হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে যুবক হত্যা

নির্বাচনকালীন সহিংসতায় আহত এক ব্যক্তির মৃত্যু

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বগুড়া ইউনিয়নের আওধা গ্রামে সামাজিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বে কল্লোল হোসেন (৩২) নামের এক যুবককে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষরা। গতকাল দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত কল্লোল ওই ইউনিয়নের বারইহুদা গ্রামের আকবর খন্দকারের ছেলে। অন্যদিকে উপজেলার সারুটিয়া ইউনিয়নে নির্বাচনি সহিংসতায় আহত আবদুর রহিম (৬০) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গতকাল ভোর রাতে রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

নিহতের প্রতিবেশী রফিক হোসেন জানান, সামাজিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বগুড়া গ্রামের আনু বিশ্বাস ও মোকা বিশ্বাসের সমর্থকদের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে গতকাল দুপুরে মাঠে পেঁয়াজ লাগানো অবস্থায় আনু বিশ্বাসের সমর্থক কল্লোল হোসেনকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে প্রতিপক্ষরা। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক কল্লোলকে মৃত ঘোষণা করেন।

শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. শাহনেওয়াজ ইবনে কাশেম বলেন, ছেলেটি হাসপাতালে আসার আগেই মারা গেছে। তার শরীরে একাধিক আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।

শৈলকুপা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, একটি ঘটনা ঘটেছে। এরপর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

অন্যদিকে শৈলকুপা উপজেলার সারুটিয়া ইউনিয়নে নির্বাচনি সহিংসতায় আহত আবদুুর রহিম (৬০) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গতকাল ভোরে রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত আবদুর রহিম ওই ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের মৃত খোরশেদ শেখের ছেলে। নিহতের ছেলে বউ প্রেমা খাতুনের অভিযোগ, পঞ্চম ধাপের নির্বাচনের আগে গত ২৩ ডিসেম্বর কাতলাগাড়ী পুরাতন বাজারে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী জুলফিকার কাইছার টিপুর সমর্থকরা তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। তাকে উদ্ধার করে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক কুষ্টিয়া মেডিকেলে পাঠান। ছয়দিন আগে তাকে রাজশাহী মেডিকেলে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল ভোরে তার মৃত্যু হয়।

শৈলকুপা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। অভিযোগ পেলে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

এদিকে গতকাল শৈলকুপা পৌর এলাকার সাপ্তাহিক হাটের দিন বিকেল ৪টায় প্রকাশ্য দিবালোকে চর আউশিয়া গ্রামের শরাফত আলীর ছেলে মহিদ হোসেনকে (৩৫) কুপিয়ে আহত করে দুবৃত্তরা। তাকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক। এ ঘটনার পরপরই শৈলকুপা পৌরভবনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ভাঙচুর করা হয়। এতে একটি মোটরবাইক আগুনে ভস্মীভূত হয় এবং পৌর ভবনের জানালার কাঁচ ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে।

ঘটনার পর পরই হাটে আসা লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে হাট মানুষশূন্য হয়ে যায়। এ ছাড়া শহরের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। শৈলকুপা উপজেলায় সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। বিগত ১৪ দিনে ছয়জনের মৃত্যুতে জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।

রবিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২২ , ২৫ পৌষ ১৪২৮ ৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

ঝিনাইদহের শৈলকুপায়

হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে যুবক হত্যা

নির্বাচনকালীন সহিংসতায় আহত এক ব্যক্তির মৃত্যু

জেলা বার্তা পরিবেশক, ঝিনাইদহ

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বগুড়া ইউনিয়নের আওধা গ্রামে সামাজিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বে কল্লোল হোসেন (৩২) নামের এক যুবককে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষরা। গতকাল দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত কল্লোল ওই ইউনিয়নের বারইহুদা গ্রামের আকবর খন্দকারের ছেলে। অন্যদিকে উপজেলার সারুটিয়া ইউনিয়নে নির্বাচনি সহিংসতায় আহত আবদুর রহিম (৬০) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গতকাল ভোর রাতে রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

নিহতের প্রতিবেশী রফিক হোসেন জানান, সামাজিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বগুড়া গ্রামের আনু বিশ্বাস ও মোকা বিশ্বাসের সমর্থকদের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে গতকাল দুপুরে মাঠে পেঁয়াজ লাগানো অবস্থায় আনু বিশ্বাসের সমর্থক কল্লোল হোসেনকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে প্রতিপক্ষরা। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক কল্লোলকে মৃত ঘোষণা করেন।

শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. শাহনেওয়াজ ইবনে কাশেম বলেন, ছেলেটি হাসপাতালে আসার আগেই মারা গেছে। তার শরীরে একাধিক আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।

শৈলকুপা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, একটি ঘটনা ঘটেছে। এরপর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

অন্যদিকে শৈলকুপা উপজেলার সারুটিয়া ইউনিয়নে নির্বাচনি সহিংসতায় আহত আবদুুর রহিম (৬০) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গতকাল ভোরে রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত আবদুর রহিম ওই ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের মৃত খোরশেদ শেখের ছেলে। নিহতের ছেলে বউ প্রেমা খাতুনের অভিযোগ, পঞ্চম ধাপের নির্বাচনের আগে গত ২৩ ডিসেম্বর কাতলাগাড়ী পুরাতন বাজারে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী জুলফিকার কাইছার টিপুর সমর্থকরা তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। তাকে উদ্ধার করে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক কুষ্টিয়া মেডিকেলে পাঠান। ছয়দিন আগে তাকে রাজশাহী মেডিকেলে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল ভোরে তার মৃত্যু হয়।

শৈলকুপা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। অভিযোগ পেলে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

এদিকে গতকাল শৈলকুপা পৌর এলাকার সাপ্তাহিক হাটের দিন বিকেল ৪টায় প্রকাশ্য দিবালোকে চর আউশিয়া গ্রামের শরাফত আলীর ছেলে মহিদ হোসেনকে (৩৫) কুপিয়ে আহত করে দুবৃত্তরা। তাকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক। এ ঘটনার পরপরই শৈলকুপা পৌরভবনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ভাঙচুর করা হয়। এতে একটি মোটরবাইক আগুনে ভস্মীভূত হয় এবং পৌর ভবনের জানালার কাঁচ ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে।

ঘটনার পর পরই হাটে আসা লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে হাট মানুষশূন্য হয়ে যায়। এ ছাড়া শহরের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। শৈলকুপা উপজেলায় সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। বিগত ১৪ দিনে ছয়জনের মৃত্যুতে জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।