মাদকাসক্তি নির্মূলে তামাক নিয়ন্ত্রণে জোর দিতে হবে

অরূপরতন চৌধুরী

বিশ্ব্যবপী মাদকাসক্তি একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশেও মাদকাসক্তি পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেজনক। বর্তমানে সামাজিক অবক্ষয় ও ছোট-বড় প্রায় সব অপরাধের পেছনে অন্যতম প্রধান অনুঘটকের কাজ করছে মাদকাসক্তি। দেশে প্রায় ৭৫ লাখের বেশি মানুষ মাদকাসক্ত। মাদকাসক্তের মধ্যে প্রায় ৯০% তরুণ-কিশোর। মাদকাসক্তির সঙ্গে ধূমপানের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ- ধূমপান হচ্ছে মাদকের রাজ্যে প্রবেশের মূল দরজা। গবেষণায় দেখা গেছে, মাদকাসক্তদের মধ্যে শতকরা ৯৮ ভাগই ধূমপায়ী এবং তাদের মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ বিভিন্ন অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত। যারা মাদকদ্রব্য সেবন করে তারা প্রথমে ধূমপানে অভ্যস্ত হয়, তারপর মাদকদ্রব্য সেবন শুরু করে থাকে। পরবর্তীকালে তারা গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল, সিসা, হেরোইন, কোকেনসহ বিভিন্ন মরণ নেশায় আসক্ত হয়।

ধূমপান যে মাদক সেবনের প্রবেশ পথ, তা পৃথিবীর বিভিন্ন গবেষণায় বিষয়টি উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ১২ বছর তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর প্রায় ১৮ হাজার মানুষের মধ্যে পরিচালিত জাতীয় একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, যারা ধূমপান করে বা করেছে তাদের হিরোইন সেবনের প্রবণতা ১৬ গুণ বেশি, গাঁজা ও কোকেন সেবনের প্রবণতা ৭ গুণ বেশি (National Household Survey on Drug Abus-1994। গবেষণার তথ্যে দেখা যায়, ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের ধূমপানের পাশাপাশি কোকেনে আসক্ত হওয়ার প্রবণতা ৪৪ গুণ বেশি! যা এ গবেষণার তথ্যের সবচেয়ে ভয়াবহ দিক।

যুক্তরাজ্যে Addictive Behavior Centre এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ধূমপায়ীদের মাদক গ্রহণের পরিমাণ অধূমপায়ীদের তুলনায় ২২ গুণ বেশি। গবেষণাটি প্রাথমিক ও হাই স্কুলের ৪০০০ শিক্ষার্থীর ওপর পরিচালিত হয়। মূলত কৌতুহলবশত: ধূমপানের মাধ্যমে কিশোর-তরুণেরা নেশার জগতে প্রবেশ করে। এ কৌতুহল থেকে একটা অংশ ক্রমশ অন্যান্য মাদকের নেশায় ধাবিত হয়। এটা সবার জন্য অশনিসংকেত। কারণ ধূমপানের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম মাদকের দিকে ধাবিত হয়ে পরিবার ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

বন্ধুদের প্ররোচনায় অনেকে মাদক ও ধূমপান সেবন শুরু করে এবং ক্রমান্বয়ে এর একটি বিরাট অংশ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। ২০১৯ সালে প্রথম আলোর এক জরিপে অংশ নিয়ে ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ তরুণ বলেছেন, তারা ধূমপান করেন। এদের মধ্যে গাঁজা, ইয়াবা সেবন, মদপান ও অন্যান্য মাদক গ্রহণের হার শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশের মধ্যে। বন্ধুদের প্ররোচনায় পড়ে সবচেয়ে বেশি মাদক গ্রহণ এবং ধূমপান করেন বলে জরিপে উঠে এসেছে। ২৯ দশমিক ২ শতাংশ তরুণ বন্ধুদের প্ররোচনায় মাদক নিয়েছেন বলে গবেষণা ফলাফলে উল্লেখ করা হয়। মূলত, উঠতি তরুণেরা বন্ধুদের মাধ্যমে বেশি প্ররোচিত হয়েছেন। হতাশায় মাদক নিয়েছেন বা ধূমপান করেছেন ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ তরুণ।

বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা পরিচালিত “Global School Based Student Health Survey-2014” এর তথ্য মতে, বাংলাদেশে উঠতি বয়সী (১৩-১৫ বছর বয়সী) ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তামাক ব্যবহার করে ৯ দশমিক ২ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র ২০২১ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্বে ১৩-১৫ বছর বয়সী ৩ কোটি ৮০ লাখ কিশোর-কিশোরী তামাকজাত পণ্যে আসক্ত। এরাই এক সময় মরণ নেশা মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে। উদ্বেগজনক এই পরিস্থিতির প্রধান কারণ- তামাক পণ্যের বিজ্ঞাপন, প্রচারণা, সহজলভ্য ও সহজপ্রাপ্যতা। পাশাপাশি নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও মাদক দ্রব্যের অনিয়ন্ত্রিত সরবরাহ এর অন্যতম কারণ।

ধূমপান একদিকে মাদকাসক্তির দিকে ধাবিত করে আরেকদিকে তামাক এক প্রাণঘাতী ও সর্বগ্রাসী মারাত্মক ক্ষতিকর পণ্য। তামাকের চাষ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ (চুল্লীতে তামাক পাতা শুকানো, কারখানায় তামাক পণ্য উৎপাদন) এবং সেবন (ধূমপান ও ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন)- সব প্রক্রিয়াতেই জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতির ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ‘তামাকের ধোঁয়ায় ৭০০০-এর বেশি ক্ষতিকর রাসায়নিক রয়েছে যার মধ্যে ৭০টি ক্যানসার সৃষ্টি করে’ (US Surgeon General Annual Report-2010)।

তামাক ব্যবহার বিশ্বে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর অন্যতম কারণ। বাংলাদেশেও তামাক ব্যবহারের হার যথেষ্ট উদ্বেজনক! Global Adult Tobacco Survey-2017 অনুসারে, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে ৩৫.৩% (৩ কোটি ৭৮ লক্ষ) তামাকজাত দ্রব্য সেবন করেন। Tobacco Atlas-2018 তথ্যমতে, বাংলাদেশে তামাকজনিত কারণে বিভিন্ন মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বছরে প্রায় ১ লক্ষ ৬২ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে যা দেশে মোট মৃত্যুর ১৩.৬%। ধূমপানের ফলে প্রাণঘাতী অসংক্রামক রোগের (ক্যানসার, স্ট্রোক, হার্ট এ্যাটাক, এজমা, সিওপিডি, ডায়বেটিস) ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। পরোক্ষ ধূমপানের প্রভাবেও এসব রোগ দেখা দিতে পারে। দেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশ ঘটে অসংক্রামক রোগে যার অন্যতম কারণ তামাক, মাদকদ্রব্য সেবন।

দেশে ‘মাদক’ নিষিদ্ধ হলেও ‘তামাকজাত দ্রব্য’ এখনও অবৈধ বা নিষিদ্ধ নয়। সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে কারণ, নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি এক শ্রেণীর মানুষের আগ্রহ বেশি থাকে। ফলে এসব নেশাজাত দ্রব্যের চোরাচালান, অবৈধ ব্যবসা বেড়ে যায়। অবৈধ ব্যবসা করে হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়ছে কতিপয় অসাধু চক্র। অবৈধ মাদকদ্রব্য আমদানিতে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। এতে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

