ঐতিহাসিক জয়ের পর মোমিনুলের আহ্বান

‘প্রত্যাশা কম করুন’

দেশের বাইরে বাংলাদেশ পেল ষষ্ঠ টেস্ট জয়ের দেখা। প্রথমবার নিউজিল্যান্ডের মাটিতে লাল বলের ক্রিকেটে জিতে ইতিহাস রচনা করল তারা। বলা যায়, মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিজেদের ফাঁদে নিউজিল্যান্ড নিজেরাই ধরা দিয়েছে। বরং ফ্ল্যাট উইকেটের সর্বোচ্চ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের পেসাররা রেখেছেন দারুণ ভূমিকা। ৮ উইকেটের এই ঐতিহাসিক জয়ে বাংলাদেশের ১১ জনেরই ভূমিকা অনস্বীকার্য, কিন্তু পেসারদের কথা বিশেষভাবে বলতেই হয়। বাংলাদেশের পেসাররা নিয়েছেন ১৩ উইকেট, একটি টেস্ট ম্যাচে যা তাদের সর্বোচ্চ। এরআগে পেসাররা সর্বোচ্চ ১১ উইকেট নিয়েছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০১৩ সালে হারারেতে। তাই ম্যাচ শেষে দলের জয়ে পেসারদের প্রশংসায় ভাসালেন অধিনায়ক মোমিনুল হক, ‘তাসকিন ছিল অসাধারণ। হয়তো সেভাবে উইকেট পায়নি, রান ধরে রেখেছিল। শরিফুল ইয়াং স্টার। মাত্র দুটি ম্যাচ খেলেছে। দলে এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে যে সেটা অবিশ্বাস্য। আমাদের ম্যাচ জেতায় সবচেয়ে বেশি হাত ছিল বোলারদের। এরপর মিরাজ, এ উইকেটে বল ঘোরে না, কিন্তু কোন না কোনোভাবে সে উইকেট বের করেছে। চার বোলার নিয়ে ম্যাচ জেতা অবিশ্বাস্য।’

ম্যাচে পেসারদের নেয়া ১৩ উইকেটের মধ্যে সাতটিই গেছে ইবাদত হোসেনের পকেটে। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৬ রানে ৬ উইকেট নিয়ে কীর্তিমান এই পেসার। তার এমন পারফরম্যান্সে আশ্চর্য হননি মোমিনুল, ‘অবাক নই। আমি জানি, অনেকেই জানে, ও যেদিন ভালো জায়গায় করবে, ওই দল শেষ। তবে এটা ধারাবাহিক ছিল না। শেষ ২-৩ বছর ধরে বোলিং কোচ, আমি ওকে নিয়ে অনেক খেটেছি। ও শেষ কয়েকটি টেস্টে টানা খেলেছে। সেটার ফল কাল আর আজ দিয়েছে। ম্যাচ জিতলাম।’

এবাদত দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করায় অধিনায়কের মনে স্বস্তির সুবাতাস, ‘গত দুই-তিন বছর ইবাদত অনেক পরিশ্রম করেছে। সে বিমানবাহিনী থেকে এসেছে। সে একজন ভলিবল প্লেয়ার। সে এক কথায় অবিশ্বাস্য বোলিং করেছে। আমাদের কোচিং স্টাফ ঠিক জায়গায় বল ফেলার ক্ষেত্রে তার সঙ্গে অনেক কাজ করেছে। তার স্পেলটা ছিল অবিশ্বাস্য। দীর্ঘদিন ধরে তার কাছে এমন কিছুই প্রত্যাশা করেছিলাম।’

পেসারদের উন্নতির পেছনে সাংবাদিকদের সাধুবাদ জানালেন মোমিনুল, ‘আমার মনে হয় এক্ষেত্রে (পেসারদের উন্নতি) আপনাদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। এই কারণে বলছি, আমরা যখন পেস বোলার খেলাতাম না, তখন আপনারা অনেক বেশি প্রশ্ন করতেন, কেন খেলাই না? দেশের বাইরে খেলাতাম, দেশে খেলাতাম না, তখন প্রশ্ন করতেন কেন দেশে খেলান না। তো দেশের ভেতরে খেলতে খেলতে পেস বোলাররা অনেক বেশি পরিপক্ব হয়েছে। আপনাদেরও সাধুবাদ দেয়া উচিত। সবসময়ই বিশ্বাস ছিল যে আমরা পারব। আমাদের দরকার ছিল বিদেশে একটা ম্যাচ জেতা, আমরা প্রতিযোগিতা করতে পারি, ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি- এটা দেখানোর। আলহামদুলিল্লাহ এটা পেরেছি। দেখা যাবে এই আত্মবিশ্বাসে পরের ম্যাচে বা পরের সিরিজে জিতে যাচ্ছি।’

