এবার স্বতন্ত্র ছাড়িয়ে গেল নৌকাকে

ধাপে ধাপে বাড়ছে দলীয় প্রতীকে ক্ষমতাসীনদের পরাজয়

দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ‘খুব একটা’ সুবিধা করতে পারছে না। চলমান এই নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চেয়ারম্যান পদে ধাপে ধাপে নৌকার পরাজয় বাড়ছে; জামানত হারাচ্ছেন অনেক প্রার্থী।

চেয়ারম্যান পদে কিছু ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রতীকে বিএনপির স্থানীয় নেতারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে ভোটের মাঠে এবং ব্যালটে অনুপস্থিত বিএনপির ‘ধানের শীষ’ প্রতীক। এরপরও সিলেট, ফরিদপুর, নাটোর, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি, কুমিল্লার চান্দিনা, কুষ্টিয়া সদর, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ, রাজশাহীর বাঘমারাসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় নৌকার ভরাডুবির খবর আসছে স্থানীয় গণমাধ্যমে।

সর্বশেষ প্রাপ্ত ফলাফলে আ’লীগকে ছাড়িয়ে গেছে স্বতন্ত্র

পঞ্চম ধাপে গত বুধবার ৭০৮টি ইউপিতে নির্বাচন হয়। গতকাল নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে সর্বশেষ প্রাপ্ত ৬৮৬টি ইউপির ফলাফলে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে ৩৩২ জন নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে ৩৪৯ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী, স্বতন্ত্র প্রতীকের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।

চলমান ইউপি ভোটে নির্বাচনী সংঘাত-সহিংসতায় হতাহতের সংখ্যাও ধাপে ধাপে বাড়ছে। গত বুধবার পঞ্চম ধাপে ১১ জনসহ চলমান ইউপি ভোটের পাঁচ ধাপে অন্তত ১০০ লোক নিহত এবং ৫ শতাধিক আহত হওয়ার তথ্য এসেছে গণমাধ্যমের খবরে।

নৌকার পরাজিত প্রার্থীদের অনেকেরই অভিযোগের তীর নির্বাচনে দায়িত্বরত পুলিশ-প্রশাসন এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দিকে। পরাজিত অনেকেই বলছেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, পুলিশ এবং স্থানীয় নেতারা কাজ করেছেন বলেই নৌকা প্রতীক জিততে পারেনি।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার মতে, স্থানীয় পর্যায়ে বিদ্রোহ দমন করতে না পারা, আবার বিদ্রোহীদের মদতদাতাদের শাস্তির আওতায় না আনার কারণে নৌকার ফল বিপর্যয় হচ্ছে।

আওয়ামীর লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য বলেন, কোন কোন ক্ষেত্রে যোগ্য ও জনপ্রিয় ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়া যাচ্ছে না বলেই পরাজয়ের সংখ্যা বাড়ছে। স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক এখন ‘হিতে বিপরীত’ হয়েছে বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সম্পাদকদের অনেকে।

এদিকে বিভিন্ন জেলা-উপজেলার নেতাদের পাশাপাশি তৃণমূল আওয়ামী লীগ থেকে প্রতীক তুলে দেয়ার দাবি উঠলেও তা আমলে নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় কমিটি। এর পেছনে ‘মনোনয়ন বাণিজ্য’ একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও মনে করেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

ইউপি ভোটের ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রথম ধাপে নৌকা জিতেছিল ৭৬ শতাংশ ইউপিতে। দ্বিতীয় ধাপে ৫৬ শতাংশ, তৃতীয় ধাপে ৫৩ শতাংশ ইউপিতে জয় পেয়েছিল আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। তবে চতুর্থ ধাপে এসে নৌকা বিজয়ী হয় ৪৯ শতাংশ ইউপিতে। পঞ্চম ধাপে সব ইউপির ফলফল এখনো প্রকাশ করেনি ইসি। প্রাপ্ত সর্বশেষ ফলাফলে নৌকার জয়ের হার ৪৮ শতাংশ। স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী আওয়ামী লীগের অবস্থা খারাপের দিকে।

কুষ্টিয়ায় ৮ বিদ্রোহীর জয়, জামানত হারালেন আ’লীগের তিন প্রার্থী

কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। এদিকে জামানত হারাচ্ছেন আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থী। বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থী। একটিতে স্বতন্ত্র ও আরেকটিতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।

জামানত হারানোর বিষয়ে এম সম্পা মাহমুদ বলেন, ‘প্রচারণার শুরুর দিন থেকেই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা যড়যন্ত্র শুরু করেন। ভোটের কয়েক দিন আগে তারা প্রকাশ্যে বিদ্রোহীদের প্রচারণায় অংশ নেন। এ কারণে এমন ফল হয়েছে।’

বাগমারায় নৌকার প্রার্থীদের ভরাডুবি, ১৬ ইউপির ১১টিতেই পরাজয়

রাজশাহীর বাগমারায় ১৬টি ইউপির মধ্যে ১১টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হেরেছেন। ৬টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও ৫টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপির ৫ নেতা নির্বাচিত হয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা সরাসরি আবার কৌশলে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তারা বিদ্রোহী অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চেয়েছেন।

হামিরকুৎসা ইউপিতে নৌকার পরাজিত প্রার্থী সানোয়ারা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনে দলীয় কোন নেতাকে তিনি পাশে পাননি। দলের নেতাকর্মীরা সরাসরি দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন।

সিলেটে ১৬ ইউপির ১০টিতে হেরেছে নৌকা

সিলেটের জকিগঞ্জ ও কানাইঘাটের ১৮টি ইউপিতে ভোট হয়, দুটি ইউপিতে ভোট স্থগিত করা হয়। প্রাপ্ত ফলাফলে দুই উপজেলায় ১৬টি ইউপির ছয়টিতে নৌকা জিতলেও ১০টিতে ভরাডুবি হয়েছে। এ দুই উপজেলায় দুটিতে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী, তিনটিতে জামায়াত ও দুটিতে জমিয়তের প্রার্থী, দুটিতে স্বতন্ত্র এবং একটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

এর মধ্যে জকিগঞ্জে চারটি ইউপিতে নৌকা, একটিতে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী, একটিতে জাতীয় পার্টি, একটিতে জামায়াতের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। কানাইঘাট উপজেলার দুটিতে নৌকা, দুটিতে জমিয়ত, একটিতে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী, দুটিতে জামায়াত ও দুটিতে বিএনপির প্রার্থীরা ফলাফলে এগিয়ে রয়েছেন।

ফরিদপুরে ফের নৌকার ভরাডুবি, ১৩টির ৮টিতেই স্বতন্ত্র জয়ী : ফরিদপুরের সদরপুর ও মধুখালী উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। ১৩টি ইউপির মধ্যে ৮টিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। নৌকা বিজয়ী হয়েছে মাত্র পাঁচটিতে। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ফরিদপুরে চতুর্থ ধাপেও ক্ষমতাসীনদের শোচনীয় পরাজয় হয়েছিল। বোয়ালমারী উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ৯টিতেই নৌকার প্রার্থীরা পরাজিত হন। এর মধ্যে জামানত রক্ষা করার মতো ভোটই পাননি আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থী। এর আগে তৃতীয় ধাপের ভোটে ভাঙ্গা ও চরভদ্রাসনের ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৪টিতেই পরাজিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।

ফরিদগঞ্জ স্বতন্ত্র ১০, নৌকার তিনজন নির্বাচিত চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় পঞ্চম ধাপে ১৩ ইউনিয়নে ভোটে নৌকা মার্কায় তিনজন ও স্বতন্ত্র ১০ জন নির্বাচিত হয়েছেন।

চান্দিনার ১২ ইউনিয়নের ৯টিতেই নৌকার ভরাডুবি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ১২ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ৯টিতেই ভরাডুবি হয়েছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের। ১২ ইউনিয়নের ফলে তিনটিতে আওয়ামী লীগ, ৯টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। বিজয়ী ৯ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে পাঁচজন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, একজন স্বতন্ত্র, দুজন বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র এবং একজন জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী।

ময়মনসিংহের ১৫ ইউপিতে নৌকা ৮, স্বতন্ত্র ৭ ময়মনসিংহের গফরগাঁও এবং নান্দাইল উপজেলার ২৬টি ইউনিয়নে ভোট হয়। এর মধ্যে গফরগাঁওয়ের ১৫ ইউনিয়নের মধ্যে ১১টিতে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বাকি চার ইউনিয়নে চেয়ারম্যার পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া জেলার নান্দাইল উপজেলায় ১১ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধে?্য নান্দাইল উপজেলার ১১ ইউনিয়নের পাঁচটি ইউনিয়নে নৌকা এবং ছয়টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে গফরগাঁওয়ের ৪ ইউনিয়নের মধে?্য তিনটিতে নৌকা ও একটিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেন।

বান্দরবানে ৩ ইউপির দুটিতে নৌকার পরাজয় : বান্দরবান সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন হয়েছে। এ তিন ইউপির একটিতে আওয়ামী লীগ ও দুটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।

হরিণাকুন্ডুতে ৪২ ভোট পেলেন নৌকার প্রার্থী ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার ফলসি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নিমাই চাঁদ মন্ডল ৯টি কেন্দ্রে মাত্র ৪২ ভোট পেয়েছেন। এর মধ্যে তিনটি কেন্দ্রে একটি ভোট করে পেয়েছেন তিনি। ওই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে অ্যাডভোকেট বজলুর রহমান চার হাজার ৬২৩ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান পেয়েছেন চার হাজার ১৭৯ ভোট।

এ ব্যাপারে নৌকার প্রার্থী নিমাই চাঁদ মন্ডল বলেন, মূলত এখানে আওয়ামী লীগের দুইটা পক্ষ হয়ে যাওয়ার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে দলের বড় বড় নেতারা আমাকে সমর্থন দিয়েছেন।

ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সদর পৌরমেয়র সাইদুল করিম মিন্টু জানান, ফলসি ইউনিয়নে সামাজিক দলাদলি ছিল। যে কারণেই এটি ঘটেছে। তবে প্রার্থী নিমাই চাঁদ মন্ডল বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে নেগোসিয়েট করে ভোট গ্রহণের আগেই মাঠ ছেড়ে দেন। তিনি যদি এটি না করে ভোটের মাঠে টিকে থাকতেন তাহলে এমনটি হতো না।

সদরপুরে ৫৬ ভোট পেলেন নৌকার প্রার্থী

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চরমানাইর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. বজলু মাতুব্বর ৫৬ ভোট পেয়েছেন। তার জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ বলছে, স্বাধীনতা পরবর্তীকালে যেকোন সময়ে ফরিদপুরের ৯টি উপজেলার যেকোন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রার্থীর লজ্জাজনক হার এটি। শুধু তাই নয়, এ ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীও দুই শতাধিক ভোট পেয়েছেন। কিন্তু নৌকার প্রার্থী শতক ভোটও পেরুতে পারেনি। ফলে এ নিয়ে জেলাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। এ ইউনিয়নে চশমা প্রতীক নিয়ে তিন হাজার ৩০০ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মো. রফিকুল ইসলাম।

এ বিষয়ে নৌকার পরাজিত প্রার্থী বজলু মাতুব্বর বলেন, আমি নৌকা প্রতীক পেলেও তার পক্ষে আওয়ামী লীগের কোন নেতা প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেয়া তো দূরে থাক, কোন ধরনের সহযোগিতা না করাসহ খোঁজ-খবরও রাখেননি। আওয়ামী লীগের নেতারা কাজ করেছেন নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে। প্রতীকীর জন্যও তারা কেউ ভাবেননি।

এ ব্যাপারে সদরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছত্তার ফকির বলেন, মনোনয়নের বিষয়ে আমাদের কোন মতামত নেয়া হয়নি। এটা প্রতীকের পরাজয় নয়, প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে। এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন বলেন, জনগণ যদি ভোট না দেয়, তাহলে কী করার। তা ছাড়া এটা নৌকার কোন পরাজয় নয়। এটা প্রার্থীর ব্যক্তিগত পরাজয়।

টাঙ্গাইলে ৭ প্রার্থীর মধ্যে ষষ্ঠ হয়ে জামানত হারালেন আ’লীগ প্রার্থী

টাঙ্গাইলের বাসাইলে নৌকার এক প্রার্থী তার নিজ কেন্দ্রে তৃতীয় হয়েছেন এবং জামানতও হারিয়েছেন। জামানত হারানো ওই প্রার্থী হলেন কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রাকিব খান শাহীন। তিনি তার নিজ কেন্দ্রে (সিংগারডাক আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়) মোট ১৪৩৬ ভোটারের মধ্যে ২৬৯ ভোট পেয়েছেন। জানা যায়, কাঞ্চনপুর ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়াও আরও ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এই ইউপিতে ২১ হাজার ৩৭৯টি ভোটের মধ্যে ৭৩ ভাগ ভোট কাস্ট হয়েছে। এতে রাকিব খান শাহিন মোট ৮৫১ ভোট পেয়ে সাতজনের মধ্যে ষষ্ঠ হয়েছেন।

এ ব্যাপারে রাকিব খান শাহিন বলেন, এটা একটা ষড়যন্ত্রমূলক প্রহসনের পাতানো নির্বাচন। প্রশাসনের সহযোগিতায় চশমা প্রতীকের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। দলীয় ঊর্ধ্বতন নেতা যারা নির্বাচন পরিচালনা করেছেন তাদের আমি নির্বাচনে প্রশাসনের পক্ষপাতদৃষ্টির কথা অভিযোগ করলেও তারা কোন পদক্ষেপ নেননি। তারা নিশ্চুপ ছিলেন। বাসাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মতিয়ার রহমান গাউস বলেন, এ ব্যাপারে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না।

বাসাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এসএম সামছুল আলম বলেন, প্রার্থী হিসেবে তিনি একদম নতুন এবং এলাকায় তার কোন ফেসভ্যালু নেই। রাজনীতির মাঠেও তাকে দেখা যায় না। তার মনোনয়নটা খুব একটা প্রত্যাশিত ছিল বলে আমি মনে করি না। এসব কারণেই তিনি জনসমর্থন পেতে ব্যর্থ হয়েছেন।

পাঁচবিবিতে স্বতন্ত্র ৪, আ.লীগ ১

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চারটিতে স্বতন্ত্র ও একটিতে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

নাটোরে দুই উপজেলায় চারটিতে আ’লীগ, সাতটিতে বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী

নাটোরের নলডাঙ্গা ও গুরুদাসপুর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চারজন, আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) সাতজন নির্বাচিত হয়েছেন।

ঝিনাইগাতীতে বিএনপি ৩, আ’লীগ ২, বিদ্রোহী ২ শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপি তিন, আওয়ামী লীগ দুই ও বিদ্রোহী প্রার্থী দু’জন নির্বাচিত হয়েছেন।

মানিকগঞ্জে ২১ ইউপির মধ্যে আ’লীগ ১৩, বিদ্রোহী ৩, বিএনপি (স্বতন্ত্র) ২, স্বতন্ত্র ৩

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হয়েছেন ৯ জন, একজন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, দুজন স্বতন্ত্র ও একজন বিএনপি (স্বতন্ত্র) প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে জেলার দৌলতপুর উপজেলার আটটি ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হয়েছেন চারজন, দুজন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, একটিতে (বিএনপি) স্বতন্ত্র প্রার্থী ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

ঝিনাইদহের ২০ ইউপির ৮টিতে নৌকার হার ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ১২টি ও হরিণাকুন্ডু উপজেলার আটটি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে মোট আটটিতে হেরেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। এসব ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। শৈলকুপার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০টিতে নৌকা ও দুটিতে স্বতন্ত্র এবং হরিণাকুন্ডুর আট ইউনিয়নের মধ্যে ছয়টিতে স্বতন্ত্র ও দুটিতে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

বগুড়ার ১৪ ইউপির ৭টিতে বিএনপির (স্বতন্ত্র) জয় বগুড়ার গাবতলী ও দুপচাঁচিয়া উপজেলার ১৪টি ইউপির মধ্যে ৭টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপির ৭ নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ৭টি ইউপির মধ্যে চারটিতে আওয়ামী লীগ, দুটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও একটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নেতা বিজয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে দুপচাঁচিয়ার সব ইউপিতে নৌকার প্রার্থী পরাজিত হন।

গজারিয়ায় ৪ ইউপিতে নৌকার হার, জয় ৩টিতে মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়ায় পঞ্চম ধাপে ৭টি ইউপির ভোটে আওয়ামী লীগ ৩ এবং স্বতন্ত্র ৪ প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।

শুক্রবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২২ , ২৩ পৌষ ১৪২৮ ৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

এবার স্বতন্ত্র ছাড়িয়ে গেল নৌকাকে

ধাপে ধাপে বাড়ছে দলীয় প্রতীকে ক্ষমতাসীনদের পরাজয়

ফয়েজ আহমেদ তুষার

দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ‘খুব একটা’ সুবিধা করতে পারছে না। চলমান এই নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চেয়ারম্যান পদে ধাপে ধাপে নৌকার পরাজয় বাড়ছে; জামানত হারাচ্ছেন অনেক প্রার্থী।

চেয়ারম্যান পদে কিছু ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রতীকে বিএনপির স্থানীয় নেতারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে ভোটের মাঠে এবং ব্যালটে অনুপস্থিত বিএনপির ‘ধানের শীষ’ প্রতীক। এরপরও সিলেট, ফরিদপুর, নাটোর, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি, কুমিল্লার চান্দিনা, কুষ্টিয়া সদর, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ, রাজশাহীর বাঘমারাসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় নৌকার ভরাডুবির খবর আসছে স্থানীয় গণমাধ্যমে।

সর্বশেষ প্রাপ্ত ফলাফলে আ’লীগকে ছাড়িয়ে গেছে স্বতন্ত্র

পঞ্চম ধাপে গত বুধবার ৭০৮টি ইউপিতে নির্বাচন হয়। গতকাল নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে সর্বশেষ প্রাপ্ত ৬৮৬টি ইউপির ফলাফলে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে ৩৩২ জন নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে ৩৪৯ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী, স্বতন্ত্র প্রতীকের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।

চলমান ইউপি ভোটে নির্বাচনী সংঘাত-সহিংসতায় হতাহতের সংখ্যাও ধাপে ধাপে বাড়ছে। গত বুধবার পঞ্চম ধাপে ১১ জনসহ চলমান ইউপি ভোটের পাঁচ ধাপে অন্তত ১০০ লোক নিহত এবং ৫ শতাধিক আহত হওয়ার তথ্য এসেছে গণমাধ্যমের খবরে।

নৌকার পরাজিত প্রার্থীদের অনেকেরই অভিযোগের তীর নির্বাচনে দায়িত্বরত পুলিশ-প্রশাসন এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দিকে। পরাজিত অনেকেই বলছেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, পুলিশ এবং স্থানীয় নেতারা কাজ করেছেন বলেই নৌকা প্রতীক জিততে পারেনি।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার মতে, স্থানীয় পর্যায়ে বিদ্রোহ দমন করতে না পারা, আবার বিদ্রোহীদের মদতদাতাদের শাস্তির আওতায় না আনার কারণে নৌকার ফল বিপর্যয় হচ্ছে।

আওয়ামীর লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য বলেন, কোন কোন ক্ষেত্রে যোগ্য ও জনপ্রিয় ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়া যাচ্ছে না বলেই পরাজয়ের সংখ্যা বাড়ছে। স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক এখন ‘হিতে বিপরীত’ হয়েছে বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সম্পাদকদের অনেকে।

এদিকে বিভিন্ন জেলা-উপজেলার নেতাদের পাশাপাশি তৃণমূল আওয়ামী লীগ থেকে প্রতীক তুলে দেয়ার দাবি উঠলেও তা আমলে নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় কমিটি। এর পেছনে ‘মনোনয়ন বাণিজ্য’ একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও মনে করেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

ইউপি ভোটের ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রথম ধাপে নৌকা জিতেছিল ৭৬ শতাংশ ইউপিতে। দ্বিতীয় ধাপে ৫৬ শতাংশ, তৃতীয় ধাপে ৫৩ শতাংশ ইউপিতে জয় পেয়েছিল আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। তবে চতুর্থ ধাপে এসে নৌকা বিজয়ী হয় ৪৯ শতাংশ ইউপিতে। পঞ্চম ধাপে সব ইউপির ফলফল এখনো প্রকাশ করেনি ইসি। প্রাপ্ত সর্বশেষ ফলাফলে নৌকার জয়ের হার ৪৮ শতাংশ। স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী আওয়ামী লীগের অবস্থা খারাপের দিকে।

