সূর্যের পাঁচগুণ বেশি তাপ দিল চীনের ‘কৃত্রিম সূর্য’

বিশ্বের অনেক দেশই ফিউশন রিঅ্যাকটর প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। তবে এ প্রযুক্তিতে এবার উল্লেখযোগ্য সফলতা পেয়েছে চীন। দেশটির বানানো নিউক্লিয়ার ফিউশন রিঅ্যাকটর ডিভাইস সূর্যের চেয়েও পাঁচগুণ বেশি তাপমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বিজিআরের প্রতিবেদনে জানা যায়, রিঅ্যাকটরটি ৭ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পৌঁছে যায়। পরবর্তী সময়ে এই তাপমাত্রা প্রায় ১৭ মিনিট পর্যন্ত ধরে রাখে। আপাতদৃষ্টিতে ১৭ মিনিটকে খুব কম সময় মনে হতে পারে। কিন্তু যখন এটি সূর্যের থেকেও পাঁচগুণ বেশি তাপমাত্রা ধরে রাখার মতো ব্যাপার। তখন ১৭ মিনিটই খুব দীর্ঘ সময়। ফসিল ফুয়েল, কয়লাকেন্দ্রিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পরিবেশ দূষণের কারণ। চীনের লক্ষ্য ফিউশন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ব্যাপক পরিমাণ পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন করা। চীনের ‘কৃত্রিম সূর্য’ বানানোর প্রকল্পটি এক্সপেরিমেন্টাল অ্যাডভান্সড সুপার কন্ডাকটিং টোকামাক (ইস্ট) নামে পরিচিত। শুধু চীনই নয়, এ ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছে বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো। ফ্রান্সের মারসেলেতে রয়েছে ফিউশন প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় রিঅ্যাকটর ইন্টারন্যাশনাল থার্মোনিউক্লিয়ার এক্সপেরিমেন্টাল রিঅ্যাকটর। যুক্তরাজ্যও নিজস্ব ফিউশন রিঅ্যাকটর বানানোর কাজ করছে। তবে চীনের ৭ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাই কিন্তু ফিউশন প্রযুক্তিতে অর্জিত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নয়। ২০২০ সালে কোরিয়ান সুপার কন্ডাকটিং টোকামাক অ্যাডভান্সড রিসার্চ সেন্টার (কেস্টার) প্রায় ১০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উৎপাদন করতে সক্ষম হয়। তাদের অর্জিত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রায় ২০ সেকেন্ড পর্যন্ত ধরে রাখতে সক্ষম হয় প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে তারা ১০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ৫ মিনিটের জন্য ধরে রাখতে চায়।

ফসিল ফুয়েলকেন্দ্রিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ ছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানিও অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও পর্যাপ্ত পরিমাণ শক্তি উৎপাদন করতে পারে না। আর প্রচলিত নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটরে সৃষ্ট নিউক্লীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজও ব্যয়বহুল ও দীর্ঘ মেয়াদে ঝুঁকিপূর্ণ। সেই হিসাবে ফিউশন রিঅ্যাকটরে পরিবেশ দূষণ কিংবা নিউক্লীয় বর্জ্যরে কোনো ঝামেলা নেই।

প্রচলিত নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটর কাজ করে ফিশন প্রক্রিয়ায়। যেখানে একটি ভারী নিউক্লিয়াসকে একটি নিউট্রন দ্বারা আঘাত করলে এটি বিভক্ত হয়ে দুটি হালকা নিউক্লিয়াস এবং প্রায় দুইশ মেগা-ইলেকট্রনভোল্ট শক্তি নির্গত করে।

ফিউশন প্রক্রিয়ায় দুটি হালকা নিউক্লিয়াস একত্রিত হয়ে একটি ততোধিক ভারী নিউক্লিয়াস গঠন করে এবং শক্তি নির্গত করে। মূলত সূর্যে এ ধরনের বিক্রিয়ায় শক্তি উৎপন্ন হয়। এ ধরনের প্রযুক্তি অর্জনের ক্ষেত্রে সূর্যের বিক্রিয়াকেই অনুকরণ করতে হয়। তাই এ ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলে সেটাকে ‘কৃত্রিম সূর্য’ বলা হয়।

বৃহস্পতিবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২২ , ২২ পৌষ ১৪২৮ ২ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

