বিআইডব্লিউটিসির ৭ কর্মকর্তার নামে মামলা

মাওয়া, আরিচা ঘাটের ১০টি ফেরিতে সার্চ ও ফগ লাইটের স্থলে নিম্নমানের সার্চ লাইট সরবরাহ করে পাঁচ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) তিন কর্মকর্তাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গতকাল দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান বাদী হয়ে দ-বিধি ৪২০/৪০৯/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলাটি করেন। মামলাটি করা হয় সজেকা, ঢাকা-১ এ। দুদকের জনসংযোগ দপ্তর সূত্র এতথ্য জানান।

মামলার আসামিরা হলেন বিআইডব্লিউটিসির সাবেক জিএম ক্যাপ্টেন শওকত সরদার (৬০), সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালক (কারিগরি) ড. জ্ঞান রঞ্জন শীল, মহাব্যবস্থাপক মো. নুরুল হুদা, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপ-সচিব পঙ্কজ কুমার পাল, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) সাবেক মহাব্যবস্থাপক (মেকানিক্যাল) ইঞ্জিনিয়ার মো. রহমত উল্লা (৬৩), মহাব্যবস্থাপক (মেকানিক্যাল), ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার নাসির উদ্দিন ও মেসার্স জনি করপোরেশনের স্বত্ব¡াধিকারী লে. কমান্ডার ওমর আলী (অব.)।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মেসার্স জনি করপোরেশনের কাছে প্রিন্সিপাল এম/এস আর্টিকুলেট, আইএনসি, ইউএসএ কোম্পানির জি সার্চ লাইট মডেলের ফগ সার্চলাইট না থাকা সত্ত্বেও ফেরিতে সরবরাহ করতে প্রতিষ্ঠানটি দরপত্র জমা দেয়। বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা যাচাই না করেই জনি করপোরেশনের দরপত্রকে রেসপনসিভ দেখিয়ে ১০টি সার্চ ও ফগ লাইটের সরবরাহ আদেশ দেন। পিএসআই কমিটি মিথ্যা তথ্যে সার্চ ও ফগ লাইটের স্থলে নিম্নমানের সার্চলাইট সরবরাহ করে। এতে বিআইডব্লিউটিসির ফেরিতে ফগ লাইট স্থাপনের প্রকল্প ব্যর্থ হয়।

এতে আরও বলা হয়, ২০১৫ সালের ৪ জুন থেকে ১২ জুন পর্যন্ত মাওয়া ও আরিচার ১০টি ফেরিতে ফগ অ্যান্ড সার্চলাইট স্থাপন করা হয়েছে বলে জানায় বিআইডব্লিউটিসি। ফেরিগুলো হলো-আরিচায় চলাচলকারী ফেরি খান জাহান আলী, ফেরি জাহাঙ্গীর, ফেরি এনায়েতপুরী, ফেরি কপোতী, ফেরি কুমারী। মাওয়ার ফেরিগুলো হলো- বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন, আমানত শাহ, শাহ আলী, কাকলী ও ক্যামেলিয়া।

এদিকে, ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বলছে, ফেরিগুলোতে ফগ অ্যান্ড সার্চ লাইট পরিদর্শনে যান বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে চার সদস্যের পিএসআই কমিটি। প্রতিনিধি দল তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, আমেরিকার এম/এস আর্টিকুলেট কোম্পানি ফ্যাক্টরির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শন করেছেন।

পরীক্ষা করে প্রতিনিধি দল টেন্ডার অনুযায়ী সার্চ অ্যান্ড ফগ লাইটের বিবরণের সঙ্গে প্রদর্শনকৃত লাইটের সামঞ্জস্য পায়। প্রতিনিধি দল পরিদর্শন শেষে বিআইডব্লিউটিসির চাহিদা মোতাবেক জনি করপোরেশনকে আমেরিকার কোম্পানি থেকে ছয়টি সার্চ অ্যান্ড ফগ লাইট এবং তিনটি অতিরিক্ত বাল্ব, ৩২টি ফগ ফ্লাড লাইট পাটুরিয়া ও মাওয়া অঞ্চলে পরিচালিত ফেরিতে স্থাপনের নিমিত্ত জরুরি ভিত্তিতে শিপমেন্ট করার জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ করেন।

জানা গেছে, সরবরাহকারীর মাধ্যমে আমদানি করা সার্চ ও ফগ লাইটসহ অন্য আনুষঙ্গিক মালামালের টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন যাচাই তদারকি কমিটি যাচাইকালে দেখতে পান, কন্ট্রোল প্যানেল বক্সের ওপরে কান্ট্রি অব অরিজিন ইউএসএ থাকলেও কন্ট্রোল প্যানেল বক্সের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কোরিয়ান হুন্দাই কোম্পানি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত লেখা।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের গঠিত একাধিক তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদনে মতামত দেন। তারা বলেন, সংযোজিত ফগ ও সার্চ লাইটগুলো হালকা কুয়াশার মধ্যে কাজ করছে। কিন্তু ঘন কুয়াশায় তা কাজ করছে না। ঘন কুয়াশায় সেই লাইটের আলো পড়লেই রিফ্লেকশন হয়ে আনুমানিক ২০ গজের মধ্যেও কোনকিছু দেখা যায় না।

বৃহস্পতিবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২২ , ২২ পৌষ ১৪২৮ ২ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

