নিউজিল্যান্ডে প্রথম টেস্ট জয়ের হাতছানি

মাউন্ট মঙ্গানুই চতুর্থ দিন শেষ। আগের তিন দিনের মতো এই দিনটিতেও লেখা থাকল বাংলাদেশের নাম। পেসারদের তোপে এলোমেলো নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ। ১৩০ রানের লিড পায় বাংলাদেশ। দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের লিড ১৭ রানের। ম্যাচের অবস্থা বলছে, স্বাগতিকদের কোণঠাসা করে রেখেছে বাংলাদেশ। কারণ নিউজিল্যান্ডের হাতে রয়েছে আর ৫ উইকেট। মঙ্গলবারের খেলা শেষে তাদের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ১৪৭ রান। লাঞ্চ পরবর্তী সেশনে তাদের দুটি উইকেট নিয়ে যে আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছিল বাংলাদেশ, তা কাজে লাগিয়ে শেষ সেশনে আরও তিন উইকেট তুলে নেয় তারা। শেষ বিকেলে তো দলীয় স্কোরবোর্ডে কোন রান জমা না হতেই তিন ব্যাটসম্যান প্যাভিলিয়নে। এমন দাপুটে দিনের নায়ক ইবাদত হোসেন। ১৭ ওভারে ৪ মেডেনসহ ৩৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন তিনি। তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৬ উইকেটে ৪০১ রান। ৪ উইকেট হাতে নিয়ে ৭৩ রানে এগিয়েছিলো টাইগাররা। চার ব্যাটার হাফ-সেঞ্চুরি করেন। তবে দিন শেষে অপরাজিত ছিলেন ইয়াসির আলি ও মেহেদি হাসান মিরাজ। ইয়াসির ১১ ও মিরাজ ২০ রান নিয়ে দিন শুরু করেন। রানের গতি ধরে রাখা মিরাজ ইনিংসে বাংলাদেশের পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে হাফ-সেঞ্চুরি পাবার পথেই ছিলেন। কিন্তু সাউদির বলে উইকেটের পেছনে ব্লান্ডেলকে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ৪৭ রানেই বিদায় নেন মিরাজ। তিনি ৮৮ বল খেলে ৮টি চার মারেন। মিরাজ ফেরার কিছুক্ষণ পর থামেন ইয়াসিরও। মিরাজের মতই বল মোকাবেলা করেছেন তিনি। ৮৫ বল খেলে মাত্র ১টি চারে ২৬ রান করেন ইয়াসির।

তাকে শিকার করে ইনিংসে প্রথম উইকেট নেন পেসার কাইল জেমিসন। ৩৫০ রানের মধ্যে মিরাজ-ইয়াসিরের বিদায়ের পর বাংলাদেশের টেল-এন্ডাররা লড়াই করতে পারেননি। ৮ রান যোগ হবার পর শেষ ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তাসকিনকে ৫ রানে সাউদি ও শরিফুলকে ৭ রানে বোল্ট আউট করেন। ৪৫৮ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। প্রথম ইনিংস থেকে লিড ১৩০ রানের। নিউজিল্যান্ডের বোল্ট ৮৫ রানে ৪টি, ওয়াগনার ১০১ রানে ৩টি ও সাউদি ১১৪ রানে ২ উইকেট নেন। মধ্যাহ্ন বিরতির আগ মুর্হূতে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে নিউজিল্যান্ড। দেখে শুনেই খেলছিলেন নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার অধিনায়ক টম লাথাম ও উইল ইয়ং। নবম ওভারে নিউজিল্যান্ড শিবিরে আঘাত হানেন বাংলাদেশের পেসার তাসকিন। প্রথম ইনিংসে দারুন বল করলেও, উইকেট শুন্য তাসকিন ১৪ রান করা লাথামকে বোল্ড করেন। এরপর বড় জুটি গড়ার দিকে নজর ছিলো আরেক ওপেনার ইয়ং ও প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ডেভন কনওয়ের। কিন্তু জুটিতে ৩৪ রানের বেশি করতে দেননি এবাদত। ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান কনওয়েকে শিকার করেন এবাদত। গালিতে সাদমানকে ক্যাচ দিয়ে ১৩ রানে থামেন কনওয়ে।

