কাজাখস্তান সংকটের এক সপ্তাহ

বিক্ষোভে নিহত ১৬৪, আটক ৭৯৩৯

জ্বালানির দাম বেড়েছে। এ ঘটনার জেরে ভয়াবহ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে মধ্য এশিয়ার দেশ কাজাখস্তানে। আগুন জ্বলেছে দেশটির জায়গায় জায়গায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পাল্টা গুলি চালিয়েছে পুলিশ। তাতে প্রাণ হারালেন অন্তত ১৬৪ জন। এছাড়া এ পর্যন্ত সাত হাজার ৯৩৯ জন লোককে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।

মৃতদের ১০৩ জনই দেশের সব থেকে বড় শহর আলমাটির বাসিন্দা। এর আগে পুলিশ জানিয়েছিল, ২৬ জন সশস্ত্র অপরাধীকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। ১৬ জন পুলিশ কর্মীও নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু দাবি করা হচ্ছে মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একথা জানিয়েছে বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসিম জোমার্ট টোকায়েভ পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন। এরপরই বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, কাজাখস্তানের বিক্ষোভ পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ?গত এক সপ্তাহের বিক্ষোভে দেশে ১৯ কোটি ৯০ লাখ টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে। ১০০ এরও বেশি ব্যাংক এবং দোকানে লুট হয়েছে। ৪০০টি গাড়ি, বাস, ট্রাক পোড়ানো হয়েছে। সোভিয়েত আমলের পর মধ্য এশিয়ার দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা চলাকালে বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভকারীরা সরকারি ভবনগুলো কিছু সময়ের জন্য দখল করে রাখে বা সেগুলোতে আগুন দেয়। জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হলেও তা বিস্তৃত হয়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এসব সহিংসতার জন্য দেশটির কর্তৃপক্ষ ‘চরমপন্থি’ ও ‘সন্ত্রাসীদের’ দায় দিয়েছে, এদের মধ্যে কিছু বিদেশিও আছে বলে অভিযোগ করেছে তারা। দেশদ্রোহিতার সন্দেহে দেশটির জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান করিম মাসিমভকে গত সপ্তাহে আটক করা হয়। এর আগে প্রেসিডেন্ট কাসেম জোমার্ট তোকায়েভ গোয়েন্দা প্রধানের পদ থেকে মাসিমভকে বরখাস্ত করেন, এর তিন দিনের মধ্যেই তাকে আটক করা হয়। তোকায়েভ তার মন্ত্রিসভাকেও বরখাস্ত করেছেন। ১ কোটি ৯০ লাখ জনসংখ্যার তেল সমৃদ্ধ দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করে অস্থিরতায় ইতি টানতে গুলি করে হত্যার নির্দেশ জারি করেছেন। রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন আঞ্চলিক একটি সামরিক জোটকে সেনা পাঠানোর অনুরোধও জানিয়েছেন তিনি। কাজাখস্তানের কৌশলগভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানগুলো পাহারা দেওয়ার জন্য এসব সেনা মোতায়েন করা হয়েছে বলে দেশটির সরকার জানিয়েছে। রাশিয়ার ও কাজাখস্তানের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের করা পোস্টের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, সহিংসতা চলাকালে ১৬৪ জন নিহত হয়েছেন। কিন্তু দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও পুলিশের কর্তৃপক্ষ নিহতের এ সংখ্যা নিশ্চিত করেনি আর এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা পোস্টও সরিয়ে ফেলা হয় বলে জানিয়েছে রয়টার্স। সোমবার দেশটির স্বরাষ্ট্র সচিব ইয়ারলান কারিন রাষ্ট্রায়ত্ত টেভিশনে বলেন, আমার মনে হয়, কোনো এক ধরনের ষড়যন্ত্রে দেশীয় ও বিদেশি কিছু ধ্বংসাত্মক শক্তি জড়িত ছিল।

মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারী ২০২২ , ২৭ পৌষ ১৪২৮ ৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