কুষ্টিয়ায় ৮ বিদ্রোহীর জয়, জামানত হারালেন আ’লীগের তিন প্রার্থী

কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। এদিকে জামানত হারাচ্ছেন আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থী। বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থী। একটিতে স্বতন্ত্র ও আরেকটিতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।

জামানত হারানোর বিষয়ে এম সম্পা মাহমুদ বলেন, ‘প্রচারণার শুরুর দিন থেকেই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা যড়যন্ত্র শুরু করেন। ভোটের কয়েক দিন আগে তারা প্রকাশ্যে বিদ্রোহীদের প্রচারণায় অংশ নেন। এ কারণে এমন ফল হয়েছে।’

বাগমারায় নৌকার প্রার্থীদের ভরাডুবি, ১৬ ইউপির ১১টিতেই পরাজয়

রাজশাহীর বাগমারায় ১৬টি ইউপির মধ্যে ১১টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হেরেছেন। ৬টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও ৫টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপির ৫ নেতা নির্বাচিত হয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা সরাসরি আবার কৌশলে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তারা বিদ্রোহী অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চেয়েছেন।

হামিরকুৎসা ইউপিতে নৌকার পরাজিত প্রার্থী সানোয়ারা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনে দলীয় কোন নেতাকে তিনি পাশে পাননি। দলের নেতাকর্মীরা সরাসরি দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন।

সিলেটে ১৬ ইউপির ১০টিতে হেরেছে নৌকা

সিলেটের জকিগঞ্জ ও কানাইঘাটের ১৮টি ইউপিতে ভোট হয়, দুটি ইউপিতে ভোট স্থগিত করা হয়। প্রাপ্ত ফলাফলে দুই উপজেলায় ১৬টি ইউপির ছয়টিতে নৌকা জিতলেও ১০টিতে ভরাডুবি হয়েছে। এ দুই উপজেলায় দুটিতে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী, তিনটিতে জামায়াত ও দুটিতে জমিয়তের প্রার্থী, দুটিতে স্বতন্ত্র এবং একটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

এর মধ্যে জকিগঞ্জে চারটি ইউপিতে নৌকা, একটিতে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী, একটিতে জাতীয় পার্টি, একটিতে জামায়াতের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। কানাইঘাট উপজেলার দুটিতে নৌকা, দুটিতে জমিয়ত, একটিতে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী, দুটিতে জামায়াত ও দুটিতে বিএনপির প্রার্থীরা ফলাফলে এগিয়ে রয়েছেন।

ফরিদপুরে ফের নৌকার ভরাডুবি, ১৩টির ৮টিতেই স্বতন্ত্র জয়ী : ফরিদপুরের সদরপুর ও মধুখালী উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। ১৩টি ইউপির মধ্যে ৮টিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। নৌকা বিজয়ী হয়েছে মাত্র পাঁচটিতে। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ফরিদপুরে চতুর্থ ধাপেও ক্ষমতাসীনদের শোচনীয় পরাজয় হয়েছিল। বোয়ালমারী উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ৯টিতেই নৌকার প্রার্থীরা পরাজিত হন। এর মধ্যে জামানত রক্ষা করার মতো ভোটই পাননি আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থী। এর আগে তৃতীয় ধাপের ভোটে ভাঙ্গা ও চরভদ্রাসনের ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৪টিতেই পরাজিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।

ফরিদগঞ্জ স্বতন্ত্র ১০, নৌকার তিনজন নির্বাচিত চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় পঞ্চম ধাপে ১৩ ইউনিয়নে ভোটে নৌকা মার্কায় তিনজন ও স্বতন্ত্র ১০ জন নির্বাচিত হয়েছেন।

চান্দিনার ১২ ইউনিয়নের ৯টিতেই নৌকার ভরাডুবি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ১২ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ৯টিতেই ভরাডুবি হয়েছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের। ১২ ইউনিয়নের ফলে তিনটিতে আওয়ামী লীগ, ৯টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। বিজয়ী ৯ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে পাঁচজন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, একজন স্বতন্ত্র, দুজন বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র এবং একজন জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী।

