নওগাঁর কারখানায় তৈরি মাড়াই মেশিন বছরে বিক্রি ৫৭ কোটি

কৃষিতে যে কয়েকটি সমস্যা তার মধ্যে ধান কাটা ও মাড়াই করা সবচেয়ে বড় সমস্যা। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে বদলেছে নির্ভরতার ধরণ। কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের ছোয়া আসার পর থেকে দুর্ভোগ কমতে শুরু করেছে কৃষকদের। ফসল কাটা মাড়াইয়ে একদিকে যেমন শ্রমিকের খরচ বাঁচছে, অন্যদিকে অল্প সময়ের মধ্যে শস্য ঘরে তোলা যাচ্ছে। নওগাঁ থেকে বছরে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় দুই হাজারটি ধান মাড়াই মেশিন (পাওয়ার থ্রেসার) সরবরাহ হচ্ছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৫৭ কোটি টাকা। সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা গেলে কৃষি প্রযুক্তি তৈরিতে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন এ শিল্প কারখানার সঙ্গে জড়িতরা।

গত এক যুগ আগে জেলার পতœীতলা উপজেলার নজিপুর বাজার, ধামইরহাট উপজেলা সদর ও বদলগাছী উপজেলা বাজারে ধান মাড়াই মেশিন কারখানা গড়ে উঠেছে। গত ৫-৭ বছরের ব্যবধানে কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ বেড়ে যাওয়ায় মাড়াই মেশিনের গুরুত্ব বেড়েছে কৃষকদের কাছে। স্থানীয় ভাষায় মাড়াই মেশিনকে বঙ্গা বলা হয়। এই ৩ উপজেলায় কারখানা রয়েছে প্রায় ৮২টি। এসব কারখানা থেকে বছরে প্রায় ২ হাজার থেকে ২ হাজার ১শটি ধান মাড়াই মেশিন তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রায় ৭১৫ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

প্রতিটি ধান মাড়াই মেশিন তৈরিতে ৫-৬ জন শ্রমিকের ৫-৭দিন সময় লাগে। গত এক বছর আগে প্রতিকেজি শিটের দাম ছিল ৯২-৯৩ টাকা কেজি, বর্তমানে ১৪৮-১৫০ টাকা কেজি। অ্যাঙ্গেল ছিল ৫৬-৫৮ টাকা কেজি, বর্তমানে ৭৭-৭৮ টাকা কেজি এবং পাতি ছিল ৪২-৪৩ টাকা কেজি, বর্তমানে ৬৮ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে। এছাড়া শ্যালো মেশিন ৩২ হর্স পাওয়ারের দাম ছিল পূর্বে ৪২ হাজার টাকা, বর্তমানে ৫৩ হাজার টাকা, ৩৬ হর্স পাওয়ার চাংচাই মডেল ৬২ হাজার টাকা, বর্তমানে ৭৮ হাজার টাকা। এছাড়া ৩৬ হর্স পাওয়ার বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন শ্যালো মেশিনের দাম পূর্বে ছিল ৮২ হাজার টাকা বর্তমানে ৯৭ হাজার টাকা। করোনাভাইরাস শুরুর পর থেকে বেড়েছে ধান মাড়াই মেশিনের যন্ত্রাংশের দাম। প্রতিটি ধান মাড়াই মেশিনের দাম ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসেবে ২ হাজার মাড়াই মেশিনের দাম দাঁড়ায় প্রায় ৫৭ কোটি টাকা। ধান মাড়াই এ মেশিন দিয়ে একইসঙ্গে মাড়াইয়ের পাশাপাশি ধান পরিষ্কার হয়ে যায়। তাই আলাদা করে পরিষ্কার করার প্রয়োজন হয় না। বোরো ও আমন মৌসুমে মাড়াই মেশিন বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