সূর্যের পাঁচগুণ বেশি তাপ দিল চীনের ‘কৃত্রিম সূর্য’

image

বিশ্বের অনেক দেশই ফিউশন রিঅ্যাকটর প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। তবে এ প্রযুক্তিতে এবার উল্লেখযোগ্য সফলতা পেয়েছে চীন। দেশটির বানানো নিউক্লিয়ার ফিউশন রিঅ্যাকটর ডিভাইস সূর্যের চেয়েও পাঁচগুণ বেশি তাপমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বিজিআরের প্রতিবেদনে জানা যায়, রিঅ্যাকটরটি ৭ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পৌঁছে যায়। পরবর্তী সময়ে এই তাপমাত্রা প্রায় ১৭ মিনিট পর্যন্ত ধরে রাখে। আপাতদৃষ্টিতে ১৭ মিনিটকে খুব কম সময় মনে হতে পারে। কিন্তু যখন এটি সূর্যের থেকেও পাঁচগুণ বেশি তাপমাত্রা ধরে রাখার মতো ব্যাপার। তখন ১৭ মিনিটই খুব দীর্ঘ সময়। ফসিল ফুয়েল, কয়লাকেন্দ্রিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পরিবেশ দূষণের কারণ। চীনের লক্ষ্য ফিউশন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ব্যাপক পরিমাণ পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন করা। চীনের ‘কৃত্রিম সূর্য’ বানানোর প্রকল্পটি এক্সপেরিমেন্টাল অ্যাডভান্সড সুপার কন্ডাকটিং টোকামাক (ইস্ট) নামে পরিচিত। শুধু চীনই নয়, এ ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছে বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো। ফ্রান্সের মারসেলেতে রয়েছে ফিউশন প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় রিঅ্যাকটর ইন্টারন্যাশনাল থার্মোনিউক্লিয়ার এক্সপেরিমেন্টাল রিঅ্যাকটর। যুক্তরাজ্যও নিজস্ব ফিউশন রিঅ্যাকটর বানানোর কাজ করছে। তবে চীনের ৭ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাই কিন্তু ফিউশন প্রযুক্তিতে অর্জিত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নয়। ২০২০ সালে কোরিয়ান সুপার কন্ডাকটিং টোকামাক অ্যাডভান্সড রিসার্চ সেন্টার (কেস্টার) প্রায় ১০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উৎপাদন করতে সক্ষম হয়। তাদের অর্জিত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রায় ২০ সেকেন্ড পর্যন্ত ধরে রাখতে সক্ষম হয় প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে তারা ১০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ৫ মিনিটের জন্য ধরে রাখতে চায়।

ফসিল ফুয়েলকেন্দ্রিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ ছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানিও অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও পর্যাপ্ত পরিমাণ শক্তি উৎপাদন করতে পারে না। আর প্রচলিত নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটরে সৃষ্ট নিউক্লীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজও ব্যয়বহুল ও দীর্ঘ মেয়াদে ঝুঁকিপূর্ণ। সেই হিসাবে ফিউশন রিঅ্যাকটরে পরিবেশ দূষণ কিংবা নিউক্লীয় বর্জ্যরে কোনো ঝামেলা নেই।

প্রচলিত নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটর কাজ করে ফিশন প্রক্রিয়ায়। যেখানে একটি ভারী নিউক্লিয়াসকে একটি নিউট্রন দ্বারা আঘাত করলে এটি বিভক্ত হয়ে দুটি হালকা নিউক্লিয়াস এবং প্রায় দুইশ মেগা-ইলেকট্রনভোল্ট শক্তি নির্গত করে।

ফিউশন প্রক্রিয়ায় দুটি হালকা নিউক্লিয়াস একত্রিত হয়ে একটি ততোধিক ভারী নিউক্লিয়াস গঠন করে এবং শক্তি নির্গত করে। মূলত সূর্যে এ ধরনের বিক্রিয়ায় শক্তি উৎপন্ন হয়। এ ধরনের প্রযুক্তি অর্জনের ক্ষেত্রে সূর্যের বিক্রিয়াকেই অনুকরণ করতে হয়। তাই এ ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলে সেটাকে ‘কৃত্রিম সূর্য’ বলা হয়।