সিরাজ প্রামাণিক
তালাকের কয়টি নোটিস পাঠাতে হয়, একটি, দুটি না তিনটি-তা নিয়ে আমাদের সমাজে বেশ ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। অনেকে বলে থাকে তিন মাসে তিনটি নোটিস পাঠাতে হয়। প্রকৃতপক্ষে তালাকের একটি নোটিস একবারই পাঠাতে হয়। আর এই নোটিস কীভাবে পাঠাবেন, পাঠানোর নিয়মাবলি কি, যথাযথ নিয়ম মেনে না পাঠালে আইনে কি শাস্তির বিধান রয়েছেÑএসব বিষয়ে আইনি আলোচনা জানুন।
যে কোনো যুক্তিসংগত কারণে মুসলিম স্বামী বা স্ত্রী একে অপরকে তালাক প্রদান করতে পারেন। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৭(১) ধারা অনুযায়ী, আপনি তালাক দিতে চাইলে, তালাকের নোটিস নিজেই তৈরি করে কিংবা কারও মাধ্যমে তৈরি করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যাকে তালাক দিচ্ছেন, তিনি যদি ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় বসবাস করেন, তাহলে সেই ইউপি চেয়ারম্যানকে উক্ত তালাকের নোটিস দিতে হবে। আর তিনি যদি পৌরসভা বা সিটি করপোরেশন এলাকায় বসবাস করেন তাহলে পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে লিখিত নোটিস পাঠাতে হবে। ওই একই নোটিসের একটি কপি যাকে তালাক দিচ্ছেন অর্থাৎ তালাক গ্রহীতাকে পাঠাতে হবে। আর মনে রাখবেন তালাকের নোটিসে দুজন উপযুক্ত সাক্ষীর কলাম রাখবেন এবং তাদের স্বাক্ষর নেবেন। অনেকেই মনে করেন তালাকের নোটিস কাজির মাধ্যমে না পাঠালে তা কার্যকর হয় না। এটি ভুল ধারণা। তালাকের নোটিস স্বামী বা স্ত্রী যিনি তালাক দিবেন, তিনি নিজে নিজেই কিংবা কারও মাধ্যমে লিখিত আকারে পাঠিয়ে দিলেই হবে।
১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশে তালাকের নোটিস পাঠাতে কাজির কাছে যেতে হবে-এমন কোন কথা লেখা নেই। এখন জানার দরকার, আপনি নোটিসটি কীভাবে চেয়ারম্যান মহোদয় ও তালাক গ্রহীতার কাছে পাঠাবেন। আপনি দুটি উপায়ে স্ব-স্ব ব্যক্তির কাছে তালাকের নোটিস পাঠাতে পারেন।
১। সরাসরি তালাকের নোটিস সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিকট পৌঁছে দিয়ে রিসিভ কপিতে স্বাক্ষর করিয়ে নিতে পারেন।
২। সরকারি ডাকযোগে অর্থাৎ পোস্ট অফিসের মাধ্যমে প্রাপ্তি স্বীকারসহ রেজিস্ট্রি করে চিঠি-সংশ্লিষ্ট ঠিকানায় পাঠাতে পারেন। এতে সুবিধা বেশি এবং আইনি জটিলতা কম। কারণ সংশ্লিষ্ট ঠিকানার ব্যক্তিদ্বয় চিঠি গ্রহণের পর প্রাপ্তি স্বীকার ডকুমেন্টস আপনার নিকট ফিরে আসে।
অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন, তালাকের নোটিস গ্রহণ না করলে তালাক কার্যকর হবে কি-না। আপনি এই নিয়মে তালাকের নোটিস পাঠালে তালাক গ্রহীতা নোটিস গ্রহণ না করলে কেন গ্রহণ করেননি তা পোস্ট অফিসের মন্তব্য সম্বলিত নোটিসটি আপনার নিকট ফেরত আসবে। চিঠির খামের ওপর লেখা থাকে ‘প্রাপক চিঠি গ্রহণ না করায় ফেরত’ অথবা ‘গ্রহণে অস্বীকৃতি’ অথবা ‘খুঁজে পাওয়া গেল না’ ইত্যাদি। যেদিন চিঠিখানা আপনার নিকট ফিরে আসবে, সেদিন থেকে ৯০ দিন পার হয়ে গেলে তালাক আপনা আপনিই কার্যকর হয়ে যাবে। অনেকে নোটিস গ্রহণ না করে মিথ্যা বলে থাকে যে তালাকের নোটিস পায়নি। তারা নিছক বোকার মতো কাজ করে থাকে।
