২০ জনের ওমিক্রন, সবাই ঢাকাবাসী
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের বিস্তারের মধ্যে দেশে অব্যাহতভাবে বাড়ছে সংক্রমণ। করোনায় মৃত্যু কমলেও দেশে ১৫ সপ্তাহ পর দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার আবার ৫ শতাংশের ওপর উঠে গেছে। এদিকে দেশে নতুন করে আরও ১০ জনের ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ২০ জনের দেহে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হলো। আক্রান্তদের সবাই ঢাকা শহরের বাসিন্দা।
করোনাভাইরাসের জিনোমের উন্মুক্ত বৈশ্বিক তথ্যভা-ার জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জার (জিআইএসএআইডি) ওয়েবসাইট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপিং সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভস, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এবং রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) সেই জিনোম সিকোয়েন্স ডেটা জমা দিয়েছে।
ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, গত ১৪ ডিসেম্বর থেকে ৩ জানুয়ারির মধ্যে রোগীদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। যার মধ্যে গত ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাত দিনে পাঁচজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তবে, ওয়েবসাইটটিতে করোনার ওমিক্রন আক্রান্তদের বিদেশ ভ্রমণের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে ৩১ ডিসেম্বর দেশে তিনজনের দেহে ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার খবর জানায় জিআইএসএআইডি। এরও আগে ২৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় একজন এবং রাতে তিনজনের দেহে ওমিক্রন শনাক্ত হয়। আগের দিন ২৭ ডিসেম্বর রাতে আরও একজনের নমুনায় করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার তথ্য জানায় জিআইএসএআইডি।
দেশে সর্বপ্রথম গত ১১ ডিসেম্বর প্রথম দুজনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়। তারা জিম্বাবুয়ে ফেরত বাংলাদেশি দুই নারী ক্রিকেটার ছিলেন। তারা বর্তমানে সুস্থ রয়েছেন।
তবে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন বলেছেন, করোনারভাইরাসের জিন বিশ্লেষণের ২০ ডিসেম্বর তথ্যে দেখা যায়, সংক্রমণের ১৩ শতাংশের জন্য ওমিক্রন ও ৮৭ শতাংশের জন্য ডেলটা দায়ী। এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম আগামী মার্চ-এপ্রিলেই দেশে বড় ধরনের সংক্রমণ ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমরা ধারণা করছি, মার্চ থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে সংক্রমণ বাড়তে পারে। এ কারণে আমরা সারা দেশের হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা জোরদারের জন্য কাজ করছি।
একইসঙ্গে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ১৪৬ জন। শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ দশমিক ৬৭ শতাংশে। এর আগে সর্বশেষ শনাক্তের হার পাঁচের ওপর ছিল ২০ সেপ্টেম্বর। সেদিন শনাক্তের হার ছিল পাঁচ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপটের সময় গতবছর জুলাই-আগস্ট সময়ে দৈনিক শনাক্তের হার ৩০ শতাংশও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এরপর তা নামতে নামতে জুলাই মাসে দুই শতাংশের নিচে চলে আসে।
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণেই ছিল। কিন্তু এরমধ্যেই বিশ্বে শুরু হয় ওমিক্রনের ত্রাস। ৩ জানুয়ারি দৈনিক শনাক্তের হার তিন শতাংশ এবং ৫ জানুয়ারি তা চার শতাংশ ছাড়ায়। দুই দিনের মাথায় তার ছাড়িয়ে গেল পাঁচ শতাংশের ঘর।
করোনায় এ পর্যন্ত দেশে ২৮ হাজার ৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে; শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৯১ হাজার ৯৩ জনে।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দেশে করোনায় সাতজনের মৃত্যু হয়। এ সময়ে নতুন করে শনাক্ত হন এক হাজার ১৪০ জন। এদিন শনাক্তের হার ছিল চার দশমিক ৮৬ শতাংশ। সে হিসাবে গত একদিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সামান্য বেড়েছে।
গত একদিনে শনাক্ত নতুন রোগীদের মধ্যে ৯০২ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা, যা মোট আক্রান্তের ৭৮ শতাংশের বেশি। দেশের ২৬টি জেলায় একদিনে কারও করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ২৮।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত একদিনে দেশে সেরে উঠেছেন ১৭০ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত ১৫ লাখ ৫০ হাজার ৫৩৪ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ হাজার ৮৯০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ২০ হাজার ২০৪টি নমুনা। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার পাঁচ দশমিক ৬৭ শতাংশ। মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৭৭ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া নারী ময়মনসিংহ বিভাগের। তার বয়স ছিল ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে, ময়মনসিংহের একটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন। দেশের বাকি সাত বিভাগে আর কারও মৃত্যু হয়নি গত একদিনে।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। গেল বছরের ৫ ও ১০ আগস্ট দুদিন সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান।
শনিবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২২ , ২৪ পৌষ ১৪২৮ ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৩
২০ জনের ওমিক্রন, সবাই ঢাকাবাসী
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের বিস্তারের মধ্যে দেশে অব্যাহতভাবে বাড়ছে সংক্রমণ। করোনায় মৃত্যু কমলেও দেশে ১৫ সপ্তাহ পর দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার আবার ৫ শতাংশের ওপর উঠে গেছে। এদিকে দেশে নতুন করে আরও ১০ জনের ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ২০ জনের দেহে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হলো। আক্রান্তদের সবাই ঢাকা শহরের বাসিন্দা।
করোনাভাইরাসের জিনোমের উন্মুক্ত বৈশ্বিক তথ্যভা-ার জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জার (জিআইএসএআইডি) ওয়েবসাইট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপিং সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভস, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এবং রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) সেই জিনোম সিকোয়েন্স ডেটা জমা দিয়েছে।
ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, গত ১৪ ডিসেম্বর থেকে ৩ জানুয়ারির মধ্যে রোগীদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। যার মধ্যে গত ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাত দিনে পাঁচজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তবে, ওয়েবসাইটটিতে করোনার ওমিক্রন আক্রান্তদের বিদেশ ভ্রমণের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে ৩১ ডিসেম্বর দেশে তিনজনের দেহে ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার খবর জানায় জিআইএসএআইডি। এরও আগে ২৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় একজন এবং রাতে তিনজনের দেহে ওমিক্রন শনাক্ত হয়। আগের দিন ২৭ ডিসেম্বর রাতে আরও একজনের নমুনায় করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার তথ্য জানায় জিআইএসএআইডি।
দেশে সর্বপ্রথম গত ১১ ডিসেম্বর প্রথম দুজনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়। তারা জিম্বাবুয়ে ফেরত বাংলাদেশি দুই নারী ক্রিকেটার ছিলেন। তারা বর্তমানে সুস্থ রয়েছেন।
তবে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন বলেছেন, করোনারভাইরাসের জিন বিশ্লেষণের ২০ ডিসেম্বর তথ্যে দেখা যায়, সংক্রমণের ১৩ শতাংশের জন্য ওমিক্রন ও ৮৭ শতাংশের জন্য ডেলটা দায়ী। এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম আগামী মার্চ-এপ্রিলেই দেশে বড় ধরনের সংক্রমণ ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমরা ধারণা করছি, মার্চ থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে সংক্রমণ বাড়তে পারে। এ কারণে আমরা সারা দেশের হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা জোরদারের জন্য কাজ করছি।
একইসঙ্গে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ১৪৬ জন। শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ দশমিক ৬৭ শতাংশে। এর আগে সর্বশেষ শনাক্তের হার পাঁচের ওপর ছিল ২০ সেপ্টেম্বর। সেদিন শনাক্তের হার ছিল পাঁচ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপটের সময় গতবছর জুলাই-আগস্ট সময়ে দৈনিক শনাক্তের হার ৩০ শতাংশও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এরপর তা নামতে নামতে জুলাই মাসে দুই শতাংশের নিচে চলে আসে।
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণেই ছিল। কিন্তু এরমধ্যেই বিশ্বে শুরু হয় ওমিক্রনের ত্রাস। ৩ জানুয়ারি দৈনিক শনাক্তের হার তিন শতাংশ এবং ৫ জানুয়ারি তা চার শতাংশ ছাড়ায়। দুই দিনের মাথায় তার ছাড়িয়ে গেল পাঁচ শতাংশের ঘর।
করোনায় এ পর্যন্ত দেশে ২৮ হাজার ৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে; শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৯১ হাজার ৯৩ জনে।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দেশে করোনায় সাতজনের মৃত্যু হয়। এ সময়ে নতুন করে শনাক্ত হন এক হাজার ১৪০ জন। এদিন শনাক্তের হার ছিল চার দশমিক ৮৬ শতাংশ। সে হিসাবে গত একদিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সামান্য বেড়েছে।
গত একদিনে শনাক্ত নতুন রোগীদের মধ্যে ৯০২ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা, যা মোট আক্রান্তের ৭৮ শতাংশের বেশি। দেশের ২৬টি জেলায় একদিনে কারও করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ২৮।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত একদিনে দেশে সেরে উঠেছেন ১৭০ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত ১৫ লাখ ৫০ হাজার ৫৩৪ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ হাজার ৮৯০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ২০ হাজার ২০৪টি নমুনা। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার পাঁচ দশমিক ৬৭ শতাংশ। মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৭৭ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া নারী ময়মনসিংহ বিভাগের। তার বয়স ছিল ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে, ময়মনসিংহের একটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন। দেশের বাকি সাত বিভাগে আর কারও মৃত্যু হয়নি গত একদিনে।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। গেল বছরের ৫ ও ১০ আগস্ট দুদিন সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান।