আফগানিস্তানে মর্টার শেল বিস্ফোরণে ৯ শিশু নিহত

পাকিস্তান সীমান্তের কাছে পূর্ব আফগানিস্তানে বিস্ফোরণে অন্তত নয় শিশু নিহত এবং চারজন আহত হয়েছেন। স্থানীয় কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন। নানগারহার প্রদেশের গভর্নরের অফিসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, লালোপার জেলার বাইগানান গ্রামে একটি পুরনো, অবিস্ফোরিত মর্টার শেলের ওপর খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করার সময় সোমবার বিস্ফোরণটি ঘটে। আল-জাজিরা।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আহত শিশুদের চিকিৎসার জন্য প্রাদেশিক রাজধানী জালালাবাদের আঞ্চলিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আফগানিস্তানে কয়েক দশকের যুদ্ধ-সংঘাতের ফলে দেশটির ভূমিতে সবচেয়ে বেশি অবিস্ফোরিত ল্যান্ড মাইন এবং অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে। যখনই এসব অস্ত্রের বিস্ফোরণ ঘটে, শিকার হয় শিশুরাই।

তালেবানরা আফগানিস্তান দখল নেওয়ার পর থেকে নানগারহারসহ দেশটির বিভিন্ন প্রদেশে একাধিক রক্তক্ষয়ী হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএসকে। সশস্ত্র সংগঠনটি ২০১৪ সাল থেকে আফগানিস্তানে হামলা চালিয়ে আসছে। তারা কয়েক ডজন ভয়ঙ্কর হামলা চালিয়েছে, এর বেশিরভাগই দেশের সংখ্যালঘু শিয়া মুসলমানদের লক্ষ্য করে।

২০২১ সালের আগস্টে তালেবান ক্ষমতায় আসলেও সরকারটি এখনও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি। কিছু দেশ তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখলেও স্বীকৃতি দেয়নি। তবে নতুন বছরে স্বীকৃতি মিলতে পারে বলে সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশেষ করে পাকিস্তান, ইরান, তুরস্ক তালেবানকে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়ে অনেক বেশি ইতিবাচক। আন্তর্জাতিক রাজনীতির কারণে তারা হয়তো ঘোষণা দিচ্ছে না। ওআইসির সিদ্ধান্তে অনেকগুলো মুসলিম দেশ একসঙ্গে তালেবানকে স্বীকৃতি দিতে পারে বলেও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানজুড়ে মাটির নিচে রয়েছে অসংখ্য অবিস্ফোরিত মর্টার শেলসহ নানা বিস্ফোরক। এসব অস্ত্র মাঝে মাঝেই বিস্ফোরিত হয়ে থাকে। এজন্য আফগানিস্তানের মাটি শিশুদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে প্রায়ই।

৬ মাস বেতন না পেয়ে চীনে নিযুক্ত আফগান রাষ্ট্রদূতের পদত্যাগ

সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশটির সংকট ক্রমে বেড়েই চলেছে। কাবুলের শাসকগোষ্ঠীর আন্তর্জাতিক কোনো স্বীকৃতি না থাকায় ভয়াবহ আর্থিক সংকট চলছে দেশটিতে। আর এবার মাসের পর মাস ধরে কোনো বেতন না পেয়ে পদত্যাগ করেছেন চীনে নিযুক্ত আফগান রাষ্ট্রদূত।

চলতি মাসের শুরুতে ওই রাষ্ট্রদূত আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশে নিজের পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনে নিযুক্ত সদ্য পদত্যাগকৃত ওই আফগান রাষ্ট্রদূতের নাম জাভিদ আহমেদ কায়েম। তালেবানের ক্ষমতাগ্রহণের আগে থেকেই ইসলামিক রিপাবলিক অব আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে চীনে দায়িত্বপালন করছিলেন তিনি। পদত্যাগপত্রে জাভিদ আহমেদ কায়েম জানান, দূতাবাসে দায়িত্বপালনরত কর্মকর্তারা গত ছয় মাস ধরে কোনো বেতন পাননি। আর তাই ফোনের উত্তর দেয়ার জন্য মাত্র একজন স্টাফকে রেখে যাওয়া হচ্ছে।

