উন্নয়নে পিছিয়ে কুড়িগ্রাম

আনিছুর রহমান মিয়াজী

কুড়িগ্রাম এক সময় অভাবী জেলা হিসাবে পরিচিত ছিল। এখন স্বাবলম্বী জেলা হিসাবে এগিয়ে চলছে, তবে উন্নয়নে অনেক ক্ষেত্রেই পিছিয়ে রয়েছে। এ জেলার উন্নয়নে অতীতে সরকারগুলোর সুদৃষ্টি ছিল না। এখানকার মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য গড়ে তোলা হয়নি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। তবে স্থানীয়রা শিল্প ও কলকারখানার জন্যে বসে থাকেনি, তারা অধিক ফসল ফলিয়ে কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এ জেলার কৃষক পরিবার নিজের চাহিদা পূরণ করে খাদ্যদ্রব্য এখন অন্য জেলায় রপ্তানি করছে।

জেলায় একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। যোগাযোগ উন্নয়নে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হবে বলে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন। সেতু নির্মাণ করা হলে এ জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা তথা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চলীয় জেলাসমূহের সঙ্গে যোগাযোগ উন্নয়ন ঘটবে। চিলমারী নৌ-বন্দরের কার্যক্রমও এগিয়ে চলছে। চিলমারী নৌ-বন্দর বাস্তবায়িত হলে নদী পথে যোগাযোগ উন্নয়নে বিপ্লব ঘটিয়ে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে কুড়িগ্রাম জেলা। বর্তমান সরকার পিছিয়ে পড়া এ জেলার উন্নয়নে সুদৃষ্টি দিয়ে বেশ কিছু মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছে কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্যরা সেই সব প্রকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে নিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন না করায় এর গতি বাতাসে ঝুলছে।

দীর্ঘদিন থেকে কিছু সংখ্যক রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দল এবং কতিপয় সংস্থা রাজনীতির খেলায় এ জেলাকে দরিদ্রতম জেলা হিসাবে ব্যবহার করে আসলেও বর্তমানে কুড়িগ্রাম জেলার মানুষ এখন আর তা মেনে নিতে পারছেন না। যারা এ জেলাকে বারবার দরিদ্রতম জেলা হিসাবে উল্লেখ করছেন তারা হয়তো বাহিরের আবহাওয়ার পরিবর্তে রাজধানী ঢাকায় এসিরুমেই বসে সেই আগের স্বপ্নগুলো দেখছেন। এ জেলার মানুষ সেই মঙ্গা, অভাব আর দুর্ভিক্ষ যে নামেই বলি না কেন, তা মুছে ফেলে অনেক আগেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন এটাই বাস্তবতা।

নদনদীগুলোতে পলি জমে তলদেশ ভরাট হয়ে উঠায় বর্ষা মৌসুমে পানির ধারণ ক্ষমতা না থাকায় প্রতি বছর কমবেশী বন্যা হয়ে এ জেলার কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে থাকে। তিস্তা নদীর দুই কুল ব্যাপক ভাঙনের শিকার হয়ে আবাদি জমি ও ভিটেবাড়ী হারিয়ে অনেকেই গৃহহীন ও ভূমিহীনে পরিণত হয়। ফলে প্রাকৃতিক এ সব দুর্যোগের কারণে এ জেলার মানুষকে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয়।

জেলাবাসীকে বন্যার কবল থেকে মুক্ত করতে এবং নদনদী ভাঙনের হাত থেকে পরিত্রাণে পেতে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদী খনন করা অতীব জরুরি। যদিও তিস্তা নদী খননের জন্য ইতিপূর্বে ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে কিন্তু বাস্তবায়নের গতি নেই। এ সব নদনদীর ভাঙন রোধে গভীরতা সৃষ্টি করা হলে একদিকে মানুষজন এ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণ পাবে অন্যদিকে নদ-নদীর দুই উপকূল ভরাট করা হলে হাজার হাজার হেক্টর পরিত্যক্ত চরাঞ্চলের জমিগুলো আবাদি জমিতে পরিণত হবে। এতে কুড়িগ্রাম জেলা কৃষিসহ সার্বিক উন্নয়নে দেশের জন্য অগ্রণীয় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

[লেখক : সাংবাদিক, কুড়িগ্রাম]

