ফের ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে চায় ব্যবসায়ীরা

আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেল দাম বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে দেশের বাজারে সয়াবিনের দাম লিটার প্রতি ৮ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন ব্যবসায়ীরা। আগামী শনিবার থেকে নতুন দাম কার্যকরও করতে চান তারা। দাম বাড়াতে আজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বৃদ্ধির জন্য চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে আগামী ৮ জানুয়ারি থেকে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ট্যারিফ কমিশনে পাঠায়। কমিশন আজ এ বিষয়ে রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠকে বসবে।

এ বিষয়ে শীর্ষস্থানীয় ভোজ্যতেল বিপণনকারী সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা গণমাধ্যমকে জানান, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারে প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দাম ১২ টাকা বৃদ্ধির একটি প্রস্তাব আমরা অনেক আগেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দিয়েছিলাম। পরে কমিয়ে ৮ টাকা করা হয়েছে। আজ দুপুরে ট্যারিফ কমিশন বৈঠক ডেকেছে। বৈঠকে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অনুবিভাগ) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘যদি ৮ তারিখ থেকে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব তারা কার্যকর করে সেটি সরকার অনুমোদিত হবে না। দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয় এ-সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠক থেকে। যা এখনও অনুষ্ঠিত হয়নি। ওই বৈঠকেই ভোজ্যতেলের দাম বাড়বে না কমবে তার সিদ্ধান্ত হবে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির কাঁচামালের দাম কমতে শুরু করেছে। এ পরিস্থিতিতে রিফাইনাররা কীভাবে নিজেদের মতো করে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সেটি আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা সেটা পেয়েছি। এখন এ প্রস্তাব বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন দিয়ে অ্যানালাইসিস করে দেখব।’

ভোজ্যতেলের উৎপাদক ও বাজারজাতকারী সংগঠনের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের খুচরা মূল্য হবে লিটারে ১৪৫ টাকা। যার মিল গেট মূল্য ১৪২ টাকা এবং পরিবেশক মূল্য হবে লিটারে ১৪৩ টাকা। একইভাবে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের খুচরা মূল্য পড়বে ১৬৮ টাকা। যার মিল গেট মূল্য হবে ১৫৮ টাকা এবং পরিবেশক মূল্য ১৬২ টাকা। বোতলজাত ৫ লিটার সয়াবিন বিক্রি হবে ৮০০ টাকায়। মিল গেট মূল্য থাকবে ৭৬০ টাকা এবং পরিবেশক মূল্য হবে ৭৮০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েলের খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১২৯ টাকা। মিল গেটে যার মূল্য ১২৬ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে মূল্য ১২৭ টাকা ধরা হয়েছে।

বর্ধিত এই মূল্য আগামী ৮ জানুয়ারি থেকে কার্যকর করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সচিব মো. নুরুল ইসলাম মোল্লা স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে ৮ জানুয়ারি থেকে বর্ধিত দাম কার্যকরের বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।

গত বছর ১৯ অক্টোবর সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয় প্রতি লিটারে ৭ টাকা। সরকারের অনুমোদন নিয়ে ওই দিন থেকেই বর্তমানে দেশের বাজারে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা এবং পাঁচ লিটার ৭৬০ টাকায়। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন তেল ১৩৬ টাকা এবং পাম অয়েল ১১৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সেই দাম বাজারে কার্যকর হওয়ার আগের দিনই বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কাছে পরের ধাপে বর্তমান বাজার দামের তুলনায় প্রতি লিটার সয়াবিনে ১২ টাকা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে রাখা হয়। যা গত ৩ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করার দাবি জানানো হয়।

কিন্তু নানা কারণে উৎপাদকরা ডিসেম্বরে ভোজ্যতেলের বর্ধিত মূল্য কার্যকর থেকে বিরত থাকে। তবে নতুন বছরের শুরুতেই উৎপাদক ও বাজারজাতকারীরা আবারও দাম বৃদ্ধির পক্ষে এককাট্টা হয়। তবে এবার আগের বর্ধিত প্রস্তাব থেকে লিটারে ৪ টাকা ছাড় দিতে চাইছে। সে অনুযায়ী, গত ২ জানুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে লিটারে ৮ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

দাম বাড়ানোর প্রস্তাব সম্পর্কিত চিঠিতে বলা হয়, করোনা মহামারীতে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার কথা বিবেচনা করে এতদিন দাম বাড়ানো হয়নি। কিন্তু আমদানি মূল্য বিবেচনায় বর্তমান দাম ধরে রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। বাজারে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্য ধরে রাখার স্বার্থে প্রস্তাবিত দাম বাজারে কার্যকরের কোন বিকল্প নেই।

