বিপ্লব কুমার পিন্টু, ঝিনাইদহ ও
ঝিনাইদহে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে এবার নির্বাচিত হলেন শম্পা খাতুন পপি নামের তৃতীয় লিঙ্গের আরেক সদস্য। শম্পা শৈলকুপা উপজেলার ফুলহরি ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে নির্বাচন করেন। ৫ জানুয়ারি এ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে শম্পা হেলিকপ্টার প্রতীকে ভোট পান ২,১০১টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবিহা খাতুন পান ৫১৪ ভোট ও লিলি খাতুন ৩২৫ ভোট পান।
শম্পা ওই ইউনিয়নের ফুলহরি গ্রামে বসবাস করেন। আগে তার বাড়ি ছিল মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার আড়াপাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের শেখ রুহুল হাওলাদারের চতুর্থ সন্তান। তার আরও দুই ভাই ও দুই বোন রয়েছে। তিনি ২০০৬ সালের দিকে পরিবার ছেড়ে শৈলকুপার ফুলহরি গ্রামে চলে আসেন। সেই সুবাদে তিনি এখানকার ভোটার। এ ছাড়া শম্পা ২০১৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।
বিজয়ের পর শম্পা খাতুন পপি জানান, এ বিজয় আমার না জনগণের। কারণ, আমার তো একটা ভোট। এখানে আমার পরিবারের কেউ নেই। তারপরও সবাই আমাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছেন। এখন সবাই আমার আপন। আমার দ্বায়িত্ব বেড়ে গেল। আমি এখন বুঝতে পারছি না কিভাবে তাদের ঋণ শোধ করবো। সবাই আমাকে এত ভালোবাসে ভোটের পর তা বুঝেছি। আমি বাকি জীবন জনগণের সঙ্গে থাকতে চাই। এলাকার উন্নয়নে সবার সহযোগিতা চান শম্পা।
বাদশা নামের এক ভোটার জানান, শম্পা দীর্ঘদিন এখানে থাকার ফলে সবার সঙ্গে তার সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তা ছাড়া শম্পার আচার ব্যবহারে খুব ভালো। যে কারণে তাকে সবাই ভোট দিয়েছে। ফুলহরি ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তা শৈলকুপা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদ খান জানান, সংরক্ষিত ওই মহিলা ওয়ার্ডে শম্পাসহ তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। তাদের মধ্যে শম্পা নির্বাচিত হয়েছেন। এখন সে সাধারণ আর দশজনের মতো সমাজ তথা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলেই প্রত্যাশা তাদের।
এর আগে ঝিনাইদহের নজরুল ইসলাম ঋতু তৃতীয় লিঙ্গের ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। গেল বছরের ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ঝিনাইদহের ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম ছানাকে পরাজিত করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম ঋতু। ভোটে নজরুল ইসলাম ঋতু ৯৫৫৭ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের নজরুল ইসলাম ছানা পেয়েছিলেন ৪৫২৯ ভোট। ঋতু উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের দাঁদপুর গ্রামের মৃত আবদুল কাদেরের সন্তান।
এর আগে একই জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান পদে পিংকি নির্বাচিত হন। একই জেলায় তৃতীয় লিঙ্গের এ পর্যন্ত ৩ প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ায় সারা দেশের মধ্যে ঝিনাইদহ জেলা সবার কাছে ব্যাপক আলোচিত।
তবে সাধারণ ভোটারদের ভাষ্য, এ পর্যন্ত অনেক রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন ধরনের মানুষকে তারা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন। কিন্তু‘ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলো এক সময়ে ছিল অবহেলিত। বর্তমানে মূলধারার জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সুযোগ পাচ্ছেন। আর তা ছাড়া তাদেও ঘর সংসার সন্তান কিছুই নেই। ফলে মানবিক দিক বিবেচনা করে মানুষ তাদের নির্বাচিত করেছেন।
শনিবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২২ , ২৪ পৌষ ১৪২৮ ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৩