৬৩ রানে দ্বিতীয় উইকেটে পতন ঘটে নিউজিল্যান্ডের। এ অবস্থায় বড় জুটির লক্ষ্যই ছিলো স্বাগতিকদের। সেই আশা পূরণও করেন অভিজ্ঞ রস টেইলর ও ইয়ং। তৃতীয় উইকেটে ১৭৫ বলে ৭৩ রান যোগ করে নিউজিল্যান্ডকে লিড এনে দেন ইয়ং ও টেইলর। তবে এই জুটির স্কোর ৭৩ হতো না, কারন দু’টি ক্যাচ হাতছাড়া করেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। ৩১ রানে থাকা ইয়ংয়ের ক্যাচ ফেলেন লিটন। আর ১৭ রানে মিড উইকেটে টেইলরের ক্যাচ নিতে পারেননি সাদমান। দু’বারই হতভাগা বোলার ছিলেন মিরাজ। জীবন পেয়েই এই ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়েন ইয়ং ও টেলর। ইয়ং-টেইলর জুটি ভাঙ্গতে যখন মরিয়া বাংলাদেশ, তখনই ত্রানকর্তার ভূমিকায় জ্বলে উঠেন এবাদত। নিজের ১৩তম ও ইনিংসের ৫৪তম ওভারের তৃতীয় বলে ইয়ংকে বোল্ড করেন তিনি। ঐ ওভারের পঞ্চম বলে ক্রিজে নতুন ব্যাটার নিকোলসের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন এবাদত। ৩ বলে ২ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে খেলায় ফেরান এবাদত। ৫৫তম ওভারে মিরাজ মেডেন নেন। ৫৬তম ওভারে বল হাতে নিজের আগুন ডেলিভারি অব্যাহত রাখেন এবাদত।

ঐ ওভারের তৃতীয় বলে নিউজিল্যান্ডের উইকেটরক্ষক টম ব্লান্ডেলকেও লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন এবাদত। নিকোলস ২ বল ও ব্লানডেল ৪ বল খেলে খালি হাতে ফিরেন। আর ৭টি চারে ১৭২ বলে ৬৯ রান করেন ইয়ং। এবাদতের তোপে ২ উইকেটে ১৩৬ থেকে ৫ উইকেটে ১৩৬ রানে নিউজিল্যান্ডকে পরিণত করে শেষ বিকেলে ম্যাচের লাগাম হাতে নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। দিনের শেষ দিকে বাকি ৪৫ বল সতর্কতার সঙ্গে পার করে দেন টেইলর ও রাচিন রবীন্দ্র। টেইলর ৩৭ ও রবীন্দ্র ৬ রানে অপরাজিত আছেন। এবাদত ১৭ ওভার বল করে ৩৯ রানে ৪ উইকেট নেন। তাসকিন ২২ রানে ১ উইকেট নেন।

বুধবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২২ , ২১ পৌষ ১৪২৮ ১ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

নিউজিল্যান্ডে প্রথম টেস্ট জয়ের হাতছানি

ক্রীড়া বার্তা পরিবেশক

image

দিনের সেরা পারফরমার এবাদত হোসেনের উইকেট উদযাপন -বিসিবি

মাউন্ট মঙ্গানুই চতুর্থ দিন শেষ। আগের তিন দিনের মতো এই দিনটিতেও লেখা থাকল বাংলাদেশের নাম। পেসারদের তোপে এলোমেলো নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ। ১৩০ রানের লিড পায় বাংলাদেশ। দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের লিড ১৭ রানের। ম্যাচের অবস্থা বলছে, স্বাগতিকদের কোণঠাসা করে রেখেছে বাংলাদেশ। কারণ নিউজিল্যান্ডের হাতে রয়েছে আর ৫ উইকেট। মঙ্গলবারের খেলা শেষে তাদের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ১৪৭ রান। লাঞ্চ পরবর্তী সেশনে তাদের দুটি উইকেট নিয়ে যে আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছিল বাংলাদেশ, তা কাজে লাগিয়ে শেষ সেশনে আরও তিন উইকেট তুলে নেয় তারা। শেষ বিকেলে তো দলীয় স্কোরবোর্ডে কোন রান জমা না হতেই তিন ব্যাটসম্যান প্যাভিলিয়নে। এমন দাপুটে দিনের নায়ক ইবাদত হোসেন। ১৭ ওভারে ৪ মেডেনসহ ৩৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন তিনি। তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৬ উইকেটে ৪০১ রান। ৪ উইকেট হাতে নিয়ে ৭৩ রানে এগিয়েছিলো টাইগাররা। চার ব্যাটার হাফ-সেঞ্চুরি করেন। তবে দিন শেষে অপরাজিত ছিলেন ইয়াসির আলি ও মেহেদি হাসান মিরাজ। ইয়াসির ১১ ও মিরাজ ২০ রান নিয়ে দিন শুরু করেন। রানের গতি ধরে রাখা মিরাজ ইনিংসে বাংলাদেশের পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে হাফ-সেঞ্চুরি পাবার পথেই ছিলেন। কিন্তু সাউদির বলে উইকেটের পেছনে ব্লান্ডেলকে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ৪৭ রানেই বিদায় নেন মিরাজ। তিনি ৮৮ বল খেলে ৮টি চার মারেন। মিরাজ ফেরার কিছুক্ষণ পর থামেন ইয়াসিরও। মিরাজের মতই বল মোকাবেলা করেছেন তিনি। ৮৫ বল খেলে মাত্র ১টি চারে ২৬ রান করেন ইয়াসির।