বৃহস্পতিবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২২ , ২২ পৌষ ১৪২৮ ২ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

ফের ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে চায় ব্যবসায়ীরা

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেল দাম বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে দেশের বাজারে সয়াবিনের দাম লিটার প্রতি ৮ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন ব্যবসায়ীরা। আগামী শনিবার থেকে নতুন দাম কার্যকরও করতে চান তারা। দাম বাড়াতে আজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বৃদ্ধির জন্য চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে আগামী ৮ জানুয়ারি থেকে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ট্যারিফ কমিশনে পাঠায়। কমিশন আজ এ বিষয়ে রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠকে বসবে।

এ বিষয়ে শীর্ষস্থানীয় ভোজ্যতেল বিপণনকারী সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা গণমাধ্যমকে জানান, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারে প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দাম ১২ টাকা বৃদ্ধির একটি প্রস্তাব আমরা অনেক আগেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দিয়েছিলাম। পরে কমিয়ে ৮ টাকা করা হয়েছে। আজ দুপুরে ট্যারিফ কমিশন বৈঠক ডেকেছে। বৈঠকে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অনুবিভাগ) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘যদি ৮ তারিখ থেকে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব তারা কার্যকর করে সেটি সরকার অনুমোদিত হবে না। দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয় এ-সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠক থেকে। যা এখনও অনুষ্ঠিত হয়নি। ওই বৈঠকেই ভোজ্যতেলের দাম বাড়বে না কমবে তার সিদ্ধান্ত হবে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির কাঁচামালের দাম কমতে শুরু করেছে। এ পরিস্থিতিতে রিফাইনাররা কীভাবে নিজেদের মতো করে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সেটি আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা সেটা পেয়েছি। এখন এ প্রস্তাব বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন দিয়ে অ্যানালাইসিস করে দেখব।’

ভোজ্যতেলের উৎপাদক ও বাজারজাতকারী সংগঠনের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের খুচরা মূল্য হবে লিটারে ১৪৫ টাকা। যার মিল গেট মূল্য ১৪২ টাকা এবং পরিবেশক মূল্য হবে লিটারে ১৪৩ টাকা। একইভাবে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের খুচরা মূল্য পড়বে ১৬৮ টাকা। যার মিল গেট মূল্য হবে ১৫৮ টাকা এবং পরিবেশক মূল্য ১৬২ টাকা। বোতলজাত ৫ লিটার সয়াবিন বিক্রি হবে ৮০০ টাকায়। মিল গেট মূল্য থাকবে ৭৬০ টাকা এবং পরিবেশক মূল্য হবে ৭৮০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েলের খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১২৯ টাকা। মিল গেটে যার মূল্য ১২৬ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে মূল্য ১২৭ টাকা ধরা হয়েছে।

বর্ধিত এই মূল্য আগামী ৮ জানুয়ারি থেকে কার্যকর করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সচিব মো. নুরুল ইসলাম মোল্লা স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে ৮ জানুয়ারি থেকে বর্ধিত দাম কার্যকরের বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।

গত বছর ১৯ অক্টোবর সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয় প্রতি লিটারে ৭ টাকা। সরকারের অনুমোদন নিয়ে ওই দিন থেকেই বর্তমানে দেশের বাজারে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা এবং পাঁচ লিটার ৭৬০ টাকায়। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন তেল ১৩৬ টাকা এবং পাম অয়েল ১১৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সেই দাম বাজারে কার্যকর হওয়ার আগের দিনই বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কাছে পরের ধাপে বর্তমান বাজার দামের তুলনায় প্রতি লিটার সয়াবিনে ১২ টাকা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে রাখা হয়। যা গত ৩ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করার দাবি জানানো হয়।

কিন্তু নানা কারণে উৎপাদকরা ডিসেম্বরে ভোজ্যতেলের বর্ধিত মূল্য কার্যকর থেকে বিরত থাকে। তবে নতুন বছরের শুরুতেই উৎপাদক ও বাজারজাতকারীরা আবারও দাম বৃদ্ধির পক্ষে এককাট্টা হয়। তবে এবার আগের বর্ধিত প্রস্তাব থেকে লিটারে ৪ টাকা ছাড় দিতে চাইছে। সে অনুযায়ী, গত ২ জানুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে লিটারে ৮ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

দাম বাড়ানোর প্রস্তাব সম্পর্কিত চিঠিতে বলা হয়, করোনা মহামারীতে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার কথা বিবেচনা করে এতদিন দাম বাড়ানো হয়নি। কিন্তু আমদানি মূল্য বিবেচনায় বর্তমান দাম ধরে রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। বাজারে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্য ধরে রাখার স্বার্থে প্রস্তাবিত দাম বাজারে কার্যকরের কোন বিকল্প নেই।