নাসিক নির্বাচন

আ’লীগে কোন দ্বন্দ্ব নেই : আইভী নিজেকে জনগণের প্রার্থী দাবি তৈমুরের

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আ’লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী নির্বাচনী প্রচারণাকালে দাবি করেছেন, এলাকার ভোটাররাই তার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে। এ ছাড়া আ’লীগে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকতে পারে, কিন্তু কোন দ্বন্দ্ব নেই।

অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা মৈতুর আলম খন্দকার নিজেকে জনগণের প্রার্থী দাবি করে আশা প্রকাশ করেছেন, তিনি সবার ভোট পাবেন। একইসঙ্গে দাবি করেছেন, বিএনপির নির্যাতিত নেতাকর্মীরা তাকে শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে মনে করে। এদিকে নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরামহীন প্রচার-প্রচারণা ততই বাড়ছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার একে অন্যের বিরুদ্ধে পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ ও অভিযোগ খন্ডন করে চলছেন। সব মিলিয়ে নির্বাচনী মাঠ সরগরম। এদিকে ভোটাররাও সচেতনতার সঙ্গে বলছেন, নগরবাসীর কল্যাণে যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই নির্বাচিত করবেন তারা।

গতকাল দিনভর প্রচারণা চালিয়েছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তৈমুর আলম খন্দকার। নগরীর ১০ নম্বর ওয়ার্ডে সকাল থেকে বাসস্ট্যান্ড, পাঠানটুলি, এসিআই পানিরকলসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ এবং পথসভা করেন আইভী। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিও তার প্রচারণায় অংশ নেন। এলাকাবাসীও ফুল দিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়।

সাংবাদিকদের সামনে আইভী বলেন, ‘আমি উন্নয়নের রাজনীতি করি। সাধারণ ভোটারা আমার উন্নয়নের রাজনীতির সঙ্গে আছে। তাই ভোটাররাই আমার পক্ষে ভোট চেয়ে প্রচারণা করছে। উন্নয়নের কথা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে উনি (তৈমুর আলম) স্বীকার করছেন না। উনি সমালোচনা করতেই পারেন কিন্তু ভোটাররা তা গ্রহণ করছে কি-না সেটা দেখার ব্যাপার। কিন্তু তিনি তো সরাসরি অসত্য কথা বলতেছেন। উনি সিদ্ধিরগঞ্জ লেকের মতো জলাশয় বন্ধ করে রাস্তা বানানোর কথা বলছেন। এইটা তো হতে পারে না।’

এক প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, ‘সাংসদ শামীম ওসমানের সঙ্গে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকতে পারে, স্থানীয় অনেক কিছুর সঙ্গে দ্বিমত থাকতে পারে। কিন্তু উনিও আওয়ামী লীগ করেন, আমিও আওয়ামী লীগ করি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মীরা, শেখ হাসিনার কর্মীরা আমার পাশেই আছেন। তৃণমূল সবসময় আমার সঙ্গে ছিল, এখনও আছে। নেতৃস্থানীয় সব নেতা আমার পাশে আছে। আওয়ামী লীগে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকতে পারে কিন্তু কোন দ্বন্দ্ব নেই।’

সিটি করপোরেশন থেকে জন্মসনদ পেতে ভোগান্তির অভিযোগ প্রসঙ্গে আইভী বলেন, ‘স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে একটি নতুন সিস্টেম চালু করেছে। এই সিস্টেমটি নতুন হওয়ার কারণে অনেকেই বুঝে উঠতে পারছে না বলে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। একসঙ্গে অনেক চাপ পড়ার কারণে সার্ভারে কিছুটা জটিলতা হয়েছে। তবে একাবারে সেবাবঞ্চিত হচ্ছে এমনটা নয়।’

অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ড কদমতলী, ভান্ডারীরপুর, নয়াপাড়া, পশ্চিমপাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় স্থানীয় বিএনপির নেকতাকর্মীরা তার সঙ্গে ছিলেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ‘মেয়র আইভী ও সাংসদ শামীম ওসমানের সঙ্গে যে দ্বন্দ্ব আছে তা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না। তবে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী জনগণের প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী দলসহ সবার ভোট চাই। আশা করছি সবার ভোট পাবো।’

দলের পদ-পদবি হারানোর পর বিএনপির নেতাকর্মীরা আপনার সঙ্গে আছে কি-না এমন প্রশ্নের জাবাবে তৈমুর আলম বলেন, ‘বিএনপির নির্যাতিত নেতাকর্মীরা মনে করে আমি তাদের আশ্রয়স্থল। রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে গুলি খেয়েছি, পুলিশে মার খেয়েছি। কিন্তু তার পর জনগণের পক্ষে কথা বলেছি। জনগণকে ছেড়ে যাইনি। তাই আগামী নির্বাচনে আমাকে দলমত নির্বিশেষে ভোটাররা হাতি প্রতীকে ভোট দিবে।’ গতবার সরে দাঁড়ালেও এইবার শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব, বলেন তৈমুর।

তিনি বলেন, ‘২০১১ সালের নির্বাচনে দল আমাকে নির্বাচনে পাঁচ ঘণ্টা আগে বসিয়ে দিয়েছে। শ্রমিক দলের একটি জনসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মরহুম ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদে বলেছিলেন, শামীম ওসমানকে ফেল করানোর জন্যই বিএনপির প্রার্থী তৈমুর আলমকে বসিয়ে দেয়া হয়েছিল।’

এদিকে প্রচারণা চালাচ্ছেন অন্যান্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। সবাই নিজ নিজ কৌশলে মাঠে সরব রয়েছেন। দিন-রাত প্রচারণা চালিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

শুক্রবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২২ , ২৩ পৌষ ১৪২৮ ৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

