কোটি টাকারও বেশি জালনোট উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৩

সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্র পরস্পর যোগসাজশে ঢাকা ও বরিশালে জালনোট তৈরি করে বিক্রি করত। এক লাখ টাকার জাল নোট তৈরি করতে খরচ হয় চার হাজার টাকা। আর এক লাখ জাল নোট ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বিক্রি করছে। এ জালিয়াত চক্র কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার জাল নোট তৈরি করে বিক্রি করছে। নতুন করে বাণিজ্য মেলা উপলক্ষে অতিরিক্ত জাল নোট তৈরি ও বিক্রির টার্গেট নিয়েছে। অবশেষে র‌্যাবের অভিযানে জালনোট তৈরি চক্রের প্রধানসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো ছগির হোসেন, সেলিনা আক্তার পাখি ও রুহুল আমিন। তাদের কাছ থেকে এক কোটি ২০ লাখ টাকা, পাঁচটি মোবাইল ফোন, দুটি ল্যাপটপ, একটি সিপিইউ, একটি মনিটর, তিনটি প্রিন্টার, একটি হ্যান্ড এয়ারড্রয়ার, জাল নোট তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়। র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে।

র‌্যাবের মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গেল ২৮ নভেম্বর র‌্যাব-৪ একটি টিম মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকার জাল নোটসহ জাল নোট তেরি ও বিক্রয়কারী চক্রের চার সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা কয়েকজনের নাম প্রকাশ করেছে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করা হয়।

গত সোমবার রাতে র‌্যাব হেডকোয়াটার্সের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৪ একটি অভিযানিক দল রাজধানীর মিরপুর পল্লবী এলাকায় অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ জাল নোট তৈরি চক্রের প্রধান ছগির হোসেনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা বলেছে, তারা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা ও বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকায় এই জালনোট তৈরি করে বিভিন্ন লোকদের কাছে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে আসছে। এই চক্রটির মূল হোতা ছগির হোসেন ও তার সহযোগী। এ চক্রের সদস্য সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ জন।

গ্রেপ্তারকৃত ছগির হোসেন ১৯৮৭ সালে বরগুনা থেকে ঢাকায় এসে প্রথম একটি হোটেলে কর্মচারীর কাজ নেয়। পরবর্তীতে ভ্যানে ফেরি করে গামেন্টস পণ্য বিক্রি করত। গামেন্টস পণ্য বিক্রির সময় অভিযুক্ত আসামি ছগিরের সঙ্গে ইদ্রিস নামে একজনের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাধে তাদের মধ্যে সু-সম্পর্ক গড়ে উঠে। এরপর ইদ্রিসের মাধ্যমে জালনোট তৈরির বিষয় সে জানে।

২০১৭ সালে জাল নোটসহ ইদ্রিস ও ছগির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়। এক বছর জেল খেটে পুনরায় সে ২০১৮ সাল থেকে জালনোট তৈরি শুরু করে। তৈরিকৃত জালনোটগুলো তার গ্রুপে থাকা রুহুল আমিন, সেলিনা ও অন্যান্য আরও সাত থেকে আটজন মিলে বিক্রি করত।

ছগির জালনোট তৈরির পর সে তার অন্যান্য সহযোগীদের মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে জালনোট বিক্রির জন্য নিয়ে যেতে বলত। এক লাখ জাল নোট ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করত। এরপর তারা মাঠে সরবরাহ ও বিক্রি করত। টার্গেট ও চাহিদা অনুযায়ী ছগির জালনোট বিক্রিকারীদের প্রতিমাসে বোনাসও দিত। গেল বছর করোনার সময় ছগির নিজেই জালনোট স্থানীয় বাজারে বিক্রি করত। কয়েকবার সে সাধারণ জনগণের হাতেও ধরা পড়েছিল।

অভিযুক্তরা মেলায়, ঈদে, পশুর হাটে, অধিক জনসমাগম অনুষ্ঠানে তারা জালনোট বিক্রির কৌশল অবলম্বন করে ব্যবহার করত। বর্তমানে বাণিজ্য মেলা ও শীতকালীন প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানে জালনোট বিক্রি করত। জাল নোট তৈরির পর কাজের অব্যবহ্নত অংশ পুড়ে ফেলত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে তাকে ধরতে না পারে ছগির ঘন ঘন বাসা পাল্টাতো।

সেলিনা আক্তারের স্বামীও জালনোট তৈরি চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য। বর্তমানে সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক করে জেলে আছে। স্বামীর মাধ্যমে সে এ চক্রে জড়িয়ে জালনোট ব্যবসা শুরু করে। আগে সে কামরাঙ্গীরচরে একটি বিউটি পার্লারে বিউটিশিয়ান হিসেবে কাজ করত।

অভিযুক্ত রুহুল আমিন প্রধান অভিযুক্ত ছগিরের সহযোগী। রুহুল আমিনের মাধ্যমে ছগিরের অন্যান্য সহযোগীদের পরিচয় হয়। রুহুল আমিন ২০১৭ সালে জেলে ছিল। বর্তমানে তার নামে মামলা চলমান আছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। ঘটনায় জড়িত পলাতকদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে।

আরও খবর
যাত্রীবাহী লঞ্চে সিসি ক্যামেরা ও জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম রাখার সুপারিশ
ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন, বর্ণাঢ্য কর্মসূচি
প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই নির্বাচনের প্রস্তাব সাম্যবাদী দলের
ছাত্রলীগের দীর্ঘ র‌্যালি, যানজট দুর্ভোগ চরমে
শিল্পকলা একাডেমিতে জাতীয় পিঠা উৎসব শুরু হচ্ছে আজ
অবৈধ সম্পদ, পুলিশ কর্মকর্তা শাহজাহানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
তিন মালিককে নৌ-আদালতে হাজিরের নির্দেশ
বস্তিঘরে আগুন, নিভে গেল তিন ভাইবোনের জীবন প্রদীপ
একটি ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ
লামায় পাহাড়ি যুবককে গুলি করে হত্যা
তৈমুরকে নিয়ে বিএনপির ক্ষোভ নাকি কৌশল?
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করবে বিএনপি

বুধবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২২ , ২১ পৌষ ১৪২৮ ১ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

কোটি টাকারও বেশি জালনোট উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৩

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্র পরস্পর যোগসাজশে ঢাকা ও বরিশালে জালনোট তৈরি করে বিক্রি করত। এক লাখ টাকার জাল নোট তৈরি করতে খরচ হয় চার হাজার টাকা। আর এক লাখ জাল নোট ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বিক্রি করছে। এ জালিয়াত চক্র কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার জাল নোট তৈরি করে বিক্রি করছে। নতুন করে বাণিজ্য মেলা উপলক্ষে অতিরিক্ত জাল নোট তৈরি ও বিক্রির টার্গেট নিয়েছে। অবশেষে র‌্যাবের অভিযানে জালনোট তৈরি চক্রের প্রধানসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো ছগির হোসেন, সেলিনা আক্তার পাখি ও রুহুল আমিন। তাদের কাছ থেকে এক কোটি ২০ লাখ টাকা, পাঁচটি মোবাইল ফোন, দুটি ল্যাপটপ, একটি সিপিইউ, একটি মনিটর, তিনটি প্রিন্টার, একটি হ্যান্ড এয়ারড্রয়ার, জাল নোট তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়। র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে।

র‌্যাবের মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গেল ২৮ নভেম্বর র‌্যাব-৪ একটি টিম মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকার জাল নোটসহ জাল নোট তেরি ও বিক্রয়কারী চক্রের চার সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা কয়েকজনের নাম প্রকাশ করেছে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করা হয়।

গত সোমবার রাতে র‌্যাব হেডকোয়াটার্সের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৪ একটি অভিযানিক দল রাজধানীর মিরপুর পল্লবী এলাকায় অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ জাল নোট তৈরি চক্রের প্রধান ছগির হোসেনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা বলেছে, তারা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা ও বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকায় এই জালনোট তৈরি করে বিভিন্ন লোকদের কাছে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে আসছে। এই চক্রটির মূল হোতা ছগির হোসেন ও তার সহযোগী। এ চক্রের সদস্য সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ জন।

গ্রেপ্তারকৃত ছগির হোসেন ১৯৮৭ সালে বরগুনা থেকে ঢাকায় এসে প্রথম একটি হোটেলে কর্মচারীর কাজ নেয়। পরবর্তীতে ভ্যানে ফেরি করে গামেন্টস পণ্য বিক্রি করত। গামেন্টস পণ্য বিক্রির সময় অভিযুক্ত আসামি ছগিরের সঙ্গে ইদ্রিস নামে একজনের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাধে তাদের মধ্যে সু-সম্পর্ক গড়ে উঠে। এরপর ইদ্রিসের মাধ্যমে জালনোট তৈরির বিষয় সে জানে।

২০১৭ সালে জাল নোটসহ ইদ্রিস ও ছগির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়। এক বছর জেল খেটে পুনরায় সে ২০১৮ সাল থেকে জালনোট তৈরি শুরু করে। তৈরিকৃত জালনোটগুলো তার গ্রুপে থাকা রুহুল আমিন, সেলিনা ও অন্যান্য আরও সাত থেকে আটজন মিলে বিক্রি করত।

ছগির জালনোট তৈরির পর সে তার অন্যান্য সহযোগীদের মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে জালনোট বিক্রির জন্য নিয়ে যেতে বলত। এক লাখ জাল নোট ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করত। এরপর তারা মাঠে সরবরাহ ও বিক্রি করত। টার্গেট ও চাহিদা অনুযায়ী ছগির জালনোট বিক্রিকারীদের প্রতিমাসে বোনাসও দিত। গেল বছর করোনার সময় ছগির নিজেই জালনোট স্থানীয় বাজারে বিক্রি করত। কয়েকবার সে সাধারণ জনগণের হাতেও ধরা পড়েছিল।

অভিযুক্তরা মেলায়, ঈদে, পশুর হাটে, অধিক জনসমাগম অনুষ্ঠানে তারা জালনোট বিক্রির কৌশল অবলম্বন করে ব্যবহার করত। বর্তমানে বাণিজ্য মেলা ও শীতকালীন প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানে জালনোট বিক্রি করত। জাল নোট তৈরির পর কাজের অব্যবহ্নত অংশ পুড়ে ফেলত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে তাকে ধরতে না পারে ছগির ঘন ঘন বাসা পাল্টাতো।

সেলিনা আক্তারের স্বামীও জালনোট তৈরি চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য। বর্তমানে সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক করে জেলে আছে। স্বামীর মাধ্যমে সে এ চক্রে জড়িয়ে জালনোট ব্যবসা শুরু করে। আগে সে কামরাঙ্গীরচরে একটি বিউটি পার্লারে বিউটিশিয়ান হিসেবে কাজ করত।

অভিযুক্ত রুহুল আমিন প্রধান অভিযুক্ত ছগিরের সহযোগী। রুহুল আমিনের মাধ্যমে ছগিরের অন্যান্য সহযোগীদের পরিচয় হয়। রুহুল আমিন ২০১৭ সালে জেলে ছিল। বর্তমানে তার নামে মামলা চলমান আছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। ঘটনায় জড়িত পলাতকদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে।