করোনা, সংক্রমণের হটস্পটে রূপ নিচ্ছে ঢাকা

সীমান্ত জেলাগুলোতেও ঊর্ধ্বমুখী

ঢাকা ও সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে দ্রুত বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। তবে সংক্রমণের হটস্পটে রূপ নিচ্ছে ঢাকা মহানগরী। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় শুধুমাত্র ঢাকা মহানগরীতেই প্রায় এক হাজার ২০০ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে টানা চতুর্থ দিন দেশে দৈনিক হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হলো। সংক্রমণ হারও প্রায় সাত শতাংশে পৌঁছেছে।

গত একদিনে সারা দেশে প্রায় দেড় হাজার মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এটি গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর গত এক সপ্তাহে দেশে করোনা শনাক্ত ১১৫ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকালের মধ্যেই প্রজ্ঞাপন জারি করে নতুন নির্দেশনা দেয়া হবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘সংক্রমণ বাড়ছে। আমি আগেই বলেছিলাম, টিকা সংক্রমণ কমায় না, মৃত্যুর হার কমায়। মাস্ক পরা ছাড়া, স্বাস্থ্যবিধি মানা ছাড়া সংক্রমণ কমানো যাবে না। এটা আমাদের সবাইকে মানতে হবে।’

এদিকে করোনা সংক্রমণের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ নিয়ে গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, যারা বলছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তারা শুধু সংবেদনশীলতা সৃষ্টি করার জন্য করছে; অন্য কিছু নয়। তারা নানাভাবে গুজব ছড়ায়, সব সময়ই গুজব হয়। এই ধরনের গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।

করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত আসতে পারে-এমন ইঙ্গিত দিয়ে মন্ত্রী বলেন, যদি বন্ধ করতে হয় সরকার করবে। প্রয়োজনে বন্ধ করা হবে, কিন্তু যতক্ষণ না পর্যন্ত সেই প্রয়োজন অনুভূত হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বন্ধ করা হবে না।

শিক্ষামন্ত্রী গতকাল একটি বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে ঢাকা

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনে ঢাকা মহানগরীতে এক হাজার ১৯৬ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। আগের দিন ঢাকায় ৯২১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। এর আগে ৭ জানুয়ারি ঢাকায় ৯০২ জন, ৬ জানুয়ারি ৯৫০ জন ও ৫ জানুয়ারি ৭২৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়।

ঢাকা বিভাগের মধ্যে একদিনে গাজীপুরে ২৭ জন, নারায়ণগঞ্জে ১০ জন, ফরিদপুর ও টাঙ্গাইলে পাঁচজন করে রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছে অধিদপ্তর।

সীমান্ত জেলায় সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী

ঢাকার পাশাপাশি সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ বাড়ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১০৪ জনের দেহে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া কক্সবাজারে ১৬ জন, কুমিল্লায় চারজন, রাজশাহীতে ১৪ জন, জয়পুরহাটে চারজন, নাটোরে ছয়জন, চাপাইনবাবগঞ্জে একজন, দিনাজপুরে সাতজন, যশোরে ২১ জন, খুলনায় তিনজন ও সিলেটে ২৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

এর আগের দিন চট্টগ্রামে ৭৬ জন, কক্সবাজারে ২৭ জন ও সিলেটে ১৪ জনের করোনা শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সাত দিনে শনাক্ত বেড়েছে

১১৫ শতাংশ

গত সাত দিনে দেশে করোনা শনাক্ত ১১৫ শতাংশ বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম গতকাল দুপুরে নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, শনিবার পর্যন্ত গত এক সপ্তাহে দেশে ছয় হাজার ৩০০ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এই সংখ্যা এর আগের সপ্তাহের তুলনায় তিন হাজার ৩৭৬ জন বেশি। এ হিসাবে, এক সপ্তাহে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ১১৫ শতাংশ।

নাজমুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহে করোনায় ২৩ জন মারা গেছেন। এটি এর আগের সপ্তাহের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি।

দেশে গত কয়েক দিনে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ও সংক্রমণ হার উভয়ই বেড়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই পরিচালক বলেন, ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকেও শনাক্তের হার দুই শতাংশের নিচে ছিল। গত শনিবার এটি প্রায় ৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে।

ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, গত ৩০ দিনের চিত্রের দিকে তাকালে একটি ঊর্ধ্বমুখী চিত্র চোখে পড়ে। সারা বিশ্বে করোনা পরিস্থিতি দিন দিন নাজুক হয়ে যাচ্ছে। ইউরোপে ওমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে ব্যাপকভাবে।

দেশে ওমিক্রন আক্রান্ত ব্যক্তিদের শারীরিক অবস্থা ও সংখ্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ওমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অনেকে একেবারেই সুস্থ আছেন। সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরেছেন। যথাসময়ে চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে। তাহলে যেকোন রোগ দ্রুত সারানো সম্ভব হবে।’