এসব মাড়াই মেশিন নোয়াখালী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, নীলফামারী, দিনাজপুর ও রংপুরসহ কয়েকটি জেলায় সরবরাহ করা হয়। এ মাড়াই মেশিন দিয়ে ধান মাড়াইয়ের পাশাপাশি সরিষা, তিল, তিশি, গম, ধনিয়া ও কালাই মাড়াই করা সম্ভব।

নজিপুর বাজারে ২০০৮ সালে নজিপুর ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ নাম দিয়ে ধান মাড়াই মেশিন কারখানা শুরু করেন হারুনুর রশিদ। সে সময় ছোট আকারে ধান মাড়াই মেশিন তৈরি করতেন। ধানের সঙ্গে খড়কুটো থাকায় আলাদা করে বাতাস করতে হতো। চাহিদা বাড়তে থাকায় মাড়াই যন্ত্রে কিছুটা আধুনিকায়ন শুরু করেন। ২০১০ সালে অটো মাড়াই মেশিন তৈরি শুরু করেন তিনি। বাজারে এটির চাহিদা রয়েছে ব্যাপক।

হারুনুর রশিদ বলেন, কারখানায় ১৮জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে। মাড়াই মেশিনটি তৈরি করতে কারিগরদের ১৮-২০ হাজার টাকায় চুক্তি দেওয়া হয়। এরসঙ্গে তিনবেলা খাবার দিতে হয়। শ্যালোমেশিনসহ এ মাড়াই মেশিনটির ওজন প্রায় ১৪শ’ কেজি। এ মেশিনটি বিক্রি হচ্ছে বর্তমানে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকায়। বর্তমানে সবকিছুর দাম বেড়েছে। বেশি দামে ধান মাড়াই মেশিন বিক্রি করেও লাভ থাকছে খুবই কম। করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার আগে যন্ত্রাংশের দাম অনেকটা কম ছিল। সে সময় লাভ মোটামুটি ভাল ছিল। খুচরা চাহিদা কম থাকলেও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে চাহিদা রয়েছে। বাহিরের জেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা অর্ডার দিয়ে মেশিন তৈরি করে নেয়।

তিনি আরও বলেন, কৃষিতে ভর্তুকি দেয়ায় কৃষকদের মাঝে কৃষি যন্ত্রাংশ নেয়ার আগ্রহ বাড়ছে। সরকার থেকে সহযোগিতা পেলে আগামীতে আরও আধুনিকমানে মাড়াই মেশিন তৈরি করা সম্ভব হবে। এসব মাড়াই মেশিনে ধান মাড়াই করা হলে খড়গুলো কেটে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। খড় যেন কেটে টুকরো না হয়ে গোটা খড় বেরিয়ে আসে আগামীতে এমন মাড়াই মেশিন তৈরির চেষ্টা করছি।

নজিপুর বঙ্গা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুম রেজা বলেন, আমরা স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ী। করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবসায়ী আমাদের কাঁচামাল বাকিতে দিচ্ছে না। তাদের ভাষ্য তারা বাকিতে পাচ্ছে না। এ কারণে আমাদেরও বাকিতে দিতে চাইছে না। আমরা যতটুকু পারছি নিজেদের চেষ্টায় বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে মালামাল কিনছি । বেসরকারি সংস্থা থেকে উচ্চ সুদের ওপর ঋণ নিতে হচ্ছে। কোন ব্যাংক আমাদের সহযোগিতা করছে না। ব্যাংক থেকে বলা হয় জামানত দিতে। কিন্তু ব্যাংকের চাহিদা মতো আমাদের পক্ষে জামানত দেয়া সম্ভব না। যদি সহজ শর্তে ব্যাংক থেকে ঋণ দেয়া হতো তাহলে আমাদের ব্যবসার পরিধি আরও বাড়ানো সম্ভব হতো। আমাদের এ উপজেলা থেকে প্রায় ১২শ’ টি মাড়াই মেশিন বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। আমার কারখানা থেকে গতবছর (২০২০) ৩৫টি এবং এ বছর ৫০টি মাড়াইকল বিক্রি করেছি। ব্যাংক ঋণের ব্যাপারে সরকার যদি আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করে তাহলে কৃষিক্ষেত্রে আরও বৈপ্লবিক পরিবর্তন করা সম্ভব বলে মনে করছি।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. শামসুল ওয়াদুদ বলেন, জেলার পতœীতলা, ধামইরহাট ও বদলগাছী উপজেলা যথেষ্ট ভাল ও মানসম্মত থ্রেসার (ধান মাড়াই মেশিন) তৈরি হয়। মাড়াই মেশিন এ জেলা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ এসে কারখানাগুলো দেখে গেছেন। আমরা এ শিল্পকে আরও সম্প্রসারণের জন্য চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের প্রকল্প আছে। কৃষকদের ভর্তুকির মাধ্যমে দেয়ায় এসব কারখানা থেকে আরও বেশি পরিমাণ মেশিন উৎপাদন হচ্ছে। আমরা চাই এ শিল্পটা আরও বেশি প্রসার লাভ করুক। কোন উদ্যোক্তার যদি ঋণের প্রয়োজন হয় আমরা চেষ্টা করবো ব্যাংক যেন সহজ শর্তে ঋণ দেয়। এতে করে যেন যান্ত্রিকীকরণ সহজ হয়।

