তৈমুরের শক্তির নেপথ্যে ওসমান পরিবার!

প্রকাশ্যে নেই শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান তবে সরব অনুসারীরা

এতদিন যা ছিল নির্বাচনী মাঠের আলোচনায় এবার তা প্রকাশ্যে বললেন নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি গতকাল অভিযোগ করলেন বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকারকে ‘নির্বাচনে নামিয়েছে শামীম ওসমান’।

গতকাল সকালে সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারণার সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ভাই সেলিম ওসমানও তৈমুর আলমের সঙ্গে আছেন। সেলিম ওসমান জাতীয় পার্টির নেতা এবং সংসদ সদস্য।

বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়েছে গত শুক্রবার তৈমুর আলমের এক প্রচারণার মধ্য দিয়ে। ওই প্রচারণায় জাতীয় পার্টির চার ইউপি চেয়ারম্যানকে দেখা গেছে। তারা সবাই সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত।

গতকালই নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। অভিযোগ নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অংশ না নেয়া।

তবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কেন্দ্রীয় সংসদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায়’ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হাসনাত রহমান কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন। তারা নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। দল থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীকে মনোনয়ন দিলেও তারা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় নামেননি। আইভীর নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগের সভাপতি-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কমিটি। কিন্তু তারা ছাত্রলীগের মহানগর কমিটির কাউকে প্রচার-প্রচারণার কাজে পায়নি।

তৈমুর আলমের ভাই মাকসুদুল আলম খোরশেদের কাউন্সিলর পদে বিজয়ের পদ সহজ করে দিতে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন নাসিকের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রবিউল হোসেন। তিনি শামীম ওসমানের অনুসারী বলেই পরিচিত। তবে এই কারণে তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

আর গত শুক্রবার নারায়ণগঞ্জে এক কর্মিসভায় নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের এক সংসদ সদস্যকে ইঙ্গিত করে দলের সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘মনে রাখবেন নৌকা মার্কা শেখ হাসিনা দিছে দেইখা আপনি এমপি হইছিলেন। বুঝাতে পারছি? আকার ইঙ্গিতে বুঝাতে পারছি কি কইতে চাই? শেখ হাসিনা প্রার্র্থী দিয়েছেন আর শেখ হাসিনার সেই প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিরোধিতা করছেন। আগামীতে নৌকা পাবেন না। আমরা জীবিত থাকতে আগামী নির্বাচনে আর নৌকা তাকে পেতে দিবো না।’

জাহাঙ্গীর কবির নানক সরাসরি নাম উল্লেখ না করলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের অবস্থান নিয়ে শুরু থেকেই ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।

অভিযোগ রয়েছে, শামীম ওসমান আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হলেও তিনি ও তার অনুসারীরা নৌকা ডোবাতে ব্যস্ত। অনুসারী নেতারা বিভিন্ন ওয়ার্ডে গোপনে আইভীবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছেন। অর্থায়নও করছেন তৈমুরের পক্ষে।

বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তৈমুরের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই এই আলোচনা মানুষের মুখে মুখে। সরাসরি নির্বাচনে মাঠে না থাকলেও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এ কে এম সেলিম ওসমানের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকারের পক্ষে।

একটু পেছনে গেলে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরোধ অনেক পুরোনো। নির্বাচন আসলে সেই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। ২০১১ সালে শামীম ওসমান নিজেই সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন। ওইবার দলীয় সমর্থনও পেয়েছিলেন তিনি। তবে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিলেন নাগরিক কমিটিরি ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেয়া সেলিনা হায়াৎ আইভীর।

এরপর ২০১৬ সালে প্রার্থী না হলেও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আইভীর বিরুদ্ধে অবস্থান ছিল শামীম ওসমানের। যদিও পরে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বিরোধী অবস্থান থেকে সরে আসেন শামীম ওসমান। তারপরও অভিযোগ রয়েছে, ওই নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে অর্থায়ন করেছিলেন শামীম ওসমান। তার অনুসারীরও গোপনে কাজ করেছে নৌকার বিরুদ্ধে।

আইভী-শামীম বিরোধ

২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি হকার নিয়ে সংঘাতের পর শামীম ওসমান ও আইভীর মধ্যে সম্পর্কের শীতলতা আরও বাড়ে। ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ নাগরিক সমাজের ব্যানারে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন শামীম ওসমানের অনুসারীরা। ওই সংবাদ সম্মেলনে আইভী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামের ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলেন তারা।

তারা ওইদিন একটি স্মারকলিপিও দেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়ার কাছে। গত এক বছর যাবত মন্দিরের জমি দখল, মসজিদ ভেঙে দেয়াসহ নানা অভিযোগে বেশ কয়েকটি প্রতিবাদ, বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়েছে আইভীর বিরুদ্ধে। এইসব কর্মসূচির নেতৃত্ব দিয়েছেন শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আওয়ামী লীগ ও হেফাজতে ইসলামের নেতারা। তারা আইভীকে এইবার সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না দেয়ার জন্য ‘একাট্টা’ হয়ে আওয়াজ তুলেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত গত ৩ ডিসেম্বর দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইভীকেই নৌকার মনোনয়ন দেন।

আইভী শিবিরে অস্বস্তি

নৌকার জন্য মনোনীত হওয়ার পর সেলিনা হায়াৎ আইভীর সমর্থকরা যেরকম স্বস্তিতে ছিলেন তা এখন আর নেই। কেননা পুরোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে লড়তে হবে তাকে। দৃশ্যমান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকার হলেও নেপথ্যে কাজ করছেন শামীম ওসমান। আইভী নৌকা পেলেও শামীম ওসমানের অনুসারী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা তার পাশে নেই। কেন্দ্রীয় নেতারা একাধিকবার ডাকলেও আইভীর পক্ষে অনুষ্ঠিত কোন সভা-সমাবেশে উপস্থিত হননি শামীম ওসমান।

এই বিষয় নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বলছেন, শামীম ওসমানের অবস্থান স্পষ্ট। বরাবরের মতোই আইভীর বিরুদ্ধে তার অবস্থান। এইবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে শামীম ওসমান এই নির্বাচনে বড় কোন ব্যবধান গড়তে পারবেন বলে মনে করেন না আইভী সমর্থকরা।

অভিযোগ উড়ছে কালো টাকা

রাজনীতি সংশ্লিষ্ট অনেকের অভিযোগ, একজন প্রার্থীকে বিজয়ী করতে বহু টাকা খরচের পরিকল্পনা রয়েছে নেপথ্যের শক্তির। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে অর্থ বিলি হয়েছে। টাকার লেনদেনের ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রণ করছেন নারায়ণগঞ্জের এক ব্যবসায়ী নেতা। এই নেতা প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ। ওই ব্যবসায়ী নেতা বিদেশে অবস্থান করা তার ভাইয়ের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করছেন। তৈমুর আলমের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হয় ওই ব্যবসায়ী নেতার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতার অভিযোগ, আইভীকে হারাতে মরিয়া ওসমান পরিবার। বিভিন্ন স্তরে টাকা ছড়াচ্ছেন তারা। এই বিষয়টি দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কান পর্যন্ত পৌঁছানো হবে। উনিই যা ব্যবস্থা নেয়ার নেবেন। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী নিজে ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন সূত্রে নারায়ণগঞ্জের সব খোঁজখবর রাখছেন। সময় হলে সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আইভীর বিরুদ্ধে শামীম ওসমান অনুসারী কাউন্সিলররাও

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে দশেরও অধিক কাউন্সিলর রয়েছেন শামীম ওসমানের অনুসারী। তারা এবারও প্রার্থী হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, নেতার নির্দেশে তারাও আইভীবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এমনকি তৈমুর আলমের ভাই মাকসুদুল আলম খোরশেদের কাউন্সিলর পদে বিজয়ের পদ সহজ করে দিতে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন নাসিকের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রবিউল হোসেন। এই কারণে তাকে দল থেকে অব্যাহতিও দেয়া হয়েছে।

গত শুক্রবার জাতীয় পার্টির সাংসদ সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ঠ চার ইউপি চেয়ারম্যান তৈমুর আলমের সঙ্গে সরাসরি প্রচারণায় নেমেছেন। চার ইউপি সদস্য হলেনÑ বন্দর ইউপি চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহমেদ, কলাগাছিয়া ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, মুছাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন ও ধামগড় ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন। তাদের মধ্যে কামাল ছাড়া বাকি তিনজনই সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। তাদের জেতাতে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান ছিল জাপার সাংসদ সেলিম ওসমানের। তিনি কলাগাছিয়া ইউপিতে নৌকার প্রার্থীকে কটাক্ষ করে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন। তিনি এক অনুষ্ঠানে ‘গাঞ্জার নৌকা তালগাছে ওঠানোর’ কথা বলে বেশ বিতর্কিতও হয়েছিলেন।

