সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে নিউজিল্যান্ডের কাছে ইনিংস এবং ১১৭ রানের ব্যবধানে হেরে গেলেও আগের মতো বাংলাদেশকে কেউ হিসাবের বাইরে রাখতে পারবে না বলে মনে করছেন টাইগার অধিনায়ক মোমিনুল হক। চলতি সফরে নিউজিল্যান্ডের মতো বিরূপ কন্ডিশনে জয়ের নজির গড়ায় তার দল ক্রিকেট বিশ্বের সম্মান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন বলেই মনে করছেন মোমিনুল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্ট ৮ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ। টেস্টের পুরো পাঁচদিন দাপট দেখিয়েছেন টাইগাররা। তবে দ্বিতীয় টেস্ট জিতে সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ করতে পারে নিউজিল্যান্ড। ম্যাচ শেষে গতকাল মোমিনুল বলেন, ‘আমি অত্যন্ত গর্বিত, বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে খেলায়। প্রথম টেস্টে নিয়ে আমি সত্যিই খুশি, কিন্তু দ্বিতীয় টেস্ট ছিল হতাশার। বিদেশি কন্ডিশনে শেষ পর্যন্ত টেস্ট জয়ের ধারা অব্যাহত রাখাই এখন চ্যালেঞ্জ। আমার মনে হয় এখন আর কেউ বিদেশের মাটিতে আমাদের হিসাবের বাইরে রাখতে পারবে না। সবাই আমাদের নিয়ে চিন্তা করবে।’
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬ ম্যাচ লড়াইয়ের পর প্রথম টেস্ট জয়ের দেখা পায় বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ৩৩ ম্যাচ লড়াইয়ের পর প্রথম জয়ের দেখা পায় টাইগাররা। এশিয়ার বাইরে বড় কোন দলের বিপক্ষে এটিই ছিল বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়। যা স্মরণীয় হয়ে থাকলো। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। তবে প্রতিপক্ষ দলটি ছিল দ্বিতীয় সারির। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ে ছাড়া বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের জয় ছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এই জয়, ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডকে টানা ১৭ টেস্ট অপরাজিত থাকার রেকর্ড থামিয়ে দেয়। ২০১০ সালের পর কোন এশিয়ার দলের কাছে এটি ছিল কিউইদের প্রথম পরাজয়। মোমিনুলের মতে, গর্ব করার মত অনেক কিছুই ছিল। তিনি বলেন, ‘প্রথম টেস্ট জয়ের পর এটা আমাদের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। বিদেশের মাটিতে খেলা মানসিকতার ওপর নির্ভর করে। আমাদের কিছু ভালো ইতিবাচক বিষয় ছিল। এবাদত সত্যিই ভালো বোলিং করেছে, আর লিটনও দারুণ খেলেছে। তার ব্যাটিংয়ের সময় এটাকে কঠিন পিচের মতো মনে হয়নি।’ প্রথম টেস্টে ৮৬ রান করেছিলেন লিটন। আর দ্বিতীয় টেস্টে ভালো ব্যাট করেছেন তিনি এবং সেঞ্চুরি করেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ১১৪ বলে ১০২ রান করেন তিনি। দলের ইনিংস হার এড়ানোর চেষ্টা করেছেন লিটন। কিন্তু দলের অন্য ব্যাটাররা ব্যর্থ হওয়ায়, ইনিংস হার এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। মোমিনুল বলেন, ‘১-১এ সিরিজ ড্র, আমাদের জন্য বড় প্রাপ্তি। কারণ বিদেশের মাটিতে আমরা নিয়মিত জিততে পারি না। গত দুই বছর ধরে আমরা বিদেশের মাটিতে খুব বেশি ম্যাচ খেলিনি। যদিও আমরা খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। তথাপি আমরা আমরা একটি টেস্ট জিততে চেয়েছি এবং আমরা সেটি করতে পেরেছি।’ গত বছরটা বাজে কাটার পর এ বছরের শুরুতে জয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ঘরের মাঠে হারের বৃত্তেই ছিল টাইগাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে টেস্ট সিরিজে হার ও টি-২০ বিশ্বকাপে ভালো করতে না পারাটা দুঃখজনক ছিল। বিশ্বকাপের পর ঘরের মাঠে পাকিস্তানের কাছে টেস্ট ও টি-২০ সিরিজে হার মানে বাংলাদেশ। বোর্ড এবং সিনিয়র খেলোয়াড়দের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসায় ওই সময় বিষয়টি আরও খারাপ হয়। সিনিয়র খেলোয়াড়দের মধ্যে ইগো সমস্যাও ছিল, যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছে। কিন্তু সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে বাংলাদেশ তাদের দুই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালকে ছাড়াই একটি সফল সিরিজ শেষ করেছে। মোমিনুল বলেন, ‘দলের প্রচেষ্টা দারুণ ছিল। আমরা পুরো সিরিজে দল হিসেবে খেলেছি। দ্বিতীয় টেস্ট হতাশাজনক হলেও সিরিজ থেকে আমাদের অনেক ইতিবাচক বিষয় নেয়ার আছে। এখন আমাদের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে।’
বুধবার, ১২ জানুয়ারী ২০২২ , ২৮ পৌষ ১৪২৮ ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৩
ক্রীড়া বার্তা পরিবেশক
সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে নিউজিল্যান্ডের কাছে ইনিংস এবং ১১৭ রানের ব্যবধানে হেরে গেলেও আগের মতো বাংলাদেশকে কেউ হিসাবের বাইরে রাখতে পারবে না বলে মনে করছেন টাইগার অধিনায়ক মোমিনুল হক। চলতি সফরে নিউজিল্যান্ডের মতো বিরূপ কন্ডিশনে জয়ের নজির গড়ায় তার দল ক্রিকেট বিশ্বের সম্মান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন বলেই মনে করছেন মোমিনুল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্ট ৮ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ। টেস্টের পুরো পাঁচদিন দাপট দেখিয়েছেন টাইগাররা। তবে দ্বিতীয় টেস্ট জিতে সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ করতে পারে নিউজিল্যান্ড। ম্যাচ শেষে গতকাল মোমিনুল বলেন, ‘আমি অত্যন্ত গর্বিত, বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে খেলায়। প্রথম টেস্টে নিয়ে আমি সত্যিই খুশি, কিন্তু দ্বিতীয় টেস্ট ছিল হতাশার। বিদেশি কন্ডিশনে শেষ পর্যন্ত টেস্ট জয়ের ধারা অব্যাহত রাখাই এখন চ্যালেঞ্জ। আমার মনে হয় এখন আর কেউ বিদেশের মাটিতে আমাদের হিসাবের বাইরে রাখতে পারবে না। সবাই আমাদের নিয়ে চিন্তা করবে।’
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬ ম্যাচ লড়াইয়ের পর প্রথম টেস্ট জয়ের দেখা পায় বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ৩৩ ম্যাচ লড়াইয়ের পর প্রথম জয়ের দেখা পায় টাইগাররা। এশিয়ার বাইরে বড় কোন দলের বিপক্ষে এটিই ছিল বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়। যা স্মরণীয় হয়ে থাকলো। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। তবে প্রতিপক্ষ দলটি ছিল দ্বিতীয় সারির। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ে ছাড়া বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের জয় ছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এই জয়, ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডকে টানা ১৭ টেস্ট অপরাজিত থাকার রেকর্ড থামিয়ে দেয়। ২০১০ সালের পর কোন এশিয়ার দলের কাছে এটি ছিল কিউইদের প্রথম পরাজয়। মোমিনুলের মতে, গর্ব করার মত অনেক কিছুই ছিল। তিনি বলেন, ‘প্রথম টেস্ট জয়ের পর এটা আমাদের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। বিদেশের মাটিতে খেলা মানসিকতার ওপর নির্ভর করে। আমাদের কিছু ভালো ইতিবাচক বিষয় ছিল। এবাদত সত্যিই ভালো বোলিং করেছে, আর লিটনও দারুণ খেলেছে। তার ব্যাটিংয়ের সময় এটাকে কঠিন পিচের মতো মনে হয়নি।’ প্রথম টেস্টে ৮৬ রান করেছিলেন লিটন। আর দ্বিতীয় টেস্টে ভালো ব্যাট করেছেন তিনি এবং সেঞ্চুরি করেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ১১৪ বলে ১০২ রান করেন তিনি। দলের ইনিংস হার এড়ানোর চেষ্টা করেছেন লিটন। কিন্তু দলের অন্য ব্যাটাররা ব্যর্থ হওয়ায়, ইনিংস হার এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। মোমিনুল বলেন, ‘১-১এ সিরিজ ড্র, আমাদের জন্য বড় প্রাপ্তি। কারণ বিদেশের মাটিতে আমরা নিয়মিত জিততে পারি না। গত দুই বছর ধরে আমরা বিদেশের মাটিতে খুব বেশি ম্যাচ খেলিনি। যদিও আমরা খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। তথাপি আমরা আমরা একটি টেস্ট জিততে চেয়েছি এবং আমরা সেটি করতে পেরেছি।’ গত বছরটা বাজে কাটার পর এ বছরের শুরুতে জয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ঘরের মাঠে হারের বৃত্তেই ছিল টাইগাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে টেস্ট সিরিজে হার ও টি-২০ বিশ্বকাপে ভালো করতে না পারাটা দুঃখজনক ছিল। বিশ্বকাপের পর ঘরের মাঠে পাকিস্তানের কাছে টেস্ট ও টি-২০ সিরিজে হার মানে বাংলাদেশ। বোর্ড এবং সিনিয়র খেলোয়াড়দের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসায় ওই সময় বিষয়টি আরও খারাপ হয়। সিনিয়র খেলোয়াড়দের মধ্যে ইগো সমস্যাও ছিল, যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছে। কিন্তু সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে বাংলাদেশ তাদের দুই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালকে ছাড়াই একটি সফল সিরিজ শেষ করেছে। মোমিনুল বলেন, ‘দলের প্রচেষ্টা দারুণ ছিল। আমরা পুরো সিরিজে দল হিসেবে খেলেছি। দ্বিতীয় টেস্ট হতাশাজনক হলেও সিরিজ থেকে আমাদের অনেক ইতিবাচক বিষয় নেয়ার আছে। এখন আমাদের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে।’