যে পক্ষ থেকেই তালাকের নোটিস দেয়া হোক না কেন, সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান বা মেয়র নোটিস পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে উভয় পক্ষের মনোনীত প্রতিনিধি নিয়ে সালিশি পরিষদ গঠনের জন্য প্রতিনিধির নাম চেয়ে উভয়ের কাছে লিখিত চিঠি পাঠিয়ে থাকেন। প্রথম নোটিসে কোনো পক্ষ হাজির না হলে পরবর্তী দুই মাসে আরও দুটি নোটিস পাঠিয়ে থাকেন। সমঝোতার চেষ্টা সফলও হতে পারে, ব্যর্থও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সালিশি পরিষদের কাজ হলো আপসের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, না সফল হয়েছে, তা তাদের রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করা। তবে চেয়ারম্যান বা মেয়র মহোদয় আপনাদের কাছে চিঠি পাঠাতে কিংবা সালিশি পরিষদ গঠনে বাধ্য নয়। কারণ, আইনে তাদের এ বিষয়ে বাধ্য করা হয়নি। সে কারণ দেখা যায়, চেয়ারম্যান বা মেয়র মহোদয় তালাকের নোটিস প্রাপ্তির পর কোন সালিশি পরিষদ গঠন কিংবা কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না। ফলে নোটিস প্রাপ্তির ৯০ দিন পার হলেই তালাক আপনা আপনিই কার্যকর হয়ে যায়। তবে স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে গর্ভকাল শেষ হওয়ার পর তালাক কার্যকর হবে।
এরপর রয়েছে তালাক রেজিস্ট্রি বিষয়। যিনি তালাক দিয়েছেন, তিনি ৯০ দিন পর তালাকের নোটিস, নোটিস পাঠানোর ডাক রশিদ, প্রাপ্তি স্বীকার পত্র, আর যদি নোটিস গ্রহণ না করে সেক্ষেত্রে ফেরত সংবলিত নোটিস এগুলো সংগ্রহ করে আপনার এলাকার কাজি অফিসে যাবেন তালাকটি নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশন করতে। মুসলিম বিবাহ ও তালাক বিধিমালা ২০০৯-এর ২১ বিধি অনুযায়ী তালাক নিবন্ধনের জন্য ৫০০ টাকা ফি গ্রহণ করতে পারবেন তালাক রেজিস্ট্রার। নকল প্রাপ্তি ফি বাবদ নেবেন মাত্র ৫০ টাকা। বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার কাজি যদি আপনার বাড়িতে গিয়ে তালাক রেজিস্ট্রি করেন, তাহলে যাতায়াত বাবদ প্রতি কিলোমিটার ফি নিবেন ১০ টাকা আর পরবর্তীতে তালাক রেজিস্ট্রি-সংক্রান্ত সার্টিফাই কপি নিতে গেলে তল্লাশি ফি বাবদ নেবেন মাত্র ১০ টাকা।
কোন কারণে কাজি মহোদয় তালাক নিবন্ধন অস্বীকার করলে অস্বীকারের তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে জেলা রেজিস্ট্রার অফিসারের কাছে আপিল করার বিধান আছে। তবে আনন্দের সংবাদ এই যে, বিয়ে রেজিস্ট্রি না করলে যেমন শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে, এক্ষেত্রে তালাক রেজিস্ট্রি বাধ্যতামূলক কিংবা শাস্তির কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি। কাজেই নিয়ম মেনে তালাকের নোটিস পাঠানো ও উক্ত ডকুমেন্টসগুলো সংগ্রহে রাখলেই তালাক কার্যকরে আইনত কোন বাধা নেই।