কাজাখস্তান সংকটের এক সপ্তাহ

বিক্ষোভে নিহত ১৬৪, আটক ৭৯৩৯

image

জ্বালানির দাম বেড়েছে। এ ঘটনার জেরে ভয়াবহ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে মধ্য এশিয়ার দেশ কাজাখস্তানে। আগুন জ্বলেছে দেশটির জায়গায় জায়গায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পাল্টা গুলি চালিয়েছে পুলিশ। তাতে প্রাণ হারালেন অন্তত ১৬৪ জন। এছাড়া এ পর্যন্ত সাত হাজার ৯৩৯ জন লোককে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।

মৃতদের ১০৩ জনই দেশের সব থেকে বড় শহর আলমাটির বাসিন্দা। এর আগে পুলিশ জানিয়েছিল, ২৬ জন সশস্ত্র অপরাধীকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। ১৬ জন পুলিশ কর্মীও নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু দাবি করা হচ্ছে মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একথা জানিয়েছে বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসিম জোমার্ট টোকায়েভ পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন। এরপরই বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, কাজাখস্তানের বিক্ষোভ পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ?গত এক সপ্তাহের বিক্ষোভে দেশে ১৯ কোটি ৯০ লাখ টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে। ১০০ এরও বেশি ব্যাংক এবং দোকানে লুট হয়েছে। ৪০০টি গাড়ি, বাস, ট্রাক পোড়ানো হয়েছে। সোভিয়েত আমলের পর মধ্য এশিয়ার দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা চলাকালে বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভকারীরা সরকারি ভবনগুলো কিছু সময়ের জন্য দখল করে রাখে বা সেগুলোতে আগুন দেয়। জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হলেও তা বিস্তৃত হয়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এসব সহিংসতার জন্য দেশটির কর্তৃপক্ষ ‘চরমপন্থি’ ও ‘সন্ত্রাসীদের’ দায় দিয়েছে, এদের মধ্যে কিছু বিদেশিও আছে বলে অভিযোগ করেছে তারা। দেশদ্রোহিতার সন্দেহে দেশটির জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান করিম মাসিমভকে গত সপ্তাহে আটক করা হয়। এর আগে প্রেসিডেন্ট কাসেম জোমার্ট তোকায়েভ গোয়েন্দা প্রধানের পদ থেকে মাসিমভকে বরখাস্ত করেন, এর তিন দিনের মধ্যেই তাকে আটক করা হয়। তোকায়েভ তার মন্ত্রিসভাকেও বরখাস্ত করেছেন। ১ কোটি ৯০ লাখ জনসংখ্যার তেল সমৃদ্ধ দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করে অস্থিরতায় ইতি টানতে গুলি করে হত্যার নির্দেশ জারি করেছেন। রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন আঞ্চলিক একটি সামরিক জোটকে সেনা পাঠানোর অনুরোধও জানিয়েছেন তিনি। কাজাখস্তানের কৌশলগভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানগুলো পাহারা দেওয়ার জন্য এসব সেনা মোতায়েন করা হয়েছে বলে দেশটির সরকার জানিয়েছে। রাশিয়ার ও কাজাখস্তানের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের করা পোস্টের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, সহিংসতা চলাকালে ১৬৪ জন নিহত হয়েছেন। কিন্তু দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও পুলিশের কর্তৃপক্ষ নিহতের এ সংখ্যা নিশ্চিত করেনি আর এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা পোস্টও সরিয়ে ফেলা হয় বলে জানিয়েছে রয়টার্স। সোমবার দেশটির স্বরাষ্ট্র সচিব ইয়ারলান কারিন রাষ্ট্রায়ত্ত টেভিশনে বলেন, আমার মনে হয়, কোনো এক ধরনের ষড়যন্ত্রে দেশীয় ও বিদেশি কিছু ধ্বংসাত্মক শক্তি জড়িত ছিল।