দেশীয় ও বিদেশি বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো আমাদের তরুণদের বিপথগামী হওয়ার পেছনে অন্যতম মূল হোতা। এ সব কোম্পানি বেপরোয়া গতিতে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালাচ্ছে। ফলে দেশে তামাকজনিক রোগ-বালাই ও মৃত্যুহার বাড়ছে। ২০১৩ সালে সংশোধিত ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন’ অনুসারে, তামাক পণ্যের বিজ্ঞাপন, প্রচারণা ও পৃষ্ঠপোষকতা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় আইন অমান্য করে অধিকাংশ তামাক কোম্পানি প্রকাশ্যে এবং সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কর্মসূচির আড়ালে তামাক পণ্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা চালিয়ে আমাদের শিশু-কিশোর ও তরুণ সমাজকে টার্গেট করছে, দীর্ঘমেয়াদে তাদের পণ্যের ভোক্তা তৈরি করার জন্য, যা এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের যথেষ্ট প্রয়োগ না থাকায় সুযোগ নিচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল চেষ্টা করছে তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করার জন্য কিন্তু, কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনের পথে তা যথেষ্ট নয়। বরং, দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটির কিছু ধারাতে সংশোধনীর মাধ্যমে অধিক শক্তিশালী করতে হবে। তামাক কোম্পানি থেকে সরকারের শেয়ার ও সরকারের প্রতিনিধি প্রত্যাহার করতে হবে। যাতে তামাক কোম্পানিগুলোর লাগাম টেনে ধরা যায়। এক্ষেত্রে সর্বাগ্রে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলটি অধিকতর শক্তিশালী করাও বর্তমান সময়ের দাবি।

বিড়ি-সিগারেট ও সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্য মারাত্মক ক্ষতিকর। করোনাভাইরাসের ঝুঁকি কমাতে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ জরুরি। বিশেষত: ধূমপায়ী বা তামাক সেবনকারীদের করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকি ১৪ গুণ বেশি! বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যেই জানিয়েছে, সিগারেট সেবনের হাতের আঙুলগুলো ঠোঁটের সংস্পর্শে আসে এবং এর ফলে হাতে (সিগারেটের ফিল্টারে) লেগে থাকা ভাইরাস মুখে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাছাড়া ধূমপায়ীদের ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে যায় ও ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি- যা তাদের কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। ধূমপান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্রমেই হ্রাস পায় বিধায়, সহজেই ক্ষতিকর ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এমনকি অকাল মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ধূমপান ছাড়াও তামাকের আরও দুটি মারাত্মক ক্ষতিকর দিক রয়েছে যার মধ্যে একটি হলো পরোক্ষ ধূমপান বা Secondhand Smoking। যিনি ধূমপান করেন না তিনি ধূমপায়ীর পাশে বসে থেকেও ধূমপানের ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। ফুসফুসের ক্যানসার, হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, বছরে ১২ লক্ষাধিক অধূমপায়ী পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, যার অধিকাংশই শিশু ও নারী।

আরেকটি দিক হলোÑধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহার। আমাদের দেশে উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠীর মধ্যে জর্দা, গুল, সাদাপাতা, খৈনী ব্যবহারের প্রবণতা বেশি। এর ফলে মুখের ক্যানসার হচ্ছে অনেক বেশি। ধূমপানের কারণে যে ক্ষতি হয় তা বড় করে দেখা হয় কিন্তু, তামাকের আরও যে বহুবিধ ক্ষয়-ক্ষতি আছে তা বড় করে দেখা হচ্ছে না। পরোক্ষ ধূমপান ও ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারে বিশ্বে বছরে ৮০ লক্ষাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করে (WHO-2019)।

বাংলাদেশ থেকে মাদক সম্পূর্ণ নির্মূল করতে হলে তামাক নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘সাউথ এশিয়ান স্পিকার সামিট’ এ ২০৪০ সালের মধ্যে “তামাকমুক্ত বাংলাদেশ” গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে মাদক নির্মূলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত তাদের চলমান কার্যক্রমের সঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল’র সঙ্গে ২০১৩ সালে সংশোধিত “ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন” বাস্তবায়নে সমন্বিতভাবে কাজ করা প্রয়োজন। এর সঙ্গে যে নীতিসমূহ প্রণয়ন চলমান রয়েছে (জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, রোডম্যাপ, তামাক চাষ নীতিমালা ইত্যাদি) অনতিবিলম্বে সেগুলো চূড়ান্ত করা অত্যন্ত জরুরি। নিঃসন্দেহে দীর্ঘ মেয়াদে এর সুফল পাওয়া যাবে। একই সঙ্গে বিদ্যমান আইন ও নীতিগুলো কীভাবে কার্যকর বাস্তবায়ন করা যায় সেদিকে নজর দেয়া প্রয়োজন। এখানে শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নয় সব মন্ত্রণালয়, দপ্তর, বিভাগের সমন্বয় জরুরি।