image

বদলগাছী (নওগাঁ) : পতœীতলা নজিপুর বাজারের আলম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ -সংবাদ

আরও খবর
৯৯৯ এর সহায়তায় বাগেরহাট থেকে কুমির উদ্ধার
সোনারগাঁয়ে বসতবাড়ি ভেঙে জমি দখলে নেয়ার অভিযোগ
ধলেশ্বরীতে নিখোঁজদের সন্ধান না পাওয়ায় স্বজনদের বিক্ষোভ
চুনারুঘাটে ভোট পুনর্গণনার দাবিতে মানববন্ধন
বগুড়ায় ৯ মাসেও খোঁজ নেই সিজানের
দেলদুয়ারে বিদ্যালয়ে অনিয়ম : প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত
রাজস্ব ফাঁকির টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ ১৬ দলিল লেখককে
কিশোরগঞ্জে নতুন ৪ ব্যক্তির করোনা শনাক্ত
২৬ কোটি টাকা ঋণ বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রি
দুপচাঁচিয়ায় পুনঃভোট গণনার দাবি ইউপি সদস্য প্রার্থীর
অগ্নিদগ্ধ সুরভী-৯ ৪শ’ ১৮ যাত্রী নিয়ে বরিশালের উদ্দেশে চাঁদপুর ছেড়েছে

সোমবার, ১০ জানুয়ারী ২০২২ , ২৬ পৌষ ১৪২৮ ৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

নওগাঁর কারখানায় তৈরি মাড়াই মেশিন বছরে বিক্রি ৫৭ কোটি

প্রতিনিধি, বদলগাছী (নওগাঁ)

image

বদলগাছী (নওগাঁ) : পতœীতলা নজিপুর বাজারের আলম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ -সংবাদ

কৃষিতে যে কয়েকটি সমস্যা তার মধ্যে ধান কাটা ও মাড়াই করা সবচেয়ে বড় সমস্যা। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে বদলেছে নির্ভরতার ধরণ। কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের ছোয়া আসার পর থেকে দুর্ভোগ কমতে শুরু করেছে কৃষকদের। ফসল কাটা মাড়াইয়ে একদিকে যেমন শ্রমিকের খরচ বাঁচছে, অন্যদিকে অল্প সময়ের মধ্যে শস্য ঘরে তোলা যাচ্ছে। নওগাঁ থেকে বছরে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় দুই হাজারটি ধান মাড়াই মেশিন (পাওয়ার থ্রেসার) সরবরাহ হচ্ছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৫৭ কোটি টাকা। সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা গেলে কৃষি প্রযুক্তি তৈরিতে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন এ শিল্প কারখানার সঙ্গে জড়িতরা।