ময়মনসিংহের ১৫ ইউপিতে নৌকা ৮, স্বতন্ত্র ৭ ময়মনসিংহের গফরগাঁও এবং নান্দাইল উপজেলার ২৬টি ইউনিয়নে ভোট হয়। এর মধ্যে গফরগাঁওয়ের ১৫ ইউনিয়নের মধ্যে ১১টিতে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বাকি চার ইউনিয়নে চেয়ারম্যার পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া জেলার নান্দাইল উপজেলায় ১১ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধে?্য নান্দাইল উপজেলার ১১ ইউনিয়নের পাঁচটি ইউনিয়নে নৌকা এবং ছয়টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে গফরগাঁওয়ের ৪ ইউনিয়নের মধে?্য তিনটিতে নৌকা ও একটিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেন।

বান্দরবানে ৩ ইউপির দুটিতে নৌকার পরাজয় : বান্দরবান সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন হয়েছে। এ তিন ইউপির একটিতে আওয়ামী লীগ ও দুটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।

হরিণাকুন্ডুতে ৪২ ভোট পেলেন নৌকার প্রার্থী ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার ফলসি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নিমাই চাঁদ মন্ডল ৯টি কেন্দ্রে মাত্র ৪২ ভোট পেয়েছেন। এর মধ্যে তিনটি কেন্দ্রে একটি ভোট করে পেয়েছেন তিনি। ওই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে অ্যাডভোকেট বজলুর রহমান চার হাজার ৬২৩ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান পেয়েছেন চার হাজার ১৭৯ ভোট।

এ ব্যাপারে নৌকার প্রার্থী নিমাই চাঁদ মন্ডল বলেন, মূলত এখানে আওয়ামী লীগের দুইটা পক্ষ হয়ে যাওয়ার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে দলের বড় বড় নেতারা আমাকে সমর্থন দিয়েছেন।

ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সদর পৌরমেয়র সাইদুল করিম মিন্টু জানান, ফলসি ইউনিয়নে সামাজিক দলাদলি ছিল। যে কারণেই এটি ঘটেছে। তবে প্রার্থী নিমাই চাঁদ মন্ডল বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে নেগোসিয়েট করে ভোট গ্রহণের আগেই মাঠ ছেড়ে দেন। তিনি যদি এটি না করে ভোটের মাঠে টিকে থাকতেন তাহলে এমনটি হতো না।

সদরপুরে ৫৬ ভোট পেলেন নৌকার প্রার্থী

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চরমানাইর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. বজলু মাতুব্বর ৫৬ ভোট পেয়েছেন। তার জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ বলছে, স্বাধীনতা পরবর্তীকালে যেকোন সময়ে ফরিদপুরের ৯টি উপজেলার যেকোন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রার্থীর লজ্জাজনক হার এটি। শুধু তাই নয়, এ ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীও দুই শতাধিক ভোট পেয়েছেন। কিন্তু নৌকার প্রার্থী শতক ভোটও পেরুতে পারেনি। ফলে এ নিয়ে জেলাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। এ ইউনিয়নে চশমা প্রতীক নিয়ে তিন হাজার ৩০০ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মো. রফিকুল ইসলাম।

এ বিষয়ে নৌকার পরাজিত প্রার্থী বজলু মাতুব্বর বলেন, আমি নৌকা প্রতীক পেলেও তার পক্ষে আওয়ামী লীগের কোন নেতা প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেয়া তো দূরে থাক, কোন ধরনের সহযোগিতা না করাসহ খোঁজ-খবরও রাখেননি। আওয়ামী লীগের নেতারা কাজ করেছেন নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে। প্রতীকীর জন্যও তারা কেউ ভাবেননি।

এ ব্যাপারে সদরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছত্তার ফকির বলেন, মনোনয়নের বিষয়ে আমাদের কোন মতামত নেয়া হয়নি। এটা প্রতীকের পরাজয় নয়, প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে। এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন বলেন, জনগণ যদি ভোট না দেয়, তাহলে কী করার। তা ছাড়া এটা নৌকার কোন পরাজয় নয়। এটা প্রার্থীর ব্যক্তিগত পরাজয়।