৮ উইকেটের দুর্দান্ত জয়ের পরও মোমিনুল বলছেন বেশি প্রত্যাশা করা যাবে না। নিউজিল্যান্ড সফরে বিগত রেকর্ড দেখে বাংলাদেশ দলের প্রতি সমর্থকদের বেশি প্রত্যাশা ছিল না আর সেটিই ক্রিকেটারদের জন্য আশীর্বাদ হয়েছে এসেছে। মোমিনুল অনুরোধ করেন, ‘হ্যা, এই টেস্ট নিয়ে আপনাদের প্রত্যাশা কম ছিল, এটা অনেক সাহায্য করেছে। এখন হয়ত পরের টেস্টে আপনাদের প্রত্যাশা বেড়ে যেতে পারে যে পরের টেস্টেও জিতব। আমার কাছে মনে হয়, এত বেশি আশা না করাই ভালো। সবচেয়ে ভালো ছিল যে আমাদের ওপর কোন প্রত্যাশাই ছিল না। এটা আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া। আপনারা কোন সময় এত বেশি আশা করবেন না আমার কাছে। এটাও প্রত্যাশা করবেন না যে এক-দুই বছরের ভেতরেই আমরা এক-দুই কিংবা পাঁচ-ছয় নং দল হয়ে যাব। আমি পরিকল্পনায় বিশ্বাস করি। যদি পরিকল্পনা ঠিক থাকে তাহলে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।

বৃহস্পতিবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২২ , ২২ পৌষ ১৪২৮ ২ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

ঐতিহাসিক জয়ের পর মোমিনুলের আহ্বান

‘প্রত্যাশা কম করুন’

image

ঐতিহাসিক জয়ে টাইগারদের উল্লাস

দেশের বাইরে বাংলাদেশ পেল ষষ্ঠ টেস্ট জয়ের দেখা। প্রথমবার নিউজিল্যান্ডের মাটিতে লাল বলের ক্রিকেটে জিতে ইতিহাস রচনা করল তারা। বলা যায়, মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিজেদের ফাঁদে নিউজিল্যান্ড নিজেরাই ধরা দিয়েছে। বরং ফ্ল্যাট উইকেটের সর্বোচ্চ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের পেসাররা রেখেছেন দারুণ ভূমিকা। ৮ উইকেটের এই ঐতিহাসিক জয়ে বাংলাদেশের ১১ জনেরই ভূমিকা অনস্বীকার্য, কিন্তু পেসারদের কথা বিশেষভাবে বলতেই হয়। বাংলাদেশের পেসাররা নিয়েছেন ১৩ উইকেট, একটি টেস্ট ম্যাচে যা তাদের সর্বোচ্চ। এরআগে পেসাররা সর্বোচ্চ ১১ উইকেট নিয়েছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০১৩ সালে হারারেতে। তাই ম্যাচ শেষে দলের জয়ে পেসারদের প্রশংসায় ভাসালেন অধিনায়ক মোমিনুল হক, ‘তাসকিন ছিল অসাধারণ। হয়তো সেভাবে উইকেট পায়নি, রান ধরে রেখেছিল। শরিফুল ইয়াং স্টার। মাত্র দুটি ম্যাচ খেলেছে। দলে এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে যে সেটা অবিশ্বাস্য। আমাদের ম্যাচ জেতায় সবচেয়ে বেশি হাত ছিল বোলারদের। এরপর মিরাজ, এ উইকেটে বল ঘোরে না, কিন্তু কোন না কোনোভাবে সে উইকেট বের করেছে। চার বোলার নিয়ে ম্যাচ জেতা অবিশ্বাস্য।’

