গোপালগঞ্জে শহীদ মিনার উচ্ছেদের পাঁয়তারা

গোপালগঞ্জে তহশীলদারের বিরুদ্ধে শহীদ মিনারের বেদী ও নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙ্গে ফেলার অভিযোগ উঠেছে।

মুকসুদপুর উপজেলার গোবিন্দুপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটেছে। হাকিমপুরের পাশ্ববর্তী দাসেরহাট গ্রামের মিলু মোল্লার স্ত্রী রেখা বেগম শহীদ মিনারের জায়গা তার দাবি করে আবেদন করেন। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে মুকসুদপুর তহশীল অফিসের তহশীলদার দেব রতন বিশ্বাস এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃস্টি হয়েছে। এর প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে রোববার হাকিমপুর,দাসেরহাট ও ভ্রমর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা এবং সর্বস্তরের মানুষ অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছেন। পরে তারা এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

হাকিমপুর গ্রামের এমডি হাসান আলী বলেন, দাসেরহাট, হাকিমপুর ও ভ্রমর গ্রামে শহীদ মিনার ছিলো না। ৫২’র ভাষা শহীদরে প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ৩ গ্রামের মানুষ হাকিমপুর গ্রামের রাস্তার পাশে সরকারি খাস জমিতে ২০০০ সালে শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। গত ২১ বছর ধরে ৩ গ্রামের মানুষ এই শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছেন। শহীদ মিনারের সামনের জায়গা দাসেরহাট গ্রামের মিলু মোল্লার স্ত্রী রেখা বেগমের। শহীদ মিনারকে রাস্তার খাদের ধ্বস থেকে রক্ষার জন্য আমরা শহীদ মিনার ঘেঁসে নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ করি। রেখা বেগম শহিদ মিনার উচ্ছেদ করে ওই জায়গায় দোকান নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। তিনি তার বাহিনী ও তহশীলদারের সহযোগিতায় ২৯ ডিসেম্বর শহীদ মিনার উচ্ছেদ করতে শহীদ মিনারের বেদী ও বেষ্টনী ভাঙ্গেন। পরে শহীদ মিনারে আঘাত করলে আমরা বাধা দেই। আমাদের বাধার মুখে রেখা বেগমের বাহিনী ও তহশীলদার পালিয়ে যান।

অভিযুক্ত রেখা বেগম বলেন, শহীদ মিনারের জায়গায় আমি দোকান নির্মাণের পরিকল্পনা করি। এজন্য জায়গাটি ফাঁকা করে দেয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করি। এসিল্যান্ড অফিসের সার্ভেয়ার ও তহশীলদার ২৮ ডিসেম্বর আমার জায়গা পরিমাপ করেন। শহীদ মিনারের মধ্যে আমার জায়গা নেই বলে তারা পরিমাপ শেষে জানান। পরের দিন তহশীলদার ও সর্ভেয়ার লোকজন নিয়ে এসে আমাদের সহযোগিতায় শহীদ মিনার ভাংচুর করেন।

মুকসুদপুর তহশীল অফিসের তহশীলদার দেব রতন বিশ্বাস বলেন, আমরা পরিমাপ করে দেখেছি শহীদ মিনারটি সরকারি খাস জায়গায়। অতি সম্প্রতি শহীদ মিনার ঘেঁসে বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। তাই এক নারীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ও এসিল্যান্ডের নির্দেশে বেষ্টনী ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। শহীদ মিনারে কোন আঘাত করা হয়নি। এ ব্যাপারে আমি ইতিমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন এসিল্যান্ড অফিসে পাঠিয়েছি।

মুকসুদপুরের এসিল্যান্ড মোঃ আলাউল ইসলাম বলেন, শহীদ মিনার সংলগ্ন দেয়াল ভেঙ্গে সরকারি সামান্য খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে শহীদ মিনার ভাঙ্গা হয়নি। স্থানীয় এক নারীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে এটি করা হয়েছে। ওই হালটে আমাদের ৫ একর ২৮ শতাংশ সরকারি খাস জমি রয়েছে। ওই হালট থেকে সব দখলদারকে অচিরেই উচ্ছেদ করা হবে।

এ ব্যাপারে মুকসুদপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোবায়ের রহমান রাশেদ বলেন, এক নারীর আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে আমি এসিল্যান্ডকে বলেছি। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর আমি বিষয়টি জানতে পারব। এখন পর্যন্ত শহীদ মিনারের ঘটনা আমরা জানানেই।

মঙ্গলবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২২ , ২০ পৌষ ১৪২৮ ৩০ জমাদিউল আউয়াল