১৬ জুন বোমা হামলায় তৈমুর

২০০১ সালের ১৬ জুন শহরের চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে মারা যান ২০ জন। আহত হন সাংসদ শামীম ওসমানসহ অনেকেই। হামলার পরদিন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় দুটি মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে একটি বিস্ফোরক আইনে ও অন্যটি হত্যা মামলা। ওই মামলার ২৭ আসামির মধ্যে প্রধান আসামি ছিলেন তৈমুর আলম খন্দকার। তবে ২০২০ সালে এই ঘটনায় আদালতে সাক্ষ্য দেন সাংসদ শামীম ওসমান। ওইদিন তিনি আদালতে বলেন, বোমা হামলার ঘটনায় তৈমুর আলম জড়িত ছিলেন এমনটা তিনি মনে করেন না। সাক্ষ্য দেয়ার পর সাংবাদিকদেরও তিনি একই কথা বলেন।

যা বললেন আইভী

মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ‘আমি আগে বলিনি তা আজকে স্পষ্টভাবে বলতে চাইছি, তৈমুর আলম খন্দকার বিএনপির প্রার্থী না, জনগণের প্রার্থী না। সে গডফাদার শামীম ওসমান, সেলিম ওসমানের প্রার্থী। শামীম ওসমান তাকে প্রার্থী করেছে। সে জনতার প্রার্থী না, বিএনপির প্রার্থী না। যদি সে বিএনপির প্রার্থী হতো তাহলে সে ধানের শীষে দাঁড়াতো’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি উনার সঙ্গে নির্বাচন করেছি ২০১১ সালে। ২০১৬তে উনি সাখাওয়াতকে সাপোর্ট দিয়েছে আমাকে দেয়নি। উনি নৌকার বিরুদ্ধে ধানের শীষে সিল মেরেছে। উনি ১৯৯৬তে নাজমা রহমানের নৌকা কেড়ে নিয়েছে। ভোট বাক্স ছিনতাই করেছে তার ভাই লাঙলের পক্ষে। কিসের আওয়ামী লীগ করে! কেমন আওয়ামী লীগ করে! যে লাঙলের হয়ে তার ভাইয়ের জন্য নৌকার ব্যালট বক্স ছিনতাই করে। উনি সুবিধাবাদী।’

দলে থেকে নৌকার বিরুদ্ধে গেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা : নানক

আওয়ামী লীগের মধ্যে বা দলের ভেতরে থেকে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবনে একটি চাইনিজ রেস্তোরাঁয় স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

নানক বলেন, ‘দলের ভেতরে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব বা বিভক্তি নেই। এই সভায় জেলা ও মহানগরের সব নেতারা আছেন। এখানে ব্যক্তি কোন বিষয় নয়।’ তিনি বলেন, ‘যার নৌকা নিয়ে জয়ী হয়েছেন, তারা নৌকার পক্ষে কাজ না করলে নিজের সঙ্গে বেইমানি করা হবে।’

জাতীয় পার্টি প্রসঙ্গে নানক বলেন, ‘আমরা তাদেরও সমর্থন আশা করি। নৌকার সমর্থনে লাঙল প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর আসনে পাস করেছেন জতীয় পার্টির প্রার্থী। অথচ তারা আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন।’

সভাপতিম-লীর আরেক সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ‘রাজনীতিতে কেউ শৃঙ্খলার ঊর্ধ্বে নয়। কেউ অপরিহার্য নয়। দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নেবে আমরা তাদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি। প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছাড়া আর কোন কিছুই করার থাকবে না। জাতীয় পার্টি তৈমুরের পক্ষ নিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টি সিটি নির্বাচনে একজনকে সমর্থন দিয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে আমরা জাতীয় পার্টির সঙ্গে কথা বলেছি। আজ-কালের মধ্যে তারা গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করবেন।’

রবিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২২ , ২৫ পৌষ ১৪২৮ ৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

তৈমুরের শক্তির নেপথ্যে ওসমান পরিবার!

