মামলায় অবৈধ সম্পদ ২৬ কোটি, তদন্তে দেখালো সাড়ে ৪ কোটি টাকা!

আদালতে চার্জশিট দাখিল

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিল মোহাম্মদপুরের সুলতান ওরফে মো. তারেকুজ্জামান রাজীবের বিরুদ্ধে ২৬ কোটি টাককার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করা হলেও তদন্তে অবৈধ সম্পদের পরিমাণ মিলেছে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা। সম্প্রতি তদন্ত কর্মকর্তা দুদক উপপরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন। আগামী ২৩ জানুয়ারি এ মামলার প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন নির্ধারিত আছে।

দুদক সূত্র জানায়, ক্যসিনোবিরোধী র‌্যাবের অভিযানে মো. তারেকুজ্জামান রাজীব আরও অনেকেই গ্রেপ্তার হন। যাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারে মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে। এসব অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমে ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর দুদক একটি মামলা করে। মামলায় ২৬ কোটি ১৬ লাখ ৩৫ হাজার ৯০৫ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও তা ভোগদখলে রাখার অভিযোগ করা হয়। তবে চার্জশিটে অবৈধ সম্পদের টাকার অঙ্ক প্রায় ৬ গুণ কমে যায়। চার্জশিটে চার কোটি ৪৯ লাখ ৯ হাজার ৪৬৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তা ভোগদখলে রাখার অভিযোগ করা হয়। ২০১০ সালের ৩০ জুন থেকে ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ওই অবৈধ সম্পদ অর্জনের সময়কাল উল্লেখ করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারায় এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় আসামির বিরুদ্ধে এ চার্জশিট য়ো হয়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ১৯ অক্টোবর রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে কাউন্সিল রাজীবকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই সময় তার কাছ থেকে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় র‌্যাব-১ এর ডিএডি মিজানুর রহমান বাদী হয়ে রাজধানীর ভাটারা থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন। এ দুই মামলায় ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হয়েছে।

এ ছাড়া গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় রাজীবের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার আইনের আরেকটি মামলা করা হয়। মামলায় বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ স্থানান্তর ও বিদেশে পাচারের অভিযোগ আনা হয়। সেখানে বলা হয়, আসামি রাজীব ক্ষমতার অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে চাঁদাবাজি, সংঘবদ্ধ অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তার প্রত্যক্ষ নির্দেশনা ও নেতৃত্বে তার নিয়ন্ত্রণাধীন রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিদিন চাঁদা তুলতো। এ ছাড়া তিনি ঢাকা উদ্যান এলাকায় অনিস্কণ্টক জমি জোর করে দখল এবং কাউন্সিলর অফিসে ভুক্তভোগীদের ডেকে এনে ভয়-ভীতি দেখিয়ে স্বল্প মূল্যে জমি বিক্রি করার জন্য বাধ্য করত। সংঘবদ্ধভাবে চাঁদাবাজি, গরুর হাটের টেন্ডারবাজি, অবৈধ মাদক ব্যবসা, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে নামে বেনামে বাড়ি, ফ্ল্যাট ও বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ স্থানান্তর করেছে।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মোহাম্মদপুর এলাকায় উত্থান ঘটে ভোলার লালমোহনের বদরপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা রাজীবের। ওই এলাকার সাবেক এমপি জাহাঙ্গীর কবীর নানকের হাত ধরে রাজধানীতে সক্রিয় হন রাজীব। এরপর যুবলীগের পদও পান। এক পর্যায়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপারেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রাজীবকে। অতি সাধারণ ঘরের সন্তান রাজীব হয়ে উঠেন মোহাম্মদপুরের সুলতান। নবাবদের মতো চলাফেরা ছিল তার। বাড়ি দখল, প্লট দখল, বিরোধীয় জমি দখল থেকে শুরু করে সরকারি সম্পত্তিও দখল তার নেশা হয়ে উঠে।

বুধবার, ১২ জানুয়ারী ২০২২ , ২৮ পৌষ ১৪২৮ ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

সাবেক কাউন্সিলর রাজীবের বিরুদ্ধে

মামলায় অবৈধ সম্পদ ২৬ কোটি, তদন্তে দেখালো সাড়ে ৪ কোটি টাকা!

আদালতে চার্জশিট দাখিল

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিল মোহাম্মদপুরের সুলতান ওরফে মো. তারেকুজ্জামান রাজীবের বিরুদ্ধে ২৬ কোটি টাককার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করা হলেও তদন্তে অবৈধ সম্পদের পরিমাণ মিলেছে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা। সম্প্রতি তদন্ত কর্মকর্তা দুদক উপপরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন। আগামী ২৩ জানুয়ারি এ মামলার প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন নির্ধারিত আছে।

দুদক সূত্র জানায়, ক্যসিনোবিরোধী র‌্যাবের অভিযানে মো. তারেকুজ্জামান রাজীব আরও অনেকেই গ্রেপ্তার হন। যাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারে মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে। এসব অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমে ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর দুদক একটি মামলা করে। মামলায় ২৬ কোটি ১৬ লাখ ৩৫ হাজার ৯০৫ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও তা ভোগদখলে রাখার অভিযোগ করা হয়। তবে চার্জশিটে অবৈধ সম্পদের টাকার অঙ্ক প্রায় ৬ গুণ কমে যায়। চার্জশিটে চার কোটি ৪৯ লাখ ৯ হাজার ৪৬৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তা ভোগদখলে রাখার অভিযোগ করা হয়। ২০১০ সালের ৩০ জুন থেকে ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ওই অবৈধ সম্পদ অর্জনের সময়কাল উল্লেখ করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারায় এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় আসামির বিরুদ্ধে এ চার্জশিট য়ো হয়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ১৯ অক্টোবর রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে কাউন্সিল রাজীবকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই সময় তার কাছ থেকে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় র‌্যাব-১ এর ডিএডি মিজানুর রহমান বাদী হয়ে রাজধানীর ভাটারা থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন। এ দুই মামলায় ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হয়েছে।

এ ছাড়া গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় রাজীবের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার আইনের আরেকটি মামলা করা হয়। মামলায় বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ স্থানান্তর ও বিদেশে পাচারের অভিযোগ আনা হয়। সেখানে বলা হয়, আসামি রাজীব ক্ষমতার অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে চাঁদাবাজি, সংঘবদ্ধ অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তার প্রত্যক্ষ নির্দেশনা ও নেতৃত্বে তার নিয়ন্ত্রণাধীন রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিদিন চাঁদা তুলতো। এ ছাড়া তিনি ঢাকা উদ্যান এলাকায় অনিস্কণ্টক জমি জোর করে দখল এবং কাউন্সিলর অফিসে ভুক্তভোগীদের ডেকে এনে ভয়-ভীতি দেখিয়ে স্বল্প মূল্যে জমি বিক্রি করার জন্য বাধ্য করত। সংঘবদ্ধভাবে চাঁদাবাজি, গরুর হাটের টেন্ডারবাজি, অবৈধ মাদক ব্যবসা, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে নামে বেনামে বাড়ি, ফ্ল্যাট ও বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ স্থানান্তর করেছে।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মোহাম্মদপুর এলাকায় উত্থান ঘটে ভোলার লালমোহনের বদরপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা রাজীবের। ওই এলাকার সাবেক এমপি জাহাঙ্গীর কবীর নানকের হাত ধরে রাজধানীতে সক্রিয় হন রাজীব। এরপর যুবলীগের পদও পান। এক পর্যায়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপারেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রাজীবকে। অতি সাধারণ ঘরের সন্তান রাজীব হয়ে উঠেন মোহাম্মদপুরের সুলতান। নবাবদের মতো চলাফেরা ছিল তার। বাড়ি দখল, প্লট দখল, বিরোধীয় জমি দখল থেকে শুরু করে সরকারি সম্পত্তিও দখল তার নেশা হয়ে উঠে।