পর্যটক ধর্ষণ ঘটনায় অসঙ্গতিপূর্ণ বক্তব্য দুঃখজনক : হাইকোর্ট

মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য বা বিবৃতি ‘কাম্য নয়’ মন্তব্য করে একে ‘দুঃখজনক’ বলেছে হাইকোর্ট। কক্সবাজারে পর্যটককে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে করা রিটের শুনানির এক পর্যায়ে গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ থেকে এ মন্তব্য আসে।

রিটকারী আইনজীবী আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া রাসেল আদালতে বলেন, ‘কক্সবাজারের ঘটনায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও র?্যাবের বক্তব্য অসামঞ্জস্যপূর্ণ। বিভিন্ন মিডিয়ায় তাদের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য এসেছে। এ নিয়ে এক ধরনের অসঙ্গতি তৈরি হয়েছে। তাছাড়া এ ধরনের স্ববিরোধী বিবৃতি-বক্তব্যের কারণে তদন্তের গ্রহণযোগ্যতাও থাকবে না। সাধারণ মানুষ তাদের ওপর আস্থা রাখতে পারবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার আগেই তারা যে বক্তব্য বা বিবৃতি দিচ্ছে, তাতে বোঝাই যাচ্ছে তারা কী চাচ্ছে। মনে হচ্ছে, তারা পণ করে নেমেছে ভুক্তভোগী নারীর চরিত্র তাদের মতো করে প্রতিষ্ঠিত করবে। ফলে তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে। এ জন্য গত ২২ ডিসেম্বরের ঘটনার বিচারিক অনুসন্ধানের নির্দেশনা চাচ্ছি।’

সে সময় বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক ইনায়েতুর রহিম বলেন, ‘একটা অনুসন্ধান চলছে। এর মধ্যে কি আমরা আরেকটা অনুসন্ধানের আদেশ দেব? তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার ভিন্ন ভিন্ন বিবৃতি বা বক্তব্য কাম্য নয়, এটি দুঃখজনক। ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যে আসলে পরবর্তীতে সত্য ঘটনা উদ্ঘাটন হলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা রকম ধারণা তৈরি হয়।’

বিচারক আরও বলেন, ‘মিডিয়া তথ্য খুঁজবেই তাই মিডিয়াকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। গ্রেপ্তার-মামলা কিংবা তদন্তের স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি এজেন্সি আরেকটি এজেন্সিকে সহযোগিতা করতে পারে। আর তদন্ত চলাকালে তদন্ত কর্মকর্তাদের কথা কম বলাই ভালো।’

পরে আদালত এ বিষয়ে কোন আদেশ না দিয়ে রিটটি স্যান্ডওভার রাখেন। একই সঙ্গে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমারাকে নির্দেশ দেন, তিনি যেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের এটা বলেন, ‘তারা যেন ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য না দেয়।’

একই সঙ্গে আদালত রিটকারী আইনজীবীকে বলেন, কোন একটি ঘটনার ‘বিচারিক অনুসন্ধান’ চাওয়ার বিধান কোন আইনে আছে, পরবর্তী শুনানির দিন সে বিষয়ে জেনে আসতে। আইনজীবী আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া রাসেল ছাড়াও আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী রাশিদা চৌধুরী নিলু। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

এরআগে সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া কক্সবাজারে শিশুসন্তান ও স্বামীকে আটকে রেখে নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। রিটে স্বরাষ্ট্রসচিব, আইজিপি, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন সচিব, জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।

গত ২২ ডিসেম্বর কক্সবাজারে স্বামী ও সন্তানকে জিম্মি করে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠে। এরপর এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ ঘটনায় ওই নারীর স্বামী চারজনের নাম উল্লেখ ও তিনজনকে অজ্ঞাত আসামি করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করেন। এ মামলায় এখন পর্যন্ত মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বুধবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২২ , ২১ পৌষ ১৪২৮ ১ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

