বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও এর প্রভাব

ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ

বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন এবং অপছন্দ করতেন কমিউনিস্টদের মতো আত্মগোপনে থাকা। তিনি রাজনীতি করতেন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে। তিনি তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘আমি পালিয়ে থাকার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। কারণ আমি গোপন রাজনীতি পছন্দ করি না, আর বিশ্বাসও করি না।’ ব্রিটিশ ধাঁচের সংসদীয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ছিল বঙ্গবন্ধুর পছন্দ। একাত্তরের ১ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের অনির্দিষ্টকালের জন্য জাতীয় পরিষদের বৈঠক স্থগিত ঘোষণার প্রতিবাদে ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু দেশব্যাপী হরতাল আহ্বান করেন। ৭ মার্চের ভাষণে তিনি ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ঘোষণার পরও ২৪ মার্চ পর্যন্ত ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যান। যদিও ছাত্র-যুবসমাজ স্বাধীনতার দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করতে থাকে। বঙ্গবন্ধু যেহেতু নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন, সে জন্য তিনি নানা রকম চাপ থাকা সত্ত্বেও কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নেননি। তিনি চেয়েছেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার কাছে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করুক।

কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ২৫ মার্চ নিরীহ বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা শুরু করে। এ যেন এক গণহত্যা। বঙ্গবন্ধু ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। জাতির কাছে এছাড়া তার আর অন্য কোন বিকল্প ছিল না। তবে ১৬ ডিসেম্বরের আত্মসমর্পণের ঘটনায় পাকিস্তানের সামরিক জান্তা জুলফিকার আলী ভুট্টোর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে ভুট্টোর মাধ্যমে পাকিস্তানকে রক্ষার শেষ চেষ্টা চালালো। ভুট্টো তার ৯৫ হাজার সৈন্যের পাকিস্তানে ফেরত নেওয়ার শেষ রক্ষা ও আত্মরক্ষামূলক কৌশল হিসেবে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির পথকে তিনি বেছে নিলেন। যদিও ১৬ই ডিসেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারি এ ২৫টা দিন ইয়াহিয়া ভুট্টো ও তাদের দোসররা বেসামাল পরিস্থিতিতে প্রায়শ্চিত্তের টানাপড়েন নিয়ে এক চরম অশান্তির মাঝে ছিলেন। এসময়ে বঙ্গবন্ধুকে কোন মানসিক কষ্ট দেয়া হয়েছিল কিনা অথবা তার প্রাণনাশের কথা ভাবছিলেন কিনা তা জানা যায়নি। তবে ইয়াহিয়া ভুট্টোকে দিয়ে ১৬ই ডিসেম্বর এর পরেও বঙ্গবন্ধুর জীবনাবসানের প্রস্তাব দিয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণার পর পরই পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে। পাঠানো হয় হয় পাকিস্তানের নির্জন কারাগারে। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস তিনি অসহনীয় নির্যাতনের শিকার হন। প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসাবে তিনি মৃত্যুর প্রহর গুনতে থাকেন। পাকিস্তানের কারাগারে গোপনে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সব ধরনের আয়োজন সম্পন্ন করেছিলেন পাকিস্তানের সামরিক জান্তা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। এ ঘটনা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তির জন্য পাকিস্তানের সামরিক জান্তাকে চাপ দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ৬৭টি দেশের সরকারপ্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানকে চিঠি দেন। অন্যদিকে তিনি ইউরোপের পাঁচটি দেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সফর করে বিশ্বজনমত বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের অনুকূলে আনতে সক্ষম হন। ফলে পাকিস্তানের সামরিক জান্তার পক্ষে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা সম্ভব হয়নি।