প্রকাশ্যে নেই শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান তবে সরব অনুসারীরা

সৌরভ হোসেন সিয়াম, নারায়ণগঞ্জ

image

গতকাল নারায়ণগঞ্জে নাসিক নির্বাচন প্রচারণায় আ’লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার -সংবাদ

এতদিন যা ছিল নির্বাচনী মাঠের আলোচনায় এবার তা প্রকাশ্যে বললেন নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি গতকাল অভিযোগ করলেন বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকারকে ‘নির্বাচনে নামিয়েছে শামীম ওসমান’।

গতকাল সকালে সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারণার সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ভাই সেলিম ওসমানও তৈমুর আলমের সঙ্গে আছেন। সেলিম ওসমান জাতীয় পার্টির নেতা এবং সংসদ সদস্য।

বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়েছে গত শুক্রবার তৈমুর আলমের এক প্রচারণার মধ্য দিয়ে। ওই প্রচারণায় জাতীয় পার্টির চার ইউপি চেয়ারম্যানকে দেখা গেছে। তারা সবাই সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত।

গতকালই নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। অভিযোগ নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অংশ না নেয়া।

তবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কেন্দ্রীয় সংসদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায়’ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হাসনাত রহমান কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন। তারা নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। দল থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীকে মনোনয়ন দিলেও তারা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় নামেননি। আইভীর নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগের সভাপতি-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কমিটি। কিন্তু তারা ছাত্রলীগের মহানগর কমিটির কাউকে প্রচার-প্রচারণার কাজে পায়নি।

তৈমুর আলমের ভাই মাকসুদুল আলম খোরশেদের কাউন্সিলর পদে বিজয়ের পদ সহজ করে দিতে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন নাসিকের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রবিউল হোসেন। তিনি শামীম ওসমানের অনুসারী বলেই পরিচিত। তবে এই কারণে তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

আর গত শুক্রবার নারায়ণগঞ্জে এক কর্মিসভায় নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের এক সংসদ সদস্যকে ইঙ্গিত করে দলের সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘মনে রাখবেন নৌকা মার্কা শেখ হাসিনা দিছে দেইখা আপনি এমপি হইছিলেন। বুঝাতে পারছি? আকার ইঙ্গিতে বুঝাতে পারছি কি কইতে চাই? শেখ হাসিনা প্রার্র্থী দিয়েছেন আর শেখ হাসিনার সেই প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিরোধিতা করছেন। আগামীতে নৌকা পাবেন না। আমরা জীবিত থাকতে আগামী নির্বাচনে আর নৌকা তাকে পেতে দিবো না।’

জাহাঙ্গীর কবির নানক সরাসরি নাম উল্লেখ না করলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের অবস্থান নিয়ে শুরু থেকেই ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।

অভিযোগ রয়েছে, শামীম ওসমান আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হলেও তিনি ও তার অনুসারীরা নৌকা ডোবাতে ব্যস্ত। অনুসারী নেতারা বিভিন্ন ওয়ার্ডে গোপনে আইভীবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছেন। অর্থায়নও করছেন তৈমুরের পক্ষে।

বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তৈমুরের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই এই আলোচনা মানুষের মুখে মুখে। সরাসরি নির্বাচনে মাঠে না থাকলেও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এ কে এম সেলিম ওসমানের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকারের পক্ষে।

একটু পেছনে গেলে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরোধ অনেক পুরোনো। নির্বাচন আসলে সেই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। ২০১১ সালে শামীম ওসমান নিজেই সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন। ওইবার দলীয় সমর্থনও পেয়েছিলেন তিনি। তবে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিলেন নাগরিক কমিটিরি ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেয়া সেলিনা হায়াৎ আইভীর।

এরপর ২০১৬ সালে প্রার্থী না হলেও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আইভীর বিরুদ্ধে অবস্থান ছিল শামীম ওসমানের। যদিও পরে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বিরোধী অবস্থান থেকে সরে আসেন শামীম ওসমান। তারপরও অভিযোগ রয়েছে, ওই নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে অর্থায়ন করেছিলেন শামীম ওসমান। তার অনুসারীরও গোপনে কাজ করেছে নৌকার বিরুদ্ধে।