আরও খবর

বুধবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২২ , ২১ পৌষ ১৪২৮ ১ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

উন্নয়নে পিছিয়ে কুড়িগ্রাম

আনিছুর রহমান মিয়াজী

কুড়িগ্রাম এক সময় অভাবী জেলা হিসাবে পরিচিত ছিল। এখন স্বাবলম্বী জেলা হিসাবে এগিয়ে চলছে, তবে উন্নয়নে অনেক ক্ষেত্রেই পিছিয়ে রয়েছে। এ জেলার উন্নয়নে অতীতে সরকারগুলোর সুদৃষ্টি ছিল না। এখানকার মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য গড়ে তোলা হয়নি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। তবে স্থানীয়রা শিল্প ও কলকারখানার জন্যে বসে থাকেনি, তারা অধিক ফসল ফলিয়ে কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এ জেলার কৃষক পরিবার নিজের চাহিদা পূরণ করে খাদ্যদ্রব্য এখন অন্য জেলায় রপ্তানি করছে।

জেলায় একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। যোগাযোগ উন্নয়নে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হবে বলে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন। সেতু নির্মাণ করা হলে এ জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা তথা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চলীয় জেলাসমূহের সঙ্গে যোগাযোগ উন্নয়ন ঘটবে। চিলমারী নৌ-বন্দরের কার্যক্রমও এগিয়ে চলছে। চিলমারী নৌ-বন্দর বাস্তবায়িত হলে নদী পথে যোগাযোগ উন্নয়নে বিপ্লব ঘটিয়ে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে কুড়িগ্রাম জেলা। বর্তমান সরকার পিছিয়ে পড়া এ জেলার উন্নয়নে সুদৃষ্টি দিয়ে বেশ কিছু মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছে কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্যরা সেই সব প্রকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে নিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন না করায় এর গতি বাতাসে ঝুলছে।

দীর্ঘদিন থেকে কিছু সংখ্যক রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দল এবং কতিপয় সংস্থা রাজনীতির খেলায় এ জেলাকে দরিদ্রতম জেলা হিসাবে ব্যবহার করে আসলেও বর্তমানে কুড়িগ্রাম জেলার মানুষ এখন আর তা মেনে নিতে পারছেন না। যারা এ জেলাকে বারবার দরিদ্রতম জেলা হিসাবে উল্লেখ করছেন তারা হয়তো বাহিরের আবহাওয়ার পরিবর্তে রাজধানী ঢাকায় এসিরুমেই বসে সেই আগের স্বপ্নগুলো দেখছেন। এ জেলার মানুষ সেই মঙ্গা, অভাব আর দুর্ভিক্ষ যে নামেই বলি না কেন, তা মুছে ফেলে অনেক আগেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন এটাই বাস্তবতা।

নদনদীগুলোতে পলি জমে তলদেশ ভরাট হয়ে উঠায় বর্ষা মৌসুমে পানির ধারণ ক্ষমতা না থাকায় প্রতি বছর কমবেশী বন্যা হয়ে এ জেলার কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে থাকে। তিস্তা নদীর দুই কুল ব্যাপক ভাঙনের শিকার হয়ে আবাদি জমি ও ভিটেবাড়ী হারিয়ে অনেকেই গৃহহীন ও ভূমিহীনে পরিণত হয়। ফলে প্রাকৃতিক এ সব দুর্যোগের কারণে এ জেলার মানুষকে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয়।

জেলাবাসীকে বন্যার কবল থেকে মুক্ত করতে এবং নদনদী ভাঙনের হাত থেকে পরিত্রাণে পেতে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদী খনন করা অতীব জরুরি। যদিও তিস্তা নদী খননের জন্য ইতিপূর্বে ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে কিন্তু বাস্তবায়নের গতি নেই। এ সব নদনদীর ভাঙন রোধে গভীরতা সৃষ্টি করা হলে একদিকে মানুষজন এ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণ পাবে অন্যদিকে নদ-নদীর দুই উপকূল ভরাট করা হলে হাজার হাজার হেক্টর পরিত্যক্ত চরাঞ্চলের জমিগুলো আবাদি জমিতে পরিণত হবে। এতে কুড়িগ্রাম জেলা কৃষিসহ সার্বিক উন্নয়নে দেশের জন্য অগ্রণীয় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

[লেখক : সাংবাদিক, কুড়িগ্রাম]