আরিচা-কাজিরহাট নৌ-রুট

ফেরি সংকট, যাত্রী ও যানবাহন শ্রমিকদের দুর্ভোগ চরমে

আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি সংকটের কারণে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এ নৌরুটে ফেরি পারাপার হতে আসা যাত্রী এবং যানবাহন শ্রমিকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মাত্র ছোট দুটি ফেরি দিয়ে চালু রাখা হয়েছে ফেরি সার্ভিস। আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে একটি ফেরি আপডাউনে সময় লাগছে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। এতে পারাপারে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে ছোট গাড়ির যাত্রীদের। আর পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার হতে সময় লাগছে দুই থেকে তিন দিন। ঘাটে এসে তিন দিন অপেক্ষার পর ফেরির নাগাল পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ট্রাক চালকরা। এরকম হয়রানি থেকে রেহাই পেতে ওই নৌরুটে আরও ফেরি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা। তা না হলে আর এ নৌরুট ব্যবহার করবে না বলে জানিয়েছেন ট্রাক চালকরা। গতকাল সকালে সরেজমিনে আরিচা ঘাট ঘুরে দেখা গেছে, আরিচা ৩নং ফেরি ঘাটের পল্টুন এলাকা থেকে শুরু করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের শিবালয় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত সড়কের উপর পণ্যবাহী ট্রাক দীর্ঘ সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে। এতে এ সড়কে যানবাহন চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। এছাড়া ফেরি টার্মিনাল এলাকাতেও শত শত পণ্যবাহী ট্রাক ফেরি পারের অপেক্ষায় রয়েছে। ফেরি পার হতে আসা এসব ট্রাকের মধ্যে অনেক ট্রাক গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আরিচা ঘাটে এসে পৌঁছায় ফেরি পারের জন্য। কিন্তু আজ বেলা তিনটাতেও ফেরি পার হতে পারেননি ট্রাক চালকরা।

ফেরি সংকট, যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি এবং ঘাটে বিশৃঙ্খলার জন্যই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ট্রাক চালকরা। এ নৌরুটে আরও ফেরি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ট্রাক শ্রমিকরা।

ফেরি লোড-আনলোডের রাস্তায় এবং টার্মিনালে ফেরি পার হতে আসা পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে এলোমেলোভাবে রাখা হয়েছে। এতে দীর্ঘ সময় লাগছে ফেরি লোড-আনলোডে। আরিচা ঘাট এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থা না থাকায় কোন শৃঙ্খলা নেই বললেই চলে।

বিআইডব্লিউটিসি’র আরিচা আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা গেছে, কদম ও ক্যামেলিয়া নামের ছোট দুটি ফেরি দিয়ে ফেরি সার্ভিস চালু রাখা হয়েছে। আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে মোট চারটি ফেরি চলাচল করে থাকে। এর মধ্যে কপোতি নামের একটি ফেরি ইঞ্জিন সমস্যার কারণে গত ২ জানুয়ারি থেকে আরিচা ঘাটেই নোঙর করে রাখা হয়েছ। ফরিদপুর নামের ফেরিটি গত ২৪ ডিসেম্বর এবং শাহ মখদুম নামের ফেরিটি গত ২৮ ডিসেম্বর ডকইয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বর্তমানে কদম ও ক্যামেলিয়া নামের দুটি ছোট ফেরি চলাচল করছে যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। দিন যাচ্ছে আর যানবাহন ও যাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু ফেরির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন যানবাহন শ্রমিকরা। যানবাহনের তুলনায় ফেরি না থাকায় প্রতিদিন চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রী এবং যানবাহন শ্রমিকদের। গাড়িগুলো ফেরি পার হতে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় তাদের।

ট্রাক চালক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আরিচা ঘাট এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থা না থাকায় কোন শৃঙ্খলা নেই। ফলে যে যার মতো করে গাড়ি পার্কিং করে রাখছে। বিশেষ করে ফেরি লোড-আনলোডের রাস্তায় গাড়ি এলোমেলোভাবে রাখায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে। আরিচা ঘাটে দিক নির্দেশনা দেয়ার মতো কোন লোক নেই। যে কারণে ঘাটে ফেরি আসলে এদিক-ওদিক ছুটা-ছুটি করতে হয় গাড়ি চালকরা। এতে নির্ধারিত সময়ে ফেরি পার হতে সমস্যা হচ্ছে। যেমন আমি গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফেরি পার হওয়ার জন্য আরিচা ঘাটে আসি। কিন্তু ফেরি কর্তৃপক্ষের গাফলতির কারণে শুক্রবার বেলা আড়াইটাতেও ফেরি পার হতে পারিনি।

ট্রাকচালক মো. রুস্তম আলী বলেন, আমারা পাটুরিয়া ঘাট হয়ে চলাচল করি। কিন্তু ওই ঘাটে সমস্যা হওয়ায় এ ঘাট হয়ে আসি। ফেরি স্বাল্পতার কারণে এখানেও সমস্যা। আমি গত বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় আরিচা ঘাটে আসি। কিন্তু গতকাল বেলা সাড়ে ১২টাতেও ফেরি পার হতে পারিনি। এ নৌরুটে আরও ফেরি বাড়ানোর দরকার বলে তিনি মনে করেন।

ফেরি কর্তৃপক্ষ আরিচা ঘাটের ম্যানেজার আবু আবদুল্লাহ বলেন, আরিচা-কাজিরহাট নৌরুট চালু হবার পর দিন দিন গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের সংখ্যা বেড়েছে অনেক। কিন্তুু যানবাহনের তুুলনায় ফেরি সংকট হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। পার হতে আসা গাড়িগুলোকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এ নৌরুটে আরও ফেরি বাড়ানো দরকার বলে তিনি মনে করেন। ফেরি বাড়ালে এ সমস্যা থাকবে না বলে তিনি জানান।

শনিবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২২ , ২৪ পৌষ ১৪২৮ ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

আরিচা-কাজিরহাট নৌ-রুট

ফেরি সংকট, যাত্রী ও যানবাহন শ্রমিকদের দুর্ভোগ চরমে

প্রতিনিধি, শিবালয় (মানিকগঞ্জ)

image

আরিচা ঘাটে পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ লাইন -সংবাদ

আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি সংকটের কারণে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এ নৌরুটে ফেরি পারাপার হতে আসা যাত্রী এবং যানবাহন শ্রমিকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মাত্র ছোট দুটি ফেরি দিয়ে চালু রাখা হয়েছে ফেরি সার্ভিস। আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে একটি ফেরি আপডাউনে সময় লাগছে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। এতে পারাপারে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে ছোট গাড়ির যাত্রীদের। আর পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার হতে সময় লাগছে দুই থেকে তিন দিন। ঘাটে এসে তিন দিন অপেক্ষার পর ফেরির নাগাল পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ট্রাক চালকরা। এরকম হয়রানি থেকে রেহাই পেতে ওই নৌরুটে আরও ফেরি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা। তা না হলে আর এ নৌরুট ব্যবহার করবে না বলে জানিয়েছেন ট্রাক চালকরা। গতকাল সকালে সরেজমিনে আরিচা ঘাট ঘুরে দেখা গেছে, আরিচা ৩নং ফেরি ঘাটের পল্টুন এলাকা থেকে শুরু করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের শিবালয় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত সড়কের উপর পণ্যবাহী ট্রাক দীর্ঘ সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে। এতে এ সড়কে যানবাহন চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। এছাড়া ফেরি টার্মিনাল এলাকাতেও শত শত পণ্যবাহী ট্রাক ফেরি পারের অপেক্ষায় রয়েছে। ফেরি পার হতে আসা এসব ট্রাকের মধ্যে অনেক ট্রাক গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আরিচা ঘাটে এসে পৌঁছায় ফেরি পারের জন্য। কিন্তু আজ বেলা তিনটাতেও ফেরি পার হতে পারেননি ট্রাক চালকরা।

ফেরি সংকট, যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি এবং ঘাটে বিশৃঙ্খলার জন্যই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ট্রাক চালকরা। এ নৌরুটে আরও ফেরি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ট্রাক শ্রমিকরা।

ফেরি লোড-আনলোডের রাস্তায় এবং টার্মিনালে ফেরি পার হতে আসা পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে এলোমেলোভাবে রাখা হয়েছে। এতে দীর্ঘ সময় লাগছে ফেরি লোড-আনলোডে। আরিচা ঘাট এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থা না থাকায় কোন শৃঙ্খলা নেই বললেই চলে।

বিআইডব্লিউটিসি’র আরিচা আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা গেছে, কদম ও ক্যামেলিয়া নামের ছোট দুটি ফেরি দিয়ে ফেরি সার্ভিস চালু রাখা হয়েছে। আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে মোট চারটি ফেরি চলাচল করে থাকে। এর মধ্যে কপোতি নামের একটি ফেরি ইঞ্জিন সমস্যার কারণে গত ২ জানুয়ারি থেকে আরিচা ঘাটেই নোঙর করে রাখা হয়েছ। ফরিদপুর নামের ফেরিটি গত ২৪ ডিসেম্বর এবং শাহ মখদুম নামের ফেরিটি গত ২৮ ডিসেম্বর ডকইয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বর্তমানে কদম ও ক্যামেলিয়া নামের দুটি ছোট ফেরি চলাচল করছে যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। দিন যাচ্ছে আর যানবাহন ও যাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু ফেরির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন যানবাহন শ্রমিকরা। যানবাহনের তুলনায় ফেরি না থাকায় প্রতিদিন চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রী এবং যানবাহন শ্রমিকদের। গাড়িগুলো ফেরি পার হতে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় তাদের।

ট্রাক চালক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আরিচা ঘাট এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থা না থাকায় কোন শৃঙ্খলা নেই। ফলে যে যার মতো করে গাড়ি পার্কিং করে রাখছে। বিশেষ করে ফেরি লোড-আনলোডের রাস্তায় গাড়ি এলোমেলোভাবে রাখায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে। আরিচা ঘাটে দিক নির্দেশনা দেয়ার মতো কোন লোক নেই। যে কারণে ঘাটে ফেরি আসলে এদিক-ওদিক ছুটা-ছুটি করতে হয় গাড়ি চালকরা। এতে নির্ধারিত সময়ে ফেরি পার হতে সমস্যা হচ্ছে। যেমন আমি গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফেরি পার হওয়ার জন্য আরিচা ঘাটে আসি। কিন্তু ফেরি কর্তৃপক্ষের গাফলতির কারণে শুক্রবার বেলা আড়াইটাতেও ফেরি পার হতে পারিনি।

ট্রাকচালক মো. রুস্তম আলী বলেন, আমারা পাটুরিয়া ঘাট হয়ে চলাচল করি। কিন্তু ওই ঘাটে সমস্যা হওয়ায় এ ঘাট হয়ে আসি। ফেরি স্বাল্পতার কারণে এখানেও সমস্যা। আমি গত বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় আরিচা ঘাটে আসি। কিন্তু গতকাল বেলা সাড়ে ১২টাতেও ফেরি পার হতে পারিনি। এ নৌরুটে আরও ফেরি বাড়ানোর দরকার বলে তিনি মনে করেন।

ফেরি কর্তৃপক্ষ আরিচা ঘাটের ম্যানেজার আবু আবদুল্লাহ বলেন, আরিচা-কাজিরহাট নৌরুট চালু হবার পর দিন দিন গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের সংখ্যা বেড়েছে অনেক। কিন্তুু যানবাহনের তুুলনায় ফেরি সংকট হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। পার হতে আসা গাড়িগুলোকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এ নৌরুটে আরও ফেরি বাড়ানো দরকার বলে তিনি মনে করেন। ফেরি বাড়ালে এ সমস্যা থাকবে না বলে তিনি জানান।