পাকিস্তানি বাহিনীর পতনের সঙ্গে সঙ্গে পিন্ডির রাজনীতি মঞ্চে নতুন খেলা শুরু হলো। ভুট্টোকে ডেকে পাঠানো হলে পিন্ডিতে। আমেরিকা থেকে ভুট্টো ছুটে এলেন। অবশেষ কয়েক দিন পর পাক বেতারে ঘোষণা করা হলো যে ভুট্টো তার সঙ্গে দেখা করবেন। বাংলাদেশের মানুষ তথা সারা বিশে^র শান্তিকামী মানুষ স্বস্তির নিঃশ^াস ফেললেন। বেঁচে আছে শেখ মুজিব, বাংলার মহানায়ক। আর তাকে হত্যা করতে সক্ষম হবেন না। অবশেষ ভুট্টো ঘোষণা করলেন শেখ মুজিবকে বিনা শর্তে মুক্তি দেয়া হবে। ৮ জানুয়ারি, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধান রাষ্ট্রপতি মুক্তি পেলেন শত্রুর কারাগার থেকে। কিন্তু তাকে বাংলাদেশে না পাঠিয়ে বিমানযোগে গোপনে পাঠানো হলো লন্ডনে। রাত ৪টায় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টো বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবকে বিদায় দিলেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পাকিস্তানি বিশেষ বিমানটি বাংলাদেশ সময় ১২টা ৩৫ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করল। বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানালেন গ্রেট ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ এশিয়া সংক্রান্ত প্রধান মি. আয়ান সাদারল্যান্ড। শ্রমিক দলীয় পার্লামেন্ট সদস্য বি. ব্রুস ডগলাস ম্যান এবং মি. পিটার শোর। লন্ডনের মাটিতে পা রেখেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করলেন। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনকে প্রথম কথাটি জিজ্ঞেস করলেন, “আমার দেশের মানুষ কেমন আছে? বর্বর পাক সেনাবাহিনী কি আমার দেশবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে?’ মৃত্যুর জন্য বঙ্গবন্ধু প্রস্তুত ছিলেন। যেদিন তিনি জেনে যান সেদিন জানতেন, হয়তো জেলের নির্জন প্রকোষ্ঠে তার জীবনাবসান হতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশ শত্রু মুক্ত হবে। সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে তিনি বলেন, ‘আজ আমার দেশের মানুষ মুক্ত, পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমার কোন বিদ্বেষ নেই”।

বিশে^র সাংবাদিকরা স্তব্ধ বিস্ময়ে শুনেছে বাংলার মহানায়কের এ উদার ঘোষণা। লন্ডন থেকে স্বদেশের পথে দিল্লিতে এক আবেগ আপ্লুত সংবর্ধনার আয়োজন করেছিলেন ভারত সরকার। বঙ্গবন্ধু বিমান থেকে বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রী ভি ভি গিরি তাকের স্বাগত সংবর্ধনা জানালেন। সংবর্ধনা জানালেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ২১ বার তোপধ্বনিতে পালাম বিমানবন্দরে মাটি ফেটে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে বেঁজে উঠলো দুই দেশের জাতীয় সংগীত। ভারতের উদ্দেশ্যে মহানায়ক বললেন, “বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করার জন্য আমি ভারতের জনগণ, ভারত সরকার এবং শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি”। আমি সালাম জানাই মুক্তিবাহিনীকে, গেরিলাবাহিনীকে, কর্মী বাহিনীকে। আমি আরও সালাম জানাই সংগ্রামী কৃষক শ্রেণীকে, কৃষক ভাইদের আর বুদ্ধিজীবীদের। তারপর বাংলার সভা মঞ্চে এক আবেগঘণ মহূর্ত তার দু’চোখ থেকে অবিরল ধারায় অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। মহানায়ক ছোট্ট শিশুর মতো কাঁদছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলার মানুষের জন্য, আর হারানো সাথীদের জন্য। আর বাংলার মানুষ এই মহানায়ককে করতালি দিয়ে হর্ষধ্বনি দিয়ে তাকে অভিনন্দিত করছেন। মহানায়ককে ফিরে পেয়ে যেন তারা এক নতুন জীবনের স্বপ্নে সমস্ত ব্যাথা-বেদনা ভুলে আনন্দের হাসি হাসছে। এভাবেই বাংলার মহানায়কের ফিরে আসাকে অনন্তকাল ধরে বাংলার মানুষেরা আবেগ, আনন্দ অনুভূতির সঙ্গে মিশিয়ে চিরকাল ধরে স্মরণ করতে থাকবে।

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাঙালি জাতির জন্য একটি বড় প্রেরণা হিসাবে কাজ করেছে। দীর্ঘ সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, আন্দোলন ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার প্রশ্নে বাঙালি যখন বাস্তবতার মুখোমুখি- তখন পাকিস্তানের বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। ২৯০ দিন পাকিস্তানের কারাগারে মৃত্যুযন্ত্রণা শেষে লন্ডন-দিল্লি হয়ে মুক্ত স্বাধীন স্বদেশের মাটিতে ফেরেন। বঙ্গবন্ধু ঢাকা এসে পৌঁছেন ১০ জানুয়ারি। ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের পর বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য প্রাণবন্ত অপেক্ষায় ছিল। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। বিকাল ৫টায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন।

