মহাসড়কে গাড়িতে যাত্রী উঠিয়ে ডাকাতি, শিকার হন পুলিশ ইন্সপেক্টরও

হত্যার হুমকি দিয়ে স্বজনদের কাছ থেকেও বিকাশে টাকা আদায়

মো. বেল্লল হোসেন, পুলিশের পরিদর্শক বা ইন্সপেক্টর। ছুটিতে মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার থেকে বাড়ি যাচ্ছিলেন। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের দেলদুয়ার এলাকায় রাস্তার কাছে দাঁড়ান তিনি। আনুমানিক বিকেল ৪টার দিকে একটি প্রাইভেটকার এসে হঠাৎ করে তার সামনে অবস্থান নেয়। অজ্ঞাত পরিচয় ৪ জন জোর করে তাকে ওই গাড়িতে উঠিয়ে নেয়।

কিছুদূর যাওয়ার পর তার হাত পা ও মুখ বেঁধে ব্লেজারের পকেট থেকে ৪৫ হাজার ৪৮০ টাকা, কমিউনিটি ব্যাংকের এটিএম কার্ড, একটি মানিব্যাগ ও একটি নকিয়া মোবাইল ফোন সেট ছিনিয়ে নেয়।

শুধু তাই নয়, মারপিট করে ওই ইন্সপেক্টরকে হত্যার হুমকি দিয়ে একটি বিকাশ নম্বরের মাধ্যমে স্বজনদের কাছ থেকে আরও ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। এরপর পুলিশের ওই পরিদর্শককে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকায় নামিয়ে দিয়ে তারা পালিয়ে যায়।

ঘটনা ২০২০ সালে ২৪ ডিসেম্বরের। থানায় অভিযোগ করেন পুলিশের ইন্সপেক্টর বেল্লাল হোসেন। আলোচিত এ ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত করে। এরপর ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন বা পিবিআইকে। টাঙ্গাইল সদর থানায় ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসেই এ ধরনের আরও একটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

টাঙ্গাইলের করটিয়ায় বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন মাহতাব হোসেন নামে এক ব্যক্তি। সিরাজগঞ্জে নামিয়ে দেয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তার প্রাইভেটকারে উঠতে বলে। সেখানে আরও কয়েকজন যাত্রী ছিলেন। তবে গাড়িটি কিছুদূর যাওয়ার পরেই বাকি যাত্রীরা মাহতাবের হাত-পা বেঁধে ফেলে। এরপর তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন, নগদ টাকা, ভিসা কার্ড নিয়ে নেয়। এরপর হত্যার ভয় দেখিয়ে বিকাশের মাধ্যমে মাহতাবের স্বজনদের কাছ থেকে আরও ২৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় ওই ডাকাত চক্র। এরপর কালিয়াকৈরে তাকে ফেলে চলে যায়। আর ভিসা কার্ড ব্যবহার করে মির্জাপুর হাটুভাঙ্গা এলাকার এনআরবি ব্যাংকের বুথ থেকে দুই হাজার টাকা উত্তোলন করে।

টাঙ্গাইল সদর থানায় ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর মামলা দায়ের করেন মাহতাব। এই মামলারও তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। পিবিআই দায়িত্ব পাওয়ার পর তদন্তে দেখতে পায়, ওই দুই ঘটনায় জড়িত একই চক্র। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৪ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে তারা। মামলার বাদীরা তাদের শনাক্ত করে। জিজ্ঞাসাদে বেরিয়ে আসে ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-সিরাজগঞ্জ ও ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে প্রাইভেটকারযোগে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের নানা কাহিনী।

গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্তরা হলো সোহেল রানা, প্রাইভেট কারের চালক মিজানুর রহমান, সাবাস ও রফিকুল ইসলাম। তাদের কাছ থেকে লুটকৃত মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য আলামত জব্দ করা হয়েছে। ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি শনাক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তরা আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে বলে পিবিআইর ধানমন্ডির প্রধান কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে।

পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান আনসারী সংবাদকে জানান, অভিযুক্ত আসামিরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে প্রাইভেটকারযোগে যাত্রীদের কম পয়সায় গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে গাড়িতে উঠিয়ে নির্যাতন করে মালামাল লুট করে নিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দিত।

বুধবার, ১২ জানুয়ারী ২০২২ , ২৮ পৌষ ১৪২৮ ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

