ঢাকা ম্যারাথন : যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী

গাড়ি বন্ধ রেখে, ম্যারাথন দৌড়। যানজটের দুর্ভোগে নগরবাসী। দীর্ঘ সময় সড়কে আটকে থাকার কারণে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয় অফিসগামী মানুষ ও শিক্ষার্থীদের। গাড়ির জন্য বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে ছিল যাত্রীদের জটলা। বাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে মহিলা ও হাসপাতাল ফেরত যাত্রীদের।

গতকাল রাজধানীর হাতিরঝিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন-২০২২ অনুষ্ঠিত হয়। এজন্য গতকাল ভোর সাড়ে ৪টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত হাতিরঝিল এলাকায় যানবাহন প্রবেশ বন্ধ ছিল। সে সঙ্গে ম্যারাথন দল রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়াম থেকে দৌড় শুরু করে কাকলী বনানী হয়ে কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ দিয়ে গুলশান-২ ও ১ নম্বর হয়ে হাতিরঝিলে প্রবেশ করে। এতে ওইসব সড়কও সাময়িক বন্ধ করে দেয়া হয়।

এর ফলে গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর আবদুল্লাহপুর থেকে উত্তরা, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত থেকে বনানী সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া খিলক্ষেত থেকে বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, মগবাজার থেকে মহাখালী, সাতরাস্তা, কারওয়ান বাজারের উভয় পাশের সড়কে দীর্ঘ সময় যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান। রাজধানীর অন্য সড়কেও যানবাহনের চাপ ছিল বলে জানান অনেকেই।

রাজধানীর রামপুরা এলাকায় সোহাগ নামের বেসরকারি এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘গুলশানে অফিসে যাবো। তাই সকাল ৮টায় মালিবাগ থেকে বাসে উঠি। কিন্তু যানজটনের কারণে রামপুরা পর্যন্ত আসতে আধঘণ্টা চলে যায়। পরে বাস থেকে হাঁটা শুরু করি। দেখি কোন মোটরসাইকেল পাই কি-না।’ অফিস খোলার দিন গাড়ি বন্ধ করে ম্যারাথনের আয়োজন করায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

মতিঝিল এলাকায় জাফর ইকবাল নামের এক যাত্রী বলেন, ‘গতকাল সকালে পুরো ঢাকার শহরে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে ভোগান্তি শিকার হতে হয়েছে অফিসগামী যাত্রীদের। উত্তরা থেকে মোটরসাইকেলে মতিঝিল আসতে ৩ ঘণ্টা সময় লাগে। যা অন্য সময় লাগতো ১ থেকে দেড় ঘণ্টা।’

যানজটের কারণে সড়কে দীর্ঘ সময় আটকে ছিল যানবাহন। এর ফলে অনেক যাত্রীদের হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় রেজাউল নামের এক যাত্রী বলেন, ‘মহাখালী যাওয়ার জন্য গুলিস্তান থেকে বাসে উঠি। কিন্তু কাকরাইল আসার পর গাড়ি আর চলে না। সামনে বাসের দীর্ঘ লাইন। তাই বাস থেকে নেমেই হেঁটে যাচ্ছে। সামনে কিছু পাওয়া গেলে উঠে যাবো। গাড়ি বন্ধ রেখে সরকার দৌড় প্রতিযোগীতার আয়োজন করেছে এজন্য এত যানজট।’

রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় নয়ন নামের আকাশ পরিবহনের এক চালক বলেন, ‘পুরো রাস্তায় যানজট। বেশিরভাগ সিগন্যালে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াতে হয়েছে। অন্যদিন সকালের দিকে যানজট থাকলেও দুপুরে অনেকটা ফাঁকা থাকে। তবে গতকালের চিত্র ভিন্ন। দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে তবুও যানজট কমছে না।’

গাড়ির জন্য অপেক্ষায় থাকা রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার শামীমা নামের এক যাত্রী জানান, ‘মা গ্রামের বাড়ি বরিশাল থেকে ডাক্তার দেখাতে ঢাকায় আসেন। সকালে মাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কিন্তু ফেরার পথে যানজটের কারণে কোন গাড়ি পাচ্ছি না। তাই অপেক্ষা করছি। সিএনজি চালকরাও যেতে চাচ্ছে না।’

যানজটের কারণে রাজধানীর প্রধান সড়কটি বন্ধ থাকায় অলিগলি দিয়ে রিকশা-ভ্যানের পাশপাশি যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেটকার প্রবেশ করতে দেখা গেছে। ফলে সরু গলিতেও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানজটে পড়ে অনেককে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। যানবাহন না পাওয়ায় অনেককে একাধিক ব্যাগ, বস্তা ও ভারী মালামাল নিয়ে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