দেশের ১১৮টি হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে উল্লেখ করে নাজমুল ইসলাম জানান, ঢাকায় সামগ্রিকভাবে কোভিড হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা চার হাজার ৬১৬টি। এর মধ্যে খালি আছে চার হাজার ১৭৯টি।

তিনি সংক্রমণ প্রতিরোধে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি, মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘মাস্ক আমার, সুরক্ষা সবার এ কথাটি আমাদের স্মরণে রাখতে হবে সব সময়।’

২৪ ঘণ্টয় সংক্রমণ হার ৭ শতাংশের কাছাকাছি

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে এক হাজার ৪৯১ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এদিন করোনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। একদিনে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত ২১ সেপ্টেম্বর; ওইদিন এক হাজার ৫৬২ জনের দেহে করোনার জীবাণু শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

একদিনে শনাক্ত হওয়া রোগীদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫ লাখ ৯৩ হাজার ৭০০ জনে। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ২৮ হাজার ১০২ জন।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২১ হাজার ৯৮০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক ৭৮ শতাংশ।

এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে রোগী শনাক্তের হার ছিল সাত দশমিক ৬৯ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক কোটি ১৬ লাখ ৭১ হাজার ৭৯৫টি। এ হিসাবে মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আর শনাক্ত অনুপাতে এ পর্যন্ত মৃত্যুর হার এক দশমিক ৭৬ শতাংশ।

গত একদিনে ২৯টি জেলায় কারও করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। তবে এদিন যে তিন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে দুজন নারী ও একজন পুরুষ। দুজন ঢাকার ও অপরজন চট্টগ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। এর মধ্যে দুজনের বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে এবং আরেকজনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকবে Ñশিক্ষামন্ত্রী

করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে (গতকাল) রাতে করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে সভা ছিল জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে কী কী অপশন আছে, স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি বজায় রেখে এবং সবাইকে কীভাবে করোনার টিকার আওতায় এনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যায়, সে ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হবে।

মন্ত্রী বলেন?, ‘তবে এটাও ঠিক, যদি মনে হয় খোলা রাখলে সংক্রমণ বাড়বে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখালে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা থাকবে তখন হয়তো বন্ধ করে দেয়া হবে। কিন্তু এখন যে অবস্থা আছে, তাতে আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সুরক্ষিত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়।’

সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে ডা. দীপু মনি বলেন, ‘সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতেই হয় তাহলে আমরাই বলব। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে যাক।’

সোমবার, ১০ জানুয়ারী ২০২২ , ২৬ পৌষ ১৪২৮ ৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

করোনা, সংক্রমণের হটস্পটে রূপ নিচ্ছে ঢাকা

সীমান্ত জেলাগুলোতেও ঊর্ধ্বমুখী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

ঢাকা ও সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে দ্রুত বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। তবে সংক্রমণের হটস্পটে রূপ নিচ্ছে ঢাকা মহানগরী। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় শুধুমাত্র ঢাকা মহানগরীতেই প্রায় এক হাজার ২০০ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে টানা চতুর্থ দিন দেশে দৈনিক হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হলো। সংক্রমণ হারও প্রায় সাত শতাংশে পৌঁছেছে।

গত একদিনে সারা দেশে প্রায় দেড় হাজার মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এটি গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর গত এক সপ্তাহে দেশে করোনা শনাক্ত ১১৫ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকালের মধ্যেই প্রজ্ঞাপন জারি করে নতুন নির্দেশনা দেয়া হবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘সংক্রমণ বাড়ছে। আমি আগেই বলেছিলাম, টিকা সংক্রমণ কমায় না, মৃত্যুর হার কমায়। মাস্ক পরা ছাড়া, স্বাস্থ্যবিধি মানা ছাড়া সংক্রমণ কমানো যাবে না। এটা আমাদের সবাইকে মানতে হবে।’

এদিকে করোনা সংক্রমণের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ নিয়ে গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, যারা বলছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তারা শুধু সংবেদনশীলতা সৃষ্টি করার জন্য করছে; অন্য কিছু নয়। তারা নানাভাবে গুজব ছড়ায়, সব সময়ই গুজব হয়। এই ধরনের গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।

করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত আসতে পারে-এমন ইঙ্গিত দিয়ে মন্ত্রী বলেন, যদি বন্ধ করতে হয় সরকার করবে। প্রয়োজনে বন্ধ করা হবে, কিন্তু যতক্ষণ না পর্যন্ত সেই প্রয়োজন অনুভূত হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বন্ধ করা হবে না।

শিক্ষামন্ত্রী গতকাল একটি বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে ঢাকা

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনে ঢাকা মহানগরীতে এক হাজার ১৯৬ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। আগের দিন ঢাকায় ৯২১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। এর আগে ৭ জানুয়ারি ঢাকায় ৯০২ জন, ৬ জানুয়ারি ৯৫০ জন ও ৫ জানুয়ারি ৭২৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়।

