লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। একদিনেই দেশে দুই হাজার ২৩১ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, যা প্রায় চারমাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। আগের দিন দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছিল এক হাজার ৪৯১ জনের। এ হিসাবে একদিনেই শনাক্ত বেড়েছে ৬৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
একদিনে শুধুমাত্র ঢাকা মহানগরীতেই শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৮৭১ জন কোভিড রোগী। এদিন ঢাকায় মোট নমুনা পরীক্ষা হয় ১৮ হাজার ৯৪৪টি। এ হিসাবে ঢাকা মহানগরীতে নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণ হার ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’র প্রাদুর্ভাব এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে দেশে সংক্রমণ বাড়ছে বলে ধারণা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। দেশে আরও নয়জনের শরীরে ‘ওমিক্রন’ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট ৩০ জনের দেহে ওমিক্রন শনাক্তের তথ্য পাওয়া গেছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর সংবাদকে জানিয়েছেন, দেশে ওমিক্রনের সংক্রমণ তেমন ছড়ায়নি। মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, যার কারণে সংক্রমণ বাড়ছে। তিনি মনে করছেন, এখনও করোনার ডেল্টা ধরনই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।
লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ
শনাক্তের সংখ্যার পাশাপাশি নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে করোনা শনাক্তের হারও বাড়ছে। পরীক্ষা বিবেচনায় দৈনিক এক থেকে দেড় শতাংশ বাড়ছে সংক্রমণ হার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছেন দুই হাজার ২৩১ জন। সর্বশেষ একদিনে এরচেয়ে বেশি কোভিড শনাক্ত হয়েছিল গত ১০ সেপ্টেম্বর। ওইদিন দুই হাজার ৩২৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছিল। তবে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ছিল আট দশমিক ৫৩ শতাংশ।
আগের দিন পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ছয় দশমিক ৭৮ শতাংশ। এ হিসাবে একদিনেই কোভিড শনাক্তের হার পৌনে দুই শতাংশ বেড়েছে। এরআগে ৮ জানুয়ারি পরীক্ষা অনুপাতে রোগী শনাক্তের হার ছিল পাঁচ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হওয়া রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত হলেন ১৫ লাখ ৯৫ হাজার ৯৩১ জন। আর এদিন করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন তিনজন। তাদের নিয়ে দেশে মোট ২৮ হাজার ১০৫ জনের মৃত্যু হলো।
করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২০৮ জন। এ নিয়ে দেশে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে মোট ১৫ লাখ ৫১ হাজার ১১৩ জন সুস্থ হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২৬ হাজার ১৪৩টি। দেশে এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক কোটি ১৬ লাখ ৯৭ হাজার ৯৩৮টি।
এ পর্যন্ত করোনা শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ, শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৭৬ শতাংশ।
একদিনে মারা যাওয়া তিনজনই পুরুষ। তাদের নিয়ে দেশে করোনায় মোট মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে পুরুষ ১৭ হাজার ৯৭৩ জন এবং নারী ছিলেন দশ হাজার ১৩২ জন।
একদিনে মারা যাওয়া তিন জনেরই বয়স ছিল ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। এরমধ্যে ঢাকার একজন, নারায়নগঞ্জের একজন এবং বগুড়ায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনজনই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
ওমিক্রন শনাক্ত পৌঁছালো ৩০ জনে :
দেশে ওমিক্রণ শনাক্ত পৌঁছালো ৩০ জনে। গতকাল নতুন করে নয়জনের শরীরে করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তাদের সবাই ঢাকা মহানগরীর বাসিন্দা। এ নিয়ে মোট শনাক্ত ওমিক্রনের রোগী বেড়ে দাঁড়ালো ৩০ জনে।
রোগীর শরীর থেকে নেয়া করোনাভাইরাসের নমুনার জিন বিন্যাস (জিনোম সিকোয়েন্সিং) বিশ্লেষণ করে ওমিক্রন সংক্রমণের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা (জিআইএসএআইডি)।
দেশে গত ১১ ডিসেম্বর প্রথম ওমিক্রনের সংক্রমণ শনাক্তের ঘোষণা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সর্বশেষ শনাক্ত ৯ জনের মধ্যে ছয়জন মহাখালী এবং তিনজন বাসাবো এলাকার বাসিন্দা।
মহাখালীর বাসিন্দাদের মধ্যে ছয়জন নারী, যাদের বয়স ১৮ থেকে ৫২ বছরের মধ্যে। তবে বাসাবোতে শনাক্ত দু’জনের বয়স ৫১ ও ৩০ বছর, তারা পুরুষ এবং অন্যজন ৫৬ বছর বয়সী নারী।
জিআইএসএআইডি জানিয়েছে, ২৯ ডিসেম্বর থেকে গত ৩ জানুয়ারির মধ্যে তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। এগুলোর জিনোম সিকোয়েন্সিং করে তা জিআইএসএআইডিতে জমা দেয় ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়া ডিজিজ রিসার্স সেন্টার, বাংলাদেশ-আইসিডিডিআরবি।
আইইডিসিআর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, বিদেশ থেকে আসা কারও করোনা শনাক্ত হলে তাদের শরীর থেকে ভাইরাসের নমুনা নিয়ে জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হচ্ছে। এছাড়া আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কাছ থেকেও নমুনা নিয়ে জিনোম সিকোয়েন্স করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আক্রান্তদের সংস্পর্শে এসে কয়েকজনের ওমিক্রন শনাক্তের তথ্য পেয়েছে আইইডিসিআর। সংস্থাটির ধারণা, করোনা সংক্রমণ আরও বাড়বে।
মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারী ২০২২ , ২৭ পৌষ ১৪২৮ ৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। একদিনেই দেশে দুই হাজার ২৩১ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, যা প্রায় চারমাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। আগের দিন দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছিল এক হাজার ৪৯১ জনের। এ হিসাবে একদিনেই শনাক্ত বেড়েছে ৬৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
একদিনে শুধুমাত্র ঢাকা মহানগরীতেই শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৮৭১ জন কোভিড রোগী। এদিন ঢাকায় মোট নমুনা পরীক্ষা হয় ১৮ হাজার ৯৪৪টি। এ হিসাবে ঢাকা মহানগরীতে নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণ হার ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’র প্রাদুর্ভাব এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে দেশে সংক্রমণ বাড়ছে বলে ধারণা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। দেশে আরও নয়জনের শরীরে ‘ওমিক্রন’ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট ৩০ জনের দেহে ওমিক্রন শনাক্তের তথ্য পাওয়া গেছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর সংবাদকে জানিয়েছেন, দেশে ওমিক্রনের সংক্রমণ তেমন ছড়ায়নি। মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, যার কারণে সংক্রমণ বাড়ছে। তিনি মনে করছেন, এখনও করোনার ডেল্টা ধরনই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।
লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ
শনাক্তের সংখ্যার পাশাপাশি নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে করোনা শনাক্তের হারও বাড়ছে। পরীক্ষা বিবেচনায় দৈনিক এক থেকে দেড় শতাংশ বাড়ছে সংক্রমণ হার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছেন দুই হাজার ২৩১ জন। সর্বশেষ একদিনে এরচেয়ে বেশি কোভিড শনাক্ত হয়েছিল গত ১০ সেপ্টেম্বর। ওইদিন দুই হাজার ৩২৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছিল। তবে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ছিল আট দশমিক ৫৩ শতাংশ।
আগের দিন পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ছয় দশমিক ৭৮ শতাংশ। এ হিসাবে একদিনেই কোভিড শনাক্তের হার পৌনে দুই শতাংশ বেড়েছে। এরআগে ৮ জানুয়ারি পরীক্ষা অনুপাতে রোগী শনাক্তের হার ছিল পাঁচ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হওয়া রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত হলেন ১৫ লাখ ৯৫ হাজার ৯৩১ জন। আর এদিন করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন তিনজন। তাদের নিয়ে দেশে মোট ২৮ হাজার ১০৫ জনের মৃত্যু হলো।
করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২০৮ জন। এ নিয়ে দেশে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে মোট ১৫ লাখ ৫১ হাজার ১১৩ জন সুস্থ হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২৬ হাজার ১৪৩টি। দেশে এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক কোটি ১৬ লাখ ৯৭ হাজার ৯৩৮টি।
এ পর্যন্ত করোনা শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ, শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৭৬ শতাংশ।
একদিনে মারা যাওয়া তিনজনই পুরুষ। তাদের নিয়ে দেশে করোনায় মোট মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে পুরুষ ১৭ হাজার ৯৭৩ জন এবং নারী ছিলেন দশ হাজার ১৩২ জন।
একদিনে মারা যাওয়া তিন জনেরই বয়স ছিল ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। এরমধ্যে ঢাকার একজন, নারায়নগঞ্জের একজন এবং বগুড়ায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনজনই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
ওমিক্রন শনাক্ত পৌঁছালো ৩০ জনে :
দেশে ওমিক্রণ শনাক্ত পৌঁছালো ৩০ জনে। গতকাল নতুন করে নয়জনের শরীরে করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তাদের সবাই ঢাকা মহানগরীর বাসিন্দা। এ নিয়ে মোট শনাক্ত ওমিক্রনের রোগী বেড়ে দাঁড়ালো ৩০ জনে।
রোগীর শরীর থেকে নেয়া করোনাভাইরাসের নমুনার জিন বিন্যাস (জিনোম সিকোয়েন্সিং) বিশ্লেষণ করে ওমিক্রন সংক্রমণের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা (জিআইএসএআইডি)।
দেশে গত ১১ ডিসেম্বর প্রথম ওমিক্রনের সংক্রমণ শনাক্তের ঘোষণা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সর্বশেষ শনাক্ত ৯ জনের মধ্যে ছয়জন মহাখালী এবং তিনজন বাসাবো এলাকার বাসিন্দা।
মহাখালীর বাসিন্দাদের মধ্যে ছয়জন নারী, যাদের বয়স ১৮ থেকে ৫২ বছরের মধ্যে। তবে বাসাবোতে শনাক্ত দু’জনের বয়স ৫১ ও ৩০ বছর, তারা পুরুষ এবং অন্যজন ৫৬ বছর বয়সী নারী।
জিআইএসএআইডি জানিয়েছে, ২৯ ডিসেম্বর থেকে গত ৩ জানুয়ারির মধ্যে তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। এগুলোর জিনোম সিকোয়েন্সিং করে তা জিআইএসএআইডিতে জমা দেয় ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়া ডিজিজ রিসার্স সেন্টার, বাংলাদেশ-আইসিডিডিআরবি।
আইইডিসিআর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, বিদেশ থেকে আসা কারও করোনা শনাক্ত হলে তাদের শরীর থেকে ভাইরাসের নমুনা নিয়ে জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হচ্ছে। এছাড়া আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কাছ থেকেও নমুনা নিয়ে জিনোম সিকোয়েন্স করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আক্রান্তদের সংস্পর্শে এসে কয়েকজনের ওমিক্রন শনাক্তের তথ্য পেয়েছে আইইডিসিআর। সংস্থাটির ধারণা, করোনা সংক্রমণ আরও বাড়বে।