গত এক যুগ আগে জেলার পতœীতলা উপজেলার নজিপুর বাজার, ধামইরহাট উপজেলা সদর ও বদলগাছী উপজেলা বাজারে ধান মাড়াই মেশিন কারখানা গড়ে উঠেছে। গত ৫-৭ বছরের ব্যবধানে কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ বেড়ে যাওয়ায় মাড়াই মেশিনের গুরুত্ব বেড়েছে কৃষকদের কাছে। স্থানীয় ভাষায় মাড়াই মেশিনকে বঙ্গা বলা হয়। এই ৩ উপজেলায় কারখানা রয়েছে প্রায় ৮২টি। এসব কারখানা থেকে বছরে প্রায় ২ হাজার থেকে ২ হাজার ১শটি ধান মাড়াই মেশিন তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রায় ৭১৫ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

প্রতিটি ধান মাড়াই মেশিন তৈরিতে ৫-৬ জন শ্রমিকের ৫-৭দিন সময় লাগে। গত এক বছর আগে প্রতিকেজি শিটের দাম ছিল ৯২-৯৩ টাকা কেজি, বর্তমানে ১৪৮-১৫০ টাকা কেজি। অ্যাঙ্গেল ছিল ৫৬-৫৮ টাকা কেজি, বর্তমানে ৭৭-৭৮ টাকা কেজি এবং পাতি ছিল ৪২-৪৩ টাকা কেজি, বর্তমানে ৬৮ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে। এছাড়া শ্যালো মেশিন ৩২ হর্স পাওয়ারের দাম ছিল পূর্বে ৪২ হাজার টাকা, বর্তমানে ৫৩ হাজার টাকা, ৩৬ হর্স পাওয়ার চাংচাই মডেল ৬২ হাজার টাকা, বর্তমানে ৭৮ হাজার টাকা। এছাড়া ৩৬ হর্স পাওয়ার বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন শ্যালো মেশিনের দাম পূর্বে ছিল ৮২ হাজার টাকা বর্তমানে ৯৭ হাজার টাকা। করোনাভাইরাস শুরুর পর থেকে বেড়েছে ধান মাড়াই মেশিনের যন্ত্রাংশের দাম। প্রতিটি ধান মাড়াই মেশিনের দাম ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসেবে ২ হাজার মাড়াই মেশিনের দাম দাঁড়ায় প্রায় ৫৭ কোটি টাকা। ধান মাড়াই এ মেশিন দিয়ে একইসঙ্গে মাড়াইয়ের পাশাপাশি ধান পরিষ্কার হয়ে যায়। তাই আলাদা করে পরিষ্কার করার প্রয়োজন হয় না। বোরো ও আমন মৌসুমে মাড়াই মেশিন বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

এসব মাড়াই মেশিন নোয়াখালী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, নীলফামারী, দিনাজপুর ও রংপুরসহ কয়েকটি জেলায় সরবরাহ করা হয়। এ মাড়াই মেশিন দিয়ে ধান মাড়াইয়ের পাশাপাশি সরিষা, তিল, তিশি, গম, ধনিয়া ও কালাই মাড়াই করা সম্ভব।

নজিপুর বাজারে ২০০৮ সালে নজিপুর ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ নাম দিয়ে ধান মাড়াই মেশিন কারখানা শুরু করেন হারুনুর রশিদ। সে সময় ছোট আকারে ধান মাড়াই মেশিন তৈরি করতেন। ধানের সঙ্গে খড়কুটো থাকায় আলাদা করে বাতাস করতে হতো। চাহিদা বাড়তে থাকায় মাড়াই যন্ত্রে কিছুটা আধুনিকায়ন শুরু করেন। ২০১০ সালে অটো মাড়াই মেশিন তৈরি শুরু করেন তিনি। বাজারে এটির চাহিদা রয়েছে ব্যাপক।