আইভী-শামীম বিরোধ

২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি হকার নিয়ে সংঘাতের পর শামীম ওসমান ও আইভীর মধ্যে সম্পর্কের শীতলতা আরও বাড়ে। ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ নাগরিক সমাজের ব্যানারে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন শামীম ওসমানের অনুসারীরা। ওই সংবাদ সম্মেলনে আইভী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামের ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলেন তারা।

তারা ওইদিন একটি স্মারকলিপিও দেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়ার কাছে। গত এক বছর যাবত মন্দিরের জমি দখল, মসজিদ ভেঙে দেয়াসহ নানা অভিযোগে বেশ কয়েকটি প্রতিবাদ, বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়েছে আইভীর বিরুদ্ধে। এইসব কর্মসূচির নেতৃত্ব দিয়েছেন শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আওয়ামী লীগ ও হেফাজতে ইসলামের নেতারা। তারা আইভীকে এইবার সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না দেয়ার জন্য ‘একাট্টা’ হয়ে আওয়াজ তুলেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত গত ৩ ডিসেম্বর দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইভীকেই নৌকার মনোনয়ন দেন।

আইভী শিবিরে অস্বস্তি

নৌকার জন্য মনোনীত হওয়ার পর সেলিনা হায়াৎ আইভীর সমর্থকরা যেরকম স্বস্তিতে ছিলেন তা এখন আর নেই। কেননা পুরোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে লড়তে হবে তাকে। দৃশ্যমান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকার হলেও নেপথ্যে কাজ করছেন শামীম ওসমান। আইভী নৌকা পেলেও শামীম ওসমানের অনুসারী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা তার পাশে নেই। কেন্দ্রীয় নেতারা একাধিকবার ডাকলেও আইভীর পক্ষে অনুষ্ঠিত কোন সভা-সমাবেশে উপস্থিত হননি শামীম ওসমান।

এই বিষয় নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বলছেন, শামীম ওসমানের অবস্থান স্পষ্ট। বরাবরের মতোই আইভীর বিরুদ্ধে তার অবস্থান। এইবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে শামীম ওসমান এই নির্বাচনে বড় কোন ব্যবধান গড়তে পারবেন বলে মনে করেন না আইভী সমর্থকরা।

অভিযোগ উড়ছে কালো টাকা

রাজনীতি সংশ্লিষ্ট অনেকের অভিযোগ, একজন প্রার্থীকে বিজয়ী করতে বহু টাকা খরচের পরিকল্পনা রয়েছে নেপথ্যের শক্তির। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে অর্থ বিলি হয়েছে। টাকার লেনদেনের ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রণ করছেন নারায়ণগঞ্জের এক ব্যবসায়ী নেতা। এই নেতা প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ। ওই ব্যবসায়ী নেতা বিদেশে অবস্থান করা তার ভাইয়ের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করছেন। তৈমুর আলমের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হয় ওই ব্যবসায়ী নেতার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতার অভিযোগ, আইভীকে হারাতে মরিয়া ওসমান পরিবার। বিভিন্ন স্তরে টাকা ছড়াচ্ছেন তারা। এই বিষয়টি দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কান পর্যন্ত পৌঁছানো হবে। উনিই যা ব্যবস্থা নেয়ার নেবেন। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী নিজে ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন সূত্রে নারায়ণগঞ্জের সব খোঁজখবর রাখছেন। সময় হলে সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আইভীর বিরুদ্ধে শামীম ওসমান অনুসারী কাউন্সিলররাও

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে দশেরও অধিক কাউন্সিলর রয়েছেন শামীম ওসমানের অনুসারী। তারা এবারও প্রার্থী হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, নেতার নির্দেশে তারাও আইভীবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এমনকি তৈমুর আলমের ভাই মাকসুদুল আলম খোরশেদের কাউন্সিলর পদে বিজয়ের পদ সহজ করে দিতে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন নাসিকের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রবিউল হোসেন। এই কারণে তাকে দল থেকে অব্যাহতিও দেয়া হয়েছে।

