হেলপার থেকে ড্রাইভার ছিল না বৈধ লাইসেন্স

রাজধানীর গুলিস্তানে হানিফ ফ্লাইওভারে বাসচাপায় দুই পথচারী নিহত হওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত মেঘলা পরিবহনের চালক রাকিব শরীফকে (২৫) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গত শনিবার রাতে রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর জানা যায়, চালক রাকিব আগে ওই মেঘনা পরিবহনে হেলপারি করতেন। তিনি হেলপার থেকে ড্রাইভার হয়েছেন। তার ছিল না কোন বৈধ লাইসেন্স। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র?্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গত শনিবার গুলিস্তানের হানিফ ফ্লাইওভারে সকাল সাড় ৯টায় মেঘলা পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কয়েকজন পথচারীকে ধাক্কা দেয়। পরে গুরুতর অবস্থায় শেখ ফরিদ (২৮) ও মো. বাদশা মিয়াকে (৩২) ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। ওই ঘটনার পরে বাসটির চালক পালিয়ে যায়। পরে নিহতের পরিবারের সদস্যরা সড়ক ও পরিবহন আইন ২০১৮ এর ৯৮ ও ১০৫ ধারায় ওয়ারী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-০৭। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৩ সদস্যরা আভিযান চালিয়ে রাকিবকে গ্রেপ্তার করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত রাকিব সড়ক দুর্ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে স্বীকার করেন।

বাসচালক রাকিবকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে খন্দকার কমান্ডার আল মঈন বলেন, রাকিব ৭-৮ বছর আগে থেকে মেঘলা পরিবহনে বাসের হেলপারি করে আসছে। বাসের হেলপারি করার পাশাপাশি সে ড্রাইভিংয়ের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। পরবর্তীতে বাসের হেলপারি ছেড়ে দিয়ে নিজে গাড়ি চালানোর জন্য মেঘলা পরিবহনের বিভিন্ন মালিকদের ড্রাইভার হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু গ্রেপ্তারকৃত রাকিবের কোন বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় প্রাথমিক পর্যায়ে কোন মালিক তাকে গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়নি।

পরবর্তীতে সে বিভিন্ন তদবিরের মাধ্যমে মেঘলা পরিবহনের বিভিন্ন মালিকদের গাড়ি সাময়িকভাবে চালানো শুরু করে। ২০১৯ সালে সে হালকা মোটরযান ড্রাইভিং লাইসেন্স (পেশাদার) পায়। ওই হালকা মোটরযান ড্রাইভিং লাইসেন্স (পেশাদার) দিয়েই সে ভারী মোটরযান চালানো শুরু করে। কিন্তু তার ভারী মোটরযান চালানোর মতো কোন বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স (পেশাদার) ছিল না।

তিনি আরও বলেন, গত ১৫ দিন আগে বাসটির মালিক সবুর মিয়ার (৫০) কাছ থেকে দৈনিক দুই হাজার ২৫০ টাকা হারে বাসটি ভাড়ায় চালানো শুরু করে। গত শনিবার সকালে ভুলতা গাউছিয়া থেকে গুলিস্তানের উদ্দেশে ছেড়ে আসে বাসটি। পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে গুলিস্তান সংযোগে নামার সময় বাসটির অধিক গতি থাকার কারণে এবং ব্রেকে কাজ না করায় বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার বাম পাশে আইলেনের সঙ্গে ঘেঁষে নামতে থাকে। এই সময় ফ্লাইওভারে অন্য একটি বাস হতে যাত্রী নামছিল। তাদের মধ্যে হতে কয়েকজন পথচারীকে ধাক্কা দেয়। এতে দুইজন মারা যায়।

র?্যাবের মুখপাত্র বলেন, গাড়ির দৈনিক চুক্তিভিত্তিক ভাড়া মালিককে পরিশোধ করার জন্য এবং অধিক মুনাফা লাভের উদ্দেশে সে ট্রিপ সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য প্রতিযোগিতামূলক বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাত। অধিক গতি থাকার কারণে ফ্লাইওভার দিয়ে নামার সময় গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে রাকিব পথচারীদের চাপা দেয়। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। চালক গ্রেপ্তার হলেও বাসের মালিকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি-না জানতে চাইলে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ওয়ারী থানায় দায়ের করা মামলাটির তদন্ত করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তদন্তে বাস মালিকের কোন ব্যত্যয় বা দায় থাকলে অবশ্যই তা তদন্তে উঠে আসবে।

সোমবার, ১০ জানুয়ারী ২০২২ , ২৬ পৌষ ১৪২৮ ৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

