‘শামীম ওসমানের পায়ে হাঁটার মতো অবস্থা তৈমুরের হয় নাই’
দলের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকারের পক্ষে কাজ করছেন সরকারদলীয় সাংসদ শামীম ওসমান। নৌকার প্রার্থীর এমন অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নতুন করে উত্তাপ সৃষ্টি করেছে। গতকাল নগরীর ২২নং ওয়ার্ডে প্রচারণার সময়ও সাংবাদিকদের সামনে একই অভিযোগ করেন তিনি। আইভী আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জের জনগণ কখনই সন্ত্রাসী, খুনি বা গডফাদারদের গ্রহণ করেনি। বিগত নির্বাচনগুলোতেই তা প্রমাণিত হয়েছে। এইবারও একই ঘটনা ঘটবে। জনগণ তাকেই পুনরায় নির্বাচিত করবে।
তিনি আরও বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের ভোটাররা আমার কথা বলে, ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আমার কথা বলে। আমার বিরুদ্ধে পচুর অপপ্রচার চালানো হয়েছে, বিভ্রান্ত করা হয়েছে। ধর্মীয় উসকানি দেয়া হয়েছে। কোনটাতেই কাজ হয়নি। আগেও হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। আমি বিভিন্ন ধর্মের জন্য কাজ করেছি। আশা করি মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান কেউ অপপ্রচারে কান দিবে না। সাধারণ মানুষ আমার পাশে থাকবে। তারা ভয় পাবে না।’
শামীম ওসমানকে ‘গডফাদার’ বলা প্রসঙ্গে আইভী বলেন, ‘আমি শামীম ওসমানকে গডফাদার উপাধি দেইনি। এটা তার দীর্ঘদিনের উপাধি। শুধু নারায়ণগঞ্জ না সারা বাংলাদেশ তা জানে। আওয়ামী লীগ একটি বিশাল বড় দল। এখানে সবার স্থান আছে। যারা চলে যাওয়ার তারা চলে যাবে আর যারা টিকে থাকার তারা থাকবে। কে কী বলল, কে কী করল তাতে প্রধানমন্ত্রীর কিছু যায় আসে না।’
প্রচারণায় আইভীর সঙ্গে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুল কাদির, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক রানু খন্দকার, নাসিকের ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান আহমেদ ভূঁইয়া, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর শাওন অংকন প্রমুখ।
শামীম ওসমানের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ অস্বীকার তৈমুরের
এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (নাসিক) ‘ওসমান পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতার’ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকার। তিনি বলেন, শামীম ওসমানের পায়ে হাঁটার মতো অবস্থা তৈমুর আলম খন্দকারের হয় নাই। নির্বাচনে শামীম ওসমান বা কারোর প্রয়োজন তার হবে না। গতকাল বিকেলে নগরীর মাসদাইরে নিজ বাড়িতে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তৈমুর।
গত শনিবার আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী অভিযোগ করেন, তৈমুর আলম খন্দকার আওয়ামী লীগের সাংসদ এ কে এম শামীম ওসমানের প্রার্থী। তার ভাই জাতীয় পার্টির সাংসদ এ কে এম সেলিম ওসমানও তৈমুরের পক্ষে আছেন বলে অভিযোগ আইভীর।
এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন তৈমুর আলম খন্দকার। তিনি বলেন, তার প্রার্থীতার সঙ্গে ওসমান পরিবারের সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রসঙ্গ পরিষ্কার করতেই এই সংবাদ সম্মেলন। সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর পর্বে যাওয়ার পূর্বে ৮ পৃষ্ঠার একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তিনি। ওই বক্তব্যে শেষাংশে তৈমুর আলম বলেন, ‘সরকারদলীয় মেয়র প্রার্থী রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত মন্তব্য করেছেন। শামীম ওসমান সরকারদলীয় এমপি আর সেলিম ওসমান সরকারদলীয় জোটবদ্ধ জাতীয় পার্টির এমপি। আমি প্রথম দিন থেকেই বলছি, শামীম ওসমানের পায়ে তৈমুর আলম খন্দকার হাঁটে না। গত ৫০ বছর ধরে মাটি ও মানুষের সঙ্গে রাজনীতি করতে করতে তৈমুর আলমের ভিত্তি এতটাই শক্ত অবস্থান হয়েছে যে, কোন শামীম ওসমান বা সেলিম ওসমানের হয়ে আমাকে নির্বাচনে অভিনয়ে নামতে হবে না।’
তবে এমন অভিযোগ ওঠার কারণ জানতে চাইলে তিনি উত্তর দেননি। ‘শামীম ওসমান তাকে সমর্থন দিচ্ছেন এমন আলোচনা সাধারণ জনগণ কীভাবে নিচ্ছেন’ জানতে চাইলে তৈমুর বলেন, সাধারণ জনগণ মনে করতেছে যে, আমার দল বিএনপি ঐক্যবদ্ধ এবং সরকারি দল দ্বিধা-বিভক্ত। আমার কোন ক্ষতি হচ্ছে না।
ছাত্রলীগ নেতার অভিযোগ
সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে প্রশাসনিকভাবে চাপ দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ। সাংসদ শামীম ওসমান অনুসারী এই ছাত্রলীগ নেতা অভিযোগ করে বলেন, গত শনিবার রাতে তার বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালায়। পরে তারা নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে।
এদিকে গত শনিবার মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগÑ তারা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন না। উল্টো বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
মহানগর ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি রিয়াদ জানান, রাত ১০টার দিকে হঠাৎ করে আমার বাসায় ডিবি, পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর ১৫ গাড়িতে প্রশাসনের লোকজন এসেছে। এবং তারা এসে বলেছে, নৌকার সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে প্রচারণা করার জন্য। এবং তারা প্রচারণা করার জন্য চাপ দিচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান সংবাদকে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য নিয়মিত কার্যক্রম হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নেয়া হয়েছে। তবে কোন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগ সঠিক নয়। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে বদ্ধপরিকর জেলা পুলিশ।
সোমবার, ১০ জানুয়ারী ২০২২ , ২৬ পৌষ ১৪২৮ ৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৩
‘শামীম ওসমানের পায়ে হাঁটার মতো অবস্থা তৈমুরের হয় নাই’
প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ
দলের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকারের পক্ষে কাজ করছেন সরকারদলীয় সাংসদ শামীম ওসমান। নৌকার প্রার্থীর এমন অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নতুন করে উত্তাপ সৃষ্টি করেছে। গতকাল নগরীর ২২নং ওয়ার্ডে প্রচারণার সময়ও সাংবাদিকদের সামনে একই অভিযোগ করেন তিনি। আইভী আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জের জনগণ কখনই সন্ত্রাসী, খুনি বা গডফাদারদের গ্রহণ করেনি। বিগত নির্বাচনগুলোতেই তা প্রমাণিত হয়েছে। এইবারও একই ঘটনা ঘটবে। জনগণ তাকেই পুনরায় নির্বাচিত করবে।
তিনি আরও বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের ভোটাররা আমার কথা বলে, ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আমার কথা বলে। আমার বিরুদ্ধে পচুর অপপ্রচার চালানো হয়েছে, বিভ্রান্ত করা হয়েছে। ধর্মীয় উসকানি দেয়া হয়েছে। কোনটাতেই কাজ হয়নি। আগেও হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। আমি বিভিন্ন ধর্মের জন্য কাজ করেছি। আশা করি মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান কেউ অপপ্রচারে কান দিবে না। সাধারণ মানুষ আমার পাশে থাকবে। তারা ভয় পাবে না।’
শামীম ওসমানকে ‘গডফাদার’ বলা প্রসঙ্গে আইভী বলেন, ‘আমি শামীম ওসমানকে গডফাদার উপাধি দেইনি। এটা তার দীর্ঘদিনের উপাধি। শুধু নারায়ণগঞ্জ না সারা বাংলাদেশ তা জানে। আওয়ামী লীগ একটি বিশাল বড় দল। এখানে সবার স্থান আছে। যারা চলে যাওয়ার তারা চলে যাবে আর যারা টিকে থাকার তারা থাকবে। কে কী বলল, কে কী করল তাতে প্রধানমন্ত্রীর কিছু যায় আসে না।’