আজিমপুর, নীলক্ষেত, শাহবাগ, ফার্মগেট হয়ে মহাখালী পর্যন্ত চলাচলকারী দেওয়ান বাসের এক চালক বলেন, ‘যানজটে বসে থেকে বিরক্ত যাত্রী ও চালকরা। অনেক যাত্রী তীব্র যানজটের কারণে মাঝপথেই গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন। এ জন্য আমাদের ট্রিপের সংখ্যাও কমে গেছে।’ তাই সড়কে গাড়ি কম দেখা গেছে বলে জানান তিনি।

যানজটের বিষয়ে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের মহাখালী জোনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর ঢাকা ম্যারাথন-২০২২ অনুষ্ঠিত হয় আর্মি স্টেডিয়াম থেকে হাতিরঝিলে। এই কারণে অনেক সড়ক সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। যে কারণে যানজট কিছুটা বেড়েছে। সেইসঙ্গে সড়কের বিভিন্ন স্থানে অনেক প্রজেক্টের কাজ চলমান রয়েছে। এজন্য সড়কের অনেক ভাঙা ও খানা-খন্দ থাকায় ও সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতেও যানজট লেগে থাকে। তবে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে জনমানুষদের চলাচলে যানজট নিরসনের। দুপুরের পর অনেক সড়কেই স্বাভাবিক হয়ে যায় বলে জানান তিনি।

ডিএমপি থেকে আগে জানানো হয়, ম্যারাথনের কারণে সড়কে ডাইভারসন ব্যবস্থা ছিল। যেসব যানবাহন রেইনবো ক্রসিং থেকে হাতিরঝিল হয়ে গুলশান, বনশ্রী, রামপুরা এবং বাড্ডায় যেত, তারা মগবাজার, মৌচাক হয়ে চলাচলের নির্দেশ ছিল। রামপুরা ইউলুপ এবং ইসলাম টাওয়ার দিয়ে যে সমস্ত গাড়ি হাতিরঝিলের মধ্য দিয়ে চলাচল করতো, তারা গুলশান বাড্ডা লিংক রোড ব্যবহারের নির্দেশ ছিল। এ সব যানবহানের চাপের কারণে পুরো রাজধানীতে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে বলে পুলিশ সূত্র জানায়।

মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারী ২০২২ , ২৭ পৌষ ১৪২৮ ৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

ঢাকা ম্যারাথন : যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

ঢাকা ম্যারাথন উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর সড়কে ছিল ব্যাপক যানজট। এতে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয় রাজধানীবাসীকে। মগবাজার-উত্তরা সড়কের নাবিস্কো থেকে তোলা -সংবাদ

গাড়ি বন্ধ রেখে, ম্যারাথন দৌড়। যানজটের দুর্ভোগে নগরবাসী। দীর্ঘ সময় সড়কে আটকে থাকার কারণে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয় অফিসগামী মানুষ ও শিক্ষার্থীদের। গাড়ির জন্য বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে ছিল যাত্রীদের জটলা। বাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে মহিলা ও হাসপাতাল ফেরত যাত্রীদের।

গতকাল রাজধানীর হাতিরঝিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন-২০২২ অনুষ্ঠিত হয়। এজন্য গতকাল ভোর সাড়ে ৪টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত হাতিরঝিল এলাকায় যানবাহন প্রবেশ বন্ধ ছিল। সে সঙ্গে ম্যারাথন দল রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়াম থেকে দৌড় শুরু করে কাকলী বনানী হয়ে কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ দিয়ে গুলশান-২ ও ১ নম্বর হয়ে হাতিরঝিলে প্রবেশ করে। এতে ওইসব সড়কও সাময়িক বন্ধ করে দেয়া হয়।

এর ফলে গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর আবদুল্লাহপুর থেকে উত্তরা, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত থেকে বনানী সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া খিলক্ষেত থেকে বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, মগবাজার থেকে মহাখালী, সাতরাস্তা, কারওয়ান বাজারের উভয় পাশের সড়কে দীর্ঘ সময় যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান। রাজধানীর অন্য সড়কেও যানবাহনের চাপ ছিল বলে জানান অনেকেই।

রাজধানীর রামপুরা এলাকায় সোহাগ নামের বেসরকারি এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘গুলশানে অফিসে যাবো। তাই সকাল ৮টায় মালিবাগ থেকে বাসে উঠি। কিন্তু যানজটনের কারণে রামপুরা পর্যন্ত আসতে আধঘণ্টা চলে যায়। পরে বাস থেকে হাঁটা শুরু করি। দেখি কোন মোটরসাইকেল পাই কি-না।’ অফিস খোলার দিন গাড়ি বন্ধ করে ম্যারাথনের আয়োজন করায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