আবার ১৯৬১-এর ৭(১) নং ধারার বিধান অনুযায়ী তালাকদাতা যদি চেয়ারম্যান ও তালাক গ্রহীতাকে তালাকের নোটিস প্রদান না করে তাহলে ৭ (২) ধারা অনুযায়ী তালাকদাতা শাস্তি পাবে ঠিকই, কিন্তু তালাক বাতিল হবে না। উক্ত তালাক কার্যকর হবে।
আরেকটি বিষয় আপনাদের জানিয়ে রাখি, নোটিস পাঠালেই কিন্তু তালাক কার্যকর হয়ে যায় না। নোটিস পাঠানোর পরে ৯০ দিন পার হওয়ার আগেই যদি আপনাদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির অবসান হয়, তাহলে আপনি একই নিয়ম অনুসরণ করে তালাক প্রত্যাহার করে নিতে পারেন এবং একই স্ত্রীর সঙ্গে হিল্লা বিয়ে বাদেই ঘর সংসার করতে পারেন, এতে আইন ও ধর্মের কোথাও বাধা নেই। আর যদি ৯০ দিন অতিক্রান্ত এমনকি কয়েক বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও আপোস হয়ে যায়, তাতেও একই স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঘর সংসারে আইন ও ধর্মের কোথাও বাধা নেই। এক্ষেত্রে শুধু ব্যতিক্রম রয়েছে যে, পুনরায় বিয়ে করে নিতে হবে।
[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]
রবিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২২ , ২৫ পৌষ ১৪২৮ ৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৩
সিরাজ প্রামাণিক
তালাকের কয়টি নোটিস পাঠাতে হয়, একটি, দুটি না তিনটি-তা নিয়ে আমাদের সমাজে বেশ ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। অনেকে বলে থাকে তিন মাসে তিনটি নোটিস পাঠাতে হয়। প্রকৃতপক্ষে তালাকের একটি নোটিস একবারই পাঠাতে হয়। আর এই নোটিস কীভাবে পাঠাবেন, পাঠানোর নিয়মাবলি কি, যথাযথ নিয়ম মেনে না পাঠালে আইনে কি শাস্তির বিধান রয়েছেÑএসব বিষয়ে আইনি আলোচনা জানুন।
যে কোনো যুক্তিসংগত কারণে মুসলিম স্বামী বা স্ত্রী একে অপরকে তালাক প্রদান করতে পারেন। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৭(১) ধারা অনুযায়ী, আপনি তালাক দিতে চাইলে, তালাকের নোটিস নিজেই তৈরি করে কিংবা কারও মাধ্যমে তৈরি করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যাকে তালাক দিচ্ছেন, তিনি যদি ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় বসবাস করেন, তাহলে সেই ইউপি চেয়ারম্যানকে উক্ত তালাকের নোটিস দিতে হবে। আর তিনি যদি পৌরসভা বা সিটি করপোরেশন এলাকায় বসবাস করেন তাহলে পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে লিখিত নোটিস পাঠাতে হবে। ওই একই নোটিসের একটি কপি যাকে তালাক দিচ্ছেন অর্থাৎ তালাক গ্রহীতাকে পাঠাতে হবে। আর মনে রাখবেন তালাকের নোটিসে দুজন উপযুক্ত সাক্ষীর কলাম রাখবেন এবং তাদের স্বাক্ষর নেবেন। অনেকেই মনে করেন তালাকের নোটিস কাজির মাধ্যমে না পাঠালে তা কার্যকর হয় না। এটি ভুল ধারণা। তালাকের নোটিস স্বামী বা স্ত্রী যিনি তালাক দিবেন, তিনি নিজে নিজেই কিংবা কারও মাধ্যমে লিখিত আকারে পাঠিয়ে দিলেই হবে।
১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশে তালাকের নোটিস পাঠাতে কাজির কাছে যেতে হবে-এমন কোন কথা লেখা নেই। এখন জানার দরকার, আপনি নোটিসটি কীভাবে চেয়ারম্যান মহোদয় ও তালাক গ্রহীতার কাছে পাঠাবেন। আপনি দুটি উপায়ে স্ব-স্ব ব্যক্তির কাছে তালাকের নোটিস পাঠাতে পারেন।
১। সরাসরি তালাকের নোটিস সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিকট পৌঁছে দিয়ে রিসিভ কপিতে স্বাক্ষর করিয়ে নিতে পারেন।
২। সরকারি ডাকযোগে অর্থাৎ পোস্ট অফিসের মাধ্যমে প্রাপ্তি স্বীকারসহ রেজিস্ট্রি করে চিঠি-সংশ্লিষ্ট ঠিকানায় পাঠাতে পারেন। এতে সুবিধা বেশি এবং আইনি জটিলতা কম। কারণ সংশ্লিষ্ট ঠিকানার ব্যক্তিদ্বয় চিঠি গ্রহণের পর প্রাপ্তি স্বীকার ডকুমেন্টস আপনার নিকট ফিরে আসে।
অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন, তালাকের নোটিস গ্রহণ না করলে তালাক কার্যকর হবে কি-না। আপনি এই নিয়মে তালাকের নোটিস পাঠালে তালাক গ্রহীতা নোটিস গ্রহণ না করলে কেন গ্রহণ করেননি তা পোস্ট অফিসের মন্তব্য সম্বলিত নোটিসটি আপনার নিকট ফেরত আসবে। চিঠির খামের ওপর লেখা থাকে ‘প্রাপক চিঠি গ্রহণ না করায় ফেরত’ অথবা ‘গ্রহণে অস্বীকৃতি’ অথবা ‘খুঁজে পাওয়া গেল না’ ইত্যাদি। যেদিন চিঠিখানা আপনার নিকট ফিরে আসবে, সেদিন থেকে ৯০ দিন পার হয়ে গেলে তালাক আপনা আপনিই কার্যকর হয়ে যাবে। অনেকে নোটিস গ্রহণ না করে মিথ্যা বলে থাকে যে তালাকের নোটিস পায়নি। তারা নিছক বোকার মতো কাজ করে থাকে।
যে পক্ষ থেকেই তালাকের নোটিস দেয়া হোক না কেন, সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান বা মেয়র নোটিস পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে উভয় পক্ষের মনোনীত প্রতিনিধি নিয়ে সালিশি পরিষদ গঠনের জন্য প্রতিনিধির নাম চেয়ে উভয়ের কাছে লিখিত চিঠি পাঠিয়ে থাকেন। প্রথম নোটিসে কোনো পক্ষ হাজির না হলে পরবর্তী দুই মাসে আরও দুটি নোটিস পাঠিয়ে থাকেন। সমঝোতার চেষ্টা সফলও হতে পারে, ব্যর্থও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সালিশি পরিষদের কাজ হলো আপসের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, না সফল হয়েছে, তা তাদের রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করা। তবে চেয়ারম্যান বা মেয়র মহোদয় আপনাদের কাছে চিঠি পাঠাতে কিংবা সালিশি পরিষদ গঠনে বাধ্য নয়। কারণ, আইনে তাদের এ বিষয়ে বাধ্য করা হয়নি। সে কারণ দেখা যায়, চেয়ারম্যান বা মেয়র মহোদয় তালাকের নোটিস প্রাপ্তির পর কোন সালিশি পরিষদ গঠন কিংবা কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না। ফলে নোটিস প্রাপ্তির ৯০ দিন পার হলেই তালাক আপনা আপনিই কার্যকর হয়ে যায়। তবে স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে গর্ভকাল শেষ হওয়ার পর তালাক কার্যকর হবে।
এরপর রয়েছে তালাক রেজিস্ট্রি বিষয়। যিনি তালাক দিয়েছেন, তিনি ৯০ দিন পর তালাকের নোটিস, নোটিস পাঠানোর ডাক রশিদ, প্রাপ্তি স্বীকার পত্র, আর যদি নোটিস গ্রহণ না করে সেক্ষেত্রে ফেরত সংবলিত নোটিস এগুলো সংগ্রহ করে আপনার এলাকার কাজি অফিসে যাবেন তালাকটি নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশন করতে। মুসলিম বিবাহ ও তালাক বিধিমালা ২০০৯-এর ২১ বিধি অনুযায়ী তালাক নিবন্ধনের জন্য ৫০০ টাকা ফি গ্রহণ করতে পারবেন তালাক রেজিস্ট্রার। নকল প্রাপ্তি ফি বাবদ নেবেন মাত্র ৫০ টাকা। বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার কাজি যদি আপনার বাড়িতে গিয়ে তালাক রেজিস্ট্রি করেন, তাহলে যাতায়াত বাবদ প্রতি কিলোমিটার ফি নিবেন ১০ টাকা আর পরবর্তীতে তালাক রেজিস্ট্রি-সংক্রান্ত সার্টিফাই কপি নিতে গেলে তল্লাশি ফি বাবদ নেবেন মাত্র ১০ টাকা।
কোন কারণে কাজি মহোদয় তালাক নিবন্ধন অস্বীকার করলে অস্বীকারের তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে জেলা রেজিস্ট্রার অফিসারের কাছে আপিল করার বিধান আছে। তবে আনন্দের সংবাদ এই যে, বিয়ে রেজিস্ট্রি না করলে যেমন শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে, এক্ষেত্রে তালাক রেজিস্ট্রি বাধ্যতামূলক কিংবা শাস্তির কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি। কাজেই নিয়ম মেনে তালাকের নোটিস পাঠানো ও উক্ত ডকুমেন্টসগুলো সংগ্রহে রাখলেই তালাক কার্যকরে আইনত কোন বাধা নেই।
আবার ১৯৬১-এর ৭(১) নং ধারার বিধান অনুযায়ী তালাকদাতা যদি চেয়ারম্যান ও তালাক গ্রহীতাকে তালাকের নোটিস প্রদান না করে তাহলে ৭ (২) ধারা অনুযায়ী তালাকদাতা শাস্তি পাবে ঠিকই, কিন্তু তালাক বাতিল হবে না। উক্ত তালাক কার্যকর হবে।
আরেকটি বিষয় আপনাদের জানিয়ে রাখি, নোটিস পাঠালেই কিন্তু তালাক কার্যকর হয়ে যায় না। নোটিস পাঠানোর পরে ৯০ দিন পার হওয়ার আগেই যদি আপনাদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির অবসান হয়, তাহলে আপনি একই নিয়ম অনুসরণ করে তালাক প্রত্যাহার করে নিতে পারেন এবং একই স্ত্রীর সঙ্গে হিল্লা বিয়ে বাদেই ঘর সংসার করতে পারেন, এতে আইন ও ধর্মের কোথাও বাধা নেই। আর যদি ৯০ দিন অতিক্রান্ত এমনকি কয়েক বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও আপোস হয়ে যায়, তাতেও একই স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঘর সংসারে আইন ও ধর্মের কোথাও বাধা নেই। এক্ষেত্রে শুধু ব্যতিক্রম রয়েছে যে, পুনরায় বিয়ে করে নিতে হবে।
[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]