বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য (ডেথ রেফারেন্স) নথিপত্র সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে পাঠিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। গতকাল ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল থেকে এই মামলার সমস্ত নথিপত্র পাঠানো হয়।

সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত প্রসিকিউটর আবু আবদুল্লাহ ভূঞা এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, মামলার যাবতীয় কাগজপত্র মূল নথিসহ ছয় হাজার ৬২৭ পৃষ্ঠার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে। এদিকে, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আবরার হত্যা মামলার নথি এসে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন বিশেষ কর্মকর্তা ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান। তিনি বলেন, ওই মামলার মোট ছয় হাজার ৬২৭ পৃষ্ঠার নথি হাইকোর্টে এসেছে।

মূলত বিচারিক আদালতে কোন আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকর করতে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যা ‘ডেথ রেফারেন্স’ হিসেবে পরিচিত। তবে দণ্ডিতরা বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে জেল আপিল ও আপিলের সুযোগ পান। সেক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোন ডেথ রেফারেন্সের শুনানি হলে রেজিস্ট্রার কার্যালয় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়।

এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার মামলায় ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছিলেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালত।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহতাসিম ফুয়াদ, সাবেক গ্রন্থাগার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না, সাবেক আইনবিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা, সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী আকাশ হোসেন ও মোয়াজ আবু হুরায়রা। একইসঙ্গে আদালত তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ওরফে শান্ত, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক অনিক সরকার অপু, সাবেক সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, সাবেক ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, সাবেক সমাজকল্যাণবিষয়ক উপ-সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক মুস্তবা রাফিদ এবং সদস্য মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, মুনতাসির আল জেমি এবং ইহতাশামুল রাব্বী তানিম। এ ছাড়া ছাত্রলীগ কর্মী খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর, এএসএম নাজমুস সাদাত, মাজেদুর রহমান ওরফে মাজেদ, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, শামীম বিল্লাহ, মুহাম্মদ মোরশেদ-উজ-জামান মণ্ডল ওরফে জিসান, মোরশেদ অমর্ত্য ইসলাম, মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এসএম মাহমুদ সেতুকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয় আদালত। এদের মধ্যে জিসান, তানিম ও মুস্তবা রাফিদ পলাতক।

২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আদালত এই মামলার অভিযোগ গঠন করেন। ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। তাতে ৬০ জন সাক্ষীর নামের তালিকা দেয়া হয়। এদের মধ্যে ৪৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

এজাহারভুক্ত ১৯ জনের পাশাপাশি আরও ছয়জনসহ মোট ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ওরফে শান্ত, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক অনিক সরকার অপু, সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, সমাজকল্যাণবিষয়ক উপ-সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, সদস্য মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, মুনতাসির আল জেমি এবং ইহতাশামুল রাব্বী তানিম। ছাত্রলীগ কর্মী খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর, এএসএম নাজমুস সাদাত, মাজেদুর রহমান ওরফে মাজেদ, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, আকাশ হোসেন, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, মুহাম্মদ মোরশেদ-উজ-জামান মণ্ডল ওরফে জিসান এবং মোরশেদ অমর্ত্য ইসলাম। এদের মধ্যে জিসান ও তানিম পলাতক।

বাকি ছয়জন হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের গ্রন্থাগার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না, আইনবিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা, উপ-দপ্তর সম্পাদক মুস্তবা রাফিদ, ছাত্রলীগ কর্মী মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এসএম মাহমুদ সেতু। এদের মধ্যে মুস্তবা রাফিদ পলাতক।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ২১টি আলামত ও ৮টি জব্দ তালিকা জমা দেন। গ্রেপ্তার ২২ জনের মধ্যে আটজন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা সবাই বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। ২০২১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান অভিযোগ সংশোধনে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন গ্রহণ করে ২৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ পুনর্গঠন করেন।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে রাজধানীর চকবাজার থানায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের ১৯ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।