লালমনিরহাটে আলুর দাম কম : দিশেহারা কৃষকৎ

গতবছর ভালো দাম পাওয়ায় এবার লালমনিরহাটের কৃষকরা দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে আলু চাষ শুরু করেন। কিন্তু আলুর বর্তমান বাজারদরে লাভ তো দূরের কথা খরচও তুলতে পারছেন না তারা। ফলে হতাশা কাজ করছে তাদের মধ্যে। জানা গেছে, প্রতিবছর নতুন আলু ৮০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এবার শুরুতেই দাম ছিল অর্ধেক। এ বছর প্রতি কেজি নতুন আলু ৪০-৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

তবে বর্তমানে আগাম আলুর দাম আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। এখন প্রতি কেজি আলু পাইকারি ৮-১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে । জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, সাধারণত নবেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত আগাম আলু লাগানো হয়। এ বছর জেলায় ৬ হাজার ৪৩২ হেক্টর জমিতে আগাম আলুর চাষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ১৭ দশমিক ২৮ মেট্রিক টন।

আর গড়ে প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ সাড়ে সাত টাকা। এ পর্যন্ত মোট আবাদের ৪০ শতাংশ জমির আলু তোলা হয়েছে। লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ি গ্রামের কৃষক শহিদুল বলেন, এ বছর দুই বিঘা জমিতে আগাম আলু লাগিয়েছি। বীজ, সার, শ্রমিকের খরচ, সেচ বাবদ প্রতি বিঘা জমিতে ১৫-১৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর এক বিঘা জমির আলু বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে ১৪-১৫ থেকে হাজার টাকা। ফলে গুণতে হচ্ছে লোকসান।

মহেন্দ্রনগর গ্রামের কৃষক বেলাল মিয়া বলেন, উচ্চ মূল্যে বীজ কিনে আলু চাষ করেছি। এখন বিক্রির সময় ভালো দাম পাচ্ছি না। দুই মাস আগে প্রতি কেজি আলু ৫৫-৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছিল। আর এখন জমি থেকে ৭ টাকা থেকে সাড়ে ৯ টাকা বিক্রি হচ্ছে। শিয়াল খোওয়া গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি এ বছর দুই একর জমিতে আলুর আবাদ করেছি। ফলনও মোটামুটি ভালো হয়েছে। কিন্তু আলুর বাজার দর ভালো না পাওয়ায় লোকসান গুণতে হচ্ছে। সরকার যদি আলু চাষিদের দিকে না তাকায় তাহলে আমরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলব। আদিতমারি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলিনুর রহমান বলেন, কৃষকরা এখন আগাম জাতের আলু তুলছে। এবার আগাম আলুর ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে। তবে দাম কম পাচ্ছেন কৃষক।

খুচরা বাজারে আলুর যে দাম পাইকারি বাজারে তার থেকেও অনেক কম। কৃষি অধিদফতর মনে করছে, এই আগাম আলু যদি আরও ১০-১৫ দিন আগে তোলা হতো তাহলে কৃষকরা দাম মোটামুটি ভালো পেতেন। লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ জানান, এখন পর্যন্ত আগাম আলুর মাত্র ৪০ শতাংশের মতো উৎপাদন করা হয়েছে। বর্তমান বাজারদরে কাক্সিক্ষত লাভ হচ্ছে না। তবে সামনের দিকে দাম কিছুটা বাড়লে চাষিদের লোকসানে পড়তে হবে না।

শুক্রবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২২ , ৩০ পৌষ ১৪২৮ ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

লালমনিরহাটে আলুর দাম কম : দিশেহারা কৃষকৎ

মনিরুজ্জামান সরকার, লালমনিরহাট

image

লালমনিরহাট : ক্ষেত থেকে আলু উত্তোলনে ব্যস্ত কৃষক-শ্রমিক -সংবাদ

গতবছর ভালো দাম পাওয়ায় এবার লালমনিরহাটের কৃষকরা দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে আলু চাষ শুরু করেন। কিন্তু আলুর বর্তমান বাজারদরে লাভ তো দূরের কথা খরচও তুলতে পারছেন না তারা। ফলে হতাশা কাজ করছে তাদের মধ্যে। জানা গেছে, প্রতিবছর নতুন আলু ৮০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এবার শুরুতেই দাম ছিল অর্ধেক। এ বছর প্রতি কেজি নতুন আলু ৪০-৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

তবে বর্তমানে আগাম আলুর দাম আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। এখন প্রতি কেজি আলু পাইকারি ৮-১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে । জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, সাধারণত নবেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত আগাম আলু লাগানো হয়। এ বছর জেলায় ৬ হাজার ৪৩২ হেক্টর জমিতে আগাম আলুর চাষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ১৭ দশমিক ২৮ মেট্রিক টন।

আর গড়ে প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ সাড়ে সাত টাকা। এ পর্যন্ত মোট আবাদের ৪০ শতাংশ জমির আলু তোলা হয়েছে। লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ি গ্রামের কৃষক শহিদুল বলেন, এ বছর দুই বিঘা জমিতে আগাম আলু লাগিয়েছি। বীজ, সার, শ্রমিকের খরচ, সেচ বাবদ প্রতি বিঘা জমিতে ১৫-১৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর এক বিঘা জমির আলু বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে ১৪-১৫ থেকে হাজার টাকা। ফলে গুণতে হচ্ছে লোকসান।

মহেন্দ্রনগর গ্রামের কৃষক বেলাল মিয়া বলেন, উচ্চ মূল্যে বীজ কিনে আলু চাষ করেছি। এখন বিক্রির সময় ভালো দাম পাচ্ছি না। দুই মাস আগে প্রতি কেজি আলু ৫৫-৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছিল। আর এখন জমি থেকে ৭ টাকা থেকে সাড়ে ৯ টাকা বিক্রি হচ্ছে। শিয়াল খোওয়া গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি এ বছর দুই একর জমিতে আলুর আবাদ করেছি। ফলনও মোটামুটি ভালো হয়েছে। কিন্তু আলুর বাজার দর ভালো না পাওয়ায় লোকসান গুণতে হচ্ছে। সরকার যদি আলু চাষিদের দিকে না তাকায় তাহলে আমরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলব। আদিতমারি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলিনুর রহমান বলেন, কৃষকরা এখন আগাম জাতের আলু তুলছে। এবার আগাম আলুর ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে। তবে দাম কম পাচ্ছেন কৃষক।

খুচরা বাজারে আলুর যে দাম পাইকারি বাজারে তার থেকেও অনেক কম। কৃষি অধিদফতর মনে করছে, এই আগাম আলু যদি আরও ১০-১৫ দিন আগে তোলা হতো তাহলে কৃষকরা দাম মোটামুটি ভালো পেতেন। লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ জানান, এখন পর্যন্ত আগাম আলুর মাত্র ৪০ শতাংশের মতো উৎপাদন করা হয়েছে। বর্তমান বাজারদরে কাক্সিক্ষত লাভ হচ্ছে না। তবে সামনের দিকে দাম কিছুটা বাড়লে চাষিদের লোকসানে পড়তে হবে না।