সোমবার টুইটারে দেয়া এক বার্তায় জাভিদ আহমেদ কায়েম জানান, ‘সম্মানজনক দায়িত্বের সমাপ্তি, রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব থেকে আমি পদত্যাগ করেছি। আফগানিস্তানের পতাকা ও আফগানদের প্রতিনিধিত্ব করাটা সম্মানের। (পদত্যাগের পেছনে) অনেক কারণ থাকতে পারে, এর কিছু ব্যক্তিগত এবং কিছু পেশাগত। সেসব কারণ আমি এখানে প্রকাশ করতে চাই না। একটি হ্যান্ডওভার নোটের মাধ্যমে আমি আমার দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছি।’

তবে আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গত ১ জানুয়ারি দেয়া ওই পদত্যাগপত্রে কায়েম উল্লেখ করেন, ‘যেহেতু আমরা কাবুল থেকে গত ছয় মাস যাবৎ বেতন পাইনি, তাই আর্থিক বিষয়টির সমাধানের জন্য কূটনীতিকদের মধ্য থেকে আমরা একটি কমিটি নিযুক্ত করি।’ পত্রটির ছবিও সোমবার টুইটারে পোস্ট করা হয়।

গত আগস্টে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর, সেখানে কর্মরতদের দেয়ার জন্য তাকে দূতাবাসের ব্যাংক হিসাব থেকে অনেক কষ্টে অর্থ সংগ্রহ করতে হয়েছে বলে জানান জাভিদ আহমেদ কায়েম। তারপরও তিনি তার উত্তরসূরির জন্য কিছু অর্থ রেখে গিয়েছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই পত্রে জাভিদ কায়েম উল্লেখ করেন, ‘২০২২ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে এক লাখ মার্কিন ডলার অবশিষ্ট আছে।’ কায়েম তার ওই পত্রে মৃতপ্রায় একটি দূতাবাসের চিত্র তুলে ধরে জানান, দূতাবাসের পাঁচটি গাড়ির চাবি তিনি তার অফিসে রেখে দিয়েছেন এবং অন্য সব কূটনীতিক চলে যাওয়ার পর শুধু ফোনকল রিসিভ করার জন্য স্থানীয়ভাবে একজন কর্মীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

অবশ্য রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব ছাড়লেও এরপর তিনি কোথায় যাবেন সে বিষয়ে কিছু জানাননি জাভিদ আহমেদ কায়েম।

বুধবার, ১২ জানুয়ারী ২০২২ , ২৮ পৌষ ১৪২৮ ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

আফগানিস্তানে মর্টার শেল বিস্ফোরণে ৯ শিশু নিহত

image

আফগানিস্তানের লালোপার জেলার বাইগানান গ্রামে একটি পুরনো, অবিস্ফোরিত মর্টার শেলের বিস্ফোরণটি ঘটে -আলজাজিরা

পাকিস্তান সীমান্তের কাছে পূর্ব আফগানিস্তানে বিস্ফোরণে অন্তত নয় শিশু নিহত এবং চারজন আহত হয়েছেন। স্থানীয় কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন। নানগারহার প্রদেশের গভর্নরের অফিসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, লালোপার জেলার বাইগানান গ্রামে একটি পুরনো, অবিস্ফোরিত মর্টার শেলের ওপর খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করার সময় সোমবার বিস্ফোরণটি ঘটে। আল-জাজিরা।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আহত শিশুদের চিকিৎসার জন্য প্রাদেশিক রাজধানী জালালাবাদের আঞ্চলিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আফগানিস্তানে কয়েক দশকের যুদ্ধ-সংঘাতের ফলে দেশটির ভূমিতে সবচেয়ে বেশি অবিস্ফোরিত ল্যান্ড মাইন এবং অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে। যখনই এসব অস্ত্রের বিস্ফোরণ ঘটে, শিকার হয় শিশুরাই।

তালেবানরা আফগানিস্তান দখল নেওয়ার পর থেকে নানগারহারসহ দেশটির বিভিন্ন প্রদেশে একাধিক রক্তক্ষয়ী হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএসকে। সশস্ত্র সংগঠনটি ২০১৪ সাল থেকে আফগানিস্তানে হামলা চালিয়ে আসছে। তারা কয়েক ডজন ভয়ঙ্কর হামলা চালিয়েছে, এর বেশিরভাগই দেশের সংখ্যালঘু শিয়া মুসলমানদের লক্ষ্য করে।

