নির্বাচনোত্তর সহিংসতা অব্যাহত

দিনাজপুরে ৫ গুলিবিদ্ধসহ আহত ৩০

ইউপির পঞ্চম ধাপের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় দিনাজপুরে বিজয় চেয়ারম্যানের ৫ কর্মী গুলিবিদ্ধসহ ২০ জন আহত এবং অন্য ঘটনায় নোয়াখালীর চাটখিলে ১০ জন আহত হয়েছে। উভয় ঘটনায় পরাজিত প্রার্থীর লোকজনের হামলায় তারা আহত হন বলে প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানা গেছে।

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, নির্বাচন পরবর্তী বিজয় মিছিল থেকে উস্কানিমূলক কথাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের ইট-পাটকেল ছোড়ার একপর্যায়ে পরাজিত প্রার্থীর বাড়ি থেকে ছোড়া ছররা গুলিতে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিমের পাঁচ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ সময় ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ১৩ জন। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের গদাইপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ও আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

আহতরা হলেন, আশাশুনি উপজেলার গদাইপুর গ্রামের রফিকুল গাজীর ছেলে গুলিবিদ্ধ রাসেল হোসেন (২৫), একই গ্রামের নাফিলউদ্দিন শেখের ছেলে গুলিবিদ্ধ আসাদুল শেখ (৪৮), একই গ্রামের আহসান হাবিব টগরের ছেলে গদাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্র গুলিবিদ্ধ রাকিব হোসেন (১২), শফিকুল সানার ছেলে গুলিবিদ্ধ ফিরোজ সানা (৩৩), বারিক সরদারের ছেলে হোসেন আলী সরদার (৫৫), তুয়ারডাঙা গ্রামের সজিবউদ্দিন সাজুর ছেলে গুলিবিদ্ধ সজিব হোসেন (১১), একই গ্রামের আমিনুর সরদারের ছেলে টুকু সরদার (৪৫), গদাইপুর গ্রামের রিয়াজউদ্দিন ফকিরের ছেলে ইমাম হোসেনসহ (৫৫) কমপক্ষে ১৩ জন।

আশাশুনির খাজরা ইউপির নবনির্বাচিত চেয়ারনম্যান শাহানেওয়াজ ডালিম জানান, ৫ম দফার ইউপি নির্বাচনে গত বুধবার তিনি ৭৬২২ ভোট পেয়ে নির্বাচাতি হন। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তিনি কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বিজিয় মিছিলযোগে তুয়ারডাঙা বাজারে আনারস প্রতীকের পরাজিত প্রার্থী অহিদুল ইসলামের বাড়ির সামনে পৌঁছালে বিজয় মিছিলকে উদ্দেশ্য করে গালাগাল করা হয়। জবাবে তার কর্মী-সমর্থকরাও গালাগাল করে। এক পর্যায়ে উভয়পক্ষ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করার সময় পরাজিত প্রার্থী অহিদুল ইসলামের বাড়ির দোতলা থেকে তার কর্মী গোলাম রাব্বি বিজয় মিছিলকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে তার ভাতিজাসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়। ইটের আঘাতে আহত হন আরও সাতজন কর্মী। গুলিবিদ্ধ রাসেল ও আসাদুল ইসলামকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে খাজরা ইউপি থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পরাজিত অহিদুল ইসলাম জানান, নবনির্বাচিত খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিমের জয়লাভের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর গত বুধবার রাত ১১টার দিকে তার বাড়িতে হামলা চালানো হয়। বিষয়টি তিনি তাৎক্ষণিক আশাশুনি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। এরপরও গতকাল সকালে শাহানেওয়াজ ডালিমের নেতৃত্বে বিজয় মিছিল করার সময় তার বাড়ির গেট ভেঙে ভাঙচুর চালানো হয়। তিনি তখন বাথরুম থেকে বেরিয়ে নিজের লাইসেন্সকৃত শটগান থেকে আত্মরক্ষার্থে ছররা গুলি ছোঁড়েন। বিজয় মিছিল থেকে ছোড়া ইটের আঘাতে তার ছয়জন কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