বর্তমান বাংলাদেশের বড় অংশের জনগোষ্ঠী কিশোর-তরুণ, যে কারণে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীকে বলা হয় ইয়ুথ ডিভিডেন্ট। ইউএনডিপি-এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে ৪৯% মানুষের বয়স ২৪ বা এর নিচে। অর্থাৎ- ৪৯% জনগোষ্ঠী বয়সে তরুণ। দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১০ কোটি ৫৬ লাখ। মোট জনসংখ্যার ৬৬% কর্মক্ষম।

তরুণ জনগোষ্ঠীকে মাদক ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার হতে বিরত রাখা অত্যন্ত জরুরি। সুনাগরিক হিসাবে গড়ে উঠতে ও স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য তরুণদের ধূমপান, মাদকসহ সব নেশা থেকে দূরে থাকা জরুরি। এ কিশোর-তরুণদের নেশা থেকে দূরে রাখতে পারলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ে তোলার কাজ ত্বরান্বিত হবে। সুতরাং, আমাদের আগামী প্রজন্মকে রক্ষার জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সক্রিয় হতে হবে। শিশু-কিশোর-তরুণেরা, যারা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ তারা ধূমপানের মাধ্যমে নেশার জগতে প্রবেশ করে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াকÑএটা কারো কাম্য হতে পারে না।

[লেখক : সদস্য, জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (স্বরাষ্ট্র্র মন্ত্রণালয়)]

শনিবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২২ , ২৪ পৌষ ১৪২৮ ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

মাদকাসক্তি নির্মূলে তামাক নিয়ন্ত্রণে জোর দিতে হবে

অরূপরতন চৌধুরী

বিশ্ব্যবপী মাদকাসক্তি একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশেও মাদকাসক্তি পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেজনক। বর্তমানে সামাজিক অবক্ষয় ও ছোট-বড় প্রায় সব অপরাধের পেছনে অন্যতম প্রধান অনুঘটকের কাজ করছে মাদকাসক্তি। দেশে প্রায় ৭৫ লাখের বেশি মানুষ মাদকাসক্ত। মাদকাসক্তের মধ্যে প্রায় ৯০% তরুণ-কিশোর। মাদকাসক্তির সঙ্গে ধূমপানের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ- ধূমপান হচ্ছে মাদকের রাজ্যে প্রবেশের মূল দরজা। গবেষণায় দেখা গেছে, মাদকাসক্তদের মধ্যে শতকরা ৯৮ ভাগই ধূমপায়ী এবং তাদের মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ বিভিন্ন অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত। যারা মাদকদ্রব্য সেবন করে তারা প্রথমে ধূমপানে অভ্যস্ত হয়, তারপর মাদকদ্রব্য সেবন শুরু করে থাকে। পরবর্তীকালে তারা গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল, সিসা, হেরোইন, কোকেনসহ বিভিন্ন মরণ নেশায় আসক্ত হয়।

ধূমপান যে মাদক সেবনের প্রবেশ পথ, তা পৃথিবীর বিভিন্ন গবেষণায় বিষয়টি উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ১২ বছর তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর প্রায় ১৮ হাজার মানুষের মধ্যে পরিচালিত জাতীয় একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, যারা ধূমপান করে বা করেছে তাদের হিরোইন সেবনের প্রবণতা ১৬ গুণ বেশি, গাঁজা ও কোকেন সেবনের প্রবণতা ৭ গুণ বেশি (National Household Survey on Drug Abus-1994। গবেষণার তথ্যে দেখা যায়, ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের ধূমপানের পাশাপাশি কোকেনে আসক্ত হওয়ার প্রবণতা ৪৪ গুণ বেশি! যা এ গবেষণার তথ্যের সবচেয়ে ভয়াবহ দিক।

যুক্তরাজ্যে Addictive Behavior Centre এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ধূমপায়ীদের মাদক গ্রহণের পরিমাণ অধূমপায়ীদের তুলনায় ২২ গুণ বেশি। গবেষণাটি প্রাথমিক ও হাই স্কুলের ৪০০০ শিক্ষার্থীর ওপর পরিচালিত হয়। মূলত কৌতুহলবশত: ধূমপানের মাধ্যমে কিশোর-তরুণেরা নেশার জগতে প্রবেশ করে। এ কৌতুহল থেকে একটা অংশ ক্রমশ অন্যান্য মাদকের নেশায় ধাবিত হয়। এটা সবার জন্য অশনিসংকেত। কারণ ধূমপানের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম মাদকের দিকে ধাবিত হয়ে পরিবার ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

বন্ধুদের প্ররোচনায় অনেকে মাদক ও ধূমপান সেবন শুরু করে এবং ক্রমান্বয়ে এর একটি বিরাট অংশ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। ২০১৯ সালে প্রথম আলোর এক জরিপে অংশ নিয়ে ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ তরুণ বলেছেন, তারা ধূমপান করেন। এদের মধ্যে গাঁজা, ইয়াবা সেবন, মদপান ও অন্যান্য মাদক গ্রহণের হার শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশের মধ্যে। বন্ধুদের প্ররোচনায় পড়ে সবচেয়ে বেশি মাদক গ্রহণ এবং ধূমপান করেন বলে জরিপে উঠে এসেছে। ২৯ দশমিক ২ শতাংশ তরুণ বন্ধুদের প্ররোচনায় মাদক নিয়েছেন বলে গবেষণা ফলাফলে উল্লেখ করা হয়। মূলত, উঠতি তরুণেরা বন্ধুদের মাধ্যমে বেশি প্ররোচিত হয়েছেন। হতাশায় মাদক নিয়েছেন বা ধূমপান করেছেন ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ তরুণ।

বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা পরিচালিত “Global School Based Student Health Survey-2014” এর তথ্য মতে, বাংলাদেশে উঠতি বয়সী (১৩-১৫ বছর বয়সী) ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তামাক ব্যবহার করে ৯ দশমিক ২ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র ২০২১ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্বে ১৩-১৫ বছর বয়সী ৩ কোটি ৮০ লাখ কিশোর-কিশোরী তামাকজাত পণ্যে আসক্ত। এরাই এক সময় মরণ নেশা মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে। উদ্বেগজনক এই পরিস্থিতির প্রধান কারণ- তামাক পণ্যের বিজ্ঞাপন, প্রচারণা, সহজলভ্য ও সহজপ্রাপ্যতা। পাশাপাশি নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও মাদক দ্রব্যের অনিয়ন্ত্রিত সরবরাহ এর অন্যতম কারণ।

ধূমপান একদিকে মাদকাসক্তির দিকে ধাবিত করে আরেকদিকে তামাক এক প্রাণঘাতী ও সর্বগ্রাসী মারাত্মক ক্ষতিকর পণ্য। তামাকের চাষ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ (চুল্লীতে তামাক পাতা শুকানো, কারখানায় তামাক পণ্য উৎপাদন) এবং সেবন (ধূমপান ও ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন)- সব প্রক্রিয়াতেই জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতির ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ‘তামাকের ধোঁয়ায় ৭০০০-এর বেশি ক্ষতিকর রাসায়নিক রয়েছে যার মধ্যে ৭০টি ক্যানসার সৃষ্টি করে’ (US Surgeon General Annual Report-2010)।

