বিশেষ সুবিধায় ঋণ পরিশোধের সুযোগ আরও ২০ দিন বাড়ল

গত বছরের ঋণের কিস্তির ১৫ শতাংশ জমা দিলে খেলাপি না করার নির্দেশনা ছিল। এর মেয়াদ গত ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। বিভিন্ন মহলের চাপে খেলাপি ঋণ কমানোর এ সুবিধা আরো ২০ দিন মৌখিকভাবে বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (বিআরপিডি) থেকে মৌখিকভাবে ব্যাংকগুলোকে বিষয়টি জানিয়েছে। সরকারি-বেসরকারি একাধিক বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

করোনার কারণে ২০২০ সাল জুড়ে কোন টাকা পরিশোধ না করলেও গ্রাহকদের খেলাপি করা যাবে না এমন সুবিধা দেয়া হয়েছে। ২০২১ সালে বিশেষ সুবিধার নতুন নির্দেশনা দেয়া হয়। বলা হয় ডিসেম্বরের শেষ কর্মদিবসের মধ্যে ঋণের ২৫ শতাংশ পরিশোধ করেই খেলাপি হবে না গ্রাহক। বিশেষ এ সুবিধা আর বাড়ানো হবে না বলে জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শেষ না হওয়ায় এখনই নীতি-সহায়তা তুলে না নেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ ডিসেম্বর আগের নির্দেশনা থেকে সরে আসে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা।

নতুন নির্দেশনা জারি করে জানানো হয়, ২০২১ সালে একজন ঋণ গ্রহীতার যে পরিমাণ পরিশোধ করার কথা তারমধ্যে ১৫ শতাংশ পরিশোধ করলে গ্রাহক নিয়মিত থাকতে পারবেন। খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হবেন না। যার মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। কিন্তু চার দিন পর আবার এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এল বাংলাদেশ ব্যাংক। মৌখিকভাবে বিশেষ সুবিধার মেয়াদ ২০ দিন বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ব্যাংকাররা বলছেন, ‘অনেক গ্রাহক আশা করেছিল ২৫ শতাংশ পরিশোধ করেই খেলাপি না থাকার সুযোগের সময় বাড়ানো হবে। তাই ঋণের এক চতুর্থাংশ টাকাও পরিশোধ করেননি অনেক গ্রাহক। এখন সময় বাড়ানো হয়েছে। এই সুযোগে তারা কিস্তি শোধ করতে পারবেন। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ কমে আসবে। ব্যাংকগুলোর আয়ও বাড়বে।’

৩০ ডিসেম্বর রাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ১৫ শতাংশ পরিশোধ করে নিয়মিত দেখানো ঋণের বিপরীতেও পুরো সুদ আয় খাতে নিতে পারবে ব্যাংক। তবে বিশেষ সুবিধায় নিয়মিত দেখানো এ ঋণের বিপরীতে অতিরিক্ত ২ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হবে।

এর আগে ১৫ ডিসেম্বর ব্যাংক খাতে ঋণ পরিশোধের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানোর জন্য গভর্নর বরাবর আবেদন জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআিই।

সেই চিঠিতে বলা হয়, করোনার কারণে ব্যবসায়ীরা এখনও ভয়াবহ অবস্থা পার করছেন। তাই ২৫ শতাংশ পরিশোধের শর্ত শিথিল করে ঋণ শ্রেণীকরণ সুবিধার মেয়াদ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন ব্যবসায়ীরা।

করোনাকালীন অর্থনীতির সংকট মোকাবিলায় ২০২০ সালজুড়ে ঋণের কিস্তির এক টাকা শোধ না করলেও গ্রাহককে খেলাপি করতে পারেনি ব্যাংক। চলতি বছর শুরু হয় ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি ৬ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ নিয়ে। এ বছর নতুন করে আগের মতো সব সুযোগ দেয়া হয়নি। একজন গ্রাহকের যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা, চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে তার ২৫ শতাংশ পরিশোধ করলেও তাকে আর খেলাপি করা যাবে না। তবুও খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকায়। বর্তমানে তা এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সবশেষ ব্যাংক খাতের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ৮.১২ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা।

বুধবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২২ , ২১ পৌষ ১৪২৮ ১ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

