প্রার্থীদের নানা প্রতিশ্রুতি পর্যবেক্ষণে ভোটাররা

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ভোটের মাঠের হিসেব ততই জটিল হচ্ছে। এই নির্বাচনে ৭ মেয়র ও ১৮২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। সকলেই নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। প্রার্থীদের পর্যবেক্ষনে রেখেছেন সাধারণ ভোটাররাও। তারা বলছেন, প্রতিবাদী ও উন্নয়নমুখী জনপ্রতিনিধি তথা মেয়র ও কাউন্সিলর চান তারা।

নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ ও কদমরসুল-এই তিন পৌরসভা নিয়ে ২০১১ সালে গঠিত হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন। প্রায় ৭৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই সিটিতে রয়েছে ২৭টি ওয়ার্ড। অর্ধেকেরও বেশি ওয়ার্ড ঘুরে কথা হয়েছে সাধারণ ভোটার ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। তাদের চাওয়া ও পাওয়ার হিসেব জানিয়েছেন। তাদের মতে, নারায়ণগঞ্জের তিনটি পৌরসভা একত্র হয়ে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ব্যাপক কাজ হয়েছে। রাস্তাঘাট, ড্রেনসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে নগরীতে। তবে আগামীতে তারা প্রতিটি ওয়ার্ডে শিশু-কিশোরদের জন্য খেলার মাঠ, বিনোদনের জন্য পার্কের দাবি জানিয়েছেন তারা। নাগরিক সুবিধা আরও সহজতর করাসহ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও মাদকের মতো সামাজিক সমস্যা দূর করায়ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জোরালো ভূমিকা রাখার দাবি এলাকাবাসীর।

নগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ডের খানপুর বউবাজার এলাকায় স্থানীয় চারজনের সাথে কথা হয়। তারা মাদক, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমস্যার কথা জানান। রাস্তার পাশে ডিম-রুটি বিক্রেতা পোকন মিয়া বলেন, রাস্তাঘাট, ড্রেনের কাজ হয়েছে। কোথাও পাকা রাস্তা বাকি নেই। তবে ময়লা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। এলাকার বিভিন্ন স্থানে ডাস্টবিন স্থাপনের দাবি তার।

এই ওয়ার্ডের তরুণ ভোটার মিঠু চন্দ্র দাস। গতবার এলাকায় না থাকায় ভোট দিতে পারেননি তিনি। এইবারই প্রথম ভোট দেবেন তিনি। মিঠু বলেন, যেই নির্বাচিত হন না কেন যুবসমাজের উন্নয়নে কাজ করতে হবে। তাকেই মানুষ ভোট দেবে যিনি কাজ করেন এবং যিনি জনসম্পৃক্ত ছিলেন।

২৫, ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা ময়লা ও পানি সমস্যার কথা জানান। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের লালখার বাগ এলাকার বাসিন্দা পেশায় রাজমিস্ত্রী মো. ফায়জুল্লাহ বলেন, নিয়মিত ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট কোনো জায়গা তাদের নেই। অনেকেই বাড়ির সামনের উন্মুক্ত স্থান কিংবা খালের মধ্যে ময়লা ফেলেন।

একই এলাকার হোসনে আরা ও আনোয়ারা বলেন, তাদের এলাকায় রাস্তাঘাটের কাজ হয়েছে অনেক। তবে পার্শ্ববর্তী একটি কারখানা থেকে নির্গত ডাস্টের কারণে অনেকের শ্বাসজনিত সমস্যা হয়। এই সমস্যা সমাধানের দাবি জানান। একই সাথে পানি সরবরাহের বিষয়েও জোর দেওয়ার কথা বলেন তারা।

সমস্যা সমাধানের দাবির পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নিয়েও মত দিয়েছেন ভোটাররা। এবারের সিটি নির্বাচনে সাতজন মেয়র প্রার্থী থাকলেও প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও হাতি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে। সেলিনা হায়াৎ আইভী দুইবারের নির্বাচিত সিটি মেয়র। এর আগে একবার নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অন্যদিকে তৈমুর আলম খন্দকার ২০১১ সালে বিএনপির সমর্থনে মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে ভোটের মাত্র কয়েক ঘন্টা পূর্বে দলের সিদ্ধান্তে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। এবার প্রার্থী হওয়ায় বিএনপি তাকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, জেলা কমিটির আহ্বায়ক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।

প্রধান এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তারা বলছেন, সেলিনা হায়াৎ আইভীকে তারা দীর্ঘদিন যাবৎ দেখছেন। উন্নয়ন কাজের পাশাপাশি প্রতিবাদী চরিত্রের কারণে মাঝে আলাদা অবস্থান রয়েছে তার। তৈমুর আলমও পরিচিত মুখ। তবে নির্বাচনে তার অংশগ্রহণ নিয়ে ধোয়াশা রয়েছে সাধারণ ভোটারদের মাঝে।

নগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ডের মিজমিজি এলাকায় কথা হয় ট্রাকচালক আবুল হোসেন, দিনমজুর মামুনুর রশিদ ও ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফের সাথে। তারা তিনজনই স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে বসে নির্বাচন নিয়ে কথা বলছিলেন। তাদের মতে, এই শহরের মানুষ প্রতিবাদী কন্ঠস্বর পছন্দ করেন। সেদিক থেকে আইভীর অবস্থান ভালো। তবে তৈমুর আলম খন্দকার নির্বাচনের এক মাস পূর্বেও কোনো সাড়াশব্দ করেননি। তার অবস্থান সাধারণ ভোটারদের কাছেও পরিষ্কার না। অনেকেই আলোচনা করেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমানের কথায় প্রার্থী হয়েছেন তিনি।

আবুল হোসেন বলেন, সাধারণ মানুষ কারও কাছে টাকা চায় না, চায় শান্তি। আইভী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ। এলাকায় কাজও করছেন অনেক। তৈমুর আলমও ভালো লোক। তবে তারে তো গত ৫ বছরে কেউ এলাকায় দেখে নাই। হয়তো কোনো কাজে আসছেন আবার কাজ শেষে চলে গেছেন। সাধারণের সাথে তার যোগাযোগ দেখেননি তারা।

মামুনুর রশীদ বলেন, ‘ভোটের মাঠে আইভীই সবার মুখে। আর কেউরে তো দেখতেছি না। শুনি, তৈমুর সাবরে শামীম ওসমান দাঁড় করাইছেন। এইটা নিয়া নানান জায়গায় কথা হয়। তয় অতো হিসাব জানি না। নিজের ভোটটা ঠিকমতো দিতে পারলেই হইলো।’

নগরীর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার এনায়েতুল আমিন। পেশায় তিনি একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বলেন, আলাদা দুই রাজনৈতিক দল হিসেবে দুইজনই ভাগাভাগি করে ভোট পাবে। কিন্তু আইভীর পক্ষে নীরব ভোট কাজ করবে। এলাকার মানুষ তারে ভালো জানে। কাজ তো আর কম করে নাই। তারচেয়ে বড় কথা, সে কারোরটা ছিনিয়ে নেয় নাই। যারা রাজনৈতিক চিন্তার বাইরে গিয়ে ভোট দেন অর্থাৎ সাধারণ শ্রমিক শ্রেণির ভোটার, তাদের ভোটই নির্বাচনে ব্যবধান গড়বে।

এদিকে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী আইভী ও তৈমুর দু’জনেই। দুইবারের নির্বাচিত মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী নির্বাচিত হলে চলমান কাজগুলো শেষ করার প্রতি জোর দিচ্ছেন। একই সাথে নাগরিক সুবিধা আরও বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তিনি বলেন, কিছু বড় প্রকল্প চলমান ছিল। সেগুলো শেষ করবেন তিনি। এছাড়া নদী, পুকুর, জলাশয়, মাঠ, পার্ক নির্মাণে জোর দিবেন। অন্যদিকে তৈমুর আলম খন্দকার বলছেন, স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করবেন তিনি।

নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন আরও ৪ মেয়র প্রার্থী। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী মুফতি মাসুম বিল্লাহ প্রতিদিনই প্রচারণায় বের হচ্ছেন। তার কর্মীরাও বিভিন্ন স্থানে লিফলেট বিতরণ করেছেন। প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে নারায়ণগঞ্জে প্রচারণা চালিয়েছেন দলের প্রধান চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম এবং জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমীর সৈয়দ ফয়জুল করিম। প্রতিদিনই গণসংযোগ চালাচ্ছেন খেলাফত মজলিশ মনোনীত দেয়ালঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী এ বি এম সিরাজুল মামুন। নির্বাচনী মাঠে সরব উপস্থিতি খেলাফত আন্দোলনের জসিম উদ্দিন ও কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌসেরও। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ইসলাম বাবুর কোনো প্রচারণায় এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি।

প্রচারণার মাঠে রয়েছেন ১৮২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী। তাদের মধ্যে ১৪৮ জন সাধারণ কাউন্সিলর এবং ৩৪ জন সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর প্রার্থী। মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের পোস্টারে-পোস্টারে ছেয়ে গেছে নগরীর অলিগলি। মাইক ও সাউন্ডবক্সে গান বাজিয়ে প্রার্থীরা নিয়মিত প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রত্যেকেই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বলে জানান। তবে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হবে আগামী ১৬ জানুয়ারি। ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন ভোটারই তা নির্ধারণ করবেন।­

শনিবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২২ , ২৪ পৌষ ১৪২৮ ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