পর্যটক ধর্ষণ ঘটনায় অসঙ্গতিপূর্ণ বক্তব্য দুঃখজনক : হাইকোর্ট

আদালত বার্তা পরিবেশক

মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য বা বিবৃতি ‘কাম্য নয়’ মন্তব্য করে একে ‘দুঃখজনক’ বলেছে হাইকোর্ট। কক্সবাজারে পর্যটককে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে করা রিটের শুনানির এক পর্যায়ে গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ থেকে এ মন্তব্য আসে।

রিটকারী আইনজীবী আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া রাসেল আদালতে বলেন, ‘কক্সবাজারের ঘটনায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও র?্যাবের বক্তব্য অসামঞ্জস্যপূর্ণ। বিভিন্ন মিডিয়ায় তাদের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য এসেছে। এ নিয়ে এক ধরনের অসঙ্গতি তৈরি হয়েছে। তাছাড়া এ ধরনের স্ববিরোধী বিবৃতি-বক্তব্যের কারণে তদন্তের গ্রহণযোগ্যতাও থাকবে না। সাধারণ মানুষ তাদের ওপর আস্থা রাখতে পারবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার আগেই তারা যে বক্তব্য বা বিবৃতি দিচ্ছে, তাতে বোঝাই যাচ্ছে তারা কী চাচ্ছে। মনে হচ্ছে, তারা পণ করে নেমেছে ভুক্তভোগী নারীর চরিত্র তাদের মতো করে প্রতিষ্ঠিত করবে। ফলে তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে। এ জন্য গত ২২ ডিসেম্বরের ঘটনার বিচারিক অনুসন্ধানের নির্দেশনা চাচ্ছি।’

সে সময় বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক ইনায়েতুর রহিম বলেন, ‘একটা অনুসন্ধান চলছে। এর মধ্যে কি আমরা আরেকটা অনুসন্ধানের আদেশ দেব? তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার ভিন্ন ভিন্ন বিবৃতি বা বক্তব্য কাম্য নয়, এটি দুঃখজনক। ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যে আসলে পরবর্তীতে সত্য ঘটনা উদ্ঘাটন হলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা রকম ধারণা তৈরি হয়।’

বিচারক আরও বলেন, ‘মিডিয়া তথ্য খুঁজবেই তাই মিডিয়াকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। গ্রেপ্তার-মামলা কিংবা তদন্তের স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি এজেন্সি আরেকটি এজেন্সিকে সহযোগিতা করতে পারে। আর তদন্ত চলাকালে তদন্ত কর্মকর্তাদের কথা কম বলাই ভালো।’

পরে আদালত এ বিষয়ে কোন আদেশ না দিয়ে রিটটি স্যান্ডওভার রাখেন। একই সঙ্গে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমারাকে নির্দেশ দেন, তিনি যেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের এটা বলেন, ‘তারা যেন ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য না দেয়।’

একই সঙ্গে আদালত রিটকারী আইনজীবীকে বলেন, কোন একটি ঘটনার ‘বিচারিক অনুসন্ধান’ চাওয়ার বিধান কোন আইনে আছে, পরবর্তী শুনানির দিন সে বিষয়ে জেনে আসতে। আইনজীবী আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া রাসেল ছাড়াও আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী রাশিদা চৌধুরী নিলু। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

এরআগে সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া কক্সবাজারে শিশুসন্তান ও স্বামীকে আটকে রেখে নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। রিটে স্বরাষ্ট্রসচিব, আইজিপি, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন সচিব, জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।

গত ২২ ডিসেম্বর কক্সবাজারে স্বামী ও সন্তানকে জিম্মি করে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠে। এরপর এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ ঘটনায় ওই নারীর স্বামী চারজনের নাম উল্লেখ ও তিনজনকে অজ্ঞাত আসামি করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করেন। এ মামলায় এখন পর্যন্ত মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।