বিপ্লব কুমার পিন্টু, ঝিনাইদহ ও
সাবজাল হোসেন, কালীগঞ্জ
ঝিনাইদহে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে এবার নির্বাচিত হলেন শম্পা খাতুন পপি নামের তৃতীয় লিঙ্গের আরেক সদস্য। শম্পা শৈলকুপা উপজেলার ফুলহরি ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে নির্বাচন করেন। ৫ জানুয়ারি এ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে শম্পা হেলিকপ্টার প্রতীকে ভোট পান ২,১০১টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবিহা খাতুন পান ৫১৪ ভোট ও লিলি খাতুন ৩২৫ ভোট পান।
শম্পা ওই ইউনিয়নের ফুলহরি গ্রামে বসবাস করেন। আগে তার বাড়ি ছিল মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার আড়াপাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের শেখ রুহুল হাওলাদারের চতুর্থ সন্তান। তার আরও দুই ভাই ও দুই বোন রয়েছে। তিনি ২০০৬ সালের দিকে পরিবার ছেড়ে শৈলকুপার ফুলহরি গ্রামে চলে আসেন। সেই সুবাদে তিনি এখানকার ভোটার। এ ছাড়া শম্পা ২০১৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।
বিজয়ের পর শম্পা খাতুন পপি জানান, এ বিজয় আমার না জনগণের। কারণ, আমার তো একটা ভোট। এখানে আমার পরিবারের কেউ নেই। তারপরও সবাই আমাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছেন। এখন সবাই আমার আপন। আমার দ্বায়িত্ব বেড়ে গেল। আমি এখন বুঝতে পারছি না কিভাবে তাদের ঋণ শোধ করবো। সবাই আমাকে এত ভালোবাসে ভোটের পর তা বুঝেছি। আমি বাকি জীবন জনগণের সঙ্গে থাকতে চাই। এলাকার উন্নয়নে সবার সহযোগিতা চান শম্পা।
বাদশা নামের এক ভোটার জানান, শম্পা দীর্ঘদিন এখানে থাকার ফলে সবার সঙ্গে তার সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তা ছাড়া শম্পার আচার ব্যবহারে খুব ভালো। যে কারণে তাকে সবাই ভোট দিয়েছে। ফুলহরি ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তা শৈলকুপা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদ খান জানান, সংরক্ষিত ওই মহিলা ওয়ার্ডে শম্পাসহ তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। তাদের মধ্যে শম্পা নির্বাচিত হয়েছেন। এখন সে সাধারণ আর দশজনের মতো সমাজ তথা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলেই প্রত্যাশা তাদের।
এর আগে ঝিনাইদহের নজরুল ইসলাম ঋতু তৃতীয় লিঙ্গের ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। গেল বছরের ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ঝিনাইদহের ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম ছানাকে পরাজিত করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম ঋতু। ভোটে নজরুল ইসলাম ঋতু ৯৫৫৭ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের নজরুল ইসলাম ছানা পেয়েছিলেন ৪৫২৯ ভোট। ঋতু উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের দাঁদপুর গ্রামের মৃত আবদুল কাদেরের সন্তান।
এর আগে একই জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান পদে পিংকি নির্বাচিত হন। একই জেলায় তৃতীয় লিঙ্গের এ পর্যন্ত ৩ প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ায় সারা দেশের মধ্যে ঝিনাইদহ জেলা সবার কাছে ব্যাপক আলোচিত।
তবে সাধারণ ভোটারদের ভাষ্য, এ পর্যন্ত অনেক রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন ধরনের মানুষকে তারা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন। কিন্তু‘ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলো এক সময়ে ছিল অবহেলিত। বর্তমানে মূলধারার জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সুযোগ পাচ্ছেন। আর তা ছাড়া তাদেও ঘর সংসার সন্তান কিছুই নেই। ফলে মানবিক দিক বিবেচনা করে মানুষ তাদের নির্বাচিত করেছেন।