ম্যাচে পেসারদের নেয়া ১৩ উইকেটের মধ্যে সাতটিই গেছে ইবাদত হোসেনের পকেটে। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৬ রানে ৬ উইকেট নিয়ে কীর্তিমান এই পেসার। তার এমন পারফরম্যান্সে আশ্চর্য হননি মোমিনুল, ‘অবাক নই। আমি জানি, অনেকেই জানে, ও যেদিন ভালো জায়গায় করবে, ওই দল শেষ। তবে এটা ধারাবাহিক ছিল না। শেষ ২-৩ বছর ধরে বোলিং কোচ, আমি ওকে নিয়ে অনেক খেটেছি। ও শেষ কয়েকটি টেস্টে টানা খেলেছে। সেটার ফল কাল আর আজ দিয়েছে। ম্যাচ জিতলাম।’

এবাদত দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করায় অধিনায়কের মনে স্বস্তির সুবাতাস, ‘গত দুই-তিন বছর ইবাদত অনেক পরিশ্রম করেছে। সে বিমানবাহিনী থেকে এসেছে। সে একজন ভলিবল প্লেয়ার। সে এক কথায় অবিশ্বাস্য বোলিং করেছে। আমাদের কোচিং স্টাফ ঠিক জায়গায় বল ফেলার ক্ষেত্রে তার সঙ্গে অনেক কাজ করেছে। তার স্পেলটা ছিল অবিশ্বাস্য। দীর্ঘদিন ধরে তার কাছে এমন কিছুই প্রত্যাশা করেছিলাম।’

পেসারদের উন্নতির পেছনে সাংবাদিকদের সাধুবাদ জানালেন মোমিনুল, ‘আমার মনে হয় এক্ষেত্রে (পেসারদের উন্নতি) আপনাদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। এই কারণে বলছি, আমরা যখন পেস বোলার খেলাতাম না, তখন আপনারা অনেক বেশি প্রশ্ন করতেন, কেন খেলাই না? দেশের বাইরে খেলাতাম, দেশে খেলাতাম না, তখন প্রশ্ন করতেন কেন দেশে খেলান না। তো দেশের ভেতরে খেলতে খেলতে পেস বোলাররা অনেক বেশি পরিপক্ব হয়েছে। আপনাদেরও সাধুবাদ দেয়া উচিত। সবসময়ই বিশ্বাস ছিল যে আমরা পারব। আমাদের দরকার ছিল বিদেশে একটা ম্যাচ জেতা, আমরা প্রতিযোগিতা করতে পারি, ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি- এটা দেখানোর। আলহামদুলিল্লাহ এটা পেরেছি। দেখা যাবে এই আত্মবিশ্বাসে পরের ম্যাচে বা পরের সিরিজে জিতে যাচ্ছি।’

৮ উইকেটের দুর্দান্ত জয়ের পরও মোমিনুল বলছেন বেশি প্রত্যাশা করা যাবে না। নিউজিল্যান্ড সফরে বিগত রেকর্ড দেখে বাংলাদেশ দলের প্রতি সমর্থকদের বেশি প্রত্যাশা ছিল না আর সেটিই ক্রিকেটারদের জন্য আশীর্বাদ হয়েছে এসেছে। মোমিনুল অনুরোধ করেন, ‘হ্যা, এই টেস্ট নিয়ে আপনাদের প্রত্যাশা কম ছিল, এটা অনেক সাহায্য করেছে। এখন হয়ত পরের টেস্টে আপনাদের প্রত্যাশা বেড়ে যেতে পারে যে পরের টেস্টেও জিতব। আমার কাছে মনে হয়, এত বেশি আশা না করাই ভালো। সবচেয়ে ভালো ছিল যে আমাদের ওপর কোন প্রত্যাশাই ছিল না। এটা আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া। আপনারা কোন সময় এত বেশি আশা করবেন না আমার কাছে। এটাও প্রত্যাশা করবেন না যে এক-দুই বছরের ভেতরেই আমরা এক-দুই কিংবা পাঁচ-ছয় নং দল হয়ে যাব। আমি পরিকল্পনায় বিশ্বাস করি। যদি পরিকল্পনা ঠিক থাকে তাহলে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।