বিশেষ সুবিধায় ঋণ পরিশোধের সুযোগ আরও ২০ দিন বাড়ল

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

গত বছরের ঋণের কিস্তির ১৫ শতাংশ জমা দিলে খেলাপি না করার নির্দেশনা ছিল। এর মেয়াদ গত ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। বিভিন্ন মহলের চাপে খেলাপি ঋণ কমানোর এ সুবিধা আরো ২০ দিন মৌখিকভাবে বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (বিআরপিডি) থেকে মৌখিকভাবে ব্যাংকগুলোকে বিষয়টি জানিয়েছে। সরকারি-বেসরকারি একাধিক বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

করোনার কারণে ২০২০ সাল জুড়ে কোন টাকা পরিশোধ না করলেও গ্রাহকদের খেলাপি করা যাবে না এমন সুবিধা দেয়া হয়েছে। ২০২১ সালে বিশেষ সুবিধার নতুন নির্দেশনা দেয়া হয়। বলা হয় ডিসেম্বরের শেষ কর্মদিবসের মধ্যে ঋণের ২৫ শতাংশ পরিশোধ করেই খেলাপি হবে না গ্রাহক। বিশেষ এ সুবিধা আর বাড়ানো হবে না বলে জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শেষ না হওয়ায় এখনই নীতি-সহায়তা তুলে না নেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ ডিসেম্বর আগের নির্দেশনা থেকে সরে আসে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা।

নতুন নির্দেশনা জারি করে জানানো হয়, ২০২১ সালে একজন ঋণ গ্রহীতার যে পরিমাণ পরিশোধ করার কথা তারমধ্যে ১৫ শতাংশ পরিশোধ করলে গ্রাহক নিয়মিত থাকতে পারবেন। খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হবেন না। যার মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। কিন্তু চার দিন পর আবার এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এল বাংলাদেশ ব্যাংক। মৌখিকভাবে বিশেষ সুবিধার মেয়াদ ২০ দিন বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ব্যাংকাররা বলছেন, ‘অনেক গ্রাহক আশা করেছিল ২৫ শতাংশ পরিশোধ করেই খেলাপি না থাকার সুযোগের সময় বাড়ানো হবে। তাই ঋণের এক চতুর্থাংশ টাকাও পরিশোধ করেননি অনেক গ্রাহক। এখন সময় বাড়ানো হয়েছে। এই সুযোগে তারা কিস্তি শোধ করতে পারবেন। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ কমে আসবে। ব্যাংকগুলোর আয়ও বাড়বে।’

৩০ ডিসেম্বর রাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ১৫ শতাংশ পরিশোধ করে নিয়মিত দেখানো ঋণের বিপরীতেও পুরো সুদ আয় খাতে নিতে পারবে ব্যাংক। তবে বিশেষ সুবিধায় নিয়মিত দেখানো এ ঋণের বিপরীতে অতিরিক্ত ২ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হবে।

এর আগে ১৫ ডিসেম্বর ব্যাংক খাতে ঋণ পরিশোধের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানোর জন্য গভর্নর বরাবর আবেদন জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআিই।

সেই চিঠিতে বলা হয়, করোনার কারণে ব্যবসায়ীরা এখনও ভয়াবহ অবস্থা পার করছেন। তাই ২৫ শতাংশ পরিশোধের শর্ত শিথিল করে ঋণ শ্রেণীকরণ সুবিধার মেয়াদ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন ব্যবসায়ীরা।

করোনাকালীন অর্থনীতির সংকট মোকাবিলায় ২০২০ সালজুড়ে ঋণের কিস্তির এক টাকা শোধ না করলেও গ্রাহককে খেলাপি করতে পারেনি ব্যাংক। চলতি বছর শুরু হয় ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি ৬ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ নিয়ে। এ বছর নতুন করে আগের মতো সব সুযোগ দেয়া হয়নি। একজন গ্রাহকের যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা, চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে তার ২৫ শতাংশ পরিশোধ করলেও তাকে আর খেলাপি করা যাবে না। তবুও খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকায়। বর্তমানে তা এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সবশেষ ব্যাংক খাতের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ৮.১২ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা।