ঢাকা-দশমিনা নৌপথে ঝুঁকিপূর্ণ যান চলাচল

পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় নৌ-পথে চলাচলকারী যাত্রীবাহী যানগুলো ঝুঁকি নিয়ে নদী পথে চলাচল করছে। ঢাকা-দশমিনা-রাঙ্গাবালী,ঢাকা-দশমিনা-পায়রা বন্দর,বরিশাল-দশমিনা-চরকলমী ও দশমিনা-ভোলা রুটের লঞ্চগুলোতে নজরকাড়া আলোকসজ্জাসহ বাহারী ডেকোরেশনে যাত্রীদের আকর্ষণ বৃদ্ধি করা হলেও দুর্ঘটনা রোধে তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। জীবন রক্ষাকারী আগুন নির্বাপন করার কোন ব্যবস্থা নেই। নদী পথে চলাচলকারী যাত্রীবাহী এই সব লঞ্চে ভিআইপি, প্রথম শ্রেণীর কেবিন ও সাধারণ ডেকে বাহারি আলোকসজ্জা, টেলিভিশন ইত্যাদি থাকলেও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, জীবন রক্ষাকারী জ্যাকেট, লাইফবয়াসহ অতি প্রয়োজনীয় জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জামাদির ঘাটতি রয়েছে।

উপজেলার হাজীরহাট নদী বন্দরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লঞ্চে অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে যেসব সামগ্রী থাকা দরকার তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগন্য। কেবিন জোনগুলোতে দুই একটি যায়গায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থাকলে সাধারণ ডেকের যাত্রীদের জন্য তা পর্যাপ্ত নয়। লঞ্চে আগুন নেভানোর জন্য একটি আদিকালের হস্তচালিত পাম্প রয়েছে। আধুনিক যুগের ফায়ার হাইড্রেন ব্যবস্থা না থাকায় অগ্নিঝুঁকি নিয়েই লঞ্চগুলো নদী পথে চলাচল করছে। এছাড়া লঞ্চগুলোতে আগুন নেভানোর জন্য প্রশিক্ষিত ফায়ার ফাইটার নেই। লঞ্চে ভিআইপি ও প্রথম শ্রেণীর কেবিনের ৫টির জন্য একটি জীবনরক্ষাকারী বয়া রয়েছে। সাধারণ ডেকের অবস্থা একই। লঞ্চে যাত্রীর সংখ্যা বাড়লেও বয়া ও লাইফ জ্যাকেটের সংখ্যা বাড়ানো হয় না।

ঢাকা-দশমিনা-রাঙ্গাবালী ও ঢাকা-দশমিনা-পায়রা বন্দর রুটে চলাচলকারী লঞ্চগুলোর ইঞ্জিন রুমের পাশে রান্না করা, খাবার দোকান, পেট্রোল-অকটেনের ড্রাম, বিভিন্ন ধরনের পণ্য সামগ্রী রাখা এবং এর পাশ দিয়ে অবাধ যাত্রীদের অবাধ চলাচল অগ্নি দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। নৌপথে রাত্রীকালীন চলাচলকারী লঞ্চগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সামান্য। যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য ইতোপূর্বে প্রতিটি লঞ্চে ১০ থেকে ১২ জন সশস্ত্র আনসার বাহিনী থাকলেও বর্তমানে তা নেই। লঞ্চ মালিকরা ব্যয় কমানোর জন্য লাঠি দিয়ে একজন নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকে। এটি লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়।

এই রুটে চলাচলকারী এমভি প্রিন্স অব রাসেল-৩ এর সুপারভাইজার মো.নজরুল ইসলাম সংবাদ প্রতিনিধিকে জানান, লঞ্চে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রয়েছে। তবে ইঞ্জিনের পাশে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার ও মোটরসাইকেলের ব্যাপারে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। একই রুটের আরেকটি লঞ্চ এমভি চাদনী-১ এর সুপারভাইজার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, সরকারি নিয়মনীতি অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে ইঞ্জিন রুম ও এর আশপাশের নিরাপত্তার বিষয়ে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

দশমিনা হাজীরহাট নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ পরিদর্শক আনিসুর রহমান জানায়, আমরা নিয়মিত লঞ্চে টহলসহ নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বদা অবহিত করে থাকি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন’র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল বাশার জানায়, বিভিন্ন ঘাট থেকে ছাড়া লঞ্চগুলোর ব্যাপারে সর্তকতামূলক দৃষ্টি রাখার জন্য সদর দফতর থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দশমিনা উপজেলায় বিআইডব্লিউটিএ’র কোন কর্মকর্তা নেই। এ উপজেলার প্রত্যেকটি নৌবন্দর পটুয়াখালীর আওতাধীন। পটুয়াখালীর বিআইডব্লিউটিএ’র পোর্ট অফিসার মো. মহিউদ্দিন জানান, দশমিনা তাদের আওতায় থাকলেও প্রত্যহ আসা সম্ভব হচ্ছে না। ঢাকা সদরঘাট থেকে লঞ্চগুলো নিয়মিত পরিদর্শন হচ্ছে। তবে স্থানীয় প্রশাসন নদী বন্দর পরিদর্শন করতে পারবে।

দশমিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবদুল কাইয়ুম সংবাদ প্রতিনিধিকে জানান, অতি শীঘ্রই লঞ্চগুলো পরিদর্শন করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রবিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২২ , ২৫ পৌষ ১৪২৮ ৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