প্রচারণায় আইভীর সঙ্গে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুল কাদির, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক রানু খন্দকার, নাসিকের ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান আহমেদ ভূঁইয়া, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর শাওন অংকন প্রমুখ।
শামীম ওসমানের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ অস্বীকার তৈমুরের
এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (নাসিক) ‘ওসমান পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতার’ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকার। তিনি বলেন, শামীম ওসমানের পায়ে হাঁটার মতো অবস্থা তৈমুর আলম খন্দকারের হয় নাই। নির্বাচনে শামীম ওসমান বা কারোর প্রয়োজন তার হবে না। গতকাল বিকেলে নগরীর মাসদাইরে নিজ বাড়িতে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তৈমুর।
গত শনিবার আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী অভিযোগ করেন, তৈমুর আলম খন্দকার আওয়ামী লীগের সাংসদ এ কে এম শামীম ওসমানের প্রার্থী। তার ভাই জাতীয় পার্টির সাংসদ এ কে এম সেলিম ওসমানও তৈমুরের পক্ষে আছেন বলে অভিযোগ আইভীর।
এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন তৈমুর আলম খন্দকার। তিনি বলেন, তার প্রার্থীতার সঙ্গে ওসমান পরিবারের সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রসঙ্গ পরিষ্কার করতেই এই সংবাদ সম্মেলন। সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর পর্বে যাওয়ার পূর্বে ৮ পৃষ্ঠার একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তিনি। ওই বক্তব্যে শেষাংশে তৈমুর আলম বলেন, ‘সরকারদলীয় মেয়র প্রার্থী রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত মন্তব্য করেছেন। শামীম ওসমান সরকারদলীয় এমপি আর সেলিম ওসমান সরকারদলীয় জোটবদ্ধ জাতীয় পার্টির এমপি। আমি প্রথম দিন থেকেই বলছি, শামীম ওসমানের পায়ে তৈমুর আলম খন্দকার হাঁটে না। গত ৫০ বছর ধরে মাটি ও মানুষের সঙ্গে রাজনীতি করতে করতে তৈমুর আলমের ভিত্তি এতটাই শক্ত অবস্থান হয়েছে যে, কোন শামীম ওসমান বা সেলিম ওসমানের হয়ে আমাকে নির্বাচনে অভিনয়ে নামতে হবে না।’
তবে এমন অভিযোগ ওঠার কারণ জানতে চাইলে তিনি উত্তর দেননি। ‘শামীম ওসমান তাকে সমর্থন দিচ্ছেন এমন আলোচনা সাধারণ জনগণ কীভাবে নিচ্ছেন’ জানতে চাইলে তৈমুর বলেন, সাধারণ জনগণ মনে করতেছে যে, আমার দল বিএনপি ঐক্যবদ্ধ এবং সরকারি দল দ্বিধা-বিভক্ত। আমার কোন ক্ষতি হচ্ছে না।
ছাত্রলীগ নেতার অভিযোগ
সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে প্রশাসনিকভাবে চাপ দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ। সাংসদ শামীম ওসমান অনুসারী এই ছাত্রলীগ নেতা অভিযোগ করে বলেন, গত শনিবার রাতে তার বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালায়। পরে তারা নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে।
এদিকে গত শনিবার মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগÑ তারা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন না। উল্টো বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
মহানগর ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি রিয়াদ জানান, রাত ১০টার দিকে হঠাৎ করে আমার বাসায় ডিবি, পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর ১৫ গাড়িতে প্রশাসনের লোকজন এসেছে। এবং তারা এসে বলেছে, নৌকার সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে প্রচারণা করার জন্য। এবং তারা প্রচারণা করার জন্য চাপ দিচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান সংবাদকে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য নিয়মিত কার্যক্রম হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নেয়া হয়েছে। তবে কোন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগ সঠিক নয়। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে বদ্ধপরিকর জেলা পুলিশ।