানে গণতন্ত্র ফেরাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সরব উপস্থিতি দেশটির জনগণের। তারা বলছেন, ২০২২ সাল হবে ‘প্রতিরোধের ধারা অব্যাহত রাখার বছর’। সুদান সেন্ট্রাল ডক্টরস কমিটি থেকে জানানো হয়েছে, বিক্ষোভে গত দুই দিনে অন্তত দুজনের মৃত্যু হয়েছে। আর সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট অর্ধশতাধিক মানুষের প্রাণ গেছে।

গত অক্টোবরের সামরিক অভ্যুত্থানের নেতা হলেন জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। তিনি বলেছেন, সম্ভাব্য একটি গৃহযুদ্ধ থামাতেই কাজ করেছে সেনারা। তবে ফাত্তাহ বলছেন, ২০২৩ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বেসামরিক শাসন শুরুর ব্যাপারে এখনও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সুদান।

মঙ্গলবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২২ , ২০ পৌষ ১৪২৮ ৩০ জমাদিউল আউয়াল

পদত্যাগ করলেন সুদানের প্রধানমন্ত্রী

image

সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বিতর্কিত একটি চুক্তিতে ফের সুদানের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসার মাস না গড়াতেই গণ-আন্দোলনের মধ্যে পদত্যাগ করলেন আবদাল্লা হামদক। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেয়া সামরিক বাহিনীর সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতায় ফেরার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ব্যাপক বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক অচলাবস্থায় গতকাল প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়েন তিনি।

অক্টোবরে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সুদানের শাসন ক্ষমতা কেড়ে নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। তখন হামদককে হাউস অ্যারেস্ট দেখানো হয়। পরে ক্যু-এর নেতৃত্বদানকারী জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি চুক্তির মাধ্যমে ফের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসেন হামদক। তবে সুদানের সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত বেসামরিক সরকারের রাজনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষরের পর হামদককে গত ২১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী পদে পুনর্বহাল করা হয়। রাজধানী খার্তুমে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে স্বাক্ষরিত ১৪ শর্ত বিশিষ্ট রাজনৈতিক চুক্তি অনুযায়ী তাকে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়া হয়। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স। অবশ্য ক্ষমতা ভাগাভাগির ওই চুক্তিকে অবৈধ দাবি করে এর বিরোধিতায় আন্দোলনে নামেন বিক্ষোভকারীরা। সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি নয়, সুদানে সম্পূর্ণরূপে বেসামরিক রাজনৈতিক শাসন ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে আসছিলেন বিক্ষোভকারীরা।

মূলত রাজনৈতিক চুক্তি করে অভ্যুত্থানকারীদের কাছ থেকে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে প্রতিদিনই বিরোধীদের আন্দোলনের মুখে ছিলেন আবদাল্লা হামদক। এ ঘটনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তীব্র সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন তিনি। যদিও সুদানি সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত বেসামরিক সরকারের চুক্তিতে দেশটির বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলও অংশ নিয়েছিল। টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদক বলেছেন, আমি দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিচ্ছি। এখন অন্য কাউকে এই দেশকে সেবা করার সুযোগ দিতে চাই। তিনি আরও বলেন, সুদান বর্তমানে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশকে বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাওয়া ঠেকাতে তিনি চেষ্টা করেছেন। তবে তার চাওয়া মতো সবকিছু হয়নি। উল্লেখ্য, গত ২৫ অক্টোবর অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখলে নেয়ার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদককে আটক করে সুদানের সেনাবাহিনী। সুদানের সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বে এই ক্ষমতা দখলের পর থেকেই দেশটির হাজার হাজার নাগরিক প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভে অংশ নেন।

বিক্ষোভে পিছু হটে আবদাল্লা হামদকের হাতেই প্রধানমন্ত্রিত্ব ফিরিয়ে দেয়ার আগে সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নে সুদানে ৪৭ জন নিহত হন। এছাড়া অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভের সময় সুদানের ১৩ নারী ও মেয়ে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন বলে ডিসেম্বরে এক প্রতিবেদনে জানায় জাতিসংঘ।

এছাড়া গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে আবদাল্লা হামদকের ঘনিষ্ঠ দুটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন, সামরিক বাহিনীর সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি কার্যকর এবং সবার রাজনৈতিক সমর্থন পেলেই শুধু প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকতে চান হামদক।

কারণ রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত এবং হামদককে স্বাধীনভাবে মন্ত্রিসভা গঠনের সুযোগ দিতে ওই চুক্তিতে সামরিক বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু না হওয়ার করণেই হয়তো পদ ছাড়লেন আবদাল্লা হামদক।

সুদানে গণতন্ত্র ফেরাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সরব উপস্থিতি দেশটির জনগণের। তারা বলছেন, ২০২২ সাল হবে ‘প্রতিরোধের ধারা অব্যাহত রাখার বছর’। সুদান সেন্ট্রাল ডক্টরস কমিটি থেকে জানানো হয়েছে, বিক্ষোভে গত দুই দিনে অন্তত দুজনের মৃত্যু হয়েছে। আর সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট অর্ধশতাধিক মানুষের প্রাণ গেছে।

গত অক্টোবরের সামরিক অভ্যুত্থানের নেতা হলেন জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। তিনি বলেছেন, সম্ভাব্য একটি গৃহযুদ্ধ থামাতেই কাজ করেছে সেনারা। তবে ফাত্তাহ বলছেন, ২০২৩ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বেসামরিক শাসন শুরুর ব্যাপারে এখনও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সুদান।