রেসকোর্সে বঙ্গবন্ধু সেদিন যে ভাষণ দেন, তা ৭ মার্চের ভাষণের মতোই মূল্যবান। বাংলার মানুষ তাদের প্রিয় নেতাকে তাদের মধ্যে পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। সেদিন বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি যে কতটা প্রয়োজন ছিল, তা এখনকার প্রজন্মের অনেককেই বোঝানো সম্ভব নয়। তখন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অনেকেই মনে করছিলেন, ‘আমরা সবাই রাজা’। কেউ কাউকে মানছিলেন না। তরুণ নেতারা অস্থায়ী সরকারের কোন কথা শুনছিলেন না। একটি নৈরাজ্যের মতো অবস্থা ছিল ২৫টি দিন। তিনি না এলে মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র জমা দিতে চাইতেন না সহজে। ভারতীয় সৈন্যও হয়তো অত তাড়াতাড়ি ফিরে যেত না। অনেক দেশের স্বীকৃতি পেতেও বেগ পেতে হতো। তার প্রত্যাবর্তনের দিন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সংহত হয়। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১৭ মিনিট জাতির উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন, যা ছিল জাতির জন্য দিকনির্দেশনা। বাংলাদেশের আদর্শগত ভিত্তি কী হবে, রাষ্ট্র কাঠামো কী ধরনের হবে, পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যারা দালালি ও সহযোগিতা করেছে তাদের কী হবে, বাংলাদেশকে বহির্বিশ্ব স্বীকৃতি দেয়ার জন্য অনুরোধ, মুক্তিবাহিনী, ছাত্র সমাজ, কৃষক, শ্রমিকদের কাজ কী হবে, এসব বিষয়সহ বিভিন্ন দিক নিয়ে নির্দেশনা। তিনি ডাক দিলেন দেশ গড়ার সংগ্রামে। রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত মন্ত্রমুগ্ধ জনতা দু’হাত তুলে সেই সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের আরেকটি আলোকিত অধ্যায়। প্রকৃতপক্ষে ১০ জানুয়ারিতে বাংলার রাজনীতির মুকুটহীন সম্রাট সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা শেখ মুজিবকে পেয়ে বাঙালি বিজয়ের পরিপূর্ণ আনন্দ প্রাণভরে উপভোগ করেছে। এ দিনই বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রবেশ করে গণতন্ত্রের এক আলোকিত অভিযাত্রায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং বাংলাদেশ একাত্ম হয়ে আছে একসূত্রে। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে সেই অনন্তকাল পর্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হবে বঙ্গবন্ধুর নাম। দেশের স্বাধীনতার জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য নিজেকে আত্মোৎসর্গ করেছিলেন বলেই বাঙালির পক্ষে স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা সম্ভব হয়েছিল। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা।

পরিশেষে বলতে পারি, মহানায়কের দেশে ফিরে আসায় সাত কোটি মানুষ আশা, আকাঙ্খা ও নবজাগরণের উচ্ছ্বাসে ছিল উদ্বেলিত। জনতাবঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি আলোকিত অধ্যায় হিসেবে সেদিন দেখেছিল। কেননা জাতির সেদিন স্বদেশে ফিরে এসে জনতার উদ্দেশ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের ডাক দিয়েছিলেন। তার অংশ হিসেবে প্রথমে ভারতীয় মিত্র বাহিনীকে তাদের সব সৈন্যকে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে অনুরোধ করেছিলেন। এমনকি বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তনের তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বন্ধু রাষ্ট্রসমূহ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। বঙ্গবন্ধুর ঐন্দ্রজালিক নেতৃত্বে অতি অল্প দিনের মধ্যে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থান তৈরি হয়। সর্বোপরি তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে বাংলার জনগণ দেশ গড়ার নব প্রেরণা পেয়েছিল। এমনকি সারা বিশ্বও বিস্ময়ে হতবাক হয়েছে এবং আমাদের স্বাধীনতা অর্থবহ হয়েছে।

[লেখক : সাবেক উপ-মহাপরিচালক,

আনসার ও ভিডিপি]

মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারী ২০২২ , ২৭ পৌষ ১৪২৮ ৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও এর প্রভাব

ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ

image

বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন এবং অপছন্দ করতেন কমিউনিস্টদের মতো আত্মগোপনে থাকা। তিনি রাজনীতি করতেন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে। তিনি তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘আমি পালিয়ে থাকার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। কারণ আমি গোপন রাজনীতি পছন্দ করি না, আর বিশ্বাসও করি না।’ ব্রিটিশ ধাঁচের সংসদীয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ছিল বঙ্গবন্ধুর পছন্দ। একাত্তরের ১ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের অনির্দিষ্টকালের জন্য জাতীয় পরিষদের বৈঠক স্থগিত ঘোষণার প্রতিবাদে ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু দেশব্যাপী হরতাল আহ্বান করেন। ৭ মার্চের ভাষণে তিনি ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ঘোষণার পরও ২৪ মার্চ পর্যন্ত ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যান। যদিও ছাত্র-যুবসমাজ স্বাধীনতার দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করতে থাকে। বঙ্গবন্ধু যেহেতু নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন, সে জন্য তিনি নানা রকম চাপ থাকা সত্ত্বেও কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নেননি। তিনি চেয়েছেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার কাছে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করুক।

কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ২৫ মার্চ নিরীহ বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা শুরু করে। এ যেন এক গণহত্যা। বঙ্গবন্ধু ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। জাতির কাছে এছাড়া তার আর অন্য কোন বিকল্প ছিল না। তবে ১৬ ডিসেম্বরের আত্মসমর্পণের ঘটনায় পাকিস্তানের সামরিক জান্তা জুলফিকার আলী ভুট্টোর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে ভুট্টোর মাধ্যমে পাকিস্তানকে রক্ষার শেষ চেষ্টা চালালো। ভুট্টো তার ৯৫ হাজার সৈন্যের পাকিস্তানে ফেরত নেওয়ার শেষ রক্ষা ও আত্মরক্ষামূলক কৌশল হিসেবে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির পথকে তিনি বেছে নিলেন। যদিও ১৬ই ডিসেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারি এ ২৫টা দিন ইয়াহিয়া ভুট্টো ও তাদের দোসররা বেসামাল পরিস্থিতিতে প্রায়শ্চিত্তের টানাপড়েন নিয়ে এক চরম অশান্তির মাঝে ছিলেন। এসময়ে বঙ্গবন্ধুকে কোন মানসিক কষ্ট দেয়া হয়েছিল কিনা অথবা তার প্রাণনাশের কথা ভাবছিলেন কিনা তা জানা যায়নি। তবে ইয়াহিয়া ভুট্টোকে দিয়ে ১৬ই ডিসেম্বর এর পরেও বঙ্গবন্ধুর জীবনাবসানের প্রস্তাব দিয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণার পর পরই পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে। পাঠানো হয় হয় পাকিস্তানের নির্জন কারাগারে। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস তিনি অসহনীয় নির্যাতনের শিকার হন। প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসাবে তিনি মৃত্যুর প্রহর গুনতে থাকেন। পাকিস্তানের কারাগারে গোপনে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সব ধরনের আয়োজন সম্পন্ন করেছিলেন পাকিস্তানের সামরিক জান্তা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। এ ঘটনা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তির জন্য পাকিস্তানের সামরিক জান্তাকে চাপ দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ৬৭টি দেশের সরকারপ্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানকে চিঠি দেন। অন্যদিকে তিনি ইউরোপের পাঁচটি দেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সফর করে বিশ্বজনমত বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের অনুকূলে আনতে সক্ষম হন। ফলে পাকিস্তানের সামরিক জান্তার পক্ষে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা সম্ভব হয়নি।