তাকে শিকার করে ইনিংসে প্রথম উইকেট নেন পেসার কাইল জেমিসন। ৩৫০ রানের মধ্যে মিরাজ-ইয়াসিরের বিদায়ের পর বাংলাদেশের টেল-এন্ডাররা লড়াই করতে পারেননি। ৮ রান যোগ হবার পর শেষ ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তাসকিনকে ৫ রানে সাউদি ও শরিফুলকে ৭ রানে বোল্ট আউট করেন। ৪৫৮ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। প্রথম ইনিংস থেকে লিড ১৩০ রানের। নিউজিল্যান্ডের বোল্ট ৮৫ রানে ৪টি, ওয়াগনার ১০১ রানে ৩টি ও সাউদি ১১৪ রানে ২ উইকেট নেন। মধ্যাহ্ন বিরতির আগ মুর্হূতে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে নিউজিল্যান্ড। দেখে শুনেই খেলছিলেন নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার অধিনায়ক টম লাথাম ও উইল ইয়ং। নবম ওভারে নিউজিল্যান্ড শিবিরে আঘাত হানেন বাংলাদেশের পেসার তাসকিন। প্রথম ইনিংসে দারুন বল করলেও, উইকেট শুন্য তাসকিন ১৪ রান করা লাথামকে বোল্ড করেন। এরপর বড় জুটি গড়ার দিকে নজর ছিলো আরেক ওপেনার ইয়ং ও প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ডেভন কনওয়ের। কিন্তু জুটিতে ৩৪ রানের বেশি করতে দেননি এবাদত। ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান কনওয়েকে শিকার করেন এবাদত। গালিতে সাদমানকে ক্যাচ দিয়ে ১৩ রানে থামেন কনওয়ে।

৬৩ রানে দ্বিতীয় উইকেটে পতন ঘটে নিউজিল্যান্ডের। এ অবস্থায় বড় জুটির লক্ষ্যই ছিলো স্বাগতিকদের। সেই আশা পূরণও করেন অভিজ্ঞ রস টেইলর ও ইয়ং। তৃতীয় উইকেটে ১৭৫ বলে ৭৩ রান যোগ করে নিউজিল্যান্ডকে লিড এনে দেন ইয়ং ও টেইলর। তবে এই জুটির স্কোর ৭৩ হতো না, কারন দু’টি ক্যাচ হাতছাড়া করেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। ৩১ রানে থাকা ইয়ংয়ের ক্যাচ ফেলেন লিটন। আর ১৭ রানে মিড উইকেটে টেইলরের ক্যাচ নিতে পারেননি সাদমান। দু’বারই হতভাগা বোলার ছিলেন মিরাজ। জীবন পেয়েই এই ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়েন ইয়ং ও টেলর। ইয়ং-টেইলর জুটি ভাঙ্গতে যখন মরিয়া বাংলাদেশ, তখনই ত্রানকর্তার ভূমিকায় জ্বলে উঠেন এবাদত। নিজের ১৩তম ও ইনিংসের ৫৪তম ওভারের তৃতীয় বলে ইয়ংকে বোল্ড করেন তিনি। ঐ ওভারের পঞ্চম বলে ক্রিজে নতুন ব্যাটার নিকোলসের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন এবাদত। ৩ বলে ২ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে খেলায় ফেরান এবাদত। ৫৫তম ওভারে মিরাজ মেডেন নেন। ৫৬তম ওভারে বল হাতে নিজের আগুন ডেলিভারি অব্যাহত রাখেন এবাদত।

ঐ ওভারের তৃতীয় বলে নিউজিল্যান্ডের উইকেটরক্ষক টম ব্লান্ডেলকেও লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন এবাদত। নিকোলস ২ বল ও ব্লানডেল ৪ বল খেলে খালি হাতে ফিরেন। আর ৭টি চারে ১৭২ বলে ৬৯ রান করেন ইয়ং। এবাদতের তোপে ২ উইকেটে ১৩৬ থেকে ৫ উইকেটে ১৩৬ রানে নিউজিল্যান্ডকে পরিণত করে শেষ বিকেলে ম্যাচের লাগাম হাতে নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। দিনের শেষ দিকে বাকি ৪৫ বল সতর্কতার সঙ্গে পার করে দেন টেইলর ও রাচিন রবীন্দ্র। টেইলর ৩৭ ও রবীন্দ্র ৬ রানে অপরাজিত আছেন। এবাদত ১৭ ওভার বল করে ৩৯ রানে ৪ উইকেট নেন। তাসকিন ২২ রানে ১ উইকেট নেন।