গত শুক্রবার জাতীয় পার্টির সাংসদ সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ঠ চার ইউপি চেয়ারম্যান তৈমুর আলমের সঙ্গে সরাসরি প্রচারণায় নেমেছেন। চার ইউপি সদস্য হলেনÑ বন্দর ইউপি চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহমেদ, কলাগাছিয়া ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, মুছাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন ও ধামগড় ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন। তাদের মধ্যে কামাল ছাড়া বাকি তিনজনই সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। তাদের জেতাতে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান ছিল জাপার সাংসদ সেলিম ওসমানের। তিনি কলাগাছিয়া ইউপিতে নৌকার প্রার্থীকে কটাক্ষ করে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন। তিনি এক অনুষ্ঠানে ‘গাঞ্জার নৌকা তালগাছে ওঠানোর’ কথা বলে বেশ বিতর্কিতও হয়েছিলেন।

১৬ জুন বোমা হামলায় তৈমুর

২০০১ সালের ১৬ জুন শহরের চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে মারা যান ২০ জন। আহত হন সাংসদ শামীম ওসমানসহ অনেকেই। হামলার পরদিন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় দুটি মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে একটি বিস্ফোরক আইনে ও অন্যটি হত্যা মামলা। ওই মামলার ২৭ আসামির মধ্যে প্রধান আসামি ছিলেন তৈমুর আলম খন্দকার। তবে ২০২০ সালে এই ঘটনায় আদালতে সাক্ষ্য দেন সাংসদ শামীম ওসমান। ওইদিন তিনি আদালতে বলেন, বোমা হামলার ঘটনায় তৈমুর আলম জড়িত ছিলেন এমনটা তিনি মনে করেন না। সাক্ষ্য দেয়ার পর সাংবাদিকদেরও তিনি একই কথা বলেন।

যা বললেন আইভী

মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ‘আমি আগে বলিনি তা আজকে স্পষ্টভাবে বলতে চাইছি, তৈমুর আলম খন্দকার বিএনপির প্রার্থী না, জনগণের প্রার্থী না। সে গডফাদার শামীম ওসমান, সেলিম ওসমানের প্রার্থী। শামীম ওসমান তাকে প্রার্থী করেছে। সে জনতার প্রার্থী না, বিএনপির প্রার্থী না। যদি সে বিএনপির প্রার্থী হতো তাহলে সে ধানের শীষে দাঁড়াতো’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি উনার সঙ্গে নির্বাচন করেছি ২০১১ সালে। ২০১৬তে উনি সাখাওয়াতকে সাপোর্ট দিয়েছে আমাকে দেয়নি। উনি নৌকার বিরুদ্ধে ধানের শীষে সিল মেরেছে। উনি ১৯৯৬তে নাজমা রহমানের নৌকা কেড়ে নিয়েছে। ভোট বাক্স ছিনতাই করেছে তার ভাই লাঙলের পক্ষে। কিসের আওয়ামী লীগ করে! কেমন আওয়ামী লীগ করে! যে লাঙলের হয়ে তার ভাইয়ের জন্য নৌকার ব্যালট বক্স ছিনতাই করে। উনি সুবিধাবাদী।’

দলে থেকে নৌকার বিরুদ্ধে গেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা : নানক

আওয়ামী লীগের মধ্যে বা দলের ভেতরে থেকে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবনে একটি চাইনিজ রেস্তোরাঁয় স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

নানক বলেন, ‘দলের ভেতরে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব বা বিভক্তি নেই। এই সভায় জেলা ও মহানগরের সব নেতারা আছেন। এখানে ব্যক্তি কোন বিষয় নয়।’ তিনি বলেন, ‘যার নৌকা নিয়ে জয়ী হয়েছেন, তারা নৌকার পক্ষে কাজ না করলে নিজের সঙ্গে বেইমানি করা হবে।’

জাতীয় পার্টি প্রসঙ্গে নানক বলেন, ‘আমরা তাদেরও সমর্থন আশা করি। নৌকার সমর্থনে লাঙল প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর আসনে পাস করেছেন জতীয় পার্টির প্রার্থী। অথচ তারা আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন।’

সভাপতিম-লীর আরেক সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ‘রাজনীতিতে কেউ শৃঙ্খলার ঊর্ধ্বে নয়। কেউ অপরিহার্য নয়। দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নেবে আমরা তাদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি। প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছাড়া আর কোন কিছুই করার থাকবে না। জাতীয় পার্টি তৈমুরের পক্ষ নিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টি সিটি নির্বাচনে একজনকে সমর্থন দিয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে আমরা জাতীয় পার্টির সঙ্গে কথা বলেছি। আজ-কালের মধ্যে তারা গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করবেন।’