পাকিস্তানি বাহিনীর পতনের সঙ্গে সঙ্গে পিন্ডির রাজনীতি মঞ্চে নতুন খেলা শুরু হলো। ভুট্টোকে ডেকে পাঠানো হলে পিন্ডিতে। আমেরিকা থেকে ভুট্টো ছুটে এলেন। অবশেষ কয়েক দিন পর পাক বেতারে ঘোষণা করা হলো যে ভুট্টো তার সঙ্গে দেখা করবেন। বাংলাদেশের মানুষ তথা সারা বিশে^র শান্তিকামী মানুষ স্বস্তির নিঃশ^াস ফেললেন। বেঁচে আছে শেখ মুজিব, বাংলার মহানায়ক। আর তাকে হত্যা করতে সক্ষম হবেন না। অবশেষ ভুট্টো ঘোষণা করলেন শেখ মুজিবকে বিনা শর্তে মুক্তি দেয়া হবে। ৮ জানুয়ারি, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধান রাষ্ট্রপতি মুক্তি পেলেন শত্রুর কারাগার থেকে। কিন্তু তাকে বাংলাদেশে না পাঠিয়ে বিমানযোগে গোপনে পাঠানো হলো লন্ডনে। রাত ৪টায় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টো বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবকে বিদায় দিলেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পাকিস্তানি বিশেষ বিমানটি বাংলাদেশ সময় ১২টা ৩৫ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করল। বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানালেন গ্রেট ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ এশিয়া সংক্রান্ত প্রধান মি. আয়ান সাদারল্যান্ড। শ্রমিক দলীয় পার্লামেন্ট সদস্য বি. ব্রুস ডগলাস ম্যান এবং মি. পিটার শোর। লন্ডনের মাটিতে পা রেখেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করলেন। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনকে প্রথম কথাটি জিজ্ঞেস করলেন, “আমার দেশের মানুষ কেমন আছে? বর্বর পাক সেনাবাহিনী কি আমার দেশবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে?’ মৃত্যুর জন্য বঙ্গবন্ধু প্রস্তুত ছিলেন। যেদিন তিনি জেনে যান সেদিন জানতেন, হয়তো জেলের নির্জন প্রকোষ্ঠে তার জীবনাবসান হতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশ শত্রু মুক্ত হবে। সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে তিনি বলেন, ‘আজ আমার দেশের মানুষ মুক্ত, পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমার কোন বিদ্বেষ নেই”।

বিশে^র সাংবাদিকরা স্তব্ধ বিস্ময়ে শুনেছে বাংলার মহানায়কের এ উদার ঘোষণা। লন্ডন থেকে স্বদেশের পথে দিল্লিতে এক আবেগ আপ্লুত সংবর্ধনার আয়োজন করেছিলেন ভারত সরকার। বঙ্গবন্ধু বিমান থেকে বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রী ভি ভি গিরি তাকের স্বাগত সংবর্ধনা জানালেন। সংবর্ধনা জানালেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ২১ বার তোপধ্বনিতে পালাম বিমানবন্দরে মাটি ফেটে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে বেঁজে উঠলো দুই দেশের জাতীয় সংগীত। ভারতের উদ্দেশ্যে মহানায়ক বললেন, “বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করার জন্য আমি ভারতের জনগণ, ভারত সরকার এবং শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি”। আমি সালাম জানাই মুক্তিবাহিনীকে, গেরিলাবাহিনীকে, কর্মী বাহিনীকে। আমি আরও সালাম জানাই সংগ্রামী কৃষক শ্রেণীকে, কৃষক ভাইদের আর বুদ্ধিজীবীদের। তারপর বাংলার সভা মঞ্চে এক আবেগঘণ মহূর্ত তার দু’চোখ থেকে অবিরল ধারায় অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। মহানায়ক ছোট্ট শিশুর মতো কাঁদছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলার মানুষের জন্য, আর হারানো সাথীদের জন্য। আর বাংলার মানুষ এই মহানায়ককে করতালি দিয়ে হর্ষধ্বনি দিয়ে তাকে অভিনন্দিত করছেন। মহানায়ককে ফিরে পেয়ে যেন তারা এক নতুন জীবনের স্বপ্নে সমস্ত ব্যাথা-বেদনা ভুলে আনন্দের হাসি হাসছে। এভাবেই বাংলার মহানায়কের ফিরে আসাকে অনন্তকাল ধরে বাংলার মানুষেরা আবেগ, আনন্দ অনুভূতির সঙ্গে মিশিয়ে চিরকাল ধরে স্মরণ করতে থাকবে।

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাঙালি জাতির জন্য একটি বড় প্রেরণা হিসাবে কাজ করেছে। দীর্ঘ সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, আন্দোলন ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার প্রশ্নে বাঙালি যখন বাস্তবতার মুখোমুখি- তখন পাকিস্তানের বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। ২৯০ দিন পাকিস্তানের কারাগারে মৃত্যুযন্ত্রণা শেষে লন্ডন-দিল্লি হয়ে মুক্ত স্বাধীন স্বদেশের মাটিতে ফেরেন। বঙ্গবন্ধু ঢাকা এসে পৌঁছেন ১০ জানুয়ারি। ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের পর বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য প্রাণবন্ত অপেক্ষায় ছিল। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। বিকাল ৫টায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন।