গুলিস্তানে বাসচাপায় পথচারী নিহত

হেলপার থেকে ড্রাইভার ছিল না বৈধ লাইসেন্স

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রাজধানীর গুলিস্তানে হানিফ ফ্লাইওভারে বাসচাপায় দুই পথচারী নিহত হওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত মেঘলা পরিবহনের চালক রাকিব শরীফকে (২৫) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গত শনিবার রাতে রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর জানা যায়, চালক রাকিব আগে ওই মেঘনা পরিবহনে হেলপারি করতেন। তিনি হেলপার থেকে ড্রাইভার হয়েছেন। তার ছিল না কোন বৈধ লাইসেন্স। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র?্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গত শনিবার গুলিস্তানের হানিফ ফ্লাইওভারে সকাল সাড় ৯টায় মেঘলা পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কয়েকজন পথচারীকে ধাক্কা দেয়। পরে গুরুতর অবস্থায় শেখ ফরিদ (২৮) ও মো. বাদশা মিয়াকে (৩২) ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। ওই ঘটনার পরে বাসটির চালক পালিয়ে যায়। পরে নিহতের পরিবারের সদস্যরা সড়ক ও পরিবহন আইন ২০১৮ এর ৯৮ ও ১০৫ ধারায় ওয়ারী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-০৭। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৩ সদস্যরা আভিযান চালিয়ে রাকিবকে গ্রেপ্তার করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত রাকিব সড়ক দুর্ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে স্বীকার করেন।

বাসচালক রাকিবকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে খন্দকার কমান্ডার আল মঈন বলেন, রাকিব ৭-৮ বছর আগে থেকে মেঘলা পরিবহনে বাসের হেলপারি করে আসছে। বাসের হেলপারি করার পাশাপাশি সে ড্রাইভিংয়ের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। পরবর্তীতে বাসের হেলপারি ছেড়ে দিয়ে নিজে গাড়ি চালানোর জন্য মেঘলা পরিবহনের বিভিন্ন মালিকদের ড্রাইভার হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু গ্রেপ্তারকৃত রাকিবের কোন বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় প্রাথমিক পর্যায়ে কোন মালিক তাকে গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়নি।

পরবর্তীতে সে বিভিন্ন তদবিরের মাধ্যমে মেঘলা পরিবহনের বিভিন্ন মালিকদের গাড়ি সাময়িকভাবে চালানো শুরু করে। ২০১৯ সালে সে হালকা মোটরযান ড্রাইভিং লাইসেন্স (পেশাদার) পায়। ওই হালকা মোটরযান ড্রাইভিং লাইসেন্স (পেশাদার) দিয়েই সে ভারী মোটরযান চালানো শুরু করে। কিন্তু তার ভারী মোটরযান চালানোর মতো কোন বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স (পেশাদার) ছিল না।

তিনি আরও বলেন, গত ১৫ দিন আগে বাসটির মালিক সবুর মিয়ার (৫০) কাছ থেকে দৈনিক দুই হাজার ২৫০ টাকা হারে বাসটি ভাড়ায় চালানো শুরু করে। গত শনিবার সকালে ভুলতা গাউছিয়া থেকে গুলিস্তানের উদ্দেশে ছেড়ে আসে বাসটি। পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে গুলিস্তান সংযোগে নামার সময় বাসটির অধিক গতি থাকার কারণে এবং ব্রেকে কাজ না করায় বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার বাম পাশে আইলেনের সঙ্গে ঘেঁষে নামতে থাকে। এই সময় ফ্লাইওভারে অন্য একটি বাস হতে যাত্রী নামছিল। তাদের মধ্যে হতে কয়েকজন পথচারীকে ধাক্কা দেয়। এতে দুইজন মারা যায়।

র?্যাবের মুখপাত্র বলেন, গাড়ির দৈনিক চুক্তিভিত্তিক ভাড়া মালিককে পরিশোধ করার জন্য এবং অধিক মুনাফা লাভের উদ্দেশে সে ট্রিপ সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য প্রতিযোগিতামূলক বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাত। অধিক গতি থাকার কারণে ফ্লাইওভার দিয়ে নামার সময় গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে রাকিব পথচারীদের চাপা দেয়। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। চালক গ্রেপ্তার হলেও বাসের মালিকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি-না জানতে চাইলে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ওয়ারী থানায় দায়ের করা মামলাটির তদন্ত করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তদন্তে বাস মালিকের কোন ব্যত্যয় বা দায় থাকলে অবশ্যই তা তদন্তে উঠে আসবে।