ফগ লাইট কেনায় দুর্নীতি

বিআইডব্লিউটিসির ৭ কর্মকর্তার নামে মামলা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

মাওয়া, আরিচা ঘাটের ১০টি ফেরিতে সার্চ ও ফগ লাইটের স্থলে নিম্নমানের সার্চ লাইট সরবরাহ করে পাঁচ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) তিন কর্মকর্তাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গতকাল দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান বাদী হয়ে দ-বিধি ৪২০/৪০৯/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলাটি করেন। মামলাটি করা হয় সজেকা, ঢাকা-১ এ। দুদকের জনসংযোগ দপ্তর সূত্র এতথ্য জানান।

মামলার আসামিরা হলেন বিআইডব্লিউটিসির সাবেক জিএম ক্যাপ্টেন শওকত সরদার (৬০), সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালক (কারিগরি) ড. জ্ঞান রঞ্জন শীল, মহাব্যবস্থাপক মো. নুরুল হুদা, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপ-সচিব পঙ্কজ কুমার পাল, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) সাবেক মহাব্যবস্থাপক (মেকানিক্যাল) ইঞ্জিনিয়ার মো. রহমত উল্লা (৬৩), মহাব্যবস্থাপক (মেকানিক্যাল), ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার নাসির উদ্দিন ও মেসার্স জনি করপোরেশনের স্বত্ব¡াধিকারী লে. কমান্ডার ওমর আলী (অব.)।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মেসার্স জনি করপোরেশনের কাছে প্রিন্সিপাল এম/এস আর্টিকুলেট, আইএনসি, ইউএসএ কোম্পানির জি সার্চ লাইট মডেলের ফগ সার্চলাইট না থাকা সত্ত্বেও ফেরিতে সরবরাহ করতে প্রতিষ্ঠানটি দরপত্র জমা দেয়। বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা যাচাই না করেই জনি করপোরেশনের দরপত্রকে রেসপনসিভ দেখিয়ে ১০টি সার্চ ও ফগ লাইটের সরবরাহ আদেশ দেন। পিএসআই কমিটি মিথ্যা তথ্যে সার্চ ও ফগ লাইটের স্থলে নিম্নমানের সার্চলাইট সরবরাহ করে। এতে বিআইডব্লিউটিসির ফেরিতে ফগ লাইট স্থাপনের প্রকল্প ব্যর্থ হয়।

এতে আরও বলা হয়, ২০১৫ সালের ৪ জুন থেকে ১২ জুন পর্যন্ত মাওয়া ও আরিচার ১০টি ফেরিতে ফগ অ্যান্ড সার্চলাইট স্থাপন করা হয়েছে বলে জানায় বিআইডব্লিউটিসি। ফেরিগুলো হলো-আরিচায় চলাচলকারী ফেরি খান জাহান আলী, ফেরি জাহাঙ্গীর, ফেরি এনায়েতপুরী, ফেরি কপোতী, ফেরি কুমারী। মাওয়ার ফেরিগুলো হলো- বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন, আমানত শাহ, শাহ আলী, কাকলী ও ক্যামেলিয়া।

এদিকে, ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বলছে, ফেরিগুলোতে ফগ অ্যান্ড সার্চ লাইট পরিদর্শনে যান বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে চার সদস্যের পিএসআই কমিটি। প্রতিনিধি দল তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, আমেরিকার এম/এস আর্টিকুলেট কোম্পানি ফ্যাক্টরির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শন করেছেন।

পরীক্ষা করে প্রতিনিধি দল টেন্ডার অনুযায়ী সার্চ অ্যান্ড ফগ লাইটের বিবরণের সঙ্গে প্রদর্শনকৃত লাইটের সামঞ্জস্য পায়। প্রতিনিধি দল পরিদর্শন শেষে বিআইডব্লিউটিসির চাহিদা মোতাবেক জনি করপোরেশনকে আমেরিকার কোম্পানি থেকে ছয়টি সার্চ অ্যান্ড ফগ লাইট এবং তিনটি অতিরিক্ত বাল্ব, ৩২টি ফগ ফ্লাড লাইট পাটুরিয়া ও মাওয়া অঞ্চলে পরিচালিত ফেরিতে স্থাপনের নিমিত্ত জরুরি ভিত্তিতে শিপমেন্ট করার জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ করেন।

জানা গেছে, সরবরাহকারীর মাধ্যমে আমদানি করা সার্চ ও ফগ লাইটসহ অন্য আনুষঙ্গিক মালামালের টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন যাচাই তদারকি কমিটি যাচাইকালে দেখতে পান, কন্ট্রোল প্যানেল বক্সের ওপরে কান্ট্রি অব অরিজিন ইউএসএ থাকলেও কন্ট্রোল প্যানেল বক্সের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কোরিয়ান হুন্দাই কোম্পানি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত লেখা।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের গঠিত একাধিক তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদনে মতামত দেন। তারা বলেন, সংযোজিত ফগ ও সার্চ লাইটগুলো হালকা কুয়াশার মধ্যে কাজ করছে। কিন্তু ঘন কুয়াশায় তা কাজ করছে না। ঘন কুয়াশায় সেই লাইটের আলো পড়লেই রিফ্লেকশন হয়ে আনুমানিক ২০ গজের মধ্যেও কোনকিছু দেখা যায় না।