এদিকে গতকাল দুপুর ১টার দিকে প্রতাপনগর ইউনাইটেড একাডেমি থেকে নবনির্বাচিত প্রতাপননগর ইউপি চেয়ারম্যান আবু দাউদ ঢালীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়। অংশগ্রহণ শেষে বাড়ি ফেরার সময় নাকনা মাধ্যমিক বিদ্যানিকেতের পাশে নাকনা গ্রামের আবদুল গফুর গাজীর চেলে মঞ্জুরুল ইসলাম ও একই গ্রামের আবদুর রাজ্জাক গাজীর ছেলে সোহেল হোসেনকে দাঁ দিয়ে কুপিয়ে জখম করেছে পরাজিত নৌকা প্রতীকের কর্মী সমর্থকরা। আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম কবির জানান, তিনি ঘটনাস্থলে রয়েছেন। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। প্রতাপনগরেও পুলিশ পাঠানো হয়েছে বলে জানান ওসি।

প্রতিনিধি চাটখিল (নোয়াখালী) জানান, নোয়াখালীর চাটখিলের ৯নং খিলপাড়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে মেম্বার পদে পরাজিত প্রার্থী নুর আলম স্বপনের (ফুটবল) নেতৃত্বে বিজয়ী সিরাজুল ইসলাম (মোরগ) সমর্থিত লোকজনের ওপর হামলা করে। গতকাল দুপুরে স্বপনের নেতৃত্বে ৫০-৬০ জন সন্ত্রাসী ওই ওয়ার্ডের ওমরপুর হাসপাতালের সামনে এ হামলা করে। এতে সিরাজুল ইসলামের সমর্থক লিটন (৩৫), মাসুদ (২৫), মেজবাহ (২২), রবিন (২০), লাকি (২৫) নামজা মনিসহ (২৩) ১০ জন আহত হন।

এ সময় হামলাকারীরা কিরণের দোকান, জাফর, জাহেল, জাকির সহ ৫/ ৬ জনের ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে এবং স্থানীয় শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ ভাঙচুর করে। বিজয়ী মেম্বার সিরাজুল ইসলাম জানান, তার প্রতিপক্ষ পরিকল্পিতভাবে এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। এই ব্যাপারে তিনি থানায় মামলা দায়ের করবেন বলে জানান। খিলপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই ইকবাল জানান, তিনি সংবাদ পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যান এবং ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।

শুক্রবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২২ , ২৩ পৌষ ১৪২৮ ৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

নির্বাচনোত্তর সহিংসতা অব্যাহত

দিনাজপুরে ৫ গুলিবিদ্ধসহ আহত ৩০

সংবাদ ডেস্ক

ইউপির পঞ্চম ধাপের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় দিনাজপুরে বিজয় চেয়ারম্যানের ৫ কর্মী গুলিবিদ্ধসহ ২০ জন আহত এবং অন্য ঘটনায় নোয়াখালীর চাটখিলে ১০ জন আহত হয়েছে। উভয় ঘটনায় পরাজিত প্রার্থীর লোকজনের হামলায় তারা আহত হন বলে প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানা গেছে।

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, নির্বাচন পরবর্তী বিজয় মিছিল থেকে উস্কানিমূলক কথাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের ইট-পাটকেল ছোড়ার একপর্যায়ে পরাজিত প্রার্থীর বাড়ি থেকে ছোড়া ছররা গুলিতে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিমের পাঁচ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ সময় ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ১৩ জন। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের গদাইপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ও আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

আহতরা হলেন, আশাশুনি উপজেলার গদাইপুর গ্রামের রফিকুল গাজীর ছেলে গুলিবিদ্ধ রাসেল হোসেন (২৫), একই গ্রামের নাফিলউদ্দিন শেখের ছেলে গুলিবিদ্ধ আসাদুল শেখ (৪৮), একই গ্রামের আহসান হাবিব টগরের ছেলে গদাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্র গুলিবিদ্ধ রাকিব হোসেন (১২), শফিকুল সানার ছেলে গুলিবিদ্ধ ফিরোজ সানা (৩৩), বারিক সরদারের ছেলে হোসেন আলী সরদার (৫৫), তুয়ারডাঙা গ্রামের সজিবউদ্দিন সাজুর ছেলে গুলিবিদ্ধ সজিব হোসেন (১১), একই গ্রামের আমিনুর সরদারের ছেলে টুকু সরদার (৪৫), গদাইপুর গ্রামের রিয়াজউদ্দিন ফকিরের ছেলে ইমাম হোসেনসহ (৫৫) কমপক্ষে ১৩ জন।

