টাকার জন্য নল খুলে নিয়ে শিশুকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া শ্যামলীর আমার বাংলাদেশ হসপিটালটি এতদিন ধরে নানা অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চললেও কারও নজরে পড়েনি। একজন চিকিৎসক ও নার্স দিয়ে পুরো হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের নামকস্তে চিকিৎসা দিয়ে হাতিয়ে নেয়া হতো অতিরিক্ত অর্থ। ‘জিম্মি রোগী ও স্বজনরাও’ এর কোন প্রতিবাদ করতে পারতেন না।
এদিকে চিকিৎসা না দিয়ে দুই সন্তানসহ মাকে বের করে দেয়ার পর এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হসপিটাল পরিচালক গোলাম সরওয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নজর এড়িয়ে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে কীভাবে একজন চিকিৎসক ও একজন নার্সকে দিয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম চলতে তা রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এক বছর ধরে হাসপাতালটিতে নানা অব্যবস্থাপনা, অতিরিক্ত অর্থ আদায়, চিকিৎসক না থাকাসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নজরদারি না থাকাও নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তদন্তকারী সংস্থা। তদন্তকারীদের প্রশ্ন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে হাসপাতালের মালিক চিকিৎসা সেবার নামে রোগীদের নিঃস্ব করতো।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান সরকারি নীতিমালা বিধি-বিধান তোয়াক্কা করে চলছিল আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল নামের বেসরকারি হাসপাতালটি। হাসপাতালের মালিক গোলাম সারওয়ারের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল এই হাসপাতালে। চিকিৎসা দেয়ার পর কাউকে কোন বিল-ভাউচার দেয়া হতো না। মালিক গোলাম সারওয়ার যে টাকা ধার্য করতো তাই দিতে বাধ্য হতো রোগীর স্বজনরা। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ওই শিশুর মাকে যে দালাল নিয়ে গিয়েছিল আমরা সেই দালালকে খুঁজছি। তাকে ধরতে পারে ওই হাসপাতালের আরও নানান অপকর্ম বের হবে। আমাদের ধারণা ওই দালাল হাসপাতালের মালিকানার সঙ্গে যুক্ত অথবা মোটা অঙ্কের বকশিসের বিনিময়ে রোগী ভাগিয়ে সেখানে পাঠাতেন। র্যাব বলছে, গোলাম সরওয়ার হাসপাতালের ব্যবসা শুরু করেছিল ২০০০ সালে। একেক সময় একেক নাম দিয়ে সে ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাসপাতাল খুলে এভাবে প্রতারণা করে আসছিল। নানা অভিযোগ ওঠার পর সবগুলো বন্ধ করে দিয়ে সর্বশেষ আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল নামে আবার নতুন হাসপাতাল দিয়েছে।
গত ৩১ ডিসেম্বর ঠা-ায় আক্রান্ত হওয়া ছয় মাসের দুই যমজ শিশু আবদুল্লাহ ও আহমেদকে নিয়ে সাভারের বাটপাড়া রেডিও কলোনি থেকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন আয়েশা আক্তার নামের এক মা। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার জন্য আইসিউ’র প্রয়োজন হলে সরকারি হাসপাতালে আইসিউ সিট খালি না থাকায় ভর্তি করাতে পারেনি। পরে এক দালাল (অ্যাম্বুলেন্সচালক) ওই নারীকে তার দুই শিশু সন্তানকে কম টাকায় চিকিৎসার ব্যবস্থার কথা জানিয়ে আমার বাংলাদেশ হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে ভর্তির ছয় দিন চিকিৎসা দিয়ে ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা দাবি করেন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম সারওয়ার। বিল কমিয়ে ধরার অনুরোধ করে কয়েক দফায় ৫০ হাজার টাকা পরিশোধের পরও টাকার জন্য তিনি চাপ দিতে থাকেন। গত বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) বিকেলে টাকা দিতে পারবে না জেনে তাদের বের করে দেন। পরে শাহিন নামে একজনের মাধ্যমে ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন এবং আয়েশা বেগমের কাছ থেকে বাকি টাকা আদায় করার জন্য বলে দেন।
রবিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২২ , ২৫ পৌষ ১৪২৮ ৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
টাকার জন্য নল খুলে নিয়ে শিশুকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া শ্যামলীর আমার বাংলাদেশ হসপিটালটি এতদিন ধরে নানা অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চললেও কারও নজরে পড়েনি। একজন চিকিৎসক ও নার্স দিয়ে পুরো হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের নামকস্তে চিকিৎসা দিয়ে হাতিয়ে নেয়া হতো অতিরিক্ত অর্থ। ‘জিম্মি রোগী ও স্বজনরাও’ এর কোন প্রতিবাদ করতে পারতেন না।
এদিকে চিকিৎসা না দিয়ে দুই সন্তানসহ মাকে বের করে দেয়ার পর এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হসপিটাল পরিচালক গোলাম সরওয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নজর এড়িয়ে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে কীভাবে একজন চিকিৎসক ও একজন নার্সকে দিয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম চলতে তা রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এক বছর ধরে হাসপাতালটিতে নানা অব্যবস্থাপনা, অতিরিক্ত অর্থ আদায়, চিকিৎসক না থাকাসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নজরদারি না থাকাও নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তদন্তকারী সংস্থা। তদন্তকারীদের প্রশ্ন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে হাসপাতালের মালিক চিকিৎসা সেবার নামে রোগীদের নিঃস্ব করতো।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান সরকারি নীতিমালা বিধি-বিধান তোয়াক্কা করে চলছিল আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল নামের বেসরকারি হাসপাতালটি। হাসপাতালের মালিক গোলাম সারওয়ারের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল এই হাসপাতালে। চিকিৎসা দেয়ার পর কাউকে কোন বিল-ভাউচার দেয়া হতো না। মালিক গোলাম সারওয়ার যে টাকা ধার্য করতো তাই দিতে বাধ্য হতো রোগীর স্বজনরা। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ওই শিশুর মাকে যে দালাল নিয়ে গিয়েছিল আমরা সেই দালালকে খুঁজছি। তাকে ধরতে পারে ওই হাসপাতালের আরও নানান অপকর্ম বের হবে। আমাদের ধারণা ওই দালাল হাসপাতালের মালিকানার সঙ্গে যুক্ত অথবা মোটা অঙ্কের বকশিসের বিনিময়ে রোগী ভাগিয়ে সেখানে পাঠাতেন। র্যাব বলছে, গোলাম সরওয়ার হাসপাতালের ব্যবসা শুরু করেছিল ২০০০ সালে। একেক সময় একেক নাম দিয়ে সে ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাসপাতাল খুলে এভাবে প্রতারণা করে আসছিল। নানা অভিযোগ ওঠার পর সবগুলো বন্ধ করে দিয়ে সর্বশেষ আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল নামে আবার নতুন হাসপাতাল দিয়েছে।
গত ৩১ ডিসেম্বর ঠা-ায় আক্রান্ত হওয়া ছয় মাসের দুই যমজ শিশু আবদুল্লাহ ও আহমেদকে নিয়ে সাভারের বাটপাড়া রেডিও কলোনি থেকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন আয়েশা আক্তার নামের এক মা। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার জন্য আইসিউ’র প্রয়োজন হলে সরকারি হাসপাতালে আইসিউ সিট খালি না থাকায় ভর্তি করাতে পারেনি। পরে এক দালাল (অ্যাম্বুলেন্সচালক) ওই নারীকে তার দুই শিশু সন্তানকে কম টাকায় চিকিৎসার ব্যবস্থার কথা জানিয়ে আমার বাংলাদেশ হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে ভর্তির ছয় দিন চিকিৎসা দিয়ে ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা দাবি করেন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম সারওয়ার। বিল কমিয়ে ধরার অনুরোধ করে কয়েক দফায় ৫০ হাজার টাকা পরিশোধের পরও টাকার জন্য তিনি চাপ দিতে থাকেন। গত বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) বিকেলে টাকা দিতে পারবে না জেনে তাদের বের করে দেন। পরে শাহিন নামে একজনের মাধ্যমে ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন এবং আয়েশা বেগমের কাছ থেকে বাকি টাকা আদায় করার জন্য বলে দেন।