গোপালগঞ্জে শহীদ মিনার উচ্ছেদের পাঁয়তারা

নিজস্ব বার্তা পরেবেশক, (গোপালগঞ্জ)

গোপালগঞ্জে তহশীলদারের বিরুদ্ধে শহীদ মিনারের বেদী ও নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙ্গে ফেলার অভিযোগ উঠেছে।

মুকসুদপুর উপজেলার গোবিন্দুপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটেছে। হাকিমপুরের পাশ্ববর্তী দাসেরহাট গ্রামের মিলু মোল্লার স্ত্রী রেখা বেগম শহীদ মিনারের জায়গা তার দাবি করে আবেদন করেন। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে মুকসুদপুর তহশীল অফিসের তহশীলদার দেব রতন বিশ্বাস এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃস্টি হয়েছে। এর প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে রোববার হাকিমপুর,দাসেরহাট ও ভ্রমর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা এবং সর্বস্তরের মানুষ অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছেন। পরে তারা এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

হাকিমপুর গ্রামের এমডি হাসান আলী বলেন, দাসেরহাট, হাকিমপুর ও ভ্রমর গ্রামে শহীদ মিনার ছিলো না। ৫২’র ভাষা শহীদরে প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ৩ গ্রামের মানুষ হাকিমপুর গ্রামের রাস্তার পাশে সরকারি খাস জমিতে ২০০০ সালে শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। গত ২১ বছর ধরে ৩ গ্রামের মানুষ এই শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছেন। শহীদ মিনারের সামনের জায়গা দাসেরহাট গ্রামের মিলু মোল্লার স্ত্রী রেখা বেগমের। শহীদ মিনারকে রাস্তার খাদের ধ্বস থেকে রক্ষার জন্য আমরা শহীদ মিনার ঘেঁসে নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ করি। রেখা বেগম শহিদ মিনার উচ্ছেদ করে ওই জায়গায় দোকান নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। তিনি তার বাহিনী ও তহশীলদারের সহযোগিতায় ২৯ ডিসেম্বর শহীদ মিনার উচ্ছেদ করতে শহীদ মিনারের বেদী ও বেষ্টনী ভাঙ্গেন। পরে শহীদ মিনারে আঘাত করলে আমরা বাধা দেই। আমাদের বাধার মুখে রেখা বেগমের বাহিনী ও তহশীলদার পালিয়ে যান।

অভিযুক্ত রেখা বেগম বলেন, শহীদ মিনারের জায়গায় আমি দোকান নির্মাণের পরিকল্পনা করি। এজন্য জায়গাটি ফাঁকা করে দেয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করি। এসিল্যান্ড অফিসের সার্ভেয়ার ও তহশীলদার ২৮ ডিসেম্বর আমার জায়গা পরিমাপ করেন। শহীদ মিনারের মধ্যে আমার জায়গা নেই বলে তারা পরিমাপ শেষে জানান। পরের দিন তহশীলদার ও সর্ভেয়ার লোকজন নিয়ে এসে আমাদের সহযোগিতায় শহীদ মিনার ভাংচুর করেন।

মুকসুদপুর তহশীল অফিসের তহশীলদার দেব রতন বিশ্বাস বলেন, আমরা পরিমাপ করে দেখেছি শহীদ মিনারটি সরকারি খাস জায়গায়। অতি সম্প্রতি শহীদ মিনার ঘেঁসে বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। তাই এক নারীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ও এসিল্যান্ডের নির্দেশে বেষ্টনী ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। শহীদ মিনারে কোন আঘাত করা হয়নি। এ ব্যাপারে আমি ইতিমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন এসিল্যান্ড অফিসে পাঠিয়েছি।

মুকসুদপুরের এসিল্যান্ড মোঃ আলাউল ইসলাম বলেন, শহীদ মিনার সংলগ্ন দেয়াল ভেঙ্গে সরকারি সামান্য খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে শহীদ মিনার ভাঙ্গা হয়নি। স্থানীয় এক নারীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে এটি করা হয়েছে। ওই হালটে আমাদের ৫ একর ২৮ শতাংশ সরকারি খাস জমি রয়েছে। ওই হালট থেকে সব দখলদারকে অচিরেই উচ্ছেদ করা হবে।

এ ব্যাপারে মুকসুদপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোবায়ের রহমান রাশেদ বলেন, এক নারীর আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে আমি এসিল্যান্ডকে বলেছি। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর আমি বিষয়টি জানতে পারব। এখন পর্যন্ত শহীদ মিনারের ঘটনা আমরা জানানেই।