রেসকোর্সে বঙ্গবন্ধু সেদিন যে ভাষণ দেন, তা ৭ মার্চের ভাষণের মতোই মূল্যবান। বাংলার মানুষ তাদের প্রিয় নেতাকে তাদের মধ্যে পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। সেদিন বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি যে কতটা প্রয়োজন ছিল, তা এখনকার প্রজন্মের অনেককেই বোঝানো সম্ভব নয়। তখন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অনেকেই মনে করছিলেন, ‘আমরা সবাই রাজা’। কেউ কাউকে মানছিলেন না। তরুণ নেতারা অস্থায়ী সরকারের কোন কথা শুনছিলেন না। একটি নৈরাজ্যের মতো অবস্থা ছিল ২৫টি দিন। তিনি না এলে মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র জমা দিতে চাইতেন না সহজে। ভারতীয় সৈন্যও হয়তো অত তাড়াতাড়ি ফিরে যেত না। অনেক দেশের স্বীকৃতি পেতেও বেগ পেতে হতো। তার প্রত্যাবর্তনের দিন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সংহত হয়। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১৭ মিনিট জাতির উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন, যা ছিল জাতির জন্য দিকনির্দেশনা। বাংলাদেশের আদর্শগত ভিত্তি কী হবে, রাষ্ট্র কাঠামো কী ধরনের হবে, পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যারা দালালি ও সহযোগিতা করেছে তাদের কী হবে, বাংলাদেশকে বহির্বিশ্ব স্বীকৃতি দেয়ার জন্য অনুরোধ, মুক্তিবাহিনী, ছাত্র সমাজ, কৃষক, শ্রমিকদের কাজ কী হবে, এসব বিষয়সহ বিভিন্ন দিক নিয়ে নির্দেশনা। তিনি ডাক দিলেন দেশ গড়ার সংগ্রামে। রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত মন্ত্রমুগ্ধ জনতা দু’হাত তুলে সেই সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের আরেকটি আলোকিত অধ্যায়। প্রকৃতপক্ষে ১০ জানুয়ারিতে বাংলার রাজনীতির মুকুটহীন সম্রাট সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা শেখ মুজিবকে পেয়ে বাঙালি বিজয়ের পরিপূর্ণ আনন্দ প্রাণভরে উপভোগ করেছে। এ দিনই বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রবেশ করে গণতন্ত্রের এক আলোকিত অভিযাত্রায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং বাংলাদেশ একাত্ম হয়ে আছে একসূত্রে। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে সেই অনন্তকাল পর্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হবে বঙ্গবন্ধুর নাম। দেশের স্বাধীনতার জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য নিজেকে আত্মোৎসর্গ করেছিলেন বলেই বাঙালির পক্ষে স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা সম্ভব হয়েছিল। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা।

পরিশেষে বলতে পারি, মহানায়কের দেশে ফিরে আসায় সাত কোটি মানুষ আশা, আকাঙ্খা ও নবজাগরণের উচ্ছ্বাসে ছিল উদ্বেলিত। জনতাবঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি আলোকিত অধ্যায় হিসেবে সেদিন দেখেছিল। কেননা জাতির সেদিন স্বদেশে ফিরে এসে জনতার উদ্দেশ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের ডাক দিয়েছিলেন। তার অংশ হিসেবে প্রথমে ভারতীয় মিত্র বাহিনীকে তাদের সব সৈন্যকে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে অনুরোধ করেছিলেন। এমনকি বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তনের তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বন্ধু রাষ্ট্রসমূহ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। বঙ্গবন্ধুর ঐন্দ্রজালিক নেতৃত্বে অতি অল্প দিনের মধ্যে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থান তৈরি হয়। সর্বোপরি তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে বাংলার জনগণ দেশ গড়ার নব প্রেরণা পেয়েছিল। এমনকি সারা বিশ্বও বিস্ময়ে হতবাক হয়েছে এবং আমাদের স্বাধীনতা অর্থবহ হয়েছে।

[লেখক : সাবেক উপ-মহাপরিচালক,

আনসার ও ভিডিপি]