প্রার্থীদের নানা প্রতিশ্রুতি পর্যবেক্ষণে ভোটাররা

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন

সৌরভ হোসেন সিয়াম, নারায়ণগঞ্জ

image

মুন্সীগঞ্জ : কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতিবাদে মানববন্ধনে এলাকাবাসী -সংবাদ

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ভোটের মাঠের হিসেব ততই জটিল হচ্ছে। এই নির্বাচনে ৭ মেয়র ও ১৮২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। সকলেই নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। প্রার্থীদের পর্যবেক্ষনে রেখেছেন সাধারণ ভোটাররাও। তারা বলছেন, প্রতিবাদী ও উন্নয়নমুখী জনপ্রতিনিধি তথা মেয়র ও কাউন্সিলর চান তারা।

নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ ও কদমরসুল-এই তিন পৌরসভা নিয়ে ২০১১ সালে গঠিত হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন। প্রায় ৭৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই সিটিতে রয়েছে ২৭টি ওয়ার্ড। অর্ধেকেরও বেশি ওয়ার্ড ঘুরে কথা হয়েছে সাধারণ ভোটার ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। তাদের চাওয়া ও পাওয়ার হিসেব জানিয়েছেন। তাদের মতে, নারায়ণগঞ্জের তিনটি পৌরসভা একত্র হয়ে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ব্যাপক কাজ হয়েছে। রাস্তাঘাট, ড্রেনসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে নগরীতে। তবে আগামীতে তারা প্রতিটি ওয়ার্ডে শিশু-কিশোরদের জন্য খেলার মাঠ, বিনোদনের জন্য পার্কের দাবি জানিয়েছেন তারা। নাগরিক সুবিধা আরও সহজতর করাসহ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও মাদকের মতো সামাজিক সমস্যা দূর করায়ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জোরালো ভূমিকা রাখার দাবি এলাকাবাসীর।

নগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ডের খানপুর বউবাজার এলাকায় স্থানীয় চারজনের সাথে কথা হয়। তারা মাদক, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমস্যার কথা জানান। রাস্তার পাশে ডিম-রুটি বিক্রেতা পোকন মিয়া বলেন, রাস্তাঘাট, ড্রেনের কাজ হয়েছে। কোথাও পাকা রাস্তা বাকি নেই। তবে ময়লা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। এলাকার বিভিন্ন স্থানে ডাস্টবিন স্থাপনের দাবি তার।

এই ওয়ার্ডের তরুণ ভোটার মিঠু চন্দ্র দাস। গতবার এলাকায় না থাকায় ভোট দিতে পারেননি তিনি। এইবারই প্রথম ভোট দেবেন তিনি। মিঠু বলেন, যেই নির্বাচিত হন না কেন যুবসমাজের উন্নয়নে কাজ করতে হবে। তাকেই মানুষ ভোট দেবে যিনি কাজ করেন এবং যিনি জনসম্পৃক্ত ছিলেন।

২৫, ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা ময়লা ও পানি সমস্যার কথা জানান। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের লালখার বাগ এলাকার বাসিন্দা পেশায় রাজমিস্ত্রী মো. ফায়জুল্লাহ বলেন, নিয়মিত ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট কোনো জায়গা তাদের নেই। অনেকেই বাড়ির সামনের উন্মুক্ত স্থান কিংবা খালের মধ্যে ময়লা ফেলেন।

একই এলাকার হোসনে আরা ও আনোয়ারা বলেন, তাদের এলাকায় রাস্তাঘাটের কাজ হয়েছে অনেক। তবে পার্শ্ববর্তী একটি কারখানা থেকে নির্গত ডাস্টের কারণে অনেকের শ্বাসজনিত সমস্যা হয়। এই সমস্যা সমাধানের দাবি জানান। একই সাথে পানি সরবরাহের বিষয়েও জোর দেওয়ার কথা বলেন তারা।

সমস্যা সমাধানের দাবির পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নিয়েও মত দিয়েছেন ভোটাররা। এবারের সিটি নির্বাচনে সাতজন মেয়র প্রার্থী থাকলেও প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও হাতি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে। সেলিনা হায়াৎ আইভী দুইবারের নির্বাচিত সিটি মেয়র। এর আগে একবার নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অন্যদিকে তৈমুর আলম খন্দকার ২০১১ সালে বিএনপির সমর্থনে মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে ভোটের মাত্র কয়েক ঘন্টা পূর্বে দলের সিদ্ধান্তে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। এবার প্রার্থী হওয়ায় বিএনপি তাকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, জেলা কমিটির আহ্বায়ক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।

প্রধান এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তারা বলছেন, সেলিনা হায়াৎ আইভীকে তারা দীর্ঘদিন যাবৎ দেখছেন। উন্নয়ন কাজের পাশাপাশি প্রতিবাদী চরিত্রের কারণে মাঝে আলাদা অবস্থান রয়েছে তার। তৈমুর আলমও পরিচিত মুখ। তবে নির্বাচনে তার অংশগ্রহণ নিয়ে ধোয়াশা রয়েছে সাধারণ ভোটারদের মাঝে।

নগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ডের মিজমিজি এলাকায় কথা হয় ট্রাকচালক আবুল হোসেন, দিনমজুর মামুনুর রশিদ ও ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফের সাথে। তারা তিনজনই স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে বসে নির্বাচন নিয়ে কথা বলছিলেন। তাদের মতে, এই শহরের মানুষ প্রতিবাদী কন্ঠস্বর পছন্দ করেন। সেদিক থেকে আইভীর অবস্থান ভালো। তবে তৈমুর আলম খন্দকার নির্বাচনের এক মাস পূর্বেও কোনো সাড়াশব্দ করেননি। তার অবস্থান সাধারণ ভোটারদের কাছেও পরিষ্কার না। অনেকেই আলোচনা করেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমানের কথায় প্রার্থী হয়েছেন তিনি।

আবুল হোসেন বলেন, সাধারণ মানুষ কারও কাছে টাকা চায় না, চায় শান্তি। আইভী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ। এলাকায় কাজও করছেন অনেক। তৈমুর আলমও ভালো লোক। তবে তারে তো গত ৫ বছরে কেউ এলাকায় দেখে নাই। হয়তো কোনো কাজে আসছেন আবার কাজ শেষে চলে গেছেন। সাধারণের সাথে তার যোগাযোগ দেখেননি তারা।

মামুনুর রশীদ বলেন, ‘ভোটের মাঠে আইভীই সবার মুখে। আর কেউরে তো দেখতেছি না। শুনি, তৈমুর সাবরে শামীম ওসমান দাঁড় করাইছেন। এইটা নিয়া নানান জায়গায় কথা হয়। তয় অতো হিসাব জানি না। নিজের ভোটটা ঠিকমতো দিতে পারলেই হইলো।’

নগরীর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার এনায়েতুল আমিন। পেশায় তিনি একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বলেন, আলাদা দুই রাজনৈতিক দল হিসেবে দুইজনই ভাগাভাগি করে ভোট পাবে। কিন্তু আইভীর পক্ষে নীরব ভোট কাজ করবে। এলাকার মানুষ তারে ভালো জানে। কাজ তো আর কম করে নাই। তারচেয়ে বড় কথা, সে কারোরটা ছিনিয়ে নেয় নাই। যারা রাজনৈতিক চিন্তার বাইরে গিয়ে ভোট দেন অর্থাৎ সাধারণ শ্রমিক শ্রেণির ভোটার, তাদের ভোটই নির্বাচনে ব্যবধান গড়বে।

এদিকে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী আইভী ও তৈমুর দু’জনেই। দুইবারের নির্বাচিত মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী নির্বাচিত হলে চলমান কাজগুলো শেষ করার প্রতি জোর দিচ্ছেন। একই সাথে নাগরিক সুবিধা আরও বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তিনি বলেন, কিছু বড় প্রকল্প চলমান ছিল। সেগুলো শেষ করবেন তিনি। এছাড়া নদী, পুকুর, জলাশয়, মাঠ, পার্ক নির্মাণে জোর দিবেন। অন্যদিকে তৈমুর আলম খন্দকার বলছেন, স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করবেন তিনি।

নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন আরও ৪ মেয়র প্রার্থী। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী মুফতি মাসুম বিল্লাহ প্রতিদিনই প্রচারণায় বের হচ্ছেন। তার কর্মীরাও বিভিন্ন স্থানে লিফলেট বিতরণ করেছেন। প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে নারায়ণগঞ্জে প্রচারণা চালিয়েছেন দলের প্রধান চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম এবং জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমীর সৈয়দ ফয়জুল করিম। প্রতিদিনই গণসংযোগ চালাচ্ছেন খেলাফত মজলিশ মনোনীত দেয়ালঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী এ বি এম সিরাজুল মামুন। নির্বাচনী মাঠে সরব উপস্থিতি খেলাফত আন্দোলনের জসিম উদ্দিন ও কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌসেরও। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ইসলাম বাবুর কোনো প্রচারণায় এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি।

প্রচারণার মাঠে রয়েছেন ১৮২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী। তাদের মধ্যে ১৪৮ জন সাধারণ কাউন্সিলর এবং ৩৪ জন সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর প্রার্থী। মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের পোস্টারে-পোস্টারে ছেয়ে গেছে নগরীর অলিগলি। মাইক ও সাউন্ডবক্সে গান বাজিয়ে প্রার্থীরা নিয়মিত প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রত্যেকেই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বলে জানান। তবে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হবে আগামী ১৬ জানুয়ারি। ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন ভোটারই তা নির্ধারণ করবেন।­