ঢাকা বিভাগের মধ্যে একদিনে গাজীপুরে ২৭ জন, নারায়ণগঞ্জে ১০ জন, ফরিদপুর ও টাঙ্গাইলে পাঁচজন করে রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছে অধিদপ্তর।

সীমান্ত জেলায় সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী

ঢাকার পাশাপাশি সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ বাড়ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১০৪ জনের দেহে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া কক্সবাজারে ১৬ জন, কুমিল্লায় চারজন, রাজশাহীতে ১৪ জন, জয়পুরহাটে চারজন, নাটোরে ছয়জন, চাপাইনবাবগঞ্জে একজন, দিনাজপুরে সাতজন, যশোরে ২১ জন, খুলনায় তিনজন ও সিলেটে ২৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

এর আগের দিন চট্টগ্রামে ৭৬ জন, কক্সবাজারে ২৭ জন ও সিলেটে ১৪ জনের করোনা শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সাত দিনে শনাক্ত বেড়েছে

১১৫ শতাংশ

গত সাত দিনে দেশে করোনা শনাক্ত ১১৫ শতাংশ বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম গতকাল দুপুরে নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, শনিবার পর্যন্ত গত এক সপ্তাহে দেশে ছয় হাজার ৩০০ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এই সংখ্যা এর আগের সপ্তাহের তুলনায় তিন হাজার ৩৭৬ জন বেশি। এ হিসাবে, এক সপ্তাহে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ১১৫ শতাংশ।

নাজমুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহে করোনায় ২৩ জন মারা গেছেন। এটি এর আগের সপ্তাহের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি।

দেশে গত কয়েক দিনে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ও সংক্রমণ হার উভয়ই বেড়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই পরিচালক বলেন, ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকেও শনাক্তের হার দুই শতাংশের নিচে ছিল। গত শনিবার এটি প্রায় ৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে।

ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, গত ৩০ দিনের চিত্রের দিকে তাকালে একটি ঊর্ধ্বমুখী চিত্র চোখে পড়ে। সারা বিশ্বে করোনা পরিস্থিতি দিন দিন নাজুক হয়ে যাচ্ছে। ইউরোপে ওমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে ব্যাপকভাবে।

দেশে ওমিক্রন আক্রান্ত ব্যক্তিদের শারীরিক অবস্থা ও সংখ্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ওমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অনেকে একেবারেই সুস্থ আছেন। সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরেছেন। যথাসময়ে চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে। তাহলে যেকোন রোগ দ্রুত সারানো সম্ভব হবে।’

দেশের ১১৮টি হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে উল্লেখ করে নাজমুল ইসলাম জানান, ঢাকায় সামগ্রিকভাবে কোভিড হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা চার হাজার ৬১৬টি। এর মধ্যে খালি আছে চার হাজার ১৭৯টি।

তিনি সংক্রমণ প্রতিরোধে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি, মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘মাস্ক আমার, সুরক্ষা সবার এ কথাটি আমাদের স্মরণে রাখতে হবে সব সময়।’

২৪ ঘণ্টয় সংক্রমণ হার ৭ শতাংশের কাছাকাছি

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে এক হাজার ৪৯১ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এদিন করোনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। একদিনে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত ২১ সেপ্টেম্বর; ওইদিন এক হাজার ৫৬২ জনের দেহে করোনার জীবাণু শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

একদিনে শনাক্ত হওয়া রোগীদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫ লাখ ৯৩ হাজার ৭০০ জনে। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ২৮ হাজার ১০২ জন।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২১ হাজার ৯৮০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক ৭৮ শতাংশ।

এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে রোগী শনাক্তের হার ছিল সাত দশমিক ৬৯ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক কোটি ১৬ লাখ ৭১ হাজার ৭৯৫টি। এ হিসাবে মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আর শনাক্ত অনুপাতে এ পর্যন্ত মৃত্যুর হার এক দশমিক ৭৬ শতাংশ।

গত একদিনে ২৯টি জেলায় কারও করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। তবে এদিন যে তিন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে দুজন নারী ও একজন পুরুষ। দুজন ঢাকার ও অপরজন চট্টগ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। এর মধ্যে দুজনের বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে এবং আরেকজনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকবে Ñশিক্ষামন্ত্রী

করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে (গতকাল) রাতে করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে সভা ছিল জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে কী কী অপশন আছে, স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি বজায় রেখে এবং সবাইকে কীভাবে করোনার টিকার আওতায় এনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যায়, সে ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হবে।

মন্ত্রী বলেন?, ‘তবে এটাও ঠিক, যদি মনে হয় খোলা রাখলে সংক্রমণ বাড়বে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখালে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা থাকবে তখন হয়তো বন্ধ করে দেয়া হবে। কিন্তু এখন যে অবস্থা আছে, তাতে আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সুরক্ষিত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়।’

সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে ডা. দীপু মনি বলেন, ‘সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতেই হয় তাহলে আমরাই বলব। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে যাক।’