তামাক ব্যবহার বিশ্বে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর অন্যতম কারণ। বাংলাদেশেও তামাক ব্যবহারের হার যথেষ্ট উদ্বেজনক! Global Adult Tobacco Survey-2017 অনুসারে, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে ৩৫.৩% (৩ কোটি ৭৮ লক্ষ) তামাকজাত দ্রব্য সেবন করেন। Tobacco Atlas-2018 তথ্যমতে, বাংলাদেশে তামাকজনিত কারণে বিভিন্ন মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বছরে প্রায় ১ লক্ষ ৬২ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে যা দেশে মোট মৃত্যুর ১৩.৬%। ধূমপানের ফলে প্রাণঘাতী অসংক্রামক রোগের (ক্যানসার, স্ট্রোক, হার্ট এ্যাটাক, এজমা, সিওপিডি, ডায়বেটিস) ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। পরোক্ষ ধূমপানের প্রভাবেও এসব রোগ দেখা দিতে পারে। দেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশ ঘটে অসংক্রামক রোগে যার অন্যতম কারণ তামাক, মাদকদ্রব্য সেবন।

দেশে ‘মাদক’ নিষিদ্ধ হলেও ‘তামাকজাত দ্রব্য’ এখনও অবৈধ বা নিষিদ্ধ নয়। সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে কারণ, নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি এক শ্রেণীর মানুষের আগ্রহ বেশি থাকে। ফলে এসব নেশাজাত দ্রব্যের চোরাচালান, অবৈধ ব্যবসা বেড়ে যায়। অবৈধ ব্যবসা করে হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়ছে কতিপয় অসাধু চক্র। অবৈধ মাদকদ্রব্য আমদানিতে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। এতে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

দেশীয় ও বিদেশি বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো আমাদের তরুণদের বিপথগামী হওয়ার পেছনে অন্যতম মূল হোতা। এ সব কোম্পানি বেপরোয়া গতিতে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালাচ্ছে। ফলে দেশে তামাকজনিক রোগ-বালাই ও মৃত্যুহার বাড়ছে। ২০১৩ সালে সংশোধিত ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন’ অনুসারে, তামাক পণ্যের বিজ্ঞাপন, প্রচারণা ও পৃষ্ঠপোষকতা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় আইন অমান্য করে অধিকাংশ তামাক কোম্পানি প্রকাশ্যে এবং সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কর্মসূচির আড়ালে তামাক পণ্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা চালিয়ে আমাদের শিশু-কিশোর ও তরুণ সমাজকে টার্গেট করছে, দীর্ঘমেয়াদে তাদের পণ্যের ভোক্তা তৈরি করার জন্য, যা এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের যথেষ্ট প্রয়োগ না থাকায় সুযোগ নিচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল চেষ্টা করছে তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করার জন্য কিন্তু, কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনের পথে তা যথেষ্ট নয়। বরং, দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটির কিছু ধারাতে সংশোধনীর মাধ্যমে অধিক শক্তিশালী করতে হবে। তামাক কোম্পানি থেকে সরকারের শেয়ার ও সরকারের প্রতিনিধি প্রত্যাহার করতে হবে। যাতে তামাক কোম্পানিগুলোর লাগাম টেনে ধরা যায়। এক্ষেত্রে সর্বাগ্রে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলটি অধিকতর শক্তিশালী করাও বর্তমান সময়ের দাবি।

বিড়ি-সিগারেট ও সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্য মারাত্মক ক্ষতিকর। করোনাভাইরাসের ঝুঁকি কমাতে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ জরুরি। বিশেষত: ধূমপায়ী বা তামাক সেবনকারীদের করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকি ১৪ গুণ বেশি! বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যেই জানিয়েছে, সিগারেট সেবনের হাতের আঙুলগুলো ঠোঁটের সংস্পর্শে আসে এবং এর ফলে হাতে (সিগারেটের ফিল্টারে) লেগে থাকা ভাইরাস মুখে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাছাড়া ধূমপায়ীদের ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে যায় ও ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি- যা তাদের কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। ধূমপান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্রমেই হ্রাস পায় বিধায়, সহজেই ক্ষতিকর ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এমনকি অকাল মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ধূমপান ছাড়াও তামাকের আরও দুটি মারাত্মক ক্ষতিকর দিক রয়েছে যার মধ্যে একটি হলো পরোক্ষ ধূমপান বা Secondhand Smoking। যিনি ধূমপান করেন না তিনি ধূমপায়ীর পাশে বসে থেকেও ধূমপানের ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। ফুসফুসের ক্যানসার, হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, বছরে ১২ লক্ষাধিক অধূমপায়ী পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, যার অধিকাংশই শিশু ও নারী।

