মাউশি মহাপরিচালকের পদ পেতে প্রভাবশালী অধ্যাপকদের নানা চেষ্টা

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির একাধিক অংশের সাধারণ সভা আজ

১১ জানুয়ারি অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে (পিআরএল) যাচ্ছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক। শিক্ষা প্রশাসনের সবচেয়ে ‘লোভনীয়’ এই পদে বসতে নানাভাবে চেষ্টা-তদবির করছেন আট-দশজন প্রভাবশালী অধ্যাপক। তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ে নানা উপায়ে চাপও তৈরি করছেন।

যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি পক্ষ বর্তমান মহাপরিচালককেই তার চাকরির মেয়াদ বাড়িয়ে রেখে দিতে চান। অথবা অপেক্ষাকৃত ‘ক্লিন ইমেজে’র একজন অধ্যাপককে ওই পদে বসাতে চান। এই পদে বসতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের শুরু হয়েছে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। এর আলোকেই বিভিন্ন পক্ষে বিভক্ত ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির একাধিক পক্ষ আজ সমিতির ‘জরুরি সাধারণ সভা’ আহ্বান করেছেন।

আজ সকাল ১০টায় রাজধানীর ঢাকা কলেজে এ সভা ডেকেছেন বিদায়ী কমিটির সভাপতি ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার। এই সভায় অংশগ্রহণের জন্য ‘স্বাধীনতা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সংসদের’ আহ্বায়ক অধ্যাপক নাসির উদ্দিন ও সদস্য-সচিব সৈয়দ জাফর আলী সংগঠনের সব সদস্যকে অনুরোধ জানিয়েছেন।

অধ্যাপক নাসির উদ্দিন সংবাদকে বলেন, ‘সরকারের ভিশন বাস্তবায়ন এবং ক্যাডারের স্বার্থ সুরক্ষাসহ সমিতির সব অচল অবস্থা দূরীকরণের জন্য উক্ত জরুরি সাধারণ সভায় সব সদস্যকে অংশগ্রহণ করতে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সর্বশেষ নির্বাচন ২০১৬ সালের ১ জুন অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিবার্ষিক এই কমিটির মেয়াদ ২০১৮ সালের ১৪ জুন শেষ হয়। এরপর কোন নির্বাচন হয়নি। দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ায় নানা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পরেছেন সমিতির নেতারা। প্রায় ১৫ হাজার সদস্যদের সংগঠন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি।

কয়েকজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সমিতির নির্বাচনের আয়োজন করার জন্য মাউশির মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুককে দায়িত্ব দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। কিন্তু মহাপরিচালক সমিতির নির্বাচন আয়োজনের কোন উদ্যোগ নেননি। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে ‘অসন্তোষ’ ছিল।

তবে এতদিন কেউই ‘সাধারণ সভা’ বা নির্বাচন আয়োজনের কোন তৎপরতা দেখায়নি। এখন মাউশি মহাপরিচালকের মেয়াদের প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে সরব হয়েছেন সমিতির কয়েকটি পক্ষের নেতা, যারা মহাপরিচালকের পদপ্রত্যাশী। এ কারণে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের অনেকেই ‘জরুরি সাধারণ সভা’ আহ্বানকে উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে করছেন।

জানতে চাইলে খুলনা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. শেখ মো. রেজাউল করিম গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘এতদিন সাধারণ সভা ডাকা হয়নি কেন? এখন মহাপরিচালকের মেয়াদ শেষ হচ্ছে, এই কারণে সভা? সরকার যাকে খুশি তাকে মহাপরিচালক করবেন; জোর করে, প্রভাব বিস্তার করে কেউ এই পদে বসতে পারবেন না। এই সাধারণ সভার নামে মূলত সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘মহাপরিচালকের পদটি গ্রেড-১ এর পদ। এই ধরনের পদে যোগ্যতা, দক্ষতা ও সততা দেখে নিয়োগ দিয়ে থাকে সরকার। এখানে জুনিয়র-সিনিয়র কোন বিষয় নয়।’

মুন্সীগঞ্জ সরকারি হরগঙ্গা কলেজের উপাধ্যক্ষ ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সাবেক প্রভাবশালী নেতা অধ্যাপক খান রফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, সাধারণ সভা আহ্বান করতে হলে সবাইকে নিয়ে করতে হয়। একটি, দুটি পক্ষের আহ্বানে সাধারণ সভা হয় না। মাউশি মহাপরিচালক এবং সমিতির মহাসচিবকে না জানিয়ে সাধারণ সভা হয় কীভাবে?

জানতে চাইলে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সর্বশেষ নির্বাচিত মহাসচিব ও মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী সংবাদকে বলেন, ‘এভাবে সাধারণ সভা আহ্বান প্রত্যাশিত নয়, কাম্য নয়। এতে শিক্ষা ক্যাডারে বিভক্তি আরও বাড়বে।’

তবে জরুরি সাধারণ সভা আহ্বানের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক সংবাদকে জানিয়েছেন, ‘বর্তমান মহাপরিচালকের মেয়াদ বাড়ানো হলে কিংবা নায়েমের মহাপরিচালকে মাউশির মহাপরিচালকের পদে বসানো হলে ১৫/২০ জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক চাকরি ছেড়ে দেবেন। প্রয়োজনে প্রেসক্লাব ও শিক্ষা ভবনের সামনে অনশন করবেন।’

গত ২৩ ডিসেম্বর অধ্যাপক আইসে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার স্বাক্ষরিত জরুরি সভার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সমিতির গঠনতন্ত্রের ধারা-৮ এ বলা হয়েছে, দুই বছরের দায়িত্ব গ্রহণ শেষে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে দুই মাস করে চার মাস সময় নিতে পারবে কেন্দ্রীয় কমিটি। এরপরও নির্বাচন না হলে বিলুপ্ত হবে কমিটি। পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে ২০ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করতে হবে। এই কমিটি তিন মাসের মধ্যে তফসিল ও ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন করবে। অন্যথায় সাধারণ সভা বা জরুরি সভা আহ্বান করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

শুক্রবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২২ , ২৩ পৌষ ১৪২৮ ৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

মাউশি মহাপরিচালকের পদ পেতে প্রভাবশালী অধ্যাপকদের নানা চেষ্টা

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির একাধিক অংশের সাধারণ সভা আজ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

১১ জানুয়ারি অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে (পিআরএল) যাচ্ছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক। শিক্ষা প্রশাসনের সবচেয়ে ‘লোভনীয়’ এই পদে বসতে নানাভাবে চেষ্টা-তদবির করছেন আট-দশজন প্রভাবশালী অধ্যাপক। তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ে নানা উপায়ে চাপও তৈরি করছেন।

যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি পক্ষ বর্তমান মহাপরিচালককেই তার চাকরির মেয়াদ বাড়িয়ে রেখে দিতে চান। অথবা অপেক্ষাকৃত ‘ক্লিন ইমেজে’র একজন অধ্যাপককে ওই পদে বসাতে চান। এই পদে বসতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের শুরু হয়েছে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। এর আলোকেই বিভিন্ন পক্ষে বিভক্ত ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির একাধিক পক্ষ আজ সমিতির ‘জরুরি সাধারণ সভা’ আহ্বান করেছেন।

আজ সকাল ১০টায় রাজধানীর ঢাকা কলেজে এ সভা ডেকেছেন বিদায়ী কমিটির সভাপতি ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার। এই সভায় অংশগ্রহণের জন্য ‘স্বাধীনতা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সংসদের’ আহ্বায়ক অধ্যাপক নাসির উদ্দিন ও সদস্য-সচিব সৈয়দ জাফর আলী সংগঠনের সব সদস্যকে অনুরোধ জানিয়েছেন।

অধ্যাপক নাসির উদ্দিন সংবাদকে বলেন, ‘সরকারের ভিশন বাস্তবায়ন এবং ক্যাডারের স্বার্থ সুরক্ষাসহ সমিতির সব অচল অবস্থা দূরীকরণের জন্য উক্ত জরুরি সাধারণ সভায় সব সদস্যকে অংশগ্রহণ করতে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সর্বশেষ নির্বাচন ২০১৬ সালের ১ জুন অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিবার্ষিক এই কমিটির মেয়াদ ২০১৮ সালের ১৪ জুন শেষ হয়। এরপর কোন নির্বাচন হয়নি। দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ায় নানা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পরেছেন সমিতির নেতারা। প্রায় ১৫ হাজার সদস্যদের সংগঠন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি।

কয়েকজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সমিতির নির্বাচনের আয়োজন করার জন্য মাউশির মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুককে দায়িত্ব দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। কিন্তু মহাপরিচালক সমিতির নির্বাচন আয়োজনের কোন উদ্যোগ নেননি। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে ‘অসন্তোষ’ ছিল।

তবে এতদিন কেউই ‘সাধারণ সভা’ বা নির্বাচন আয়োজনের কোন তৎপরতা দেখায়নি। এখন মাউশি মহাপরিচালকের মেয়াদের প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে সরব হয়েছেন সমিতির কয়েকটি পক্ষের নেতা, যারা মহাপরিচালকের পদপ্রত্যাশী। এ কারণে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের অনেকেই ‘জরুরি সাধারণ সভা’ আহ্বানকে উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে করছেন।

জানতে চাইলে খুলনা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. শেখ মো. রেজাউল করিম গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘এতদিন সাধারণ সভা ডাকা হয়নি কেন? এখন মহাপরিচালকের মেয়াদ শেষ হচ্ছে, এই কারণে সভা? সরকার যাকে খুশি তাকে মহাপরিচালক করবেন; জোর করে, প্রভাব বিস্তার করে কেউ এই পদে বসতে পারবেন না। এই সাধারণ সভার নামে মূলত সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘মহাপরিচালকের পদটি গ্রেড-১ এর পদ। এই ধরনের পদে যোগ্যতা, দক্ষতা ও সততা দেখে নিয়োগ দিয়ে থাকে সরকার। এখানে জুনিয়র-সিনিয়র কোন বিষয় নয়।’

মুন্সীগঞ্জ সরকারি হরগঙ্গা কলেজের উপাধ্যক্ষ ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সাবেক প্রভাবশালী নেতা অধ্যাপক খান রফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, সাধারণ সভা আহ্বান করতে হলে সবাইকে নিয়ে করতে হয়। একটি, দুটি পক্ষের আহ্বানে সাধারণ সভা হয় না। মাউশি মহাপরিচালক এবং সমিতির মহাসচিবকে না জানিয়ে সাধারণ সভা হয় কীভাবে?

জানতে চাইলে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সর্বশেষ নির্বাচিত মহাসচিব ও মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী সংবাদকে বলেন, ‘এভাবে সাধারণ সভা আহ্বান প্রত্যাশিত নয়, কাম্য নয়। এতে শিক্ষা ক্যাডারে বিভক্তি আরও বাড়বে।’

তবে জরুরি সাধারণ সভা আহ্বানের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক সংবাদকে জানিয়েছেন, ‘বর্তমান মহাপরিচালকের মেয়াদ বাড়ানো হলে কিংবা নায়েমের মহাপরিচালকে মাউশির মহাপরিচালকের পদে বসানো হলে ১৫/২০ জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক চাকরি ছেড়ে দেবেন। প্রয়োজনে প্রেসক্লাব ও শিক্ষা ভবনের সামনে অনশন করবেন।’

গত ২৩ ডিসেম্বর অধ্যাপক আইসে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার স্বাক্ষরিত জরুরি সভার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সমিতির গঠনতন্ত্রের ধারা-৮ এ বলা হয়েছে, দুই বছরের দায়িত্ব গ্রহণ শেষে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে দুই মাস করে চার মাস সময় নিতে পারবে কেন্দ্রীয় কমিটি। এরপরও নির্বাচন না হলে বিলুপ্ত হবে কমিটি। পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে ২০ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করতে হবে। এই কমিটি তিন মাসের মধ্যে তফসিল ও ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন করবে। অন্যথায় সাধারণ সভা বা জরুরি সভা আহ্বান করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’