টাঙ্গাইলে ৭ প্রার্থীর মধ্যে ষষ্ঠ হয়ে জামানত হারালেন আ’লীগ প্রার্থী

টাঙ্গাইলের বাসাইলে নৌকার এক প্রার্থী তার নিজ কেন্দ্রে তৃতীয় হয়েছেন এবং জামানতও হারিয়েছেন। জামানত হারানো ওই প্রার্থী হলেন কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রাকিব খান শাহীন। তিনি তার নিজ কেন্দ্রে (সিংগারডাক আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়) মোট ১৪৩৬ ভোটারের মধ্যে ২৬৯ ভোট পেয়েছেন। জানা যায়, কাঞ্চনপুর ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়াও আরও ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এই ইউপিতে ২১ হাজার ৩৭৯টি ভোটের মধ্যে ৭৩ ভাগ ভোট কাস্ট হয়েছে। এতে রাকিব খান শাহিন মোট ৮৫১ ভোট পেয়ে সাতজনের মধ্যে ষষ্ঠ হয়েছেন।

এ ব্যাপারে রাকিব খান শাহিন বলেন, এটা একটা ষড়যন্ত্রমূলক প্রহসনের পাতানো নির্বাচন। প্রশাসনের সহযোগিতায় চশমা প্রতীকের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। দলীয় ঊর্ধ্বতন নেতা যারা নির্বাচন পরিচালনা করেছেন তাদের আমি নির্বাচনে প্রশাসনের পক্ষপাতদৃষ্টির কথা অভিযোগ করলেও তারা কোন পদক্ষেপ নেননি। তারা নিশ্চুপ ছিলেন। বাসাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মতিয়ার রহমান গাউস বলেন, এ ব্যাপারে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না।

বাসাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এসএম সামছুল আলম বলেন, প্রার্থী হিসেবে তিনি একদম নতুন এবং এলাকায় তার কোন ফেসভ্যালু নেই। রাজনীতির মাঠেও তাকে দেখা যায় না। তার মনোনয়নটা খুব একটা প্রত্যাশিত ছিল বলে আমি মনে করি না। এসব কারণেই তিনি জনসমর্থন পেতে ব্যর্থ হয়েছেন।

পাঁচবিবিতে স্বতন্ত্র ৪, আ.লীগ ১

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চারটিতে স্বতন্ত্র ও একটিতে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

নাটোরে দুই উপজেলায় চারটিতে আ’লীগ, সাতটিতে বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী

নাটোরের নলডাঙ্গা ও গুরুদাসপুর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চারজন, আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) সাতজন নির্বাচিত হয়েছেন।

ঝিনাইগাতীতে বিএনপি ৩, আ’লীগ ২, বিদ্রোহী ২ শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপি তিন, আওয়ামী লীগ দুই ও বিদ্রোহী প্রার্থী দু’জন নির্বাচিত হয়েছেন।

মানিকগঞ্জে ২১ ইউপির মধ্যে আ’লীগ ১৩, বিদ্রোহী ৩, বিএনপি (স্বতন্ত্র) ২, স্বতন্ত্র ৩

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হয়েছেন ৯ জন, একজন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, দুজন স্বতন্ত্র ও একজন বিএনপি (স্বতন্ত্র) প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে জেলার দৌলতপুর উপজেলার আটটি ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হয়েছেন চারজন, দুজন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, একটিতে (বিএনপি) স্বতন্ত্র প্রার্থী ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

ঝিনাইদহের ২০ ইউপির ৮টিতে নৌকার হার ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ১২টি ও হরিণাকুন্ডু উপজেলার আটটি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে মোট আটটিতে হেরেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। এসব ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। শৈলকুপার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০টিতে নৌকা ও দুটিতে স্বতন্ত্র এবং হরিণাকুন্ডুর আট ইউনিয়নের মধ্যে ছয়টিতে স্বতন্ত্র ও দুটিতে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

বগুড়ার ১৪ ইউপির ৭টিতে বিএনপির (স্বতন্ত্র) জয় বগুড়ার গাবতলী ও দুপচাঁচিয়া উপজেলার ১৪টি ইউপির মধ্যে ৭টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপির ৭ নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ৭টি ইউপির মধ্যে চারটিতে আওয়ামী লীগ, দুটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও একটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নেতা বিজয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে দুপচাঁচিয়ার সব ইউপিতে নৌকার প্রার্থী পরাজিত হন।

গজারিয়ায় ৪ ইউপিতে নৌকার হার, জয় ৩টিতে মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়ায় পঞ্চম ধাপে ৭টি ইউপির ভোটে আওয়ামী লীগ ৩ এবং স্বতন্ত্র ৪ প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।