ঢাকা-দশমিনা নৌপথে ঝুঁকিপূর্ণ যান চলাচল

আহাম্মদ ইব্রাহিম অরবিল, দশমিনা (পটুয়াখালী)

image

দশমিনা (পটুয়াখালী) : যাত্রীবাহী নৌযানগুলো বাহিরে দৃষ্টিনন্দন হলেও ভেতরে নেই জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামাদি -সংবাদ

পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় নৌ-পথে চলাচলকারী যাত্রীবাহী যানগুলো ঝুঁকি নিয়ে নদী পথে চলাচল করছে। ঢাকা-দশমিনা-রাঙ্গাবালী,ঢাকা-দশমিনা-পায়রা বন্দর,বরিশাল-দশমিনা-চরকলমী ও দশমিনা-ভোলা রুটের লঞ্চগুলোতে নজরকাড়া আলোকসজ্জাসহ বাহারী ডেকোরেশনে যাত্রীদের আকর্ষণ বৃদ্ধি করা হলেও দুর্ঘটনা রোধে তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। জীবন রক্ষাকারী আগুন নির্বাপন করার কোন ব্যবস্থা নেই। নদী পথে চলাচলকারী যাত্রীবাহী এই সব লঞ্চে ভিআইপি, প্রথম শ্রেণীর কেবিন ও সাধারণ ডেকে বাহারি আলোকসজ্জা, টেলিভিশন ইত্যাদি থাকলেও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, জীবন রক্ষাকারী জ্যাকেট, লাইফবয়াসহ অতি প্রয়োজনীয় জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জামাদির ঘাটতি রয়েছে।

উপজেলার হাজীরহাট নদী বন্দরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লঞ্চে অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে যেসব সামগ্রী থাকা দরকার তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগন্য। কেবিন জোনগুলোতে দুই একটি যায়গায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থাকলে সাধারণ ডেকের যাত্রীদের জন্য তা পর্যাপ্ত নয়। লঞ্চে আগুন নেভানোর জন্য একটি আদিকালের হস্তচালিত পাম্প রয়েছে। আধুনিক যুগের ফায়ার হাইড্রেন ব্যবস্থা না থাকায় অগ্নিঝুঁকি নিয়েই লঞ্চগুলো নদী পথে চলাচল করছে। এছাড়া লঞ্চগুলোতে আগুন নেভানোর জন্য প্রশিক্ষিত ফায়ার ফাইটার নেই। লঞ্চে ভিআইপি ও প্রথম শ্রেণীর কেবিনের ৫টির জন্য একটি জীবনরক্ষাকারী বয়া রয়েছে। সাধারণ ডেকের অবস্থা একই। লঞ্চে যাত্রীর সংখ্যা বাড়লেও বয়া ও লাইফ জ্যাকেটের সংখ্যা বাড়ানো হয় না।

ঢাকা-দশমিনা-রাঙ্গাবালী ও ঢাকা-দশমিনা-পায়রা বন্দর রুটে চলাচলকারী লঞ্চগুলোর ইঞ্জিন রুমের পাশে রান্না করা, খাবার দোকান, পেট্রোল-অকটেনের ড্রাম, বিভিন্ন ধরনের পণ্য সামগ্রী রাখা এবং এর পাশ দিয়ে অবাধ যাত্রীদের অবাধ চলাচল অগ্নি দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। নৌপথে রাত্রীকালীন চলাচলকারী লঞ্চগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সামান্য। যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য ইতোপূর্বে প্রতিটি লঞ্চে ১০ থেকে ১২ জন সশস্ত্র আনসার বাহিনী থাকলেও বর্তমানে তা নেই। লঞ্চ মালিকরা ব্যয় কমানোর জন্য লাঠি দিয়ে একজন নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকে। এটি লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়।

এই রুটে চলাচলকারী এমভি প্রিন্স অব রাসেল-৩ এর সুপারভাইজার মো.নজরুল ইসলাম সংবাদ প্রতিনিধিকে জানান, লঞ্চে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রয়েছে। তবে ইঞ্জিনের পাশে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার ও মোটরসাইকেলের ব্যাপারে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। একই রুটের আরেকটি লঞ্চ এমভি চাদনী-১ এর সুপারভাইজার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, সরকারি নিয়মনীতি অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে ইঞ্জিন রুম ও এর আশপাশের নিরাপত্তার বিষয়ে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

দশমিনা হাজীরহাট নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ পরিদর্শক আনিসুর রহমান জানায়, আমরা নিয়মিত লঞ্চে টহলসহ নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বদা অবহিত করে থাকি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন’র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল বাশার জানায়, বিভিন্ন ঘাট থেকে ছাড়া লঞ্চগুলোর ব্যাপারে সর্তকতামূলক দৃষ্টি রাখার জন্য সদর দফতর থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দশমিনা উপজেলায় বিআইডব্লিউটিএ’র কোন কর্মকর্তা নেই। এ উপজেলার প্রত্যেকটি নৌবন্দর পটুয়াখালীর আওতাধীন। পটুয়াখালীর বিআইডব্লিউটিএ’র পোর্ট অফিসার মো. মহিউদ্দিন জানান, দশমিনা তাদের আওতায় থাকলেও প্রত্যহ আসা সম্ভব হচ্ছে না। ঢাকা সদরঘাট থেকে লঞ্চগুলো নিয়মিত পরিদর্শন হচ্ছে। তবে স্থানীয় প্রশাসন নদী বন্দর পরিদর্শন করতে পারবে।

দশমিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবদুল কাইয়ুম সংবাদ প্রতিনিধিকে জানান, অতি শীঘ্রই লঞ্চগুলো পরিদর্শন করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।