মতিঝিল এলাকায় জাফর ইকবাল নামের এক যাত্রী বলেন, ‘গতকাল সকালে পুরো ঢাকার শহরে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে ভোগান্তি শিকার হতে হয়েছে অফিসগামী যাত্রীদের। উত্তরা থেকে মোটরসাইকেলে মতিঝিল আসতে ৩ ঘণ্টা সময় লাগে। যা অন্য সময় লাগতো ১ থেকে দেড় ঘণ্টা।’

যানজটের কারণে সড়কে দীর্ঘ সময় আটকে ছিল যানবাহন। এর ফলে অনেক যাত্রীদের হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় রেজাউল নামের এক যাত্রী বলেন, ‘মহাখালী যাওয়ার জন্য গুলিস্তান থেকে বাসে উঠি। কিন্তু কাকরাইল আসার পর গাড়ি আর চলে না। সামনে বাসের দীর্ঘ লাইন। তাই বাস থেকে নেমেই হেঁটে যাচ্ছে। সামনে কিছু পাওয়া গেলে উঠে যাবো। গাড়ি বন্ধ রেখে সরকার দৌড় প্রতিযোগীতার আয়োজন করেছে এজন্য এত যানজট।’

রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় নয়ন নামের আকাশ পরিবহনের এক চালক বলেন, ‘পুরো রাস্তায় যানজট। বেশিরভাগ সিগন্যালে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াতে হয়েছে। অন্যদিন সকালের দিকে যানজট থাকলেও দুপুরে অনেকটা ফাঁকা থাকে। তবে গতকালের চিত্র ভিন্ন। দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে তবুও যানজট কমছে না।’

গাড়ির জন্য অপেক্ষায় থাকা রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার শামীমা নামের এক যাত্রী জানান, ‘মা গ্রামের বাড়ি বরিশাল থেকে ডাক্তার দেখাতে ঢাকায় আসেন। সকালে মাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কিন্তু ফেরার পথে যানজটের কারণে কোন গাড়ি পাচ্ছি না। তাই অপেক্ষা করছি। সিএনজি চালকরাও যেতে চাচ্ছে না।’

যানজটের কারণে রাজধানীর প্রধান সড়কটি বন্ধ থাকায় অলিগলি দিয়ে রিকশা-ভ্যানের পাশপাশি যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেটকার প্রবেশ করতে দেখা গেছে। ফলে সরু গলিতেও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানজটে পড়ে অনেককে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। যানবাহন না পাওয়ায় অনেককে একাধিক ব্যাগ, বস্তা ও ভারী মালামাল নিয়ে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

আজিমপুর, নীলক্ষেত, শাহবাগ, ফার্মগেট হয়ে মহাখালী পর্যন্ত চলাচলকারী দেওয়ান বাসের এক চালক বলেন, ‘যানজটে বসে থেকে বিরক্ত যাত্রী ও চালকরা। অনেক যাত্রী তীব্র যানজটের কারণে মাঝপথেই গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন। এ জন্য আমাদের ট্রিপের সংখ্যাও কমে গেছে।’ তাই সড়কে গাড়ি কম দেখা গেছে বলে জানান তিনি।

যানজটের বিষয়ে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের মহাখালী জোনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর ঢাকা ম্যারাথন-২০২২ অনুষ্ঠিত হয় আর্মি স্টেডিয়াম থেকে হাতিরঝিলে। এই কারণে অনেক সড়ক সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। যে কারণে যানজট কিছুটা বেড়েছে। সেইসঙ্গে সড়কের বিভিন্ন স্থানে অনেক প্রজেক্টের কাজ চলমান রয়েছে। এজন্য সড়কের অনেক ভাঙা ও খানা-খন্দ থাকায় ও সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতেও যানজট লেগে থাকে। তবে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে জনমানুষদের চলাচলে যানজট নিরসনের। দুপুরের পর অনেক সড়কেই স্বাভাবিক হয়ে যায় বলে জানান তিনি।

ডিএমপি থেকে আগে জানানো হয়, ম্যারাথনের কারণে সড়কে ডাইভারসন ব্যবস্থা ছিল। যেসব যানবাহন রেইনবো ক্রসিং থেকে হাতিরঝিল হয়ে গুলশান, বনশ্রী, রামপুরা এবং বাড্ডায় যেত, তারা মগবাজার, মৌচাক হয়ে চলাচলের নির্দেশ ছিল। রামপুরা ইউলুপ এবং ইসলাম টাওয়ার দিয়ে যে সমস্ত গাড়ি হাতিরঝিলের মধ্য দিয়ে চলাচল করতো, তারা গুলশান বাড্ডা লিংক রোড ব্যবহারের নির্দেশ ছিল। এ সব যানবহানের চাপের কারণে পুরো রাজধানীতে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে বলে পুলিশ সূত্র জানায়।