নাসিক নির্বাচন

আ’লীগে কোন দ্বন্দ্ব নেই : আইভী নিজেকে জনগণের প্রার্থী দাবি তৈমুরের

প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ

image

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আ’লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী নির্বাচনী প্রচারণাকালে দাবি করেছেন, এলাকার ভোটাররাই তার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে। এ ছাড়া আ’লীগে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকতে পারে, কিন্তু কোন দ্বন্দ্ব নেই।

অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা মৈতুর আলম খন্দকার নিজেকে জনগণের প্রার্থী দাবি করে আশা প্রকাশ করেছেন, তিনি সবার ভোট পাবেন। একইসঙ্গে দাবি করেছেন, বিএনপির নির্যাতিত নেতাকর্মীরা তাকে শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে মনে করে। এদিকে নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরামহীন প্রচার-প্রচারণা ততই বাড়ছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার একে অন্যের বিরুদ্ধে পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ ও অভিযোগ খন্ডন করে চলছেন। সব মিলিয়ে নির্বাচনী মাঠ সরগরম। এদিকে ভোটাররাও সচেতনতার সঙ্গে বলছেন, নগরবাসীর কল্যাণে যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই নির্বাচিত করবেন তারা।

গতকাল দিনভর প্রচারণা চালিয়েছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তৈমুর আলম খন্দকার। নগরীর ১০ নম্বর ওয়ার্ডে সকাল থেকে বাসস্ট্যান্ড, পাঠানটুলি, এসিআই পানিরকলসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ এবং পথসভা করেন আইভী। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিও তার প্রচারণায় অংশ নেন। এলাকাবাসীও ফুল দিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়।

সাংবাদিকদের সামনে আইভী বলেন, ‘আমি উন্নয়নের রাজনীতি করি। সাধারণ ভোটারা আমার উন্নয়নের রাজনীতির সঙ্গে আছে। তাই ভোটাররাই আমার পক্ষে ভোট চেয়ে প্রচারণা করছে। উন্নয়নের কথা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে উনি (তৈমুর আলম) স্বীকার করছেন না। উনি সমালোচনা করতেই পারেন কিন্তু ভোটাররা তা গ্রহণ করছে কি-না সেটা দেখার ব্যাপার। কিন্তু তিনি তো সরাসরি অসত্য কথা বলতেছেন। উনি সিদ্ধিরগঞ্জ লেকের মতো জলাশয় বন্ধ করে রাস্তা বানানোর কথা বলছেন। এইটা তো হতে পারে না।’

এক প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, ‘সাংসদ শামীম ওসমানের সঙ্গে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকতে পারে, স্থানীয় অনেক কিছুর সঙ্গে দ্বিমত থাকতে পারে। কিন্তু উনিও আওয়ামী লীগ করেন, আমিও আওয়ামী লীগ করি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মীরা, শেখ হাসিনার কর্মীরা আমার পাশেই আছেন। তৃণমূল সবসময় আমার সঙ্গে ছিল, এখনও আছে। নেতৃস্থানীয় সব নেতা আমার পাশে আছে। আওয়ামী লীগে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকতে পারে কিন্তু কোন দ্বন্দ্ব নেই।’

সিটি করপোরেশন থেকে জন্মসনদ পেতে ভোগান্তির অভিযোগ প্রসঙ্গে আইভী বলেন, ‘স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে একটি নতুন সিস্টেম চালু করেছে। এই সিস্টেমটি নতুন হওয়ার কারণে অনেকেই বুঝে উঠতে পারছে না বলে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। একসঙ্গে অনেক চাপ পড়ার কারণে সার্ভারে কিছুটা জটিলতা হয়েছে। তবে একাবারে সেবাবঞ্চিত হচ্ছে এমনটা নয়।’

অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ড কদমতলী, ভান্ডারীরপুর, নয়াপাড়া, পশ্চিমপাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় স্থানীয় বিএনপির নেকতাকর্মীরা তার সঙ্গে ছিলেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ‘মেয়র আইভী ও সাংসদ শামীম ওসমানের সঙ্গে যে দ্বন্দ্ব আছে তা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না। তবে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী জনগণের প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী দলসহ সবার ভোট চাই। আশা করছি সবার ভোট পাবো।’

দলের পদ-পদবি হারানোর পর বিএনপির নেতাকর্মীরা আপনার সঙ্গে আছে কি-না এমন প্রশ্নের জাবাবে তৈমুর আলম বলেন, ‘বিএনপির নির্যাতিত নেতাকর্মীরা মনে করে আমি তাদের আশ্রয়স্থল। রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে গুলি খেয়েছি, পুলিশে মার খেয়েছি। কিন্তু তার পর জনগণের পক্ষে কথা বলেছি। জনগণকে ছেড়ে যাইনি। তাই আগামী নির্বাচনে আমাকে দলমত নির্বিশেষে ভোটাররা হাতি প্রতীকে ভোট দিবে।’ গতবার সরে দাঁড়ালেও এইবার শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব, বলেন তৈমুর।

তিনি বলেন, ‘২০১১ সালের নির্বাচনে দল আমাকে নির্বাচনে পাঁচ ঘণ্টা আগে বসিয়ে দিয়েছে। শ্রমিক দলের একটি জনসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মরহুম ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদে বলেছিলেন, শামীম ওসমানকে ফেল করানোর জন্যই বিএনপির প্রার্থী তৈমুর আলমকে বসিয়ে দেয়া হয়েছিল।’

এদিকে প্রচারণা চালাচ্ছেন অন্যান্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। সবাই নিজ নিজ কৌশলে মাঠে সরব রয়েছেন। দিন-রাত প্রচারণা চালিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।