২০২১ সালের আগস্টে তালেবান ক্ষমতায় আসলেও সরকারটি এখনও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি। কিছু দেশ তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখলেও স্বীকৃতি দেয়নি। তবে নতুন বছরে স্বীকৃতি মিলতে পারে বলে সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশেষ করে পাকিস্তান, ইরান, তুরস্ক তালেবানকে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়ে অনেক বেশি ইতিবাচক। আন্তর্জাতিক রাজনীতির কারণে তারা হয়তো ঘোষণা দিচ্ছে না। ওআইসির সিদ্ধান্তে অনেকগুলো মুসলিম দেশ একসঙ্গে তালেবানকে স্বীকৃতি দিতে পারে বলেও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানজুড়ে মাটির নিচে রয়েছে অসংখ্য অবিস্ফোরিত মর্টার শেলসহ নানা বিস্ফোরক। এসব অস্ত্র মাঝে মাঝেই বিস্ফোরিত হয়ে থাকে। এজন্য আফগানিস্তানের মাটি শিশুদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে প্রায়ই।

৬ মাস বেতন না পেয়ে চীনে নিযুক্ত আফগান রাষ্ট্রদূতের পদত্যাগ

সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশটির সংকট ক্রমে বেড়েই চলেছে। কাবুলের শাসকগোষ্ঠীর আন্তর্জাতিক কোনো স্বীকৃতি না থাকায় ভয়াবহ আর্থিক সংকট চলছে দেশটিতে। আর এবার মাসের পর মাস ধরে কোনো বেতন না পেয়ে পদত্যাগ করেছেন চীনে নিযুক্ত আফগান রাষ্ট্রদূত।

চলতি মাসের শুরুতে ওই রাষ্ট্রদূত আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশে নিজের পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনে নিযুক্ত সদ্য পদত্যাগকৃত ওই আফগান রাষ্ট্রদূতের নাম জাভিদ আহমেদ কায়েম। তালেবানের ক্ষমতাগ্রহণের আগে থেকেই ইসলামিক রিপাবলিক অব আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে চীনে দায়িত্বপালন করছিলেন তিনি। পদত্যাগপত্রে জাভিদ আহমেদ কায়েম জানান, দূতাবাসে দায়িত্বপালনরত কর্মকর্তারা গত ছয় মাস ধরে কোনো বেতন পাননি। আর তাই ফোনের উত্তর দেয়ার জন্য মাত্র একজন স্টাফকে রেখে যাওয়া হচ্ছে।

সোমবার টুইটারে দেয়া এক বার্তায় জাভিদ আহমেদ কায়েম জানান, ‘সম্মানজনক দায়িত্বের সমাপ্তি, রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব থেকে আমি পদত্যাগ করেছি। আফগানিস্তানের পতাকা ও আফগানদের প্রতিনিধিত্ব করাটা সম্মানের। (পদত্যাগের পেছনে) অনেক কারণ থাকতে পারে, এর কিছু ব্যক্তিগত এবং কিছু পেশাগত। সেসব কারণ আমি এখানে প্রকাশ করতে চাই না। একটি হ্যান্ডওভার নোটের মাধ্যমে আমি আমার দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছি।’

তবে আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গত ১ জানুয়ারি দেয়া ওই পদত্যাগপত্রে কায়েম উল্লেখ করেন, ‘যেহেতু আমরা কাবুল থেকে গত ছয় মাস যাবৎ বেতন পাইনি, তাই আর্থিক বিষয়টির সমাধানের জন্য কূটনীতিকদের মধ্য থেকে আমরা একটি কমিটি নিযুক্ত করি।’ পত্রটির ছবিও সোমবার টুইটারে পোস্ট করা হয়।

গত আগস্টে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর, সেখানে কর্মরতদের দেয়ার জন্য তাকে দূতাবাসের ব্যাংক হিসাব থেকে অনেক কষ্টে অর্থ সংগ্রহ করতে হয়েছে বলে জানান জাভিদ আহমেদ কায়েম। তারপরও তিনি তার উত্তরসূরির জন্য কিছু অর্থ রেখে গিয়েছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই পত্রে জাভিদ কায়েম উল্লেখ করেন, ‘২০২২ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে এক লাখ মার্কিন ডলার অবশিষ্ট আছে।’ কায়েম তার ওই পত্রে মৃতপ্রায় একটি দূতাবাসের চিত্র তুলে ধরে জানান, দূতাবাসের পাঁচটি গাড়ির চাবি তিনি তার অফিসে রেখে দিয়েছেন এবং অন্য সব কূটনীতিক চলে যাওয়ার পর শুধু ফোনকল রিসিভ করার জন্য স্থানীয়ভাবে একজন কর্মীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

অবশ্য রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব ছাড়লেও এরপর তিনি কোথায় যাবেন সে বিষয়ে কিছু জানাননি জাভিদ আহমেদ কায়েম।