মহাসড়কে গাড়িতে যাত্রী উঠিয়ে ডাকাতি, শিকার হন পুলিশ ইন্সপেক্টরও

হত্যার হুমকি দিয়ে স্বজনদের কাছ থেকেও বিকাশে টাকা আদায়

বাকী বিল্লাহ

মো. বেল্লল হোসেন, পুলিশের পরিদর্শক বা ইন্সপেক্টর। ছুটিতে মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার থেকে বাড়ি যাচ্ছিলেন। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের দেলদুয়ার এলাকায় রাস্তার কাছে দাঁড়ান তিনি। আনুমানিক বিকেল ৪টার দিকে একটি প্রাইভেটকার এসে হঠাৎ করে তার সামনে অবস্থান নেয়। অজ্ঞাত পরিচয় ৪ জন জোর করে তাকে ওই গাড়িতে উঠিয়ে নেয়।

কিছুদূর যাওয়ার পর তার হাত পা ও মুখ বেঁধে ব্লেজারের পকেট থেকে ৪৫ হাজার ৪৮০ টাকা, কমিউনিটি ব্যাংকের এটিএম কার্ড, একটি মানিব্যাগ ও একটি নকিয়া মোবাইল ফোন সেট ছিনিয়ে নেয়।

শুধু তাই নয়, মারপিট করে ওই ইন্সপেক্টরকে হত্যার হুমকি দিয়ে একটি বিকাশ নম্বরের মাধ্যমে স্বজনদের কাছ থেকে আরও ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। এরপর পুলিশের ওই পরিদর্শককে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকায় নামিয়ে দিয়ে তারা পালিয়ে যায়।

ঘটনা ২০২০ সালে ২৪ ডিসেম্বরের। থানায় অভিযোগ করেন পুলিশের ইন্সপেক্টর বেল্লাল হোসেন। আলোচিত এ ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত করে। এরপর ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন বা পিবিআইকে। টাঙ্গাইল সদর থানায় ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসেই এ ধরনের আরও একটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

টাঙ্গাইলের করটিয়ায় বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন মাহতাব হোসেন নামে এক ব্যক্তি। সিরাজগঞ্জে নামিয়ে দেয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তার প্রাইভেটকারে উঠতে বলে। সেখানে আরও কয়েকজন যাত্রী ছিলেন। তবে গাড়িটি কিছুদূর যাওয়ার পরেই বাকি যাত্রীরা মাহতাবের হাত-পা বেঁধে ফেলে। এরপর তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন, নগদ টাকা, ভিসা কার্ড নিয়ে নেয়। এরপর হত্যার ভয় দেখিয়ে বিকাশের মাধ্যমে মাহতাবের স্বজনদের কাছ থেকে আরও ২৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় ওই ডাকাত চক্র। এরপর কালিয়াকৈরে তাকে ফেলে চলে যায়। আর ভিসা কার্ড ব্যবহার করে মির্জাপুর হাটুভাঙ্গা এলাকার এনআরবি ব্যাংকের বুথ থেকে দুই হাজার টাকা উত্তোলন করে।

টাঙ্গাইল সদর থানায় ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর মামলা দায়ের করেন মাহতাব। এই মামলারও তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। পিবিআই দায়িত্ব পাওয়ার পর তদন্তে দেখতে পায়, ওই দুই ঘটনায় জড়িত একই চক্র। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৪ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে তারা। মামলার বাদীরা তাদের শনাক্ত করে। জিজ্ঞাসাদে বেরিয়ে আসে ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-সিরাজগঞ্জ ও ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে প্রাইভেটকারযোগে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের নানা কাহিনী।

গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্তরা হলো সোহেল রানা, প্রাইভেট কারের চালক মিজানুর রহমান, সাবাস ও রফিকুল ইসলাম। তাদের কাছ থেকে লুটকৃত মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য আলামত জব্দ করা হয়েছে। ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি শনাক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তরা আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে বলে পিবিআইর ধানমন্ডির প্রধান কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে।

পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান আনসারী সংবাদকে জানান, অভিযুক্ত আসামিরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে প্রাইভেটকারযোগে যাত্রীদের কম পয়সায় গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে গাড়িতে উঠিয়ে নির্যাতন করে মালামাল লুট করে নিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দিত।