আরেকটি দিক হলোÑধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহার। আমাদের দেশে উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠীর মধ্যে জর্দা, গুল, সাদাপাতা, খৈনী ব্যবহারের প্রবণতা বেশি। এর ফলে মুখের ক্যানসার হচ্ছে অনেক বেশি। ধূমপানের কারণে যে ক্ষতি হয় তা বড় করে দেখা হয় কিন্তু, তামাকের আরও যে বহুবিধ ক্ষয়-ক্ষতি আছে তা বড় করে দেখা হচ্ছে না। পরোক্ষ ধূমপান ও ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারে বিশ্বে বছরে ৮০ লক্ষাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করে (WHO-2019)।

বাংলাদেশ থেকে মাদক সম্পূর্ণ নির্মূল করতে হলে তামাক নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘সাউথ এশিয়ান স্পিকার সামিট’ এ ২০৪০ সালের মধ্যে “তামাকমুক্ত বাংলাদেশ” গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে মাদক নির্মূলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত তাদের চলমান কার্যক্রমের সঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল’র সঙ্গে ২০১৩ সালে সংশোধিত “ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন” বাস্তবায়নে সমন্বিতভাবে কাজ করা প্রয়োজন। এর সঙ্গে যে নীতিসমূহ প্রণয়ন চলমান রয়েছে (জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, রোডম্যাপ, তামাক চাষ নীতিমালা ইত্যাদি) অনতিবিলম্বে সেগুলো চূড়ান্ত করা অত্যন্ত জরুরি। নিঃসন্দেহে দীর্ঘ মেয়াদে এর সুফল পাওয়া যাবে। একই সঙ্গে বিদ্যমান আইন ও নীতিগুলো কীভাবে কার্যকর বাস্তবায়ন করা যায় সেদিকে নজর দেয়া প্রয়োজন। এখানে শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নয় সব মন্ত্রণালয়, দপ্তর, বিভাগের সমন্বয় জরুরি।

বর্তমান বাংলাদেশের বড় অংশের জনগোষ্ঠী কিশোর-তরুণ, যে কারণে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীকে বলা হয় ইয়ুথ ডিভিডেন্ট। ইউএনডিপি-এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে ৪৯% মানুষের বয়স ২৪ বা এর নিচে। অর্থাৎ- ৪৯% জনগোষ্ঠী বয়সে তরুণ। দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১০ কোটি ৫৬ লাখ। মোট জনসংখ্যার ৬৬% কর্মক্ষম।

তরুণ জনগোষ্ঠীকে মাদক ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার হতে বিরত রাখা অত্যন্ত জরুরি। সুনাগরিক হিসাবে গড়ে উঠতে ও স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য তরুণদের ধূমপান, মাদকসহ সব নেশা থেকে দূরে থাকা জরুরি। এ কিশোর-তরুণদের নেশা থেকে দূরে রাখতে পারলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ে তোলার কাজ ত্বরান্বিত হবে। সুতরাং, আমাদের আগামী প্রজন্মকে রক্ষার জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সক্রিয় হতে হবে। শিশু-কিশোর-তরুণেরা, যারা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ তারা ধূমপানের মাধ্যমে নেশার জগতে প্রবেশ করে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াকÑএটা কারো কাম্য হতে পারে না।

[লেখক : সদস্য, জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (স্বরাষ্ট্র্র মন্ত্রণালয়)]