আশাশুনির খাজরা ইউপির নবনির্বাচিত চেয়ারনম্যান শাহানেওয়াজ ডালিম জানান, ৫ম দফার ইউপি নির্বাচনে গত বুধবার তিনি ৭৬২২ ভোট পেয়ে নির্বাচাতি হন। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তিনি কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বিজিয় মিছিলযোগে তুয়ারডাঙা বাজারে আনারস প্রতীকের পরাজিত প্রার্থী অহিদুল ইসলামের বাড়ির সামনে পৌঁছালে বিজয় মিছিলকে উদ্দেশ্য করে গালাগাল করা হয়। জবাবে তার কর্মী-সমর্থকরাও গালাগাল করে। এক পর্যায়ে উভয়পক্ষ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করার সময় পরাজিত প্রার্থী অহিদুল ইসলামের বাড়ির দোতলা থেকে তার কর্মী গোলাম রাব্বি বিজয় মিছিলকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে তার ভাতিজাসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়। ইটের আঘাতে আহত হন আরও সাতজন কর্মী। গুলিবিদ্ধ রাসেল ও আসাদুল ইসলামকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে খাজরা ইউপি থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পরাজিত অহিদুল ইসলাম জানান, নবনির্বাচিত খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিমের জয়লাভের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর গত বুধবার রাত ১১টার দিকে তার বাড়িতে হামলা চালানো হয়। বিষয়টি তিনি তাৎক্ষণিক আশাশুনি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। এরপরও গতকাল সকালে শাহানেওয়াজ ডালিমের নেতৃত্বে বিজয় মিছিল করার সময় তার বাড়ির গেট ভেঙে ভাঙচুর চালানো হয়। তিনি তখন বাথরুম থেকে বেরিয়ে নিজের লাইসেন্সকৃত শটগান থেকে আত্মরক্ষার্থে ছররা গুলি ছোঁড়েন। বিজয় মিছিল থেকে ছোড়া ইটের আঘাতে তার ছয়জন কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

এদিকে গতকাল দুপুর ১টার দিকে প্রতাপনগর ইউনাইটেড একাডেমি থেকে নবনির্বাচিত প্রতাপননগর ইউপি চেয়ারম্যান আবু দাউদ ঢালীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়। অংশগ্রহণ শেষে বাড়ি ফেরার সময় নাকনা মাধ্যমিক বিদ্যানিকেতের পাশে নাকনা গ্রামের আবদুল গফুর গাজীর চেলে মঞ্জুরুল ইসলাম ও একই গ্রামের আবদুর রাজ্জাক গাজীর ছেলে সোহেল হোসেনকে দাঁ দিয়ে কুপিয়ে জখম করেছে পরাজিত নৌকা প্রতীকের কর্মী সমর্থকরা। আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম কবির জানান, তিনি ঘটনাস্থলে রয়েছেন। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। প্রতাপনগরেও পুলিশ পাঠানো হয়েছে বলে জানান ওসি।

প্রতিনিধি চাটখিল (নোয়াখালী) জানান, নোয়াখালীর চাটখিলের ৯নং খিলপাড়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে মেম্বার পদে পরাজিত প্রার্থী নুর আলম স্বপনের (ফুটবল) নেতৃত্বে বিজয়ী সিরাজুল ইসলাম (মোরগ) সমর্থিত লোকজনের ওপর হামলা করে। গতকাল দুপুরে স্বপনের নেতৃত্বে ৫০-৬০ জন সন্ত্রাসী ওই ওয়ার্ডের ওমরপুর হাসপাতালের সামনে এ হামলা করে। এতে সিরাজুল ইসলামের সমর্থক লিটন (৩৫), মাসুদ (২৫), মেজবাহ (২২), রবিন (২০), লাকি (২৫) নামজা মনিসহ (২৩) ১০ জন আহত হন।

এ সময় হামলাকারীরা কিরণের দোকান, জাফর, জাহেল, জাকির সহ ৫/ ৬ জনের ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে এবং স্থানীয় শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ ভাঙচুর করে। বিজয়ী মেম্বার সিরাজুল ইসলাম জানান, তার প্রতিপক্ষ পরিকল্পিতভাবে এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। এই ব্যাপারে তিনি থানায় মামলা দায়ের করবেন বলে জানান। খিলপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই ইকবাল জানান, তিনি সংবাদ পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যান এবং ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।