হারুনুর রশিদ বলেন, কারখানায় ১৮জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে। মাড়াই মেশিনটি তৈরি করতে কারিগরদের ১৮-২০ হাজার টাকায় চুক্তি দেওয়া হয়। এরসঙ্গে তিনবেলা খাবার দিতে হয়। শ্যালোমেশিনসহ এ মাড়াই মেশিনটির ওজন প্রায় ১৪শ’ কেজি। এ মেশিনটি বিক্রি হচ্ছে বর্তমানে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকায়। বর্তমানে সবকিছুর দাম বেড়েছে। বেশি দামে ধান মাড়াই মেশিন বিক্রি করেও লাভ থাকছে খুবই কম। করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার আগে যন্ত্রাংশের দাম অনেকটা কম ছিল। সে সময় লাভ মোটামুটি ভাল ছিল। খুচরা চাহিদা কম থাকলেও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে চাহিদা রয়েছে। বাহিরের জেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা অর্ডার দিয়ে মেশিন তৈরি করে নেয়।

তিনি আরও বলেন, কৃষিতে ভর্তুকি দেয়ায় কৃষকদের মাঝে কৃষি যন্ত্রাংশ নেয়ার আগ্রহ বাড়ছে। সরকার থেকে সহযোগিতা পেলে আগামীতে আরও আধুনিকমানে মাড়াই মেশিন তৈরি করা সম্ভব হবে। এসব মাড়াই মেশিনে ধান মাড়াই করা হলে খড়গুলো কেটে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। খড় যেন কেটে টুকরো না হয়ে গোটা খড় বেরিয়ে আসে আগামীতে এমন মাড়াই মেশিন তৈরির চেষ্টা করছি।

নজিপুর বঙ্গা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুম রেজা বলেন, আমরা স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ী। করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবসায়ী আমাদের কাঁচামাল বাকিতে দিচ্ছে না। তাদের ভাষ্য তারা বাকিতে পাচ্ছে না। এ কারণে আমাদেরও বাকিতে দিতে চাইছে না। আমরা যতটুকু পারছি নিজেদের চেষ্টায় বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে মালামাল কিনছি । বেসরকারি সংস্থা থেকে উচ্চ সুদের ওপর ঋণ নিতে হচ্ছে। কোন ব্যাংক আমাদের সহযোগিতা করছে না। ব্যাংক থেকে বলা হয় জামানত দিতে। কিন্তু ব্যাংকের চাহিদা মতো আমাদের পক্ষে জামানত দেয়া সম্ভব না। যদি সহজ শর্তে ব্যাংক থেকে ঋণ দেয়া হতো তাহলে আমাদের ব্যবসার পরিধি আরও বাড়ানো সম্ভব হতো। আমাদের এ উপজেলা থেকে প্রায় ১২শ’ টি মাড়াই মেশিন বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। আমার কারখানা থেকে গতবছর (২০২০) ৩৫টি এবং এ বছর ৫০টি মাড়াইকল বিক্রি করেছি। ব্যাংক ঋণের ব্যাপারে সরকার যদি আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করে তাহলে কৃষিক্ষেত্রে আরও বৈপ্লবিক পরিবর্তন করা সম্ভব বলে মনে করছি।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. শামসুল ওয়াদুদ বলেন, জেলার পতœীতলা, ধামইরহাট ও বদলগাছী উপজেলা যথেষ্ট ভাল ও মানসম্মত থ্রেসার (ধান মাড়াই মেশিন) তৈরি হয়। মাড়াই মেশিন এ জেলা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ এসে কারখানাগুলো দেখে গেছেন। আমরা এ শিল্পকে আরও সম্প্রসারণের জন্য চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের প্রকল্প আছে। কৃষকদের ভর্তুকির মাধ্যমে দেয়ায় এসব কারখানা থেকে আরও বেশি পরিমাণ মেশিন উৎপাদন হচ্ছে। আমরা চাই এ শিল্পটা আরও বেশি প্রসার লাভ করুক। কোন উদ্যোক্তার যদি ঋণের প্রয়োজন হয় আমরা চেষ্টা করবো ব্যাংক যেন সহজ শর্তে ঋণ দেয়। এতে